সবার জন্য স্বনির্ভরতা

আমাদের দেশে নারীশিক্ষার হার বেশি। মেয়েদের পড়াশোনার সুবিধার্থে স্থাপিত হয়েছে বিভিন্ন স্কুল কলেজ। রয়েছে অবৈতনিক পড়ার সুযোগ ও ক্ষেত্রবিশেষে কোটার ব্যবস্থা। তারপরও আমাদের দেশের কয়টা মেয়ে স্বনির্ভর?!

সমস্যাটা তাহলে কোথায়? একটা সহজ উত্তর আছে, “আমাদের সমাজব্যবস্থা!” সমাজ তো অনেক বড় গণ্ডি। সমাজের একক হল পরিবার। সমাজের দিকে তাকানোর আগে একবার আমাদের পরিবারের দিকে তাকাই।

পরিবারের ছোট ছেলেটা যখন ঠিকমতো পড়াশোনা করতে চায়না, তখন তার উদ্দেশ্যে পরিবারের বড়দের উক্তি, “পড়াশোনা না করলে কাল থেকে রিকশা চালাবি!” এখানে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বিদ্যমান; পড়াশোনা করুক বা না করুক, একটা ছেলেকে স্বনির্ভর হতেই হবে। আমদের সমাজে যেহেতু সৎ জীবিকার চেয়ে পেশাগত মর্যাদাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তাই ছেলেটা হয় এই সমাজে টিকে থাকার জন্য পড়াশোনা করে, অথবা পড়াশোনার জটিলতায় না জড়িয়ে বৈদেশে পাড়ি জমায়! সেখানে রিকশাওয়ালা কেন, সুইপার হলেও সমস্যা নেই। স্বনির্ভর হওয়াই আসল কথা!

এবার পরিবারের ছোট মেয়েটার দিকে তাকাই। সে যখন ঠিকমতো পড়াশোনা করতে চায়না, তখন তার উদ্দেশ্যে পরিবারের বড়দের উক্তি, “পড়াশোনা না করলে এক মাসের মধ্যে বিয়ে দিয়ে দিব!” এখানেও সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বিদ্যমান; স্বনির্ভর হওয়ার জন্যও একটা মেয়েকে অন্যের উপর নির্ভর করতে হবে! তার আচার আচরণ সন্তোষজনক হলে এবং প্রথমে জন্মগত ও পরে বিবাহলব্ধ পরিবারের অনুগ্রহ হলে তবেই সে সুযোগ পাবে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর।

“কাল থেকে রিকশা চালাবি” এই উক্তিটি যেমনি করে ছোটবেলা থেকেই একটা ছেলের মধ্যে স্বনির্ভরতার বোধ জন্মে দেয়, ঠিক তেমনি “বিয়ে দিয়ে দিব” এই উক্তিটি ছোটবেলা থেকেই একটা মেয়ের মধ্যে পরনির্ভরতার একটা বোধ জন্মায়। সে জানে, তার জন্য স্বনির্ভর না হয়েও বেঁচে থাকার একটা উপায় আছে।

আমাদের আশেপাশে এমন অনেক পরিবারের দৃষ্টান্ত রয়েছে যাদের আর্থিক দুর্দশার কারণ শুধুমাত্র একটাই- পরিবারের একজন মাত্র সদস্য রোজগার করে (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটি পুরুষ সদস্য।) একা একজনের গলদঘর্ম পরিশ্রমে সংসার হয়ত স্বাভাবিক নিয়মেই চলতে থাকে, কোনমতে দিনগুজার হয়েও যায়। বিপত্তি ঘটে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটলে। হতে পারে বিবাহ বিচ্ছেদ, কোন অ্যাকসিডেন্টে অচল হয়ে যাওয়া, আকস্মিক চাকরীচ্যুত বা অবসর, এমনকি মৃত্যুসহ আরও অনেক কিছু। অথচ একাধিক রোজগেরে সদস্য থাকলে অন্তত এ ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় জীবনটা একেবারে অচল হয়ে যায় না। পরিবারের সব সাবালক সদস্যেরই উচিত অন্তত নিজের ভরণপোষণের ভারটুকু নিজের কাঁধে তুলে নেয়া, হোক সে ছেলে কিংবা মেয়ে। খুব আহামরি কোন পেশাজীবী হতে হবে এমন তো না। ঘরে বসেও অনেক কিছু করা যায়। স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য দক্ষতা যতটা না জরুরি তার থেকেও বেশি জরুরি হল নিজের ইচ্ছাশক্তি এবং পরিবারের সহযোগিতা।

পেশাগত মর্যাদার গুরুত্ব অবশ্যই আছে। কিন্তু আমার কাছে সৎ পেশায় স্বনির্ভর হওয়া তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে সবারই স্বনির্ভর হওয়া অত্যন্ত জরুরি। আমার ছোটবোনটা যখন পড়াশোনা করতে চায়না, তখন আমিও বড় বড় ভাব নিয়ে উক্তি ঝাড়ি, “ঠিকমতো পড়াশোনা কর। আর না করতে চাইলে বল, সমস্যা নেই। তোরে অতিসত্বর একটা রিকশা কিনে দিব। তুই হবি বাংলাদেশের প্রথম মহিলা রিকশাচালক!”  😀

বিঃ দ্রঃ আমার জানা মতে বাংলাদেশে মহিলা রিকশাচালক আছে। আমার ছোট বোন দেশের প্রথম মহিলা রিকশাচালক হতে পারবেনা। তবে জেলার প্রথম মহিলা রিকশাচালক হতে পারবে অনায়াসেই! 😀

এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে সচেতনতা-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

10 Responses to সবার জন্য স্বনির্ভরতা

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    চমৎকার চিন্তাভাবনা।

    আমার কাছে সৎ পেশায় স্বনির্ভর হওয়া তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

    :welcome:

  2. শারমিন বলেছেনঃ

    “কাল থেকে রিকশা চালাবি” এই উক্তিটি যেমনি করে ছোটবেলা থেকেই একটা ছেলের মধ্যে স্বনির্ভরতার বোধ জন্মে দেয়, ঠিক তেমনি “বিয়ে দিয়ে দিব” এই উক্তিটি ছোটবেলা থেকেই একটা মেয়ের মধ্যে পরনির্ভরতার একটা বোধ জন্মায়। সে জানে, তার জন্য স্বনির্ভর না হয়েও বেঁচে থাকার একটা উপায় আছে। 🙁

    পেশাগত মর্যাদার গুরুত্ব অবশ্যই আছে। কিন্তু আমার কাছে সৎ পেশায় স্বনির্ভর হওয়া তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

    দারুণ 😀
    :welcome:

  3. তুসিন বলেছেনঃ

    পেশাগত মর্যাদার গুরুত্ব অবশ্যই আছে। কিন্তু আমার কাছে সৎ পেশায় স্বনির্ভর হওয়া তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

    :welcome:

  4. অনুজ বলেছেনঃ

    আররেহ! ঊষাপু দেখি!!
    :welcome:

    লেখাটা দারূণ হয়েছে! চমৎকার চিন্তা! 😀

  5. হৃদয় বলেছেনঃ

    আপু, দারুণ ইতিবাচক চিন্তা :beshikhushi: সরবে আপনার যাত্রা শুরু হল পাঁচ-তারকা দিয়ে :guiter:

    আপু দারুণ চিন্তা-আমার ছোটবোন ফাঁকিবাজের হাড্ডি ( আমিও যাই না তবে ওর চেয়ে কম :angel_not: এখন থেকে বলব–পড়াশুনা ছাড়, রিকশা ধর মানে রিকাশা চালাও 😛

    সরবে, ঊষা’পুর আগমন
    শুভেচ্ছার স্বাগতম :welcome:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।