জল ও জঙ্গলের কাব্য’

নূতন প্রজন্মের দাদার বাড়ি, যেখানে টিকেট কেটে ঢুকতে হয়, গুনে গুনে টাকায় উশুল করতে হয় বিমলানন্দের মুল্য……আহা! আমাদের শৈশব নূতন প্রজন্মের কাছে কি অধরা হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে? -বন্ধু তানজিমের ফেসবুক কমেন্ট !!! একদিকে চরম সত্য আর অন্যদিকে ভাবছি এখনতো না হয় টাকা দিয়ে হলেও শৈশবকে ছুঁয়ে দেখা যাচ্ছে, কিন্তু কতদিন !!! মানুষের দানবীয় হামলায় ইট পাথরের ছোঁয়ায় সবই যে অপসৃয়মান, হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ, হারিয়ে যাচ্ছে বহমান জলধারা । ।

হারিয়ে যাবার আগেই যারা আরো কিছুদিন ছুঁয়ে দেখতে চান অনাবিল সবুজ, মাছের দেখা নাই তবু বড়শি হাতে বসে থাকতে চান নিস্তরঙ্গ দুপুরে তাদের জন্য অপেক্ষায় আছে ‘জল ও জঙ্গলের কাব্য’ ।এক নিভৃতচারী মানুষের স্বপ্নসাধ বলা যায় এই আয়োজন, ঢাকার অদূরে পূবাইলে ৯০ বিঘা জমির উপর গড়ে উঠেছে একটুকরো গ্রাম। বাঁশ আর পাটখড়ির বেড়া ,উপরে ছনের ছাউনি, সামনে দিগন্ত বিস্তৃত জলের নাচন।

সূর্য ডুবুডুবু এমন সময় সেখানে পৌঁছে হাতে পেয়ে যায় পেঁয়াজু -বেগুনী সাথে পুটি মাছ ভাজা । ঝাপিয়ে পড়ে নিমিষেই নাই হয়ে গেল সব। আঁধারের তারা জ্বলা রাতে সবাই  মিলে বেড়িয়ে পড়লাম নৌকা নিয়ে বিলের মাঝে, হেরে গলায় গান সাথে শাপলা শলুকের উঁকিঝুকি । ফিরে আসতে না আসতে দেখি বারবিকিউ হচ্ছে মাছ আর মুরগীর । ঠিক গ্রামের সাথে না গেলেও শহুরে মানুষের হালজমানার ফ্যাশন এই বারবিকিউ জিনিসটা খারাপনা, আগুনে মাছ মাংস ঝলসে যাচ্ছে আর একদল মানুষ অপেক্ষায় যেন কতদিন তারা না খেয়ে আছে B-)  !!! মাঝ রাতে শুনশান নিরবতায় শুধু দুজনে নৌকায় বসে থাকা, আলো আঁধারির মাঝে এদিক ওদিক হেঁটে বেড়ানো রোমান্টিক না হয়ে উপায় কি !!!

কার্ড খেলতে বসে কখন যে ভোরের আগমনী ধ্বনি এসে হাজির হল কেউ খেয়ালই করলোনা, একটু পিঠ লাগিয়ে নেয়া যাক  বৈকি !!! চেস্টা করেছিলাম , কিন্তু এক বন্ধুর বেঘোরে নাক ঢাকা শুনতে শুনতে ঘুম দেবতা পালাল, ঘুমদেবতার পলায়নের ফল যে এত সুন্দর হবে সেটা কল্পনাতেও ছিলনা, বন্ধুকে ক্ষমা করে দিলাম নিমিষেই । মায়াবী নীল ভোর ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সুবহে সাদিকের লাল আভায়, সূর্যি মামা একটু একটু করে উঁকি দিচ্ছে মেঘের কোল ঘেষে, একদল শালিক উড়ে এল ( ভাগ্য ভাল একদল, একটি আসলে মনে হত কপালে দুঃখ আছে, দুটি আসলে মনে হত না জানি কি ভাল হবে কে জানে !!) , ভাগ্য নিয়ে তাই আর চিন্তা করতে হলনা । এমন ভোর ক্যামেরার কি সাধ্য তাকে বন্দি করে রাখে, একে দেখতে হয়, ধরে রাখা যায়না । ।

হঠাত অবাক করে দিয়ে কাজল কালো মেঘে ঢেকে গেল পুরো পৃথিবী !! বলতে না বলতেই হিমেল হাওয়ায় কাঁপন জড়ানো বৃষ্টি, উফ কতদিন এমন বৃষ্টি দেখিনি । এমন বৃষ্টির মাঝে নৌকা নিয়ে বিলের মাঝে- শৈশবে, হউকনা দাদা বাড়ি, এমনটা করার পারমিশন কেউ দিত বলে মনে হয়না , আজ তাই নেই মানা । এমন ঝুমবৃষ্টিতে শেষ কবে ভিজেছি মনে করতে পারছিনা ।

শরতের আকাশ, হঠাত করেই আবার নীল হয়ে উঠল, ঢেঁকি ছাটা চালের রুটি, চিতই পিঠা, লুচি (লিখতে লিখতে এখন আবার ক্ষিধে লেগে যাচ্ছে ) , সাথে লাইভ বাউল গান , ঘুরে আসতে পারেন যদি হারাতে চান , তবে বৃষ্টি না থাকলে আসলে পুরোপুরি উসুল হবেনা টিকেটের টাকা 😉

বিলের পানিতে দাপাদাপি শেষে আরেক দফা দাপাদাপি করার জন্য আছে বিশাল দীঘি, সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেটটা সাথে নিতে ভুলবেননা কিন্তু । মধ্য দুপুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার না দেখলেও শহুরে তরুনির লাইফ জ্যাকেট গায়ে দিয়ে পানিতে ভেসে থাকার কসরত- দেখার জন্য মন্দ নয় B-)

অলস সময়ে পেয়ে যাবেন কাঁচা পেঁপের ভর্তা, আমড়া ভর্তা……..চা কফি চালাতে পারেন আনলিমিটেড । কাঁঠালের বিচির ভর্তা, লতির সাথে কাঁঠালের বিচি, নানা রকম শাক, ভর্তা , ছোট মাছ, রুই মাছের ভাজা, চালতার টক ডাল,ইলিশের পাতুড়ি  ভাল না লাগলে ঝোল করে রাঁধা মুরগীতো আছেই । শুয়ে বসে কাটানোর জন্য অপেক্ষায় থাকা টংঘর গুলো তখন ডেকে নিবে ভাত ঘুমের জন্য……….

ভাদ্র মাসের তাল পাকা গরম, ফিরে আসার সময় তালের পিঠা যদি নাই খেলেন  গ্রামে ঘুরতে যাওয়া যে অপূর্ণই থেকে যাবে………….

[বিঃদঃ  :  আপনারা গেলে আমার মত এত মজা করতে পারবেন, সব কিছু এমনই পাবেন এমন কোন গ্যারান্টি আমি দিচ্ছিনা 😀 , কারন আমার সাথে ছিল আমার বউ, বাচ্চা আর বন্ধু বান্ধবরা…….  ]

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে ইতিবাচক, পাগলামি, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ-এ এবং ট্যাগ হয়েছে স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

9 Responses to জল ও জঙ্গলের কাব্য’

  1. একুয়া রেজিয়া বলেছেনঃ

    জল ও জঙ্গলের কাব্য -র নাম শুনেছি এ বছরের শুরুতে। কিছুদিন আগে আমার বেশ কিছু বন্ধু বান্ধব ঘুরেও এসেছে। আমার নিজের যাওয়ার ইচ্ছে আছে।
    ভালো লাগলো আপনার ভ্রমণ + ফটো পোস্ট দেখে।

    শুভকামনা। :happy:

  2. শারমিন বলেছেনঃ

    ইসস ছবিগুলো এত সুন্দর যে দেখে এখনি চলে যেতে ইচ্ছে করছে 😀 🙁

  3. রুহশান আহমেদ বলেছেনঃ

    ভালো জায়গা সম্পর্কে জানলাম, যাতায়াতের একটা উপায় জানালে আরো ভালো হতো।

  4. হৃদয় বলেছেনঃ

    সত্যি বলতে, আমার নিজেকে গর্তজীবী মনে হয়; সেভাবে ঘুরাঘুরি খুব একটা করা হয়ে উঠে নাই কখনও, তবে আপনার লেখাটা পড়ে বিশেষ করে ছবিগুলো দেখে, ‘জল ও জঙ্গলের কাব্য’ এর প্রতি বেশ আগ্রহ বোধ করছি 🙂 দেখি, ইনশাল্লাহ…

  5. ryyth বলেছেনঃ

    ৬-৭ জনের একটা দল যেতে চাই।জনপ্রতি খরচ কেমন পড়বে? ঘর ভাড়া কত?

  6. Bony বলেছেনঃ

    Amra 40 jon ai khane picnic korte chaii … ai khane picnic korte n entry fee koto keo janate parben …

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।