–‘আমরা’ শব্দের ব্যাসবাক্য বল?
:আমি, তুমি ও সে মিলে হল ‘আমরা’, এইটা তো ক্লাস নাইনে পড়েছিলাম বোধয়?
–একটু আগে অ্যান্টির সাথে টেলিফোনে কী বললে, ‘মামনি আমরা লেকের পাড়ে বসে গল্প করছি।’ গল্প করছি আমি আর তুমি, আমাদের সাথে তো আর কোন থার্ড পার্সন- ‘সে’ নাই, তাহলে ‘আমরা’ শব্দের ব্যাসবাক্য ‘আমি, তুমি ও সে’ হয় কীভাবে!
:এই মেয়ে, এদিকে এসো তো? গোলাপের পিস কত করে? লিলি জোরে ডাক দিল।
–হঠাৎ, ফুল কেন? আমার প্রশ্নের কোন উত্তর খুঁজে পেলে?
:হুম পেয়েছি, ঐ যে মেয়েটা আসছে মানে আমাদের মাঝে একজন থার্ড পার্সনের প্রবেশ ঘটতে যাচ্ছে। এবার তো ব্যাকরণগত ভাবেই ‘আমরা’ হলাম, তাই-না? বলেই ফিক করে হেসে দেয় লিলি।
-আমি সিরিয়াসলি জানার জন্য প্রশ্নটা করেছিলাম, পাংশু মুখে লিলির দিকে তাকায় শাহেদ।
:আমিও সিরিয়াসলি উত্তর দিয়েছি উইথ অ্যা রিয়েল লাইফ এক্সামপল! আমাকে টিচার হিসেবে কেমন মানাবে? দশে কত দেবে? মুচকি হেসে শাহেদের দিকে তাকায় লিলি।
–মাইনাস দশ! সঠিক উত্তর–তো জানোই না, তারপরাবার মনগড়া, অদ্ভুত, ফালতু উত্তর দিচ্ছ বাস্তব উদাহারণ দিয়ে! তোমাকে–তো মাইনাসই করা উচিত।
:তুমি কিম্ভূত প্রশ্ন করতে পারবা, আর আমি অদ্ভুত উত্তর দিতে পারব না? আজুব তো!
-‘আজুব’ আবার কী শব্দ?
:আজিব + আজব = আজুব । ই + আ মিলে ‘উ’, স্বরসন্ধির নিয়ম ভুলে গেছ?
-স্বরসন্ধিতে এমন নিয়ম আদৌ ছিল! কী জানি, মনে নাই, কত আগে পড়েছিলাম। আমি ফিজিক্সের ছাত্র, আমার ও’সব মনে থাকার কথাও নয়… যা-হোক, বোর্ড বইটা এখনও বাসায় আছে , বাসায় গিয়ে দেখে নেবো।
:এইতো বৎস, লাইনে আসছ! তুমি ফিজিক্সের ছাত্র, সমাস নিয়া তোমার এত মাতামাতি থাকবে ক্যান; আমি মাইক্রো–তে পড়ি , আমাকেই বা এসব জিগাবা ক্যান? তুমি যদি ফান করে বলতা, তাহলে মেনে নিতাম, কিন্তু তুমি বলছ সিরিয়াসলি! সব জায়গায়, সব কিছুতে আতলামী আমার পছন্দ না যদিও আমি নিজে খুব পড়ুয়া-টাইপ মেয়ে ।
দু’জনেই শব্দ করে হেসে উঠলো…
:চল একটা ছবি তুলি, কখনোই তো আমরা একসাথে ছবি তুলি না, চল-না আজ একসাথে একটা ছবি তুলি?
-ছবিতে আমাকে খুব বাজে দেখায়। আচ্ছা, আমি তো দেখতে খারাপ না, তাহলে ছবিতে অমন দেখায় কেন?
: অন্যান্য সময় যেমন নরমাল থাকো, ছবি তোলার সময় তেমন থাকো না তাই হয়তো… নরমাল থাকবে, তাহলে–ই ছবি সুন্দর আসবে।
–হুম, দেখি… আচ্ছা, ছবি কে তুলে দেবে?
:আমি-ই তুলব! তোমার ডান কাঁধে বা-হাত রেখে ডান হাতে ছবি তুলবো, বলেই মিষ্টি করে হাসে শাহেদ।
-খবরদার! আমার কাঁধে হাত রাখবে না, কেউ আমার গায়ে হাত রাখলে আমার কেমন যেন আসফাঁস লাগে, ভুরু কুঁচকে আসে লিলির।
:অন্য কেউ তো না, আমি রাখছি।
-না।
:আচ্ছা ঠিক আছে, আরেকটু কাছে এসো বস।
ছবি তোলার আগ মুহূর্তে শাহেদের বাঁ-হাত লিলি নিজেই তার কাঁধে তুলে নিল। লিলির দিকে তাকিয়ে, মিষ্টি করে হাসে শাহেদ।
: : : : : : : : : : :
হঠাৎ, কলিংবেলের শব্দে বাস্তবে ফিরে আসে লিলি। ভাবে, শাহেদ এসেছে বোধয়।
শাহেদের সাথে লিলির বিয়ে হয়েছে আজ পাঁচ বছর হল। ওদের কোন সন্তান হয়নি। সমস্যাটা যদিও লিলির; শাহেদের ভালোবাসায় কোন ভাঁটা পরেনি তাতে। শাহেদ আগের মতনই ভালোবাসে লিলিকে। গভীর রাতে যখন লিলি ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে, তখন শাহেদ ও’র বাঁ হাতে লিলিকে জড়িয়ে রাখে আর বলে, আমি আর তুমি ইকুয়ালস টু হলো ‘আমরা’; আমাদের পৃথিবী-টা থার্ড পার্সন বিহীন-ই থাকুক না। আমাদের জগতটা না’হয় একটু অন্যরকমই হলো…
আবার বেল বাজার শব্দ, ছবিটা আঁচলে আলতো করে মুছে, নিজের ডায়েরীতে রেখে,দরজা খুলতে যায় লিলি, অনেকক্ষণ ধরেই বেল টিপছে শাহেদ…
মিশ্র ভাষায় লেখা।
স্বরসন্ধিতে ই+অ→ এ হয়, যদ্দুর জানতাম। আর এই দু’টো শব্দ মিলে ধ্বনি পরিবর্তনের নিয়মে তো ‘আজ্জেব’ হবার কথা মনে হয়!
শেষটা ভালো ছিল! তবে আরেকটু অন্যরকম হতে পারত হয়ত…
ই+অ→ য-ফলা হয়। যেমনঃ অতি + অন্ত = অত্যন্ত। অ + ই = এ- কার হয়, যেমনঃ শুভ + ইচ্ছা = শুভেচ্ছা। আমি গল্পটা লাইব্রেরীতে বসে লিখেছিলাম, মনে ছিল না, এখন বই দেখলাম। তবে একটা চালাকি করছিলাম লেখার সময় 8) লিলি আজিব/আজ্জব/ আজব এগুলা বলে না, তার টাইটেল ‘আজুব’, তাই সে আজুব বলে তার একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে চেয়েছে কারণ সে জানতো, প্রশ্নটার উত্তর শাহেদ জানে না। বেশি প্রাণচঞ্চল মেয়েরা এমনটা করেই থাকে কি-না 😛 (আমিও সেফ জোনে লিলিও থাকুক! :guiter: )
* আমিও সেফ জোনে থাকি, লিলিও থাকুক
:babymonkey:
আয় তোরে কদমছাঁট দিয়া দেই! :cuthair: … 😛
:dhisya:
vai khub valo laglo. asa kori emon lekha aro pabo.
চেষ্টা থাকবে তবে,
সেজন্য যে সাথেও থাকতে হবে 😛
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া 🙂
শেষটা সুন্দর 😀
🙂 … :love:
দুনিয়ায় সুখ নাইরে 🙁
তবু কেন হায় সুখের নেশায়
জগত চষে বেড়াও
সুখ পেতে পারো বাড়ির উঠোনে
বন্ধু যদি তুমি চাও। 🙂
মাধবী’পু সুখ আছে তো!… 😛