কঙ্কাল নিয়ে কেলেঙ্কারী, ডাক্তার- মেডিকেল স্টুডেন্ট কি তার ভুক্তভোগী?

গত ২৩ শে আগস্ট ভোরে একদল টোকাই মাতুয়াইলে সিটি করপোরেশনের ময়লার ডাম্পিংয়ে কাগজ কুড়াতে গিয়ে ৯/১০টি বস্তা কঙ্কাল দেখতে পায়। পরে পুলিশকে খবর দিলে বেলা ১১টার দিকে পুলিশ দু’টি মাথার খুলি, সাতটা পায়ের অংশ, বুকের পাঁজরসহ মানবদেহের ১৬টি টুকরো উদ্ধার করে। কিন্তু এখন সেই কঙ্কালের দায় ভার চাপানো হচ্ছে সকল মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছাত্রী এবং বিশেষ করে ডাক্তার ও প্রশাসনের উপরে। এগুলো নাকি “মেডিকেল কলেজের” কঙ্কাল ও লাশ।
আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কখনো, কোন মেডিকেল কলেজ এই কাজটি করবে না। এখানে নির্দিষ্ট নিয়মে এবং অত্যন্ত যত্ন ও সম্মানের সাথে বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে তা ব্যবহার ও সৎকার করা হয়। এটা ময়লার বস্তায় বা ট্রাকে বা ডাস্টবিনে ফেলার কোন প্রশ্নই উঠে না। এটা নিয়ে হটাৎ “সাংবাদিক” আর “পুলিশ”এর এত মাতামাতি শুরু হলো কেন? কেন পুরো বিষয়টা তদন্ত না করেই, এমন কি কঙ্কালগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা/ ময়নাতদন্ত না করেই তার দায় চাপানো হচ্ছে মেডিকেলের ছাত্র ছাত্রী ডাক্তার আর প্রশাসনের উপর?

আচ্ছা, বলেন তো…
বাংলাদেশে সব থেকে বেশী দুর্নীতিবাজ পেশা কোনটি? — উত্তরঃ পুলিশ
বাংলাদেশে সব থেকে বেশী মিথ্যা কথা বলে কারা? —– উত্তরঃ সাংবাদিক

এরা দুইটা মিলে তাহলে যখন কোন কথা বলে তাহলে তা কি? অবশ্যই মিথ্যা! জ্বী! এই ক্ষেত্রেও, একই অবস্থা।

এখন সবার ভুল ভাঙ্গাই এই ব্যাপারে…
মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয় এমন সংরক্ষিত লাশ যা কেটে শিক্ষার্থীদের শেখানো হয় তার প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাবোধ রেখে কাজ করা হয়। মেডিকেল কলেজে পড়ানোর সময় ছাত্রদের শেখানো হয় তারা যেন মৃত ব্যক্তিকে জীবিত ব্যক্তির মতোই শ্রদ্ধা করেন।। সুতরাং সেই লাশ কোনো ভাগাড়ে/ ডাস্টবিনে ফেলার প্রশ্নই ওঠে না। সেটিকে কলেজের প্রিন্সিপাল, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ বেশ কয়েকজনের স্বাক্ষরসংববলিত অনুমতি নিয়ে বেওয়ারিশ লাশ দাফনকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দাফন করা হয়।

যেখানে লাশগুলোই বিকৃত হয়ে গিয়েছে সেখানে পুলিশ “নেইল পালিশ” খুজে পায় কিভাবে? আমরা যারা মেডিকেলে পড়েছি বা পড়ছি তারা সবাই জানি মেডিকেলের কেডাভার/ লাশগুলোর নখ কেমন থাকে… বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা কথা বলার একটা ন্যূনতম “সীমা” থাকা দরকার

এখন কেন এবং কাকে রক্ষার্থে, কার স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এর দায় মেডিকেল ছাত্র ছাত্রী, শিক্ষক ও প্রশাসনের উপর চাপানো হচ্ছে? আমরা প্রতিদিনই জানতে পারি অনেকে নিখোজ হয়েছেন, অনেক রকম “অপমৃত্যুর” ঘটনাও হচ্ছে, এসকল কঙ্কাল তো তাদেরো হতে পারে। তদন্ত না করেই এটা মেডিকেল সমাজের উপর চাপানো টা এবং যারা এই সমাজের “প্রতিষ্ঠিত” “মিথ্যাবাদী” এবং “দুর্নীতিবাজ” তাদের দ্বারা ডাক্তার সমাজের উপর দোষ চাপানোটা একদমই উদ্দেশ্যপ্রনোদিত। আরো বেশি করে এটি লক্ষ করা যায় যখন আমরা দেখি “উপরের নির্দেশে” সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তারদের এর ময়নাতদন্ত করতে দেয়া হচ্ছে না।

আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, তদন্ত না করেই এর দায়ভার কারো উপর না চাপানোর অনুরোধ থাকল সকল মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী-ডাক্তারদের পক্ষ থেকে, এটা দ্রুত কোন “উপরের চাপ” ব্যতিরেকে “ময়নাতদন্ত” শেষ করা এবং এরপর পরিচয় ও নারী-পুরুষ শনাক্ত করতে DNA টেস্টের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো।

এই দাবী এখন বাংলাদেশের সকল মেডিকেলের সকল ছাত্র-ছাত্রী-ডাক্তারদের!

এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিবিধ-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

1 Response to কঙ্কাল নিয়ে কেলেঙ্কারী, ডাক্তার- মেডিকেল স্টুডেন্ট কি তার ভুক্তভোগী?

  1. নিশম বলেছেনঃ

    ১) তথ্যগত ভুল – ৭টি বস্তা পাওয়া গিয়েছিলো, আপনি লিখেছেন ৯-১০টি।

    ২) লেখার প্রথমেই আপনি উল্লেখ করেছেন – “কিন্তু এখন সেই কঙ্কালের দায় ভার চাপানো হচ্ছে সকল মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছাত্রী এবং বিশেষ করে ডাক্তার ও প্রশাসনের উপরে। এগুলো নাকি “মেডিকেল কলেজের” কঙ্কাল ও লাশ।”

    কিন্তু, সংবাদ পত্রের ভাষাই আলাদা। সেখানে লেখা – “পুলিশ ধারণা করছে, উদ্ধার করা কঙ্গালগুলো বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার জন্য ব্যবহার হয়েছে। ”

    এটা এজামপশন, এখানে চাপিয়ে দেয়া হয়নি। এটা প্রথম দিকের নিউজ।

    ৩) “কখনো, কোন মেডিকেল কলেজ এই কাজটি করবে না” – ইতিহাসে কোন কিছুই পরম না। পৃথিবীর কোন সন্তান তার বাপ-মাকে কোপাতে পারতো না। এখন পারে। যেহেতু, কংকাল গুলো ডাস্টবিনে ফেলা একটা ক্রাইম, মেডিকেল স্টুডেন্টরাও মানুষ, তারা ক্রাইম করতেই পারে। আপনি আমি করি না, এর মানে এই না যে কেউ করবে না। আপনি সব স্টুডেন্টদের জবানবন্দী নিয়ে আসেন নাই নিশ্চয়ই !

    ৪) “কেন পুরো বিষয়টা তদন্ত না করেই, এমন কি কঙ্কালগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা/ ময়নাতদন্ত না করেই তার দায় চাপানো হচ্ছে মেডিকেলের ছাত্র ছাত্রী ডাক্তার আর প্রশাসনের উপর?” এবং “আরো বেশি করে এটি লক্ষ করা যায় যখন আমরা দেখি “উপরের নির্দেশে” সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তারদের এর ময়নাতদন্ত করতে দেয়া হচ্ছে না।”

    আপনার এই দুটি কথাই অসাড় হয়ে যায়, কারণ ময়নাতদন্ত সলিমুল্লাহ হাসপাতালে একটি মেডিকেল বোর্ড করেছে এবং তারা জানিয়েছে মেডিকেলে সংরক্ষিত লাশ এ যে সকল কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়, তারা সেগুলোর সন্ধান পেয়েছেন। মেডিকেল স্টুডেন্টদের বুঝবার স্বার্থে যেভাবে হাড় আলাদা করা হয়, যাতে সকল ডিপ্রেশান, টিউবারকল কিংবা ইম্প্রেশান গুলো ভালোভাবে বোঝা যায়, এখানেও সেসবই দেখতে পেয়েছে। আপনি যদি বলতে চান, আপনি প্রোফেশনালদের থেকেও বেটার, তাহলে আলাদা কথা। তবে, আমি ধারণা করতে পারি, আপনি তদন্ত স্থল এবং ময়নাতদন্তের কোনখানেই ছিলেন না। তবুও আপনি নিজেই সবজান্তার ন্যায় আচরণ করছেন।

    ৪)
    “বাংলাদেশে সব থেকে বেশী দুর্নীতিবাজ পেশা কোনটি? — উত্তরঃ পুলিশ
    বাংলাদেশে সব থেকে বেশী মিথ্যা কথা বলে কারা? —– উত্তরঃ সাংবাদিক”

    কেনো আপনার কাছে দুর্নীতিবাজ ও মিথ্যাবাদী বলে এই দুটি পেশাবাদে আর কোন কিছু মাথায় কিংবা লেখায় আসলো না? সর্বজনবিদীত রাজনীতিবীদ ও আপনার কাছে দুর্নীতিবাজ ও মিথ্যাবাদী মনে হলো না, যেখানে আপনি “সব থেকে বেশী” টার্ম ও ব্যবহার করেছেন ! কারণ আমি বলি, আপনার লেখায় “পঁচানোর” স্বার্থে এই দুইটি পেশাই দরকার, নিজেকে ডিফেন্ড করবার জন্য, তাই নিজের স্বার্থেই আপনি একটি “ডিসিশান” জানিয়ে দিয়েছেন। এইটা সরাসরি আপনার দৈণ্যতাকেই ইঙ্গিত করে।

    ৫) আমি নিজে মেডিকেল স্টুডেন্ট এবং মোটামুটি স্বনামধন্য মেডিকেলেরই ছাত্র। হ্যা, এটাই নিয়ম একটি লাশকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা। কারণ, তার কারণেই আজকে আপনি আমি এই বিষয়ে পড়াশুনা করতে পারছি। এবং আমাদের কিংবা মেডিকেল প্রশাসনের কর্তব্য তার প্রতি উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শনপুর্বক তার সৎকারের ব্যবস্থা করা।

    এখন, কেউ যদি সেই নিয়ম না মানে, সেই অনিয়মের দায় কি আপনার আমার উপর বর্তায় ? একজন আইনজীবি কিংবা একজন লেখক কুকর্মে জড়িত হলে কি সব আইনজীবি কিংবা লেখক দোষী? একজন ডাক্তার কিংবা মেডিকেল ছাত্র অথবা একটি মেডিকেল কলেজ তাহলে যদি এই দোষে দুষ্ট হয়, আপনি কেনো নিজেকে দোষী ভাবছেন? ডাক্তারেরা কি মানুষ না? আকাশ থেকে পরা ফেরেশতা ? একজন মানুষ হিসেবে বিবেচনা করলেই তো সবকিছু সহজ হয়ে যায়। মানুষের মানবিক রিপুর কারণেই একজন ডাক্তারও দোষ-ত্রুটি করতে পারে।

    লেখাটি আপনার উত্তেজিত মস্তিষ্কের ফলাফল বলেই ধরে নিচ্ছি।

    আমার মন্তব্যের উৎস –

    ১) ইত্তেফাক

    ২) যুগান্তর

    ৩) ইত্তেফাকেরই আরেকটা খবর ছিলো, যেটার হেডলাইন ছিলো “এই হাড় সেই হাড় নয়”, খবরটি অনলাইনে খুজে পাচ্ছি না। প্রিন্ট ভার্সন থেকে খুজে নিতে পারেন।

    আপনাকে ধন্যবাদ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।