কিছু টুকরো কথোপকথন…

 কোন এক বিকেলে…

কেমন আছো?

এইতো, তুমি কেমন?

-আমিও এইতো আছি। আচ্ছা, আমরা-তো বন্ধু, বন্ধু হলে অকারণে এতো ঘন ঘন পার্কে দেখা করার বিশেষ প্রয়োজন কি আছে? মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করল মিথিলা।

-তাই তো। বিশেষ দরকার নেই।

-তাহলে দেখা করি কেন? ফেসবুক, এসএমএস, এগুলো তো আছেই…

-ঠিক আছে, আর দেখা করতে চাইবো না, অন্যদিকে তাকিয়ে বলে শুভ্র

-গুড বয়। আচ্ছা তোমাকে সবাই যা বলে তুমি তাই কর, তাই না?

-আসলে মানুষের অনুরোধ শুনতে, অনুরোধ রাখতে আমার ভাল লাগে।

-ভালো। তাহলে চল ওঠা যাক?

-চল।

পাশাপাশি নীরবে হেঁটে চলে দু’জন…

-আচ্ছা, তুমি এত মন খারাপ করবে জানলে আমি তখন ঐ কথাগুলো বলতাম না কিন্তু সত্যি কথাগুলো আজ না’হোক কাল বলতেই হত।

-আমি তো মন খারাপ করে নেই।

-কখন থেকে অন্যমনস্ক ভাবে হাঁটছ; নিজ থেকে কোন কথা বলছ না, কিছু জিজ্ঞেস করলে দু’একটা শব্দ বলে উত্তর দিচ্ছ। এই, তুমি আবার আমার প্রেমে-টেমে পড় নি তো বলেই মৃদু হেসে ফেলে মিথিলা।

-কিছুক্ষণ ভেবে… ‘জানি না’ অন্যমনস্ক হয়ে ধীর পায়ে হাঁটতে থাকে শুভ্র।

হঠাৎ করেই একটা মাইক্রোবাস জোরে ব্রেক কষে শুভ্রর সামনে…কিছুই বুঝতে না পেরে মিথিলার দিকে তাকিয়ে, স্বভাবসুলভ বোকার মত হেসে দেয় শুভ্র।

ড্রাইভার গলায় যথেষ্ট বিরক্তি এনে বলে, ‘এই যে আপা, আপনার আক্কেলটা-কি বলুন তো? এমন ভুলো মনের একজনকে পেছনে রেখে আপনি কি-না হন হন করে হেঁটে যাচ্ছেন! যখনই বাইরে বেরুবেন উনার হাত ধরে হাঁটবেন…

-চল?

-তুমি আমার হাত ধরে হাঁটছ কেন?

-কারণ আমারা এখন বাইরে আছি, যতক্ষণ বাইরে থাকবো-হাত ধরেই হাতব, ও’কে? আর শোন, এত ভাল হতে নেই।

 

 

 

 

 

 

    

  


কথোপকথন

-হ্যালো?

:তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।

-উহু, যখন-তখন দেখতে ইচ্ছে করা ভালো না।

:আচ্ছা, ঠিক আছে, ভাল না। আমি চোখ বন্ধ করলেই তোমাকে দেখতে পারি, দেখা না করলেও চলে।

-রাগ করলে না-তো?

:না, করি নি তবে তুমি যদি এই মুহূর্তে বারান্দায় এসে না দাঁড়াও তাহলে রাগ করব।

-বারান্দায় কেন?

:রঙধনু।

-আল্লাহ, সত্যি! আগে বলবে না? এক্ষুনি যাচ্ছি।

 

-আচ্ছা এটা কি ধরণের পাগলামি বল তো?

:কোনটা?

-এই যে গোলাপ হাতে আমার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছো…তুমি না একটু আগে বললে, চোখ বন্ধ করেই আমাকে দেখে নিতে পারো। আমাকে দেখতে উত্তরা থকে ঝিগাতলায় আসার চেয়ে কি চোখ বন্ধ করে দেখে নেয়া সহজ না?

:হুম, একটু না, একটু বেশীই সহজ। কিন্তু চোখ বন্ধ করলে শুধুমাত্র ঐ ছবিটাই মনে আসে; ঐ-যে পহেলা বৈশাখে তুমি লাল পেড়ে শাড়ি পড়েছিলে, খোপায় বেলি ফুলের মালা ছিল, ঘন করে চোখে  কাজল দিয়েছিলে…

-থাক! আর বলতে হবে না, আমার মনে আছে।

:কথাটা তো শেষ করতে দিলে না।

-আচ্ছা, শেষ কর

:আমার ইচ্ছে করছিল, ঠিক এ মুহূর্তের মৃন্ময়ীকে দেখতে, দু’বছর আগের মৃন্ময়ীকে না। এইতো, কথা শেষ… আচ্ছা তুমি কাঁদছ না-তো? এতক্ষণ তোমার চোখে চশমা ছিল, এখন তো দেখছি না…

-কিছুটা ক্ষীণ গলায়, না, কাঁদছি না, চোখে বোধয় কিছু একটা পড়েছে… আমাকে দেখা শেষ হয়েছে? পরশু এক্সাম আছে।

:গোলাপ নেবে না।

-এখন যে নিচে নামতে ইচ্ছে করছে না।

:আচ্ছা, ঠিক আছে। ভিক্ষুক টাকা চাইলে টাকার বদলে এই গলাপটা দিয়ে দেব, কেমন হবে?

-আমি এই মর্মে দুঃখ জ্ঞেপন করছি যে, তোমার এই উচ্চ মানের রসিকতায় আমি হাসতে পারছি না। পরশু প্রটিওমিক্স-১ এক্সাম। রাখি এখন?

:হুম, রাখতে পারো। ভাল থেকো।

-ভালো থাকবো, আল্লাহ হাফিজ।

 

দু’মিনিট পর একটা মেসেজ আসলো মৃন্ময়ীর মোবাইলে

‘you will never know-  

what’s written on the snow, 

with the droplet of my blood. 

that was, I love You.’  

 চোখে যেন আবার কিছু একটা পড়েছে; চশমাটা খুলে রাখল মৃন্ময়ী…

 

 

 আকাশ জোড়া মেঘ

:এই ছাড়ো না হাতটা?

উহু, ছাড়বো না

:প্লীজ, খুব লাগছে?

লাগুকমেয়ে হয়ে ছেলেদের সাথে পাঞ্জা খেলার শখ জাগে কেন শুনি? আজ সারাজীবনের মত শখ মিটিয়ে দেবহাহাহা

:এখানে আমার দোষ কোথায়, বল? মাইশাই না আমাকে জোর করে বসিয়ে দিল নাছোড় বান্দা, র কথা না শুনে উপায় আছে! আমার শখ মিটে গেছে, এবার ছেড়ে দাওআমি হার মেনে নিচ্ছি, প্লীজ?

হাত ধরেছি কী ছাড়ার জন্য? ব্যথা লাগছে! লাগবেই তো। তুমি শক্তি ফলাতে চাইছো, লাগবে না? আমি পাটকাঠির মত লম্বা আর লিকলিকে হলে কী হবে, তোমাকে পাঞ্জায় হারানোর মত শক্তি বোধয় আছে।

:মাইশা ত্যাঁদড় টা আবার কই গেল? ধুরর…  

মুহাহাও আসবে নাআপুদুলাভাই হাত ধরে বসে আছে, ওর লজ্জা লাগবে না বুঝি?

:কে দুলাভাই? তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আরাধ্য তাকায় অর্কের চোখের দিকে।

আরাধ্যের তীক্ষ্ণ চাহনী আর অপ্ত বাক্য শুনে মুহূর্তেই এলোমেলো হয়ে যায় অর্কের সবকিছু, – রাগ করো না, এমনি ফান করে বলছি, বলেই আরাধ্যের হাত ছেড়ে, দ্রুত বারান্দায় চলে যায় অর্ক।

 

          আরাধ্য হঠাৎ করে রেগে যাওয়ার কারণটা জানে অর্ক। দু’বছর আগে এই দিনেই দীপ্তের সাথে ব্রেক-আপ হয় আরাধ্যের। পাগলের মত ভালোবাসত দীপ্তকে; দীপ্ত পারেনি সে ভালোবাসার মূল্য দিতে। অন্য একটা মেয়েকে না-কি পছন্দ করত দীপ্ত। দীপ্ত চলে গেলেও তার দীপ্তি আজও রেখে গেছে আরাধ্যের মনে; আজও দীপ্তকে আগের মতই ভালোবাসে আরাধ্যেনা চাইতেই যা পাওয়া যায় মানুষ কেন তার মূল্য দিতে জানে না? মানুষ এমন কেন?’ গ্রিল ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে অর্ক।

এভেবে কেটে যায় বেশ খানিকটা সময়…

:মামনি চা খেতে ডাকছে, তুমি ডাইনিংয়ে আসবে না-কি এখানেই নিয়ে আসবো?

-আরাধ্য, তুমি তখন আমার কথায় খুব রাগ করেছিলে, তাই না? আমি জেনে-বুঝেই তোমার মন খারাপ করে দিলাম। স্যরি, চোখ ছল-ছল করছিল অর্কের।

:না, রাগ করি নাই, বারান্দায় গ্রিল ধরে আকাশের মেঘগুলোর দিকে তাকিয়ে বলে আরাধ্য

আমি তোমাকে শুধুশুধুই সবসময় পুরানো স্মৃতি মনে করিয়ে কষ্ট দেই, বলতে গিয়ে গলাটা ধরে আসে অর্কের।

অর্কের এলোমেলো চুলগুলোতে হাত বুলাতে বুলাতে: চল, মা অপেক্ষা করছে?

এবার আর নিজেকে সামলাতে পারলো না অর্ক, মুহূর্তেই আরাধ্যকে জড়িয়ে ধরে শিশুদের মত কাঁদতে থাকে, –আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি আরাধ্য, খুবখুব ভালোবাসি

আমি জানি, বলেই অর্ককে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, চুলগুলোতে হাত বুলাতে থাকে…

 আকাশেও মেঘ জমছে, আজকে আকাশটাও বোধয় কাঁদবে অর্কের সাথে

অনিমেষ ধ্রুব সম্পর্কে

"You've gotta dance like there's nobody watching, Love like you'll never be hurt, Sing like there's nobody listening, And live like it's heaven on.'' অসম্ভব পছন্দ উইলিয়াম পার্কারের এই কথাগুলো! নিজের মত করেই নিজের পৃথিবীটা কল্পনা করে নিতে ভাল লাগে। ঔদাসিন্য,অলসতা শব্দ দুটি আমার সাথে বনে যায়। গভীর মনোযোগ কিংবা অসম্ভব সিরিয়াস মুড আমার কখনোই আসে না। একা অচেনা রাস্তায় অকারণে হাঁটতে ভালো লাগে, মানুষ দেখতে ভালো লাগে, ভাল লাগে কবিতা লিখতে...তবে স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন দেখি আমার চারপাশে থাকা মানুষগুলোর জন্য কিছু একটা করার, দেশকে কিছু একটা দেয়ার। পারব কি-না জানি না, তবুও স্বপ্ন বুনে চলেছি নিরন্তর... http://www.facebook.com/kamrul.h.hridoy.3
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে গল্প, পাগলামি-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

3 Responses to কিছু টুকরো কথোপকথন…

  1. রুহশান আহমেদ বলেছেনঃ

    অনেক ভালো লাগলো টুকরো দৃশ্যগুলো।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।