আমার মতোন আলসে ছেলে যেইদিন সকাল ৬টায় উঠে এবং সাতটার লেকচার ক্লাস ধরতে যায়, সেই দিনটি ইতিহাসে স্মরনীয় হয়ে থাকবে, এটাই সবার কাম্য ! লেকচার ক্লাসে আমার উপস্থিতি আমার বন্ধু বান্ধবদের অবাক করে দেয়, তাদের কারও কারও হাতে থেকে ব্যাগ পরে যেতে বাধ্য করে, বাধ্য করে কারও কারও নিঃশ্বাস আটকে যেতে! তবুও যাই, যেতে হয়! থার্ড ইয়ারের ক্লাস বেশ কিছুদিন আগে শুরু হলেও আজ আমার অভিষেক ঘটলো, অনুভূতি খুবি খারাপ। আমার মতো সুস্থ্য মানুষের পক্ষে সকাল ৭টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ক্লাস, মাঝে আধা ঘন্টা ব্রেকের নামে তাচ্ছিল্য – এইসব বড্ড কঠিন ! এর মধ্যে দুই ঘন্টা টানা ওয়ার্ডে দাঁড়িয়ে থাকা, প্রচন্ড ভ্যাপসা গরমে রোগী ও মাছির ন্যায় দলবদ্ধ ছাত্র-ছাত্রী নামক শিশুদের মাঝে দাঁড়িয়ে থেকে প্রথম দিনেই আমাশয় রোগী হয়ে গিয়েছি, পায়ের পাতা যেনো পামির মালভূমিতে রুপ পেয়েছে
মনকে চাঙ্গা করতে বন্ধুবর তাহসিনকে সাথে নিয়ে গেলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত গুরু অংকুরদার পদধুলি নিতে, সদরঘাটে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কক্ষে গোপন নীলনকশা খচিত হলো, সে নীল নকশা অজস্র খাদ্যের হন্তারক !
প্রথমেই গেলাম হাজী মাখন সাবের বিরিয়ানী খেতে। স্থান হলো, রায় সাহেবের বাজার, বিউটির উলটা পাশেই। জগন্নাথ ইউনিভার্সিটির মেইন গেটের দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে হাতের বাম দিকে মিনিট আটেক হেঁটে গেলে রাস্তার ওপাশে একটি চিপা গলি পাওয়া যাবে। ৫০ টাকায় অত্র ঢাকা শহরে এতো গোশত সহকারে আর কেউ আপনাকে বিরিয়ানী দিবে বলে জানা নাই! খেতে ভালো, বেশ ভালো। অসাধারণ বলবো না, তবে মাংশের পরিমানে বেশ ভালো !

হাজী মাখনের বিরিয়ানী (ছবি নেয়া হয়েছে ফেসবুক পেইজঃ Puran Dhakar Khabar থেকে
কমান্ডার অংকুরের নির্দেশে আমরা খাওয়া শেষ করে দাঁতের মাঝে আটকে পরা যুদ্ধ বন্দীরুপী গোশতের তন্তুকে টেনে বের করতে করতে হাঁটা দিলাম। হাঁটতে হাঁটতে সোজা গেলাম প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার। কী আছে সেখানে ! কেনো মালভুমি রুপী পায়ের পাতার উপর এতো অত্যাচার, এতো ত্যাগ স্বীকার?
যা খেলাম দাদা ! যা খেলাম, এর তুলনা শুধু এই ! খেলাম মালাই চিড়া। দোকানের নাম ” শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সেতাবুর এন্ড সন্স”। খাদ্য ঐতিহাসিক অংকুরদার মতে এক সময় এই মালাই চিড়াতে মালাই এর অত্যাধিক উপস্থিতি লক্ষ্যনীয় ছিলো, দামে কুলাতে না পেরে এখন মালাই এর পরিমান কমে গেলেও, স্বাদ কমেনি এতোটুকুও ! দোকানের বেঁচা-বিক্রী কেমন হলে একটা দোকানে বিক্রেতা শুধু মালাই-চিড়া বিক্রী করবার সাহস রাখেন? একমাত্র পন্য এই দোকানের এই মালাই চিড়া। খেলাম, তৃপ্তি পেলাম। মুল্য, মাত্র ত্রিশ টাকা।
পেট খালি করা দরকার, আরও পদ বাকি খাবার। হেঁটে হেঁটে গেলাম ইতিহাসের রানের উপর আশ্রয় নিতে। গেলাম হাঁটতে হাঁটতে বিউটি বোর্ডিং এ। হলুদ বিল্ডিং আর লাল ইটের চেহারা নিয়ে বিউটি বোর্ডিং দাঁড়িয়ে আছে এখনও গৌরব নিয়ে। প্রচন্ড শোরগোলের এলাকা বাংলাবাজারে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও বোর্ডিং এর ভেতরে আশ্চর্য নিস্তব্ধতা।

বিউটি বোর্ডিং (ছবি কৃতজ্ঞতাঃ প্রিয় ডট কম)
ফুলের বাগান আর প্রাচীন স্থাপত্য চোখে অন্যরকম প্রলেপ বিছিয়ে দেয়। অন্তত একরাত থাকবার ইচ্ছে পোষন করতে লাগলাম, গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম থাকা যায় কি না এখনও। সিঙ্গেল বেড ২০০-২৫০ টাকা। ডাবল বেড ৪০০-৪৫০ টাকা। কোন এক পুর্ণিমাতে বাংলা সাহিত্যের দিকপালদের ভুতকে সালাম ঠুকতে থাকবো হয়তো একরাত।
পেট খালি হবার সিগন্যাল পাওয়া মাত্র ছুটে গেলাম ক্যাফে কর্নারে। ক্যাফে কর্ণার এর অবস্থান মালাই চিড়ার দোকানের একেবারে সাথেই। ফিল্ড মার্শাল অংকুর দোকানীকে কী যেনো “কাঞ্চু কাঞ্চু” বলতে লাগলো। পরে বুঝতে পারলাম, যে খাদ্যটি খেতে যাচ্ছি, তার নাম “ক্রাম চপ”। খাসির গোশ্ত কিমা করে তা ব্রেড গ্রাম/ বিস্কিটের গুড়া ও ডিম দিয়ে ভাজা এই পদের নাম ক্রাম চপ। সাথে থাকে শসার সালাদ। টেবিলে মসলা, লবন ও টক পানি দেয়া থাকে। সালাদের সাথে মাখিয়ে খেতে পারেন। ক্রাম চপ খেতে কেমন? অসাধারণ! প্রতিটা কামড়ে কামড়ে আপনি বুঝতে পারবেন, হ্যা মাংশ আছে ! নতুন ঢাকার বার্গার স্যান্ডুইচের মতো “ক্রাশড” হয়ে যায় না এদের মাংশ, দাঁতে নিজেদের আইডি দিয়ে লগ ইন করে যায় প্রতিটি মাংশের টুকরো। ৮০ টাকায় এরকম উৎকৃষ্ট খাদ্য, ঢাকার এপাড়ে আমি আশাও করি না। চমৎকার!
হাঁটা আর খাওয়া আর সকালের ক্লাস-ওয়ার্ড, সব মিলিয়ে ক্লান্ত আমি যখন মাদকসেবীদের মতো ঢুলতে ঢুলতে হাঁটছি, গেলাম প্রিয়মুখ বিউটিতে। এই বিউটি নাজিরাবাজারের বিউটি না, এই বিউটি সদরঘাটের (রায় সাহেবের বাজার) বিউটি।

বিউটি লাচ্ছি ফালুদা (ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ব্লগার ধ্রুবো, প্রথম আলো ব্লগ)
১৫ টাকার লেবুর শরবত আর ৩৫ টাকার স্পেশাল লাচ্ছি মনে করিয়ে দিবে, শ্যালকের জায়গা একটা ! শ্যালকের, কেন এখানে জন্মাইলাম না !!! এছাড়াও লাচ্ছির সাথে আছে ফালুদা, সেটাও আরেক জিনিস !

ফালুদা বানানোর দৃশ্য (ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ব্লগার ধ্রুবো, প্রথম আলো ব্লগ)

ফালুদা উইথ বরফ কুচি ! (ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ব্লগার ধ্রুবো, প্রথম আলো ব্লগ)
খাওয়া দাওয়া, স্ফুর্তি-ক্লান্তির পরে কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, দিনের সবচেয়ে সুন্দর মুহুর্ত কি ছিলো? আমি বলবো, দিনের সবচেয়ে সুন্দর মুহুর্ত সদরঘাটের ঐ মোড়, যেখানে বিশ্বজিত কোপ খেয়েছিলো! সে মোড়ের এ পাশে কবি নজরুল ইসলাম কলেজের মসজিদের ন্যায় ডোম শোভা পায়, ও পাশে ফাদার ফ্রান্সিস বোর এর গড়ে তোলা সেইন্ট গ্রেগরী স্কুল, এদিকে বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল চৌধুরীর পিতা জগন্নাথের নামে জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি, যে জগন্নাথ স্মরণ করিয়ে দেয় বিষ্ণুকে। এই যে ধর্মের দেয়ালকে ডিঙ্গিয়ে সর্বস্তরের মানুষের মিলনমেলা সদরঘাট, আমি এমন একটি স্বপ্ন দেখি। ঢাকা থেকে সারা বাংলাদেশ হয়ে উঠুক একটি সুন্দর সদরঘাট।
পোস্টের সাথে পুরান ঢাকা ঘুরে এলাম। অনেক ভালো লাগলো। খাবার দাবার নিয়ে দেওয়া তোর স্ট্যাটাস বা পোস্টগুলো একটু বেশি রকমের ভালো হয়। হাজী মাখন সাবের বিরিয়ানী খাইনি 🙁 বিউটির লেবুর সরবত আমার খুব প্রিয়,কিন্তু ফালুদা ও লাচ্ছিটা খাওয়া হয় নাই। 🙁
আই লাভ পুরান ঢাকা- 🙂
না খাওয়া জিনিসগুলো দ্রুত খাইয়া নেয়া উচিত, দুই দিনের পৃথিবী, না খাইলে ক্যামনে কী !
khida laigga gelo re nishoimma…
আমি সফল ! আলহামদুলিল্লাহ ! :happy:
খাইতে মুন চায়!!
আমারও 😳
চল এমন ট্যুর দেই একদিন!
তুই কি আমাদের লাস্ট সেই ট্যুর এ ছিলি?! চরম খাওয়া দাওয়ার ট্যুর এ?
:fire: আপনেরে গুল্লি !! না নিয়ে আবার জিজ্ঞাস করেন যে গেছিলাম নাকি !!! আগের ও এইবার – দুইটা ট্রীট পাওনা আপনের কাছে। এবারেরটা হবে চ্রম টু দি পাওয়ার চ্রম ট্যুর !
বোহেমিয়ান ভাইয়া কোন দুই কালে আমাকেও আলাদা আলাদা ভাবে দুইখানা ট্রিট দিবেন বলেছিলেন… দেন নাই!! :dhisya:
আগের ট্যুরের কথা তো আমি জানিই না!! :crying:
এইবার আগেরটা পুষিয়ে না দিলে :fire: :fire: :fire:
এইটা কিছু হইলো!!
এই রাত সাড়ে চারটার সময় খিদা লাগায়ে দিলেন!!
এখন পেট বাবাজির চিৎকার চেচামেচি ক্যামনে থামাই??