বাংলা অনলাইনে সেলফ সেন্সরশিপ এর রাজসিক সূচনা হবে? [তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি আইন নিয়ে ভাবনা]

আসুন একটা থট এক্সপেরিমেন্ট করিঃ ধরা যাক আপনি একজন বিচারক। আপনি ২০ বছরের এক তরুণ ছেলের বিচার করছেন। অভিযোগ উঠেছে খুনের। কিন্তু প্রমাণ শতভাগ বুলেটপ্রুফ না। আপনি কি করবেন?
অভিযোগ মোটামুটি ৭০% প্রমাণিত। কিন্তু কিছু ফাঁক ফোঁকর থাকতে পারে…
আপনি কি ফাঁসির পক্ষে প্রমাণ দেবেন?
নাকি প্রমাণ beyond any reasonable doubt হবার জন্য অপেক্ষা করবেন?

বিচারের রায় দেয়ার সময় আপনার মাথায় নিশ্চিত নিচের লাইন কাজ করবে?

“It is better to risk saving a guilty man than to condemn an innocent one.”

আমি আইন কানুন ভালো বুঝি না। যেটা ভালো বুঝি না, সেটায় অবশ্যই এক্সপার্ট/ আমার চেয়ে ভাল জানে এমন কারও সাহায্য নেব।
তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি আইন ২০০৬ নিয়ে কে কী বলছেন? বিশেষ করে ৫৭ ধারা নিয়ে…

একরামুল হক শামিম লিখেছেনঃ

শুরু থেকেই এই আইনের ৫৭ ধারা বিতর্কিত। এই ধারায় এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যার যথাযথ আইনি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তাছাড়া শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে প্রোপরশনেট প্রিন্সিপালকে অনুসরণ করা হয়নি। সব ধরনের অপরাধের শাস্তিই সমান রাখা হয়েছে। তাছাড়া কোনো একটি অপরাধ অফলাইনে করলে যে শাস্তি হবে তা অনলাইনে করলে বেশি শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

এই সংশোধনীর মাধ্যমে বেশ কিছু ধারার অপরাধকে একইসঙ্গে আমলযোগ্য ও অজামিনযোগ্য করা হয়েছে। এর মাধ্যমে পুলিশের ক্ষমতা ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রের নাগরিক ব্যাপকভাবে নিগৃহিত হবে।

আরও কিছু এক্সপার্ট থেকেঃ

হামিদা হোসেন বলেন, আইন করা হয় নাগরিকের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার জন্য। কিন্তু এই আইনটি স্বাধীনতা হরণ করার জন্য।

শাহদীন মালিক বলেন, আগামী বছর টিআইবি দুর্নীতির যে প্রতিবেদন প্রকাশ করবে, সেখানে যদি রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, তবে এই আইন বলে টিআইবির কর্মকর্তাদের অন্তত সাত বছর করে জেল হবে। এ আইন থাকা মানে দেশকে অসভ্য বা মধ্যযুগে ঠেলে দেওয়া।

সারা হোসেন বলেন, আইনের সংজ্ঞা সুস্পষ্ট হবে। যাতে মানুষ বুঝতে পারে, সে যা লিখছে তা বেআইনি কি না। কিন্তু বর্তমান আইনটি অস্পষ্ট। সরকার ইচ্ছামতো এর অপপ্রয়োগ করতে পারবে। তাই এখন নেটে কিছু লেখার আগেই ভাবতে হবে—এই লেখার কারণে সাত বছরের, নাকি ১৪ বছরের জেল হবে।

সাঈদ আহমদে বলেন, এই আইনের মাধ্যমে লঘুপাপে গুরুদণ্ডের বিধান চালু করা হয়েছে। আইনটি তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, আইনটি অস্পষ্ট। এই অস্পষ্টতার সুযোগ নিয়ে এর অপপ্রয়োগ হবে।

সামারিঃ

*কঠিন রকমের অপব্যবহার হতে পারে।

*যেহেতু জামিন নাই, মারাত্মক হয়রানি হতে পারে…

*এর ফলে লেখক ব্লগারদের মধ্যে সেলফ সেনসরশিপ চলে আসবে!

উইকি থেকেঃ
Self-censorship is the act of censoring or classifying one’s own work (blog, book(s), film(s), or other means of expression), out of fear of, or deference to, the sensibilities of others, without overt pressure from any specific party or institution of authority.
তার মানে সরাসরি সরকার আপনাকে না বললেও আপনি আমি ভয় পেয়ে এখন ঠিক মতো লিখব না। মনের ভাব প্রকাশ করব না!

অথচ আমাদের সংবিধান বলছে

৩৯। (১) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান করা হইল।

(২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে

(ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের, এবং

(খ) সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার
নিশ্চয়তা দান করা হইল!!!!!!

গণতন্ত্র মানে শুধু ৫ বছরে একবার ভোট নয় – আরও অনেক কিছু।
আইন করার সময় হয়রানি বন্ধ/ আইনের নামে যেন ইনজাস্টিস না হয়, অন্যায় না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখা উচিৎ। আমরা সবাই মিলে সরব হলে আশা করি এই আইন প্রত্যাহার করা হবে।

বোহেমিয়ান সম্পর্কে

পেশায় প্রকৌশলী, নেশায় মুভিখোর আর বইপড়ুয়া। নিজেকে খুঁজে পাবার জন্য হাঁটতে থাকি। স্বপ্নের সাথে হাঁটা, স্বপ্নের জন্য হাঁটা। https://www.facebook.com/ibappy
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিবিধ-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

8 Responses to বাংলা অনলাইনে সেলফ সেন্সরশিপ এর রাজসিক সূচনা হবে? [তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি আইন নিয়ে ভাবনা]

  1. শামসীর বলেছেনঃ

    কিছু কইতে ভয় লাগে 🙁

  2. তাহলে জিনিসটা কী দাঁড়াচ্ছে, আমি “মানবো না” লিখলেও সাত বছর জেল হয়ে যাচ্ছে আমার!! 😯

  3. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    দীপু ভাইয়ের ‘ফ্রিডম অব স্পিচ’ সেশনটার কথা আরেকবার মনে পড়ে গেলো!
    এক আইনের সাথেই আরেকটার কন্ট্রাডিকশন!!
    কোন কিছুই পরিষ্কার না।
    ইচ্ছা করে হয়রানি করার সুযোগটা রেখে দেয়া হয়!
    দুঃখজনক!

  4. স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

    কথাগুলোর সাথে একমত প্রকাশ করছি।

    তবে, লেখাটায় লেখকের আরও কিছু কথা থাকলে ভালো হতো। বিশ্লেষণ করাটা একটু সংক্ষেপ হয়ে গেছে বলে মনে হয়েছে।

  5. মাধবীলতা বলেছেনঃ

    ইয়ে মানে আমি ৫৭ ধারার আইনটা সম্পর্কেই পরিষ্কার আইডিয়া পেলাম না, যতটুকু মনে হচ্ছে ফ্রিডম অফ স্পিচকে ম্যানিপুলেইট করার অনেক ফাঁকফোকর আছে।

    সরব হওয়া দরকারি।

  6. ইকু বলেছেনঃ

    হুম……সহমত

  7. হাসান বলেছেনঃ

    অধিকাংশ আইনের অপব্যবহার করা সম্ভব…
    একটু যাচাই করলেই সবাই বুঝতে পারবেন ।।

    তাহলে সমাধান একটাই, যারা আইনের ব্যবহার করেন তাদের প্রতিস্থাপন করা এমন মানুষ দিয়ে যে অপব্যবহার করবে না। সেটা হতে পারে আপনি, যদি আত্নবিশ্বাস থাকে আদর্শিক হওয়ার।

    এই ‘আপনি’ মানে আপনি একা না, আমাদের অনেককে (তার মানে সবাইকে লাগবে তা না), যারা সমস্যাগুলো অনুভব করে, এবং যারা একসময় নানা বড় জায়গায় যাবেই…

  8. তরঙ্গ বলেছেনঃ

    লেখকের সাথে একমত। তবে ৫৭ ধারাটা হুবহু কোট করলে আরো ভালো হতো।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।