পিচ্চি বিড়ম্বনা-2 (জগতের সমস্ত পিচ্চির নিকট ক্ষমাপ্রদর্শনপূর্বক)

 

গত বছরের ঘটনা ।ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গেছি ।এদিকে আমার আসার খবর পেয়ে আপা , দুলাভাই ও একমাত্র ভাগনী(তখন পর্যন্ত সে একাই ছিল) আমাদের বাড়িতে চলে এসেছে ।ছোটবোন ভাগনীর কল্যানে বাড়িতে সিরাম হইচই । একটা উৎসব উৎসব ভাব। আমিও খাই দাই , পিচ্চিদের সাথে পোদ্দারি মারি । তো একদিনের ঘটনা । সকাল বেলা জানালার ধারে বসে ঝিমাইতেছি ।এমন সময় পাশের বাসার এক আন্টি এসে হাজির। বলে রাখা দরকার, ইয়ে মানে আন্টির বিবাহযোগ্য (!) একখানা সুন্দরী কন্যা আছে । আমি ভাবি এই সাত সকালে আন্টি নিশ্চয় কোন সম্বন্ধ টম্বন্ধ নিয়ে এলো কি না! 😛 😛

কিন্তু না ।খানিকক্ষণ ফাও প্যাচাল পেড়ে আন্টি আমাকে যে কথাটা বললো তাতে আমি রীতিমত হতাশ হয়ে গেলাম ।

-বাবা আমার প্রেসার টা মনে হয় বেড়ে গেছে ।একটু মেপে দেখবা ।

মুখ কালো করে বললাম, আচ্ছা দিচ্ছি ।আপনি বসেন ।
বলেই ছোটবোনকে বললাম , শোন আমার বিপি মেশিনটা দে । সাথে কানে কানে এও বলে দিলাম ,আগের অর্ডার ক্যানসেল । আন্টিকে কোন নাশতা দেওয়ার দরকার নাই । যত্তসব । :p :p

খানিকবাদে ছোটবোন এসে জানালো, স্টেথো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ।তবে স্টেথো খুঁজে না পেলেও আন্টির নাশতা টা সে ঠিকই খুঁজে পেয়েছে ।তো যাইহোক স্টেথোর জন্য আমিও একপ্রস্থ খোঁজ দ্যা সার্চ লাগালাম ।ঠিক সেসময় দূশ্যপটে হাজির আমার ভাগনি ।
-মামা কি খোঁজ তুমি ?
-ঐ যে মামনী প্রেসার মাপার জন্য যেটা কানে দেয় না সেইটা! -তুমি দেখেছো ?
-ও দড়ির মতো জিনিসটা তাই না ?
হায় হায় পিচ্চি বলে কি ! :-(আমার এতো দামি স্টেথো নাকি তার কাছে দড়ি ! মুখ কালো রেখেই বললাম ,হুম দড়ি ।  ;-(  ;-(
-দাড়াও ।বলেই সে এক দৌড়ে স্টেথোটা নিয়ে আসলো । বললাম, কোথায় ছিল এটা ?
-আম্মুর ব্যাগে ।এটা আমি যাওয়ার সময় নিয়ে যাব ।তাই আগে ভাগেই তুলে রেখেছি ।

চোখ কপালে তুলে জিজ্ঞাসা করলাম ,এটা দিয়ে মামনি তুমি কি করবা ?
-মামা আমার পুতুলের মাঝেমধ্য অসুখ হয় তো ।
-কি অসুখ ?
-মানে কথা বন্ধ হয়ে যায় ।তখন সেই পুতুলের বুকের ঢিবঢিব শুনবো । তারপর বাবা কি করেন জানো ,ঐ পুতুলের নিচে চাপ দিয়ে ব্যাটারি লাগিয়ে দেন ।তখন আবার কথা বলে ।

আমি রীতিমত অবাক ।এই টুকুন পিচ্চি পর্যন্ত বুঝে গেছে এটা দিয়ে ঢিবঢিব শোনা যায় । আন্টির প্রেসার মাপতে মাপতে মনে মনে হাসছি এই ভেবে যে , ভাগনি আমার ,পুরো মামার যোগ্য উত্তরসূরী হয়েছে । আমিও ওর বয়সে একই কাজ করেছি ।তবে আমি আরেকটু সিস্টেমেটিক ছিলাম ।রীতিমত লিস্ট ধরে গুণে গুণে জিনিস মারিং করতাম ।লিস্টে স্ক্রু ডাইভার থেকে শুরু করে সুন্দর দেখতে ঘড়ি ,রেডিওর চুম্বক কোনটাই বাদ যেত না ।তবে চিন্তার কিছু নাই ভাগনীও মাশা আল্লাহ শিখে যাবে ।

পুনশ্চঃ ভাগনি অবশ্য এখনো আমাকে জানায় নি যে পুতুলের ঠিক কেমন ঢিবঢিব হয় ! :-O:-O

শুকপাখি সম্পর্কে

নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করার অভিপ্রায় বুকে লালন করি সবসময়ই।তাই হয়ত নিরানন্দ মেডিকেল লাইফের বাইরের জগত সম্পর্কে আমার জানার আগ্রহে কমতি নেই,বরং বোধহয় একটু বেশিই।জানতে, জানাতেই লেখার চেষ্টা করি।লেখা সুখপাঠ্য হয় কিনা জানি না,না হলে না হোক;নিজের আনন্দ লাভের এ উপলক্ষ ছাড়তে চাই না কখনই।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিবিধ-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

2 Responses to পিচ্চি বিড়ম্বনা-2 (জগতের সমস্ত পিচ্চির নিকট ক্ষমাপ্রদর্শনপূর্বক)

  1. শারমিন বলেছেনঃ

    মজা পেলুম 😀
    পিচ্চিগুলোএতো কিউট হয় কেন :love:
    বিরাম চিহ্নগুলো একটু ঠিক করে নিও 🙂

  2. মাধবীলতা বলেছেনঃ

    পাকনি পিচ্চি ! অবশ্য উপযুক্ত মামাও বটে ! 😀

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।