গত দুই দিন খবর দেখে আমি ঘুমাতে পারছি না। কিভাবে সম্ভব! নিজের মা কে একটা মানুষ কিভাবে এভাবে মারতে পারে! প্রতিবার ছুরিকাঘাতের পর কি এই মা আর্তনাদ করেন নাই বা হাত পা ছুঁড়েন নাই? অসহায় বাবাকে মৃত্যু যন্ত্রনায় আক্রান্ত দেখে কেন তার মনে একটু দয়ার ও সৃষ্টি হল না! কতটা ভাবলেশহীন , নির্বিকার হয়ে গেছে এই কিশোরী! আমি নির্বাক হয়ে গেছি ঘটনার ভয়াবহতা দেখে। আর আজকে কেন যেন মেয়েটার জন্যও মায়া
লাগছে! 🙁
এই মেয়েটার জীবনটাও তো এখানেই থেমে গেল। হয়ত বয়সের কারণে খুব গুরুতর শাস্তি হবে না, কিন্তু নিজের ভিতরের এই নিষ্ঠুরটা নিয়ে কিভাবে সুস্থ জীবনযাপন করবে মেয়েটি! যে মেয়ে নিজের জন্মদাত্রীর সাথে এমন নিষ্ঠুরতা করতে পারে, তাকে কি কোনদিন আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব আগলে রাখার চেষ্টা করবে? অবশ্যই এই মেয়েটির শৈশবেও মা বাবা ভাইয়ের সাথে কিছু মধুর স্মৃতি আছে। নিঃসন্দেহে মা বাবা তাকে ভালভাবে
লালনপালন করার চেষ্টা করেছেন। তবুও কেন এই মানবসন্তানের ভেতর পশু জেগে উঠল! কেন ছোট ছোট অভিমান থেকে এতটা আক্রোশ জন্ম নিল তার ভিতর! তবুও কেন মেয়েটাকে নেশার নীল ছোবল আক্রান্ত করল! কেন এই জিনিশগুলো আমাদের সমাজে এতটাই সহজলভ্য হয়ে উঠছে? আমি জানি না এই ঘটনার ব্যাখ্যা কি। তবু জানি এখনই সময় সমাজে, পরিবারে ভাঙ্গন বন্ধ করার। না হয় আর আমরা সামলে উঠতে পারব না।
এখনকার দিনে বাচ্চারা খেলার জায়গা পায় না। নীল আকাশের নিচে সবুজ ঘাসে বন্ধু বান্ধবের সাথে দৌড়ানোর সৌভাগ্য তার হয় না। কিভাবে সে উদার হবে!একটা শিশু অন্য অনেক শিশুর সাথে খেলবে ; কখনো জিতবে, কখনো হারবে, কখনো ঝগড়া করবে আবার কখনো নিজেই মিটমাট করবে। এতে তার মাঝে স্বাভাবিকভাবেই সহনশীলতার জন্ম নিবে।চাওয়া মাত্রই সব পাব- এই মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসবে। চার/পাঁচ বছরের বাচ্চার জীবনটাই তো এখন
কম্পিউটার আর মোবাইল কেন্দ্রিক। যে বাচ্চাটা বড়ই হচ্ছে গেমের বিভিন্ন চরিত্রকে গুলি করতে করতে, সে কিভাবে নিষ্ঠুর হবে না! এত সংকীর্ণতার মধ্যে বড় হওয়া শিশুটি আবার যদি কৈশোরে পা রাখা মাত্রই মাদকের খোঁজ পায়, তাহলে তো তাকে সুস্থ রাখাই সম্ভব না।
প্রাচুর্য থাক জীবনে, আধুনিকতাও থাক- এগুলোতে কোন সমস্যা নেই। প্রত্যেক মা বাবাই চান তাদের সন্তান সাফল্যে, মেধায়, প্রজ্ঞায় তাদের অতিক্রম করুক। সবই ঠিক আছে, কিন্তু সেই আগের দিনের মা বাবাদের লালন পালনের কিছু অংশ এখনও ধরে রাখা উচিত। এখনো উচিত শিশুর হাতে ইশপের বই তুলে দেয়া। এখনো উচিত শিশুকে দাদী, নানীর মুখ থেকে বায়েজীদ বোস্তামীর কাহিনী শুনার সুযোগ করে দেয়া। শুধু আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন
না দেখিয়ে সেই শিশুটিকে ও আমরা মাটির কাছের মানুষ গুলার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই না! সদ্য কৈশোরে পা রাখা ছেলেটার হাতে তুলে দেই না হ্যারি পটারের সাতটা খণ্ড ! তার হাতে ধরিয়ে দেই না হুমায়ূন আহমেদের হিমু বা মিসির আলী! শরত অথবা রবি বাবু পড়ে সে রঙ্গিন স্বপ্ন দেখুক না! তবুও হয়ত তার মাঝে কিছুটা মানবিকতা জন্মাবে। তবুও হয়ত শহরের দূষণে কাল হয়ে যাওয়া হৃদয়টার মাঝে কিছুটা ভালবাসার নীল ছায়া জন্মাবে।
– অপ্সরী
আমিও ভাবছিলাম এসব কথা। এখনও না, আমরা পতনের চূড়ান্তে পৌঁছে তারপরই সম্ভবত ঘুরে দাঁড়াবো। 🙁
সেটাই তো সমস্যা। আমরা পতনের চূড়ান্তে না পৌঁছে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রয়োজনীয়তাই ফিল করি না! 🙁
কিছুদিন আগে সামিউল নামে এক শিশুকে হত্যা করল মা। আর এখন সেই ঘটনার উল্টা চিত্র।কি ভয়ংক সব ঘটনা।শুনলেই আত্না শুকিয়ে যায়।এই ধরনের নিউজ পড়লে মনটা খারাপ হয়ে যায়। 🙁
এই সব খবর পড়লে কয়েক রাত আর ঠিকভাবে ঘুমাতে পারি না 🙁
যায় দিন ভালো আসে দিন খারাপ, এটা একটা পপুলার সত্য।
আবার, ‘মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে’, মানুষ এটা বিশ্বাস করতেও ভালোবাসে। তাহলে আমরা যাবো কই?
আরো পরে যখন এই জেনারেশন সন্তান পালন শুরু করবে তখন পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?
আমার মনে হয়- যখন এই জেনারেশন সন্তান পালন শুরু করবে, তখন পারলে বাচ্চাদেরকে বাসায় বেঁধে রাখবে। কারণ তারা নিজেরা তো জানে যে, তারা মা বাবার দেয়া আদর, স্বাধীনতার কতটা অপব্যাবহার করেছে। তাই তারা নিজেরা কখনও বাচ্চাদেরকে ফ্রিডম দিতে চাইবে না।