প্রধানমন্ত্রী যখন বেলারুশ গেছিলেন(রাশিয়া সফরে ব্যাপক গোলাবারুদ মিসাইল সাবমেরিন বোমারু বিমার কেনার পরের সফর) তখন জিজ্ঞাসা করসিলাম বেলারুশের লগে আমাগো কারবারটা কি? প্রধানমন্ত্রী কি সার কিনতে গেছেন নাকি আইস ফিশিং করতে গেছেন? আজকে জানতে পারলাম। উনি অস্ত্র কিনতে গেছলেন কুচকাওয়াজ কোম্পানির জন্য। হপ্তা খানেক আগে হাতিরঝিল বিষয়ক এক স্ট্যাটাসে কুচকাওয়াজ কম্পানির ঠিকাদার হিসাবে প্রতিষ্ঠার সাথে আমাদের গনতন্ত্রের অগ্রযাত্রার যোগাযোগ নিয়া আলাপ পারার আগ্রহ দেখাইছিলাম। আজকে সেইটা শেষ করবো।
সোভিয়েত ব্লকের বেলারুশ মূলত রাশান প্রেসিডেন্টের আজ্ঞাবহ। ফলে এই চুক্তিটাও আসলে রাশান হটলিঙ্কেই হইসে বলা যায়…. জনগনের এইসব জানার একচুল আগ্রহ নাই ধৈরা নিয়া দীপুমনি আগাইতেছিলেন। পরে পাবলিক প্রেসারের কারণে রাশান সফরের পরে আইএসপিআর একটা প্রেস কনফারেন্স কইরা বিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তির খুব অল্পই জানাইসেন। যাহোক, সেনাবাহিনীর কাছে ঐটাই জবাবদিহিতার এক ঝলক। আগে এইটাও হইতো না…. আগের কথা ইয়াদ থাকলে মিগ ফিগ্রেট মামলায় দুই নেত্রীর মুক্তির কথা মনে আসবে। সেনাবাহিনীর কেনাকাটায় টিআইবি যতই ফাক খুজুক, পাবলিকে যতই গন্ধ পাক, কোন কালেই এইসব মামলায় কিছু হবে না। কারণ আমাদের সেনাবাহিনী খুবই সংবেদনশীল। খালেদা যখন বলেন সেনাবাহিনী বসে থাকবে না, তখন হাসিনা সেনাবাহিনী ব্যারাকে দুধ-কলা খাওয়াইতে ঠিকাদারি শিখায়। আপনি যদি মনে করেন খালেদা আইসা ঠিকাদারী বন্ধ কইরা জনগনের রোড এন্ড হাইওয়েসরে মাঠে নামাবেন তাইলে ভুল করবেন। এইটা এমন ভুল যে, সেই ভুল কোন মাতাল সরকারও করবে না।
প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতি অপরিসীম মমতা নিয়া কিছু লোকে ঝাপায়ে পরে- ‘ভাই সেনাবাহিনীর অস্ত্র লাগেই। কিনলে কি ক্ষতি?। ইহা আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী। এর আধুনিকায়ন দরকার।’
ব্রাদার, সেনাবাহিনী দেশের অংশ…. তারা আমাদের লোক…. তাই তারা দেশের জনগনের মতই দেশপ্রেমিক। আরেকটা ১/১১ আসার সাথে সাথে সেনাবাহিনীর আগে পাছে ‘দেশপ্রেমিক’ লাগানো থামান। দেশের জনগনের টাকাতে যেই কেনাকাটা হইতেছে তা কি জনপ্রতিনিধিদের কোন সাংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হইসে? হয় নাই…
বলতে পারেন অস্ত্র্গুলান আমাদের খুব দরকার। এইখানে কোন দুর্নীতি নাই। দুর্নীতি আসে তখনই যখন নীতি অনুপস্থিত। শুধু ঘুষ, চাদাবাজিরে দুর্নীতি মনে করলে ভুল করবেন। এই যে দেশের কোন প্রতিরক্ষানীতি নাই কিন্তু বেশুমার কেনাকাটা হইতেছে, কুচকাওয়াজ কোম্পানি সাজানো হইতেছে, আধুনিকায়ন হইতেছে, জাহাঙ্গীর গেটের বিলবোর্ডে প্রতিরক্ষা ভিশন না কি জানি বাস্তবায়নের কথা বলা হইতেসে- এইগুলা কি দুর্নীতি না? বুঝায়া বলি-আপনি ঝন্টুরে বললেন বাজারে যা…. ঝন্টু বাজার থিকা আলু পটল না কিন্না নকিয়া লুমিয়া আনলো- আপনের তাতে পেট ভরবে? হইতে পারে নকিয়া লুমিয়া কিনতে কোন দুই নাম্বারী করে নাই ঝন্টু- কিন্তু সে তো আপনারে পথে বসায়া দিসে। এইটাই অব্যবস্থাপনা, এইটাই দুর্নীতি। যেই ১৫হাজার কোটির কেনাকাটা হইসে সেইটা একটা অসচ্ছ প্রক্রিয়াতে হইসে কয়েকটা অসচ্ছ সরকারের সাথে। বেলারুশের মূলত একনায়কতন্ত্র চলতেছে কয়েক দশক, রাশিয়ার তত্ত্বাবধানে। বলা হয় যে বেলারুশ আসলে রাশিয়ার আর্মস ডিলিং এ প্রক্সি সেলস এজেন্ট। বেলারুশ কেনে রাশিয়া থিকা, আর বেচে সবার কাছে। তাদের সেকেন্ড হ্যান্ড আর্মসের বিশাল বাজার আছে দুনিয়ায়।
তো কথা দাড়াইলো দুর্নীতি কারে কয়? আমাদের দরকার হাইওয়ে-হাসপাতাল, দিলাম টাকাপয়সা সরকারের কাছে (সরকারের পকেটের সব টাকাই পাবলিকের টাকা এমন ধারণা এখনো আমাদের আসে নাই। আসলে হলমার্ক আর বেসিকের দুর্নীতির জন্য পাবলিকের হরতাল ডাকা উচিত, বিরোধীদলের দলের ভরসা কি? আমি হিসাব কইরা দেখলাম দুই ব্যাঙ্কে সেনাকল্যাণ ভবনের সমান ১০০টাকার নোটের বান্ডিলের পাহাড় চুরি গেছে। সেনাকল্যাণ ভবনের সামনে দিয়া যাওয়ার সময় ভাইবা দেইখেন)। এখন আমাগো টাকায় কি করা হইতেছে সেইটা জানার অধিকার আমাদের আছে কিনা? কোন কাজের প্রায়োরিটি বেশি থাকবে, কিসে জনগনের অভাব মোচন সেইটা আলোচনার দরকার আছে… এই ১৫হাজার কোটির অস্ত্রে কয়টা কর্মসংস্থান হইবো? কয়জনের রুটি রুজি হইবো? সেনাবাহিনী আমার টাকায় ফুটানি করলে ফিসফিস করতে হবে কেন? ওই সুদের টাকা পাবলিকের কাছ থেকেই নিয়া মেটানো হবে… তাইলে পাবলিকরে জানাইতে দোষ কিসে? দোষ আমাদের কারণ আমরা এইসব বিষয়ে চিন্তায় আগ্রহী না…এরচেয়ে রাজনৈতিক চুলাচুলি পছন্দের।
আমাদের নির্বাচনী অনিশ্চয়তার আরেকটা বছর হাজির। ১/১১ এর কথা মনে রাখাই সকল দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ ব্যবসায়ী চাবেন সেনাবাহিনী ব্যারাকে রাইখা ইলেকশনে জেতা। জিয়াউর রহমান সাহেব যখন ব্যারাক থিকা আইসা গণতন্ত্র কায়েম করতে মাল্টি পার্টি সিস্টেম আনতে চাইতেছিলেন তখন অনেকেই বিশ্বাস করে নাই। শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক এক বয়ানে সেনাবাহিনীরে রাষ্ট্রক্ষমতা থিকা দুরে রাখাই আমাদের প্রথম দ্বায়িত্ব হিসাবে উল্লেখ করসিলেন। তখনো জিয়াউর রহমান বাইচা ছিলেন। এরপরে এরশাদ আসলেন, গেলেন। গণতন্ত্র পাইলাম। কিন্তু ৫ম বছরে আইসা আবার সেনাবাহিনী ডাক পাড়া পার্টি আসে। এইবার একটু বেশি ঘনঘন সেনাবাহিনী ডাক পারা হইসে। খালেদা একবার ডাকলেন ইঙ্গিতে, জনৈক সালাফিস্ট ব্রাদার ডাকলেন ফেইসবুকে পত্র দিয়ে, হেফাজত ডাকলো শাপলা চত্ত্বরে— সবই ব্যর্থ হইলো। কিন্তু এই ডাকাডাকি কেন? কারণ নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচনব্যবস্থার পথ বন্ধ করা হইসে সাংবিধানিকভাবেই। ঘোর সংকটে তাই কুচকাওয়াজ কোম্পানি ভরসা।
ঢাকাই বুদ্ধিজীবি সমাজের জলপাই কমপ্লেক্স– থেকে বলি
“ক্ষনে ক্ষনে ক্যু হচ্ছে হবে বলে শিক্ষিত সমাজে রব উঠছে গতবছর থেকেই। কিন্তু এই ক্যুয়ের দেখা আজো পেলাম না। দেশের মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তদের বোঝা উচিৎ যে সেনাবাহিনীর অবস্থান অনেক উচ্চে। দেশের কাদামাটিতে তাদের পায়ে ধরে টানলেও নামানো যায় না। বিদেশের গ্রীন সিগন্যাল লাগে।”
সেনাবাহিনীর উপরেই সবার ভরসা, সেই সেনাবাহিনীরে হাতে রাখতে দুই নেত্রী কি করতেছেন? তারা খুব কৌশলে সেনাবাহিনীর মধ্যে নিজেদের আস্থাভাজন এলিট শ্রেণী তৈরী করসেন। এরা প্রমোশন পায় শুধু নিজ নিজ দলের আমলে। এরা রিটায়ার করলে পার্টিতে আইসা পড়েন, গ্রাসরুটের রাজনীতি এদের করা লাগে না। ফৌজি বাজেট বাড়ানো হয় প্রতি বাজেটে, কেনাকাটা হয়। আবার ঠিকাদারী ডিল দেয়া হয় বিনা টেন্ডারে। সরকারী প্রতিষ্ঠানকে পাশ কাটায়ে বড় বড় সব প্রজেক্ট তারাই পান। ফ্লায়োভারগুলা ঘুইরা ঘুইরা ক্যান্তনমেন্টমুখী হয়। ঢাকার দুই প্রান্তে তাদের দুইটা ক্যান্টনমেন্ট। দুইটা ডিওএইচএস। সুন্দর ব্যবস্থা।
কিন্তু প্রশ্ন করা যাবে না… কেন দুই ক্যান্টনমেন্ট থিকা পিলখানায় আসতে এতো সময় লাগলো? কেন নৌবাহিনীর নাকের ডগায় সাগরে জেলেরা নিরব গণহত্যায় মারা পড়তেছে। সাবমেরিন দিয়া কি জেলেদের নিরাপত্তা দেয়া হইবো? তাইলে ওই সাবমেরিন দিয়া কি করবো আমরা? আমাদের দরকারটা কি সেইটা বাইর করতে কেন স্বাধীনতার পরে প্রতিরক্ষা নীতি করতে চল্লিশ বছর যায়?
সেনাবাহিনীরে দেশের প্রতিরক্ষার কাজেই রাখতে হবে। ক্ষণে ক্ষণে তাদের ডাকাডাকি করা যাবে না। আমরা মিশরের অবস্থা দেইখাও কিছু শিক্ষা নিতে পারি। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়া নির্র্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতা বদল করতে হবে। এইটায় কোন অনিশ্চয়তা রাখা যাবে না। সেনাবাহিনী যেন কোনভাবেই দেশের অস্থিতিশীলতার সুযোগে ব্যালটের অধিকার কাইড়া না নেয় সেইটা খেয়াল রাইখা শান্তিপুর্ন মীমাংসার দিকে যাইতে হবে। এইসব না হইলে কোনভাবেই সেনাবাহিনীরে পাবলিকের দুধকলা দিয়া পোষা বন্ধ হইবো না। ঠিকাদারী চলবে, ক্যু-চেষ্টা চলবে…..
এইটাই আমাদের জলপাই কমপ্লেক্স।
ছবি: প্রথম আলো
চিন্তিত না, তারপরেও এই লেখা পড়লাম। দুইবার। সবই উচিত কথা, ভালো লাগলো ভাইয়া (অথবা দুলাভাই। আমার বইনরে বিয়ে করছেন দেখলাম)। 🙂 শেয়ার করার ইচ্ছা পোষণ করলাম।
ধন্যবাদ ফর শাদী মোবারক। শেয়ার মোবারক।
ভাল্লাগছে চিন্তাভাবনা
কেন দুই ক্যান্টনমেন্ট থিকা পিলখানায় আসতে এতো সময় লাগলো? কেন নৌবাহিনীর নাকের ডগায় সাগরে জেলেরা নিরব গণহত্যায় মারা পড়তেছে। সাবমেরিন দিয়া কি জেলেদের নিরাপত্তা দেয়া হইবো? তাইলে ওই সাবমেরিন দিয়া কি করবো আমরা? আমাদের দরকারটা কি সেইটা বাইর করতে কেন স্বাধীনতার পরে প্রতিরক্ষা নীতি করতে চল্লিশ বছর যায়?
সেনাবাহিনী নিয়া কথা বলা অবশ্য হারাম!
দেশটা একটা বাড়ির মত হলে, সেনাবাহিনী হল তার সিকিউরিটি সিস্টেম।
একটা কুড়েঘরে সিসিটিভি লাগানো কিন্তু যুক্তিহীন। কিন্তু বর্তমানে সেটাই করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
কুচকাওয়াজ কম্পানি টার্মটা বেশ ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ