ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী অনুষদের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল- প্রতি বছর চতুর্থ বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের ইণ্ডিয়া ট্যুরে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ট্যুরের জন্য প্রথম বর্ষ থেকে আমরা নানা জল্পনা কল্পনার মধ্যে বাস করি। কবে যাবো, কিভাবে যাবো, কি দেখবো, কি কিনবো, কি করবো… কতই না ভাবনা! কতই না পরিকল্পনা! বন্ধুদের সাথে যেকোন জায়গাই উপভোগ্য হয়ে ওঠে। আর যদি ট্যুরটা হয় দেশের বাইরে তাহলে তো কথাই নেই! তাছাড়া আমাদের অনেকের জন্য এই ট্যুর ছিল প্রথম দেশের বাইরে যাওয়ার একটা সুযোগ।
জীবনে প্রথম দেশের বাইরে যাওয়া নিয়ে প্রতিটি মানুষেরই আগ্রহের শেষ থাকে না। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পার করে ভিসা পেলাম। ৬ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর- ১৭ দিনের ট্যুর। কলকাতা, আগ্রা, জয়পুর, কাশ্মীর, দিল্লী – এই পাঁচটি ষ্টেটে যাওয়া হবে।
০৬/০৯/২০১৩ –
রাত ১১ টায় মোকাররম ভবন থেকে আমাদের বাস ছাড়ার কথা কলকাতার উদ্দ্যেশ্যে। রাত ১০ টায় বাসা থেকে বের হওয়ার পর দোয়েল চত্বরের কাছাকাছি এসে ছিনতাই হয় আমার ব্যাগ যেটায় আমার পাসপোর্ট আর ডলার ছিল।
বিপদে খুব কম পরেছি জীবনে। এরকম বিপদেও যে মানুষ পরে তা কল্পনার বাইরে ছিল। মোকাররম ভবনে এসে আমার দুর্ঘটনার খবর বললাম সবাইকে। আমার বন্ধুরা ব্যাস্ত হয়ে পড়ল কোন বিকল্প পথ বের করা যায় কিনা। যে এলাকায় ছিনতাই হয়েছে সেখানেও কয়েকজন গেল যদি পাসপোর্ট টা পাওয়া যায়। কিন্তু পাওয়া গেল না। আমি বুঝতে পারছিলাম যে আমার যাওয়া হবে না। এদিকে বাসও ছাড়া দরকার, আর আমার বন্ধুরাও আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। ওদেরকে শেষমেশ জোর করে বাসে ওঠালেন আমাদের স্যারেরা। সিনিয়র ভাইয়েরা এসেছিলেন আমাদের বিদায় জানাতে। তাদেরকে কিংকর্তব্যবিমুঢ় অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। বাসটা আমার চোখের সামনে দিয়ে চলে গেল, আর তখন পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম যে আমি যাচ্ছি না।
বাসায় আসার পর আম্মুর কান্না দেখে সহ্য করতে পারছিলাম না। বাবা জিডি করাতে গেলেন। আব্বু আম্মুকে সান্তনা দিতে দিতেই রাত কেটে গেল।
আমার আম্মু বলছিলেন- তোমাকে এত বড় একটা কষ্ট আল্লাহ্ কেন দিল? এত নিষ্ঠুর আল্লাহ্ কিভাবে হল? আম্মুকে তখন একটা কথাই বলেছিলাম যে আম্মু, আল্লাহ্ আমার সাথে কখনও কোন বিষয়ে অবিচার করেন নি। এবারও হবে না। শুধু তুমি একটু ধৈর্য রাখো। তোমাদের কষ্ট পেতে দেখলেই বরং আমার বেশী খারাপ লাগবে।
ওদিকে বাস থেকে আমার বন্ধুরা আমাকে ক্রমাগত ম্যসেজ আর ফোন দিয়ে চলেছে। সবারই মন খারাপ। কেউ মানতেই পারছে না, আবার কেউ কেউ বলছে আমি যেন নতুন করে পাসপোর্ট, ভিসা করে ১ দিনের জন্য হলেও আসি। আমি তাদেরকেও বুঝালাম যে এটা সম্ভব না, আর সান্তনা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
০৭/০৯/২০১৩
পরদিন সকাল বেলা উঠে দেখলাম করার কিছুই নেই। ১৭ দিন কিভাবে কাটাবো ভেবে পাচ্ছি না। দুপুরের দিকে ভাবলাম একটু বের হই বাসা থেকে। বের হতে যাবো এমন সময় শুনলাম শাহবাগ থানার ওসি এসেছেন আর আমার পাসপোর্ট পাওয়া গেছে।
লাক/ ভাগ্য বলতে কিছুতে আমি বিশ্বাস করি না। শুধু এটুকু বিশ্বাস করি যে মানুষের দোআ সাথে থাকলে অনেক কিছু সম্ভব হয়। আমার সাথেও তাই হল। পাসপোর্ট পেলাম দুপুর সাড়ে তিনটায়। সেদিন রাতেই কলকাতা যাওয়ার একটা ফ্লাইট ছিল রাত ৯টায়। সৌভাগ্য আরেকবার কাজ করল। পেয়ে গেলাম টিকেট। বিকালে আমার বন্ধুদের যখন জানালাম আমার পাসপোর্ট পাওয়ার কথা, তখনো তারা কলকাতায় হোটেলে যেয়ে পৌঁছে নি। জীবনে প্রথম প্লেনে উঠার অভিজ্ঞতা যে এভাবে হবে কল্পনাও করিনি। একা একা যেতে বেশ ভয়ও পাচ্ছিলাম আগের রাতের ওই দুর্ঘটনার পর।
আমার বান্ধবীকে আমি ট্যুরের আগে একবার বলেছিলাম যে জীবনে প্রথম দেশের বাইরে যাচ্ছি, তাও আবার বাসে করে। ব্যাপারটা ভালো লাগছে না। আল্লাহ্ হয়ত আমার সেই আক্ষেপ (!) ঘুচিয়ে দিলেন।
প্লেনে আমার পাশে খুবই বয়স্ক একজন ভদ্রলোক ছিলেন। আমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পর হিন্দিতে বললেন- গুড়িয়া, তু পেহেলি বার যা রাহি হে প্লেন সে, ও ভি আকেলে! ম্যায়নে মেরা সাত্তার সাল কি উমার মে অ্যায়সা কাভি নেহি দেখা। বিলকুল ডারনা মাত বাচ্চি, তু বহত আগে জায়েগি। …… আরও কি কি যেন বললেন, বুঝিনি।
সাহস পেলাম উনার কথায়। আর বিশ মিনিটের মাথায় পৌঁছেও গেলাম কলকাতায়। পরে শুনলাম এই পথটুকুই বাসে যেতে নাকি ওদের ১৮ ঘণ্টার মত লেগেছিল। অবাক হলাম আরেকবার। ট্যাক্সি করে পৌঁছলাম “হোটেল ওরিয়েন্টালে”। পরিচিত মুখগুলোতে হাসি দেখে স্বস্তি পেলাম।
এভাবেই আমার ট্যুর শুরু হল দাদাদের দেশে। ট্যুরের ট্রেন জার্নিগুলোর সময় প্রতিদিনের সব গল্প লিখে রেখেছি আমার ছোট্ট নোটবুকে। সব গল্পই বলা হবে আশা করি। আজকে এটুকুই। 🙂
আপু, ৪র্থ বর্ষে আমাদেরও নিয়ে যাবে বোধয় :guiter:
তাই নাকি? বাজি ধরে বলতে পারি জীবনের সবচেয়ে অসাধারণ কিছু দিন কাটিয়ে আসবা। :happy:
ফেবুতে আপনার লেখাটা কেউ একজন শেয়ার দিয়েছিলো, তখন পড়েছিলাম। পাসপোর্ট হারানো্র ঘটনায় ব্যাপক ভয় ও কষ্ট পেয়েছিলাম, আর যখন ফিরে পেলেন, এতো খুশি লাগলো যেনো আমিই আমার হারানো কিছু ফিরে পেয়েছি। অনেক মজা করে ঘুরে আসুন, আর মজা করে লিখে ফেলুন, যাতে আমরা পড়ে মজা পাই। ভালো থাকবেন।
আমার নিজেরই এখনও বিশ্বাস হয়না যে এরকম কিছু আসলেই ঘটেছে!
ঘুরে এসে পরেছি। আস্তে আস্তে লিখে ফেলবো পুরোটা। ধৈর্য নিয়ে পড়ার আর মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ নিশম। 🙂
আমি ভাবছি অন্য কথা। এতদিন ফোর্থ ইয়ারে ট্যুরে নিয়ে যাওয়া হত, কারণ এটাই ছিল ফাইনাল ইয়ার। এখন আমাদের সময়ও কি ফোর্থ ইয়ারেই ট্যুরটা হবে, নাকি ফিফথ ইয়ারে হবে? ফিফথ ইয়ারে হলে তো আমাদের এখনও তিইইইন বছর বাকি!! 🙁 🙁
বাই দ্য ওয়ে… ফিল্মি শুরুর পরবর্তী পর্বগুলো পড়ে আরও বেশি হিংসিত হবার অপেক্ষায় রইলাম! 😛
:happy:
কঠিন হচ্ছে।
কন্টিনিউ করো।
পরে যে কী ভালো লাগবে!
আর আমরা পাঠকরা তো বাড়তি বোনাস পাচ্ছিই!
সব শেষে ইবুক করতে হেল্পাবোনে… মানে নেটওয়ার্ক করিয়ে দেবো নে 😛
আমি ৪ টা দেশে গিয়েও কিছু লিখতে পারি নাই 🙁
ভাইয়া, ফোন করে দিতে ভুলবেন না যেন… 😛
আমি খালি পড়লামই… 🙁
ভাল লাগল….আহা কবে যে এমন ভ্রমনে যেতে পারব।….:(