স্বপ্নের ভূত

আলাদিনের চেরাগ পেলে কী করবেন এই রকম প্রশ্নের উত্তর ভাবতে মানুষ মনে হয় খুব পছন্দ করে।

তার মাথার ভেতর তখন চিন্তার ঝড় হুড়োহুড়ি করতে থাকে। আসলেই তো! করবো কী! মাত্র তিনটা অপশন!

এই সব চেরাগ নামের ঘোড়ার ডিম যে কোনদিনই আসবে এটা সবাই জানে। কিন্তু ফ্যান্টাসি বলেও একটা জিনিস থাকে।

ফ্যান্টাসি বাদ দিলাম,  এই যে সারাদিন আমরা দৌড়ঝাঁপ করি বিভিন্ন কারণে, তার সর্বোচ্চ ফলাফল নিয়ে তো আমরা ভাবনা চিন্তা করি। (সেটা নিশ্চয় ফ্যান্টাসি না! )

নতুন বাবা – মা হওয়া কোন দম্পতি থেকে শুরু করা যাক। মধ্যবিত্ত।

তাদের চিন্তা ধারা কেমন থাকে? নিজের বাড়ি, নিজের গাড়ি। ছেলে-মেয়ে খুব ভালো স্কুলে পড়ে, সব সময়, সব কিছুতে ফার্স্ট হয়। এই রকম কিছু?

তারপর? সেই ছেলে খুব ভালো রেজাল্ট করবে অন্তত তাদের আত্মীয় স্বজনের মধ্যে সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট।

তারপর ভালো কলেজে, ভালো ভার্সিটিতে। ভালো স্কলারশিপ নিয়ে বাইরে। খুব সুন্দর দেখে একটা বউ আনবে তাদের ছেলের জন্য, অন্তত তাদের (আত্মীয় স্বজনের মধ্যে সবচেয়ে ভালো  )।

তারপর? দেশে না রেখে বাইরে পাঠিয়ে দেই।

বাইরে গেল। খুব ভালো চাকরি পেল। সেখানেও নিরাপদ জীবন যাপন।

এখন এই বাবা-মাকে দেশে রাখবো? নাকি বাইরে পাঠিয়ে দিব?

দুইটাই করি।

১.  দেশে রাখলাম।

নাতিপুতি নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলেন। এর মধ্যে হজ্ব করে আসলেন। সব গুনাহ মাফ। এবার মরে গেলে সোজা বেহেশতে।

২. ছেলেমেয়ে সহ বিদেশে রাখলাম।

খুব সুখে শান্তিতে সময় কাটাতে লাগলেন। এর মধ্যে হজ্ব করে আসলেন। সব গুনাহ মাফ। এবার মরে গেলে সোজা বেহেশতে।

এবার ছেলে মেয়ের দিক থেকে যদি চিন্তা করি।

তার কর্মকাণ্ড থেকে সে সর্বোচ্চ ফলাফল কী আশা করতে পারে?

২০ টা প্রশ্ন থেকে ১১ টা প্রশ্ন পড়ে গেলাম, সেটাই পরীক্ষায় আসলো!

একজন ছাত্র / ছাত্রীর কী এটাই সর্বোচ্চ আশা থাকে? প্রশ্নের ব্যাপারটা একটা উদাহরণ। আসল ব্যাপার হল অনুকূলে থাকা।

আচ্ছা, এই অনুকূলে থাকাটাই আসলেই সবার একমাত্র চাওয়া!

আমি আকাম কুকাম যাই করি, স্রষ্টা যেন আমার অনুকূলে থাকেন।

যাই কিছু হোক, সব আমার পক্ষে থাক।

**********

মোটামুটি এই রকমই মনে হয় আদর্শ জীবন যাপন।

আমরা  কোন না কোন সময় নিজেদের এই আদর্শ জীবন যাপনের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে নিজেরা কতটুকু সফল এটা নিয়ে হতাশ বা আশান্বিত হই।

এখন, আমাদের চারপাশের পারিপার্শ্বিকতার কারণে কিছু স্বাভাবিক চাহিদা এমনিতেই তৈরি হয়। তার মধ্যে যোগ হয় আদর্শ জীবন যাপনের জন্য আরো চাহিদা।

এই সব করতে করতে আমাদের যদি কোন স্বপ্ন থেকেও থাকে, ঐ ব্যাটা মরেই ভূত হয়ে যায়!

এই স্বপ্নের ভূত কি ঐ যে আদর্শ জীবনযাপনকারী বৃদ্ধ আছে তাকেও তাড়া করতে পারে?

স্বপ্নের পেছনে ছোটা মানুষকে যে আদর্শ ভূত তাড়া করে না, এটা কিন্তু জোর গলায় বলা যায়।

করলেও সেটা টের পাওয়া যায় না।

যেমন, আপনি একটা বাসের পেছনে ছুটছেন, আপনার লক্ষ্য বাস ধরা। আপনার পেছনে আর কারা আছে, সেটা কি আপনার জানা খুব বেশি জরুরী?

ইয়াদ সম্পর্কে

সারাদিন আগডুম বাগডুম ভাবি! মন খারাপ থাকলে নিজেই নিজেকে কাতুকাতু দেই! মন ভালো থাকলে উলিয়া উলিয়া করি!
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চিন্তাভাবনা-এ এবং ট্যাগ হয়েছে স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

3 Responses to স্বপ্নের ভূত

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    খাইসে! পুরাই ডিপ!
    কঠিন অবস্থা ইয়াদ!

  2. শারমিন বলেছেনঃ

    দারুণ লিখেছেন ভাইয়া 🙂

  3. মাধবীলতা বলেছেনঃ

    এই সব করতে করতে আমাদের যদি কোন স্বপ্ন থেকেও থাকে, ঐ ব্যাটা মরেই ভূত হয়ে যায়!

    অতি সত্য 🙁

    বাস্তববাদী পোস্ট দিলা ইয়াদ। গুড গুড 😀

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।