বেঁচে থাক তুমি

জীবনটা একটা বিভাস প্রহরের ঝড় ছাড়া কিছুই না। প্রতিটি মুহূর্তে জীবনটা চাইবে তোমার সাথে ছলনা করতে! এই জীবনটা তোমার কাছে কখনোই ধরা দিতে চাইবে না, চাইবে না তোমার হাতটা ধরে পাশাপাশি দু’কদম হাঁটতে। জীবনটাকে কাছে টেনে নেবার চেষ্টা করতে হবে তোমাকেই, ওকে আপন করে নেবার জন্যে সাধনা করতে হবে। তুমি হয়ত চাইলেই তা করতে পারবে!

সোনার চামচ মুখে নিয়ে খুব কম মানুষই জন্মায়। যারা জন্মায়, অবশ্যই তারা সৌভাগ্যবানদের মাঝেও সৌভাগ্যবান! কিন্তু তুমি তো তাদের কেউ নও। তোমার জীবনটাকে নিয়ে তোমাকেই লড়াই করে যেতে হবে। একা, একদম একা! শুধু নিজের জন্যেই লড়ে যেতে হবে তোমাকে! নিজের অস্তিত্বকে নিয়ে তোমাকে সংগ্রাম করে যেতে হবে। বিশ্বাস কর, তোমার পাশে কেবল তোমার ছায়াই প্রতিটি মুহূর্তে থাকবে, আর কেউ না, কেউ না!

মানুষ খুব দ্রুত বদলে যায়! বদলে যাওয়াই মানুষের ধর্ম! যে মানুষের হাতটা আলতো করে বুকে চেপে ধরে তুমি আমৃত্যু জীবনের প্যাডেল চাপাবে বলে ভেবেছিলে, তুমি ভাবতেও পারবে না তোমার অজান্তে কখন যে সেই হাতটি তোমাকে ছেড়ে অন্য কোন স্পর্শকে কাছে টেনে নিয়েছে! কখন তোমার সেই প্রিয় মানুষটি তোমাকে রেখে চলে গেছে অনেক দূরে… যে মানুষটির স্বচ্ছ কালো চোখের ক্যানভাসে হাজার রঙ দিয়ে তুমি তোমার স্বপ্নগুলোকে একটু একটু করে এঁকেছিলে, সেই চোখ কখন যে এক নিমিষে তোমার স্বপ্নগুলোকে মুছে দিয়ে চলে যাবে, তা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না! তুমি আজ যাকে আপন বলে জড়িয়ে ধরতে যাও, সেই যে তোমাকে নিজ হাতে চিরে কুটি কুটি করে ফেলে রেখে চলে যাবে না, তার এক ফোঁটা নিশ্চয়তা নেই! তোমার বিশ্বাসের মূল্য রাখতে পারে, পৃথিবীতে এমন মানুষের সংখ্যা যে খুব বেশীই কম!

তুমি হয়ত ভাবছ, তোমার কেউ নেই! এই পৃথিবীর কেউ তোমার প্রতি আকর্ষিত হয় না! কিন্তু তুমি আসলে জানই না, কোন লোকবসতির আধারিতে বসে যে মানুষটি ভাঙা পায়ে আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে – তোমাকে এখন কী প্রচণ্ড-ভাবে দরকার! নিয়োডিমিয়াম চুম্বকের মত সে তোমাকে আকর্ষণ করছে, আর তুমি কিনা সবার উপর এক রাশ তেঁতো বিতৃষ্ণা নিয়ে বলছ তোমায় কেউ কাছে টানে না!!

কে বলেছে তোমার পৃথিবী নীলাভ অন্ধকারে ঢেকে গিয়েছে! কে বলেছে তুমি পারো না, তোমার পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেছে! চোখ মেলে দেখো, তোমার তোমাকে ঘিরে তোমার পৃথিবী কেমন ছুটে চলেছে অবিরত! নিজের জগতটাকে নিজের মত করে সাজিয়ে নাও! নিজেকে তোমার চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না। নিজেকে বের করে আনো ঐ চার দেয়ালের আস্তাকুর থেকে, সবার মাঝে ছড়িয়ে দাও তোমার আলো! তুমি একটি মানুষ, তোমার দু’টি স্বপ্নালু চোখ আছে – এর চেয়ে বেশী আর কি চাই!
পরশ পাথর হয়ে ওঠো তুমি! তুমি স্বপ্নবান! ঐ দেখ, তোমার জন্যে ঐ দূরে আরেক স্বপ্নবতী অপেক্ষার প্রহর গুনছে বসে বসে…

বেঁচে থাকো তুমি, তোমার স্বপ্নকে নিয়ে বেঁচে থাকো! তোমার সন্তান, তোমার স্বপ্নগুলোর জন্যেই তোমাকে বেঁচে থাকতে হবে! হেঁটে যেতে হবে নিরন্তর…

 

সাঈদ আনোয়ার অনুজ
২১ জুলাই, ‘১৩
ঢাকা।

অনুজ সম্পর্কে

সাদা কাগজে কালো কালিতে লিখতে গেলে হয়ত লিখতে হবে - প্রথমত আমি রক্ত মাংসে গড়া এক মানুষ, দ্বিতীয়ত চিরন্তন সত্য, মৃত্যুর সাথে করি বসবাস... https://www.facebook.com/CoercedAnuj
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে অনুপ্রেরণা, বিবিধ-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

13 Responses to বেঁচে থাক তুমি

  1. হৃদয় বলেছেনঃ

    ”তুমি হয়ত ভাবছ, তোমার কেউ নেই! এই পৃথিবীর কেউ তোমার প্রতি আকর্ষিত হয় না! কিন্তু তুমি আসলে জানই না, কোন লোকবসতির আধারিতে বসে যে মানুষটি ভাঙা পায়ে আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে; তোমাকে এখন কী প্রচণ্ড-ভাবে দরকার! নিয়োডিমিয়াম চুম্বকের মত সে তোমাকে আকর্ষণ করছে, আর তুমি কিনা সবার উপর তীব্র বিতৃষ্ণা নিয়ে বলছ তোমায় কেউ কাছে টানে না!!”

    লেখাটা কী কেবল স্বপ্ন+বতুপ’দের জন্য/হওয়ার জন্য লেখা হইসে? ভাইস-বার্সা হবে না 😛

    দারুণ ইন্সপিরেশনাল একটা লেখা :clappinghands: চল- :beerdrink:

  2. তুসিন বলেছেনঃ

    তোমার বিশ্বাসের মূল্য রাখতে পারে, পৃথিবীতে এমন মানুষের সংখ্যা যে খুব বেশীই কম!
    ভাল লাগল লাইনটি।
    লেখাট এতদ্রুত শেষ হয়ে গেল কেন??
    পড়ার পর মনে হয় আরও একটু বড় হলে মন্দ হত না।

    • অনুজ বলেছেনঃ

      পৃথিবীতে খুব কম মানুষই অন্য কোন দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে নির্দ্বিধায় নিজের বিবেকের কথা শুনতে পারে। বিশ্বাসটা তাই আজকাল বড় বেশী ‘ফর্মাল’ আর ঠুনকো হয়ে গেছে। তারপরও এই বিশ্বাসকে ভিত্তি করেই একেকটা সম্পর্কের পথ চলা…

      সব যদি আমিই বলে দেই, তবে পাঠক ভাববে কী?
      আমার কেন জানি মনে হয়, এই ধরণের লেখাগুলোর শেষ কিছু অংশ প্রকাশ না করাই ভালো! পাঠককে সেই অংশটুকু নিজে চিন্তা করে নেবার সুযোগ দেয়া উচিত… 🙂

      পড়ে দেখবার জন্যে অনেক ধন্যবাদ, ভাইয়া…

  3. রুহশান আহমেদ বলেছেনঃ

    অনেকদিন পরে পেলাম আপনার লেখা, জিরো২ইনফিনিটিতে বেশি ব্যাস্ত নাকি?

    চমৎকার লেখা, জীবনকে সুন্দর করার মূলনীতি “যত যা-ই হোক, ভেঙ্গে পড়োনা” এ নিয়ে লেখা, কথা, সিনেমা, গানের শেষ নাই।
    তবুও নিজের মধ্যে এই বিশ্বাসের চর্চাটা রাখা প্রয়োজন।

    শুভকামনা।

    • অনুজ বলেছেনঃ

      আসলে ইদানীংকালে আরো বেশী অলস হয়ে গেছি। লেখা প্রকাশ করতেও উৎসাহ পাই না। তাই হয়ত… 🙂 জিরো টু ইনফিনিটি, বিজ্ঞান স্কুল, উৎসুকদের আখড়া – এগুলোতে কাজ করাটাকে ব্যস্ততা মনে করি না! আমার সাথে এগুলো থাকবেই!

      সত্যিই তাই! নিজের ভেতরে এই সামান্য বিশ্বাসটুকুই অনেক কিছু বদলে দিতে পারে! ও পথে হাঁটতে যেয়ে হোঁচট খেয়ে পরে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছি, তাই আর ওপথে যাব না – চিন্তাধারা এমন হলে জীবনে পরাজয় ছাড়া কিছুই আসবে না কোনদিন।
      এই ব্যাপারগুলো অনেক সময়ই আমরা জানি ভালোভাবেই, কিন্তু নিজের জীবনে কাজে লাগাতে পারি না। এটাই মূল সমস্যা!

      অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া, আমাকে মনে রাখবার জন্যে আর লেখাটা পড়বার জন্যে!! 🙂 ভালো থাকবেন!

  4. কী অদ্ভুত ভালো লাগলো রে! :love:

  5. শারমিন বলেছেনঃ

    অনেক ভালো লেগেছে 😀 :love:
    আর লিখাটা আমি আগে পড়েছিলাম কি?? 😛 😛

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।