কার্টুন থেকে শিশুরা কী শিখছে

[১]
চার বছরের ছোট্ট মাহাদী জন্মদিনে দাবী করলো ওকে সুপারম্যানের পোশাক কিনে দিতে হবে। বাবা যথাসময়ে উপহার কিনে আনলেন। আজ সকালে হলো কি, হঠাৎ বেড রুম থেকে মাহাদীর তীব্র চিৎকার ও কান্না শুনে আম্মু দৌড়ে এসে ঘটনা দেখে থ হয়ে গেলেন। মাহাদী আলমিরার পাশে শুয়ে শুয়ে কাঁদছে গায়ে সুপারম্যানের পোশাক। তাড়াতাড়ি ডক্টরের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো মাহাদীকে। রিপোর্ট হলো পায়ের দুটো আঙ্গুলের হাড় ভেঙ্গে গেছে। মাহাদী আম্মুকে বলছে, “সুপারম্যান ড্রেস পড়ে লাফ দিলে তো পড়ে না। আমি কেন পড়ে গেলাম আম্মু?”
[২]
ওমায়রা ছয় বছরের ছোট্টমেয়ে। পড়ার সময় পড়ে, খেলার সময় খেলে। কষ্টের কথা হলো এই সোনামণিটার আম্মু না ফেরার দেশে। ও বাবা আর ফুপুর সাথে থাকে। ফুপু ক-মাস পরেই সিডনি চলে যাবেন ফুপার সাথে। বাবা তাই ঠিক করলেন ছোট্ট ওমায়রাকে বড় করবার জন্য ও নিজের একাকীত্ব কাটানোর জন্য ওমায়রার জন্য একটা মা নিয়ে আসবেন। ওমায়রাকে বলতেই ও চিৎকার করে বলে উঠলো, না না কক্ষণো না! এরপর বাবাকে ধাক্কা দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো। বাবা খুব অবাক হলেন লক্ষ্মী ওমায়রার এই আচরণে। পরে আদর করে ওকে জিজ্ঞেস করলেন, কেন এমন করলে আম্মু? তুমি কি চাও না তোমার একটা মা আসুক?
— না, আমি চাই না। স্টেপ মাদাররা খারাপ হয়।
— কে তোমাকে বলেছে যে স্টেপ মাদাররা খারাপ হয়?
— কেউ বলে নি, আমি জানি। সিন্ডারেলার স্টেপ মাদার খারাপ ছিলো,  স্নো হোয়াইটের স্টেপ মাদার খারাপ ছিলো, স্লিপিং বিউটির পঁচা স্টেপ মাদার ছিলো, সব স্টেপ মাদাররা খারাপ, সব খারাপ! আমার স্টেপ মাদার আসলেও আমাকে মেরে ফেলতে চাইবে।
[৩]
নাঈম অসম্ভব দুষ্টু, জেদী- একরোখা ধরণের পিচ্চি। পড়াশুনায় একদম মন নেই। সারাক্ষণ কার্টুন নেটওয়ার্ক অথবা ডিজনী চ্যানেলের সামনে বসে থাকে। ওর প্রিয় কার্টুনগুলোর মধ্যে আছে পোকেমন, DragonBallZ, টম অ্যান্ড জেরি, স্কুবি ডু, ডোরেমন ইত্যাদি। কাল ইস্কুলের মিস নাঈমের মায়ের কাছে অভিযোগ করেছেন যে, নাঈম ওর বন্ধুদের সাথে মারামারি করে কাজলের চশমা ভেঙ্গে ফেলেছে ও খামচি দিয়ে রক্ত বের করে ফেলেছে। শাস্তি স্বরূপ মা ওর টিভি দেখা বন্ধ করে দিলেন। সে এতটাই কার্টুনে নেশাগ্রস্ত তারপর ওকে শান্ত করাই মুশকিল হলো, অবশেষে যখন ভাঙচুর করা শুরু করলো মা বাধ্য হয়ে হার মানলেন।

[৪]
নুসাইবা একটা ইংলিশ মিডিয়াম ইস্কুলে স্ট্যান্ডার্ড থ্রিতে পড়ে। ওদের ক্লাসে আজকে একটা খুব পঁচা ঘটনা ঘটে গেছে। নুসাইবা আম্মুকে বলে দিয়েছে আর কোনদিন ইস্কুলে যাবে না। কী হয়েছে জানতে চাইলে। ও বললো ক্লাসের দুষ্টু ছেলে ইকরা টিফিন ব্রেকে সবার সামনে ওকে Lip kiss করে বলেছে এটা হলো True Love’s kiss, নুসাইবা এখন থেকে সবসময় Princess Giselle এর মতো ইকরাকে love করবে। “এটা একটা লজ্জার কাজ, তাই না মা?” মা হতভম্ব হয়ে গেলেন।

শহুরে জীবনে মা-বাবার পেশাগত ব্যস্ততার কারণে এবং বিকল্প বিনোদনের তেমন ব্যবস্থা না থাকায় এ যুগের বাচ্চাদের Baby Sitter বলা যায় কার্টুনকে। উপরের কেস স্টাডিগুলো লক্ষ্য করুন, বাচ্চাদের নিয়ে এইসমস্যাগুলো কম-বেশি আমরা সবাই face করি। কার্টুনের ভালো-মন্দ বিতর্ক খুব নতুন কিছু নয়। সারা বিশ্বে এ নিয়ে বহু বিতর্ক প্রচলিত। বাংলাদেশে এখনো সচেতনতার বড় অভাব। তাই লেখার প্রয়োজনবোধ করছি।

 

কল্পণা ঘোড়ার লাগাম ধরেছি কি?

প্রথমেই বলে রাখা ভালো আমি কার্টুনের ভালো দিকগুলো অস্বীকার করছি না। রূপকথাগুলোরও অনেক advantage আছে। কিন্তু সেগুলো কোনটাই অবিমিশ্র ভালো নয়, বাবা-মায়েদের তার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। Fantasy আর Fairy Tales ততক্ষণ পর্যন্ত আদরণীয় যতক্ষণ তা শিশুকে নির্মল আনন্দের পাশাপাশি নৈতিকতা শিক্ষা দিচ্ছে, এবং শিশু মনে Over Obsession তৈরি না করছে। কেননা, শিশুরা যখন কার্টুনে প্রদর্শিত জগৎ ও বাস্তবের মাঝে যখন মিল খুঁজে পায় না, তখন ওদের মধ্যে হতাশা ও বিষণ্নতা তৈরি হয়।
১নং কেস স্টাডিটা লক্ষ্য করুন, শিশুটি যে সবে আর্লি চাইল্ডহুড অতিক্রম করছে (১- ৬ বছর) ফ্যান্টাসি এবং বাস্তবতার পার্থক্য করতে পারবে না সবসময়। কার্টুনের অবাস্তব ও আধা-বাস্তব জগৎকে সে বিশ্বাস করবে শুরু করবে এর ফলে ঘটে যেতে পারে এমন বিপদ।

 

শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে কুপ্রভাব
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির ফলিত উন্নয়ন মনোবিজ্ঞান বিভাগের মনোবিজ্ঞানীরা একটি সার্ভে করেছিলেন ৯৫ জন মেয়ে শিশুকে নিয়ে। তাদের প্রিয় টিভি শো-গুলো একটা তালিকা তৈরি করেছিলেন। যেখানে দেখা যায়, মাত্র সাত বছর ও তার কম বয়েসী অনেক শিশুর পছন্দের তালিকায় কিছু হাই লেভেলের ভায়োলেন্ট কার্টুন শো ছিলো। তারা ওই কার্টুনগুলো নিয়ে গবেষণা করে বলেন, সাধারণ টিভি শো-গুলো থেকেও বাচ্চাদের কার্টুনগুলোতে সহিংসতা অনেক বেশি দেখানো হয়। তারা সহিংস ভিডিও গেম, কার্টুনগুলোকে শিশুর আগ্রাসী চিন্তা, আচরণের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। প্রফেসর ডগলাস জেন্টাইল এর নেতৃত্বে এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়। ৯০এর দশকের মাঝামাঝি যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ম করা হয় -টিভি চ্যানেলগুলো তাদের কার্টুনে কী কী দেখাচ্ছে তার বিস্তারিত বিবরণ দেবে। একটি রেটিং সিস্টেমও চালু করা হয় যাতে কার্টুনে ভায়োলেন্সের মাত্রা নিরুপন করা যায়।

Bowling Green State Universityর মনোবিজ্ঞানীরা জাপানে শিশুদের মধ্যে করা একটি গবেষণার পর বলেছেন যে শিশুরা নিয়মিত কার্টুন দেখে তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুনে বেশি। তারা একটি বিশেষ কার্টুনকে বেছে নিয়েছিলেন গবেষণার জন্য, এবং সেটি বাংলাদেশেও প্রচারিত -পোকেমন-। তারা পোকেমনকে একটি ঝুঁকিপূর্ণ সহিংস কার্টুন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। মনোবিজ্ঞানীরা এসব শারীরিক ও মানসিক কুপ্রভাব মুক্ত করার জন্য অভিভাবকদের জোর দেন শিশুর বিনোদনে ভারসাম্য আনতে, শিশুর নিয়মিত শরীর চর্চা ও স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি।
আমি একটাও টম অ্যান্ড জেরি এপিসোড দেখি নি যেখানে ভায়োলেন্স নেই, এই কার্টুনগুলো শিশুকে সহিংস, অস্থিরচিত্ত করে তোলে। ৩নং কেস স্টাডির ঘটনাটা বাংলাদেশের অনেক মায়েরই উৎকন্ঠার কারণ।

অতিমাত্রায় কার্টুন দেখার ফলে শিশুর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যগত সমস্যা হতে পারে– স্থুলতা, চোখে সমস্যা, মাথা ব্যথা, অস্থিরতা, আচরণে ভারসাম্যের অভাব, অমনোযোগ, অতি কল্পণা, বিষণ্নতাসহ নানান সমস্যা। কার্টুনে আসক্ত শিশুদের অসামাজিক ও পড়াশোনায় অমনোযোগী হতে দেখা যায়।

 

কুসংস্কার ও বিজাতীয় অপসংস্কৃতিঃ মাধ্যম যখন কার্টুন
দেশের কৃষ্টি- ইতিহাস বহন করে Folklore বা Folktaleগুলো। কিন্তু এগুলোতে কি সবসময় শিশুমননের উপযোগী contents থাকে? বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আমি ঠাকুরমার ঝুলির ব্যাপারে কিছু কথা বলতে চাই। বাংলায় প্রচলিত কুসংস্কার কী কী এটা বের করতে চাইলে ঠাকুরমার ঝুলি নিয়ে গবেষণা করাটা সবচেয়ে সহজ উপায়। অথচ, এই কুসংস্কারগুলো আমরা অবলীলায় শিশুদের সামনে দিনের পর দিন প্রচার করে যাচ্ছি। ঠাকুরমার ঝুলিতে ওইসব সংস্কারগুলোকে ও অলৌকিক বিশ্বাসগুলোকে (বিশেষতঃ সনাতন হিন্দু সমাজের) মোটেই মন্দরূপে দেখায় না। গল্পগুলোতে মেয়েদেরও চরম অবমাননা করা হয়। কিন্তু পাশাপাশি ঠাকুরমার ঝুলি গল্পে গল্পে কিছু morality শিক্ষা দেয়। শিশুকে ঠাকু’মার ঝুলি যদি দেখতে দিতেই হয়, তাহলে নিজে আগে দেখে, বেছে দিবেন।
ফ্যাশন আইকন বারবি। বাংলাদেশের তার আগমনের প্রায় দুইযুগ হয়ে গেছে। বারবির কোনো ড্রেসকে আপনার কাছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ মনে হবে না, হয় কি? আলাদীনের ডিজনি প্রিন্সেস জেসমিনকে দেখে আমার পরিচিত এক শিশুর প্রথম বাক্য ছিলো, “ ছিঃ ছিঃ ওর ভালো জামা নেই?” তখন ওর বয়স তিন। এখন সে কিন্তু অভ্যস্ত হয়ে গেছে দেখতে দেখতে।
নিজ সংস্কৃতি কিংবা অন্য সংস্কৃতির ভালো কিছু শিখলে শিখুক, কিন্তু এই বাজে দিকগুলোর অনুপ্রবেশ কি গ্রহণীয়?

 

কার্টুন যখন শিশুর সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশনের মাধ্যম
বাংলাদেশে এখন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে ডিজনি- পিক্সার নির্মিত এনিমেটেড মুভিগুলো। আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ৯০% ডিজনি কার্টুন মুভিগুলো স্রেফ প্রেম-ভালোবাসার গল্প। সুন্দর এনিমেশন, গান, দারুণ সংলাপের কারণে শিশুদের তো অবশ্যই বড়দেরও মন জয় করে নেয়।
গ্রিম ভাইদের সেই বিখ্যাত রাপুনজেলের কাহিনী নিয়ে তৈরি Tangled কার্টুন মুভিটা দেখছিলাম একদিন স্টার মুভিজে। আমার ক্লাস থ্রি পড়ুয়া ছোট বোন ওটা আগে দেখলেও আমি ওদিনই প্রথম দেখছিলাম। হঠাৎ করে মাঝখান দিয়ে সে চ্যানেল পালটে দিয়ে বলে যে আর দেখা লাগবে না। অন্য কিছু দেখি। আমি বললাম, “কেন?” এমন কি আছে ওখানে আমি দেখবো-ই। সে কোনভাবেই দেখাবে না। আমি বুঝলাম এমন কোন দৃশ্য আছে যা সে ওর বড় বোনকে দেখাতে চায় না। আমি Tangled পুরোটা দেখেছি পরে। প্রেম…. আর সেই চিরকালীন Lost and Found থিমে বানানো একটা মুভি, অথচ কী বিশাল বানিজ্য করলো! মিউজিক ও এনিমেশন অসাধারণ স্বীকার করতেই হয়।

বড়দের নাটকে- মুভিতে না হয় নির্মাতারা  প্রেম ছাড়া আর কোন বিষয়বস্ত খুঁজে পায় না (!), ছোটদের মুভিগুলোরও এ অবস্থা কেন? অনেক কার্টুন মুভিতে নায়িকাদের শিশু নয় বরং প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে দেখায়, যেখানে তার Lover হিসেবে একজন প্রিন্স চার্মিং (or whoever) থাকে।
ঘরে ঘরে দারুণ জনপ্রিয় টম এন্ড জেরি– সেখানেও দেখুন, টমকে প্রায় প্রতিটা এপিসোডেই দেখা যায় টুডলসকে (টমের গার্লফ্রেন্ড) বা পাশের বাড়ির অন্য কোন মেয়ে বিড়ালকে আকৃষ্ট করার জন্য নানা হাস্যকর কাজকর্ম করতে। ডোরেমনেও সেই একই ব্যাপার! নবিতার বান্ধবী সিজুকার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কত কী-ই না করে নবিতা। আরো অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যায়।
এসব দেখে দেখে কি আপনার বাচ্চাটা সেক্সুয়াল ওয়িয়েন্টেশন নিয়ে ফেলছে না? চার নম্বর যে কেস স্টাডিটা উল্লেখ করেছিলাম, এটা বর্তমানে বিরল নয় আশপাশে তাকালেই খোঁজ পাবেন।

 

বিকল্প কার্টুন ও কার্টুনের বিকল্প
Is there any way out? প্রশ্নের উত্তরে আসার আগে কিছু কথা বলি। উপরে সংক্ষিপ্ত পরিসরে কার্টুনের যে কুপ্রভাবগুলোর আলোচনা করা হয়েছে তা সব শিশুর ওপরই সমানভাবে পড়বে না। আমরা জানি, শিশুর socialization এর অনেকগুলো প্রভাবক ও agent আছে। যেমনঃ তার পরিবার, ধর্ম, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, বন্ধুবান্ধব প্রভৃতি এবং মিডিয়া। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের ওপর মিডিয়ার প্রভাব অনেক অনেক বেশি। এজন্যই আমাদের এই কার্টুনের ভালো-মন্দ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
কল্পণাশক্তিই সৃষ্টিশীলতার মূল কথা, তাই শিশুর সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশে Fantasyর প্রভাব অসীম, তাছাড়া শুষ্ক জ্ঞানী আলোচনার কথা শিশুরা শুনতেও চাইবে না, সেদিক দিয়ে শিশুর বিনোদনে ও ভালো কিছু শেখাতে ভালো কার্টুন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অসংখ্য কার্টুনের থিম ও শিক্ষা বেশ চমৎকার যেমনঃ ওয়াল-ই, টিংকার বেল, বারবি থাম্বেলিনা, আইস এজ, আপ, ফাইন্ডিং নিমো ইত্যাদির। সবকিছুরই ভালো খারাপ দুটোই আছে সেহেতু অনেক কার্টুন পজিটিভ অনেক কিছু শেখাবে তার সাথে নেগেটিভটাও, তাদের আপেক্ষিক গুরুত্ব বুঝে কোন কার্টুনটা আপনার শিশুকে দেখতে দেবেন তা আপনিই ঠিক করবেন।

নব্বইয়ের দশকে অর্থাৎ আমার ছোটবেলায় অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলো ইউনিসেফের অর্থায়ণে তৈরি ‘মীনা’ কার্টুন। এর প্রত্যেকটি পর্বই অসাধারণ ছিলো। আশা পোষণ করছি, বাংলাদেশে অদূর ভবিষ্যতে কেউ বাচ্চাদের জন্য ওরকম কোন কোয়ালিটি কার্টুন বানাবে, যাতে আনন্দের পাশাপাশি সুন্দর করে সহজে একেকটা বিষয় শিখিয়ে দেয়া যায়। বিটিভিতে প্রচারিত সিসিমিপুরও অনেক শিক্ষামূলক-বিনোদনমূলক একটি অনুষ্ঠান। এই ক্ষেত্রটিতে সরকারের লক্ষ্য আরোপ করা খুব প্রয়োজন।

এ বিষয়ে একজন সচেতন অভিভাবক- শিবলী মেহেদী ভাই পেশায় একজন সফটওয়্যার ডেভেলপার, ফেসবুকে ‘শিশু লালন পালন’ নামে একটা চমৎকার গ্রুপ চালান। বলেন যে, “অনেক অনেক ভালো কার্টুন বানালেই কিন্তু বড় সমস্যার সমাধান হবে না। মা-বাবার সচেতনতা খুব জরুরী। আমরা কার্টুনের নেগেটিভ প্রভাব নিয়ে যতই আলোচনা করি না কেন তা ফলপ্রসু হবে না যদি না যারা আসল ভিকটিম অর্থাৎ শিশুদের সাথে আলোচনা না করি।”

বাচ্চার সাথে আলোচনা করাটা খুব ফলপ্রসু- যে ও কী দেখলো কী শিখলো- কোনটা গ্রহণ করা উচিত, কোনটা বর্জন করা উচিত। গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে সমস্ত পঙ্কিলতা থেকে আপনি আপনার শিশুকে হয়তো দূরে রাখতে পারবেন না কিন্তু ওকে শেখাতে পারবেন কীভাবে কাদায় থেকেও কাদা থেকে গা বাঁচিয়ে চলা যায়।
অধিক ভায়োলেন্ট কার্টুনগুলো শিশুকে দেখতে দেবেন না। অতিমাত্রায় কার্টুন আসক্ত শিশুকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে কাউনসেলিং করান একজন শিশুমনোবিজ্ঞানীর সাথে।

শৈশব থেকেই বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলুন। খেলতে খেলতে বিজ্ঞান শেখা যায় এমন বই কিনে দিতে পারেন। বাচ্চাদের জন্য চমৎকার কিছু শিক্ষা-বিনোদনমূলক সফটওয়্যার (যেমনঃ মাইক্রোসফট এনকার্টা কিডস) পাওয়া যায় বাজারে সেগুলো কিনে দিতে পারেন। ইন্টারনেটে শিশুদের উপযোগী বহু ওয়েবসাইট আছে, ইউটিউবে প্রচুর মজার মজার Educative ভিডিও আছে। সংগ্রহ করতে পারেন বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক ইকবাল কবীর মোহনের শিশুদের জন্য লেখা বইগুলো। বর্ণ-পরিচয় হিসেবে আপনার তিন-চার বছরের শিশুকে কিনে দিতে পারেন ফররুখ আহমদের ‘হরফের ছড়া’র (বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত) মতো বই। তাছাড়া বাংলা শিশুসাহিত্য যথেষ্ট সমৃদ্ধ। রবীন্দ্রনাথ-সুকুমার-নজরুল থেকে শুরু করে এখনো অনেকেই লিখছেন চমৎকার সব শিশুসাহিত্য। আপনার শিশুর জন্য বই কিনুন।

টিভি নয় আপনার শিশুকে বইমুখী করুন। কার্টুন কম, গল্পের বই বেশী পড়তে দিন। কুসংস্কারাচ্ছন্ন গল্প নয় ইতিহাস ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের গল্প বলুন। ছোটবেলা থেকেই ধর্মীয় নৈতিকতাগুলো শেখান। সৃষ্টিশীল কাজে উৎসাহ দিন। মূলকথা অনেক অনেক চেষ্টা করুন, তাকে সময় দিতে, তার বন্ধু হতে, আপনার শিশু আপনার সবচেয়ে দামী সম্পদ।

মনে রাখা দরকার আমাদের কিছু ঐতিহ্য আছে, কিছু মূল্যবোধ আছে। সেগুলোকে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়া, তা লালন করতে উৎসাহী করা আমাদেরই দায়িত্ব। স্বাস্থ্যকর খাবার, সুন্দর পোশাক আর ভালো স্কুলে পড়ানোর মাধ্যমে বাবা-মায়ের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না, শিশুর মনন গঠনে আপনাকেই সচেতন থাকতে হবে।

এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে ইতিবাচক, কার্টুন, চিন্তাভাবনা, বিবিধ, সচেতনতা-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

20 Responses to কার্টুন থেকে শিশুরা কী শিখছে

  1. মাধবীলতা বলেছেনঃ

    লেখিকাকে সবার আগে একগাদা ধন্যবাদ এই বিষয়টি নজরে আনার জন্য। আমি খুব খেয়াল করে দেখেছি আসলে যে-ই টম এন্ড জেরী আমাদের সব বয়সী লোকের নির্মল বিনোদনের উৎস, সেইখানেও মেয়ে বিড়াল মেয়ে ইঁদুর নিয়ে কী সব এডাল্ট সিন দেখায় ! এইটা যেই দেশের কার্টুন তাদের শিশুদের উপরেই বা কেমন প্রভাব ফেলে ভেবেই হতবাক হই, অথচ এটা ওদের কাছে কত নরমাল !

    আমি অনেকবার বিষয়টা নিয়ে ভেবেছি। তবে তবু দুরাশার মাঝে আশা জাগায় সিসিমপুর, মীনার মত কার্টুনগুলো। এরকম কাজ আরও হোক আর সবচেয়ে বড় কথা বাবা-মায়েরা সচেতন হোক। আশা করি শিশু লালনপালন গ্রুপেও লেখাটা শেয়ার করেছ।

  2. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    খুবই ভালো একটা লেখা।
    সিরিয়াসলি সবার পড়া উচিৎ।
    বিস্তারিত পরে বলছি

  3. স্রোতস্বিনী বলেছেনঃ

    সত্যি অসম্ভব অসম্ভব ভালো লাগলো… :love:
    চিন্তাভাবনার প্রসার দরকার সবার, পরিবারের প্রতিটা সদস্যকে সচেতন হতে হবে তাদের সামনে বাড়ন্ত শিশুকে নিয়ে।
    “টিভি নয় আপনার শিশুকে বইমুখী করুন। কার্টুন কম, গল্পের বই বেশী পড়তে দিন। ” ১০০ ভাগ সহমত। ছড়িয়ে দিলাম… 🙂

  4. চৈতী আহমেদ বলেছেনঃ

    টিভি নয় আপনার শিশুকে বইমুখী করুন। কার্টুন কম, গল্পের বই বেশী পড়তে দিন। কুসংস্কারাচ্ছন্ন গল্প নয় ইতিহাস ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের গল্প বলুন। ছোটবেলা থেকেই ধর্মীয় নৈতিকতাগুলো শেখান। সৃষ্টিশীল কাজে উৎসাহ দিন। মূলকথা অনেক অনেক চেষ্টা করুন, তাকে সময় দিতে, তার বন্ধু হতে, আপনার শিশু আপনার সবচেয়ে দামী সম্পদ।
    সহমত জানালাম।

  5. রুহশান আহমেদ বলেছেনঃ

    অনেক ভালো একটি লেখা,
    এই ব্যাপারগুলো নতুন নয়। মোটামুটি সবাই অবগত আছেন। তবে এভাবে উদাহরন সহ একেবারে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
    আশা করি যারাই লেখাটি পড়বেন তারা সচেতন হবেন এবং সচেতনতা নিজের চারপাশে ছড়িয়ে দেবেন।

  6. আবদুল্লাহ বলেছেনঃ

    কেবল কার্টুন না।গোটা টিভি কিংবা এন্টারটাইনমেন্টের অনুষঙ্গগুলোকে খুব অসুস্থ মনে হয় ইদানীং।বিদেশী গুলোর কথা না হয় বাদই দিলাম।নাটক গুলো দেখেন।প্রেম ভালোবাসা,বাবামার সাথে বেয়াদবী ,ঔদ্ধত্য ,বন্ধুদের সাথে মাত্রতিরিক্ত ঢলাঢলি ,পরকীয়া, প্রতারণা ,হুট করে ভাললাগা-সব মিলিয়ে হতাশাজনক একটা অবস্থা।তবে আশা করছি উত্তরণের একটা রাস্তা বের হয়ে আসবেই।লেখাটা ভালো লেগেছে।এমন লেখা আরও চাই

  7. নূহা চৌধুরী বলেছেনঃ

    লেখার বিষয় বস্তু আর লেখনী দুইই চমৎকার! কল্লেজে পড়াকালীন একটা ছোট্ট গল্প মনে পড়ছে, ব্যাপারটা আসলে গল্পও না, সত্যি ঘটনা।আমাদের ইংলিশ পড়াতেন যে টিচার তিনি বলেছিলেন,তার কোন এক আত্মীয়র ছেলে কিছুটা বড় হবার পর আর সবার মত বাংলা বা ইংলিশ (তিনি অভিবাসী ছিলেন) এ কথা না বলে অন্য কোন ভাষায় কথা বলা শুরু করে। তারা কিছুতেই বুঝতে পারছিলেন না যে বাচ্চাটি আসলে কোন ভাষায় কথা বলে। ঘটনাক্রমে তাদের নতুন প্রতিবেশি যে আসে তিনি ছিলেন মেক্সিকান এবং পরে তারা আবিষ্কার করেন তাদের বাচ্চা আসলে মেক্সিকান ভাষায় কথা বলছে। ঘটনাটা ঘটেছিলো এরকম ওই বাচ্চা কে শান্ত রাখার জন্য সারাক্ষণ কারটুন চ্যানেলের সামনে বসিয়ে রাখা হত এবং সেই বাচ্চা মেক্সিকান কারটুন দেখে ওই ভাষাটিই রপ্ত করেছে। তারা পরবর্তীতে সাইকোলজিস্টের সাথে যোগাযোগ করেন এবং জানতে পারেন কেসটি রেয়ার হলেও অসম্ভব কিছু নয়।
    আসলে আমাদের সবারই সচেতন হওয়াটা খুব জরুরী।

    • অনেক ধন্যবাদ জানুন নুহা’পু!

      আমাদের পাশের বাসার পিচ্চিও এখনো বাংলাই ভালো করে বলতে পারে না, গড় গড় করে হিন্দি বলে। আপনি যে ঘটনাটা বললেন তা সত্যি খুব ভাবনার বিষয়। এজন্য নয় যে বাচ্চাটা একটা ভিন্ন ভাষা শিখে ফেলেছে- বরং কার্টুন শিশুর ওপর কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে- সেটাই ভাবনার বিষয়। 🙁

      জ্বি, আপু একজন একজন করে- একেকটি পরিবার- এভাবে একটি সমাজ- সচেতন হওয়া এখন সময়ের দাবী।

  8. বাবুনি সুপ্তি বলেছেনঃ

    বড় ভাইয়ার একমাত্র ছেলে বয়স ৫ । কিছুদিন আগে আমাকে একটা ওরনা এনে বলে পারম্যানের মত পরিয়ে দিতে। তো আমি পিছনে ঝুলিয়ে পড়িয়ে দিলাম। কিছুক্ষণ পর আমাকে এশে বলে, ” পারম্যানের মত আমারো আছে তাহলে উড়তে পারিনা কেন?” কিভাবে উড়তে পারব!
    আমি কিছুক্ষণ কথা খুজে পাচ্ছিলাম না কি বলব!

    • আমার মামণি এই লেখাটা তাঁর এক কলিগকে পড়তে দিয়েছিলো। সে সূত্রে আরেক ঘটনা শুনলাম। সেই আন্টির দুই বাচ্চা, টম এন্ড জেরি খেলতে খেলতে- বড় ভাই টম হয়ে তিন বছরের ছোট বোনকে জেরি বানিয়ে মাথায় আঘাত দিয়ে কপাল ফাটিয়ে ফেলেছিলো। বড় বাচ্চাটার বয়স পাঁচ, ও বলে, টম মারলে তো জেরির রক্ত পড়ে না? 🙁

      বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকে এই বিষয়গুলো একটু বুঝিয়ে বলা দরকার- যে ওরা যা দেখছে যা শুনছে সব সত্য নয়। শিশুদের নিষ্পাপ ও অনভিজ্ঞ মনকে এই কার্টুনগুলোর কুপ্রভাব থেকে মুক্ত রাখা আমাদের দায়িত্ব। আবার ভালো দিকগুলোর সাথে পরিচয়ও আমাদেরকেই করিয়ে দিয়ে হবে।

  9. শাহরিয়ার বলেছেনঃ

    প্রথমেই লেখিকাকে একগাদা ধন্যবাদ জানাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ে চমৎকার এবং অসাধারণ একটি লেখার জন্য! :happy: :happy:

    আমার ভাগ্নের একটা ঘটনা শেয়ার করি। তখন তার বয়স কত হবে, এই তিন সাড়ে তিনের মত। কেবল গুটুগুটু করে পুরা বাক্য বলতে শিখেছে। একদিন সে হঠাৎ ঘরের কোণায় একটা ছোট্ট টেবিল থেকে কিছু জিনিসপাতি সরিয়ে কী যেন করছে। তাই দেখে তার আম্মু তাকে জিজ্ঞেস করলো, “কী করছ আব্বু?” তখন সে আম্মুকে উত্তর দিল, “আজকে না আব্বু তোমার জন্য হার্ট চিহ্ন দেয়া একটা কার্ড আনবে? সেটা এখানে ‘এইভাবে’ (একটা বিশেষ ভঙ্গিতে) রাখতে হবে না?” শুনে তো আমার বোন পুরাই থ! সে প্রথমে কিছুই বুঝতে পারে নি। বলে কী ছেলে? পরে তার মনে পড়ল যে সেদিন ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি! কিন্তু তাদের পরিবারে তো এই বিষয়ে কোন আলোচনাই হয় না! সুতরাং কখনোই তার এসব জানার কথা না! তাহলে? পরে সে একসময় আবিষ্কার করলো, কার্টুন নেটওয়ার্কে নাকি দিনব্যাপী সেদিন ‘ভ্যালেন্টাইনস স্পেশাল’ সব এপিসোড হচ্ছিলো। সেখানে কোন কার্টুনে দেখেই নিশ্চয় সে ঐ কল্পনা সাজিয়েছে! 😯

    আশ্চর্য! কার্টুন নেটওয়ার্কেও ‘ভ্যালেন্টাইনস স্পেশাল’!! 😳 এর কোন অর্থ আছে, বলুন তো?

    এবার আপনার লেখার প্রসঙ্গে আসি। চমৎকার কিছু করণীয় আপনি তুলে ধরেছেন। সবগুলোর সাথেই জোরালোভাবে একমত। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে যে বিষয়ের উপর সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করি তা হল, সন্তানকে মা-বাবার আরও অনেক বেশি সময় দেয়া, অনে—ক বেশি গল্প করা, বেশি বেশি কথা বলা, বাচ্চাকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখা যাতে সে একটা নিজস্ব ভুবন তৈরি করে নিতে পারে। আর যাতে টিভি কিংবা কার্টুনের চেয়ে সে অনেক বেশি বিনোদিত হয় তাদের সঙ্গ পেয়ে। হ্যাঁ, এটা বাস্তব যে এখনকার মা-বাবারা অনেক বেশি ব্যস্ত, অধিকাংশই কর্মজীবী। কিন্তু বিশ্বাস করুন, সকল ব্যস্ততার উপরে যদি মা-বাবারা তাদের সন্তানকে কোয়ালিটি সময় দেয়াকে সবচেয়ে বেশি প্রায়োরিটি না দেয়, তাহলে কক্ষনোই এসব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না! অন্তত আমার তাই মনে হয়।

    আরেকটা কথা… আপনার ব্যক্তিগত ব্লগে একজনের মন্তব্য দেখেছিলাম। তিনি রূপকথার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে ধর্ম, নবী-রাসুলের গল্প, ইতিহাস এগুলো নিয়ে ‘হাজার বক বক করেও কোন লাভ নেই’ এমন কিছু একটা বলেছেন। আপনি তার রিপ্লাইতেও খুব সুন্দর জবাব দিয়েছেন। তবে ঐ প্রসঙ্গেও আমার একটা কথা বলতে ইচ্ছে করছে। সেটা হচ্ছে, আমরা নিজেরাই যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই যে ঐসব নবী-রাসুলের গল্প, ইতিহাস – এসব কাঠখোট্টা জিনিস, ওগুলো বাচ্চাদের ভাল লাগবে না, তাহলে সেটা মস্তবড় ভুল ধারণা! কারণ আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আমার বাবা যখন একদম শিশু বয়সেই আমাকে তার বুকের উপর শুইয়ে মুসা (আঃ) – ফেরাউন, ইবরাহীম (আঃ) – নমরূদ কিংবা ইউনুস (আঃ), এসব নবীদের গল্প শোনাতেন, তখন অত্যন্ত উত্তেজনাবোধ করতাম!! আমার সবচেয়ে বড় বিনোদনের উৎস ছিল ঐসব গল্প! সারাদিন অপেক্ষা করতাম ঐসব গল্প শোনার! সুতরাং আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমরা যদি পরিবারে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারি, তাহলে অবশ্যই সম্ভব। ঐসব গল্প যাতে ‘কাঠখোট্টা’ বলে মনে না হয়, সেই পরিবেশ তৈরি করা আমাদেরই দায়িত্ব। আর এসবের পাশাপাশি নৈতিক মানসম্পন্ন রূপকথা তো থাকবেই।

    আর… টিভি জিনিসটার প্রতি বাচ্চার আকর্ষণ যত কম রাখা যায় ততই ভাল। আপনিও বলেছেন টিভির পরিবর্তে বইমুখী করানোর কথা। এ ব্যাপারেও কিন্তু বড়দের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুটি যদি দেখে যে তাকে কম কম টিভি দেখতে বলে দিনশেষে খুব উত্তেজনা সহকারে বড়রাই বসে বসে সিরিয়াল দেখছে, তবে সে বিগড়ে যেতে বাধ্য। সুতরাং বিনোদনের উৎস হিসাবে নয়, বরং টিভির সাথে বাচ্চার পরিচয় যেন ঘটে প্রয়োজনীয় জিনিস হিসাবে। তাই বড়দেরও অহেতুক টিভির সামনে বেশি সময় না কাটানো উচিৎ। খুব নিয়ম করে স্বল্প সময়ের জন্য খবর দেখা, কিংবা বাছাই করে ভাল ও সুস্থ বিনোদনমূলক কোন অনুষ্ঠান দেখা – এভাবে টিভির সাথে বাচ্চার পরিচয় ঘটলে সেও ততটা আকর্ষণবোধ করবে না।

    যাই হোক… বিশা—ল একটা বিরক্তিদায়ক মন্তব্য করে ফেললাম! ধৈর্যচ্যুতি ঘটলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। 🙁

    পরিশেষে লেখাটির জন্য আবারও ধন্যবাদ। :happy:

    • অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া- পড়ে- নিজের অভিজ্ঞতা ও সুচিন্তিত মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্যে। আপনার সাথে একমত, পুরোপুরি।

      কিন্তু ঘটনা হলো- লেখা বা আলোচনা যত সহজ বাস্তবে করে দেখানো তত সহজ না। আমাদের টিভি দীর্ঘদিন স্যাটেলাইট ডিসকানেক্টেড ছিল। তারপর রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য বাধ্য হয়ে নিতে হয়েছে। ছোট ভাই বোনদের খবরদারী করতে করতে আমি এখন হাঁপিয়ে উঠি। পিচ্চিগুলাই বা কী করবে- এদিক দিয়ে আমরা বিকেলে খেলার জন্য বাসার নিচে নামতেও দি-ই না নিরাপত্তাসংক্রান্ত সমস্যার জন্য। মাঝে মাঝে কী যে করবো- বুঝে উঠতে পারি না। 🙁 এখনকার বাচ্চাগুলোর জন্য মায়াই লাগে, কী করুণ একটা শৈশব পার করছে…

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।