জিডিপি নিয়ে কিছু ভাবনা

মহামান্য অর্থমন্ত্রী এবং অন্য রাজনীতিবিদগণ বাংলাদেশের জিডিপি গ্রোথ নিয়ে অনেক কচকচান এবং জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করেন আমদের অর্থনৈতিক অবস্থা সেইরকম। তাই জিডিপি নিয়ে কিছু কথা বলব এবং বাকিটুকু আপনারা নিজেরাই বিচার বিবেচনা করে দেখবেন।

জিডিপি হল গ্রস ডমেস্টিক প্রোডাক্ট এর সংক্ষিপ্ত রূপ। একটা দেশে একটা নিদির্ষ্ট সময়ের মধ্যে যত পণ্য উৎপাদিত হয়েছে তার বাজারমূল্য এর সমষ্টি হচ্ছে জিডিপি। সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচিনা করার জন্য এটা একটা ভাল মানদণ্ড। সাধারণত এটা প্রতি চারমাস পর পর অথবা এক বছর পর পর গণনা করা হয়। জিডিপিকে নিম্নের সমীকরণ দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

Y= C+I+G+ X-M (X-M= Net Export)

এখানে, Y= জিডিপি, C= ভোগ্য পণ্য, I= বিনিয়োগ পণ্য, G= সরকারি ব্যয় X= রপ্তানী পণ্য, M= আমদানী পণ্য

সুতরাং এই পাঁচ ধরণের পণ্য মিলে জিডিপি গণনা করা হয়। হিসাবের সুবিধার্থে অনেক জিনিসই জিডিপির অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। যেমন আমাদের নিজ নিজ বাড়িতে এমন অনেক জিনিসই তৈরি হয় যা কখনো বাজারে প্রবেশ করে না তাই এগুলোর কোন বাজার মূল্য নেই এবং তাই জিডিপিতে এগুলোর মূল্য প্রতিফলিত হয় না। তাছাড়া অবৈধ কার্যকলাপের মাধ্যমে তৈরি পণ্য যা বাজারের বাইরে কেনাবেচা হয় সেগুলোও জিডিপির অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই একটি দেশে যত বেশি এধরণের শ্যাডো অ্যাক্টিভিটি বেশি হয় তার জিডিপি সাফার করে তত বেশি। বাংলাদেশের জন্য এই দিকটা একটা বড় নেগেটিভ। কারণ বাংলদেশে এধরণের অবৈধ কার্যকলাপ অনেক বেশি। সুতরাং বাংলাদেশের অ্যাকচুয়াল জিডিপি আরো অনেক বেশি হতে পারত যদি দূর্নীতি, চোরাচালান, স্মাগ্লিং এসব কমিয়ে আনা যেত।

তারপর উপরের সমীকরণ থেকে দেখা যাচ্ছে আমদানী পণ্য জিডিপি থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হয়। সুতরাং আমদানী যত বেশি জিডিপি তত কম। বাংলাদেশের বর্তমান জিডিপি প্রায় ১১০০০ বিলিয়ন টাকা। আমদানি ১৭৩৮ বিলিয়ন টাকা, রপ্তানি ১২৭৮ বিলিয়ন টাকা। সুতরাং বাংলাদেশের নেট এক্সপোর্ট নেগেটিভ, যেটা আমেরিকা, জার্মানী, জাপানের মত উন্নত দেশগুলোতে পজিটিভ এবং একারণে সেসব দেশের জিডিপিও বেশি।

তারপর আসি বিনিয়োগের কথায়। বিনিয়োগ নতুন মূলধন সৃষ্টি করে যা কিনা পরবর্তীতে উৎপাদন বাড়াতে তথা জিডিপির গ্রোথ বাড়াতে সাহায্য করে। তাই জিডিপির মধ্যে বিনিয়োগের সিগ্নিফিক্যান্ট কন্ট্রিবিউশন থাকা প্রয়োজন। এদিক থেকেও বাংলাদেশের উন্নতির যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিনিয়োগের ঝুঁকি বাড়ায় তথা বিনিয়োগ কমে যায়।

সরকারি ব্যয় এর অন্যতম উৎস হচ্ছে ট্যাক্স। কাজেই ট্যাক্স ফাঁকিতে ওস্তাদ বাঙ্গালীগণ যদি একটু সচেতন হন তাহলে জিডিপিটা আরেকটু মোটাতাজা হয়।

জিডিপি দুই ধরণের। নমিনাল জিডিপি এবং রিয়াল জিডিপি। নমিনাল এর সবচেয়ে সিম্পল হিসাবঃ পণ্যের মূল্য * পণ্যের পরিমাণ। সুতরাং পণ্যের পরিমাণ না বেড়ে যদি শুধু পণ্যের মূল্য বাড়ে তাহলেও নমিনাল জিডিপি বেড়ে যাবে। অথচ আমরা ঠিক এটা বলতে পারব না যে মানুষের চাহিদা পূরণের জন্য ইকনমির ক্ষমতা বেড়েছে। কারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে নি। সেদিক থেকে নমিনাল জিডিপি অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঠিক মানদণ্ড নয়। রিয়াল জিডিপি মূল্যের পরিমাণকে ধ্রুবক রেখে শুধু পরিমাণ এর পরিবর্তন হিসাব করে। কাজেই রিয়াল জিডিপি আরো ভাল মানদণ্ড। তাই ঠিক কোন জিডিপির কথা বলা হচ্ছে সেটা খতিয়ে দেখা উচিত।

তারপরে আছে জিডিপির উপর মূল্যস্ফীতির প্রভাব। মূল্যস্ফীতি দেখায় ওভারঅল মূল্য লেভেলের পরিবর্তন, সবকিছুর দাম আগের তুলনায় শতকরা কত বেড়েছে বা কমেছে সেটা। ধরা যাক জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৬%, মূল্যস্ফীতি ৬%। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬% এর অর্থ ইকনমিতে এখন যে পরিমাণ পণ্য উৎপাদিত হয় তার মূল্য ১০৬ টাকা আর গতবছর এটা ছিল ১০০ টাকা। মূল্যস্ফীতি ৬% এর অর্থ আগে যে জিনিসটার দাম ছিল ১০০ টাকা এখন সেটার দাম ১০৬ টাকা, সুতরাং জিডিপি বেড়েছে। এখন জিডিপি প্রবৃদ্ধি যদি ০ হয় এবং মূল্যস্ফীতি যদি হয় ৬% তাহলেও কিন্তু বলা যাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬%। কাজেই জিডিপি মূল্যস্ফীতির সাপেক্ষে অ্যাডজাস্ট করা হয়েছে কিনা সেটাও দেখার বিষয়।

সম্পদ বণ্টনেরও একটা বিষয় আছে। একটা দেশে যত পণ্য বিক্রি হয় তার সিংহভাগ যদি দেশের সংখ্যালঘু ধনী লোকরা কিনে ফেলে আর বেশিরভাগ গরীব মানুষরা ভাগে যৎসামান্য পায় তাহলে জিডিপি বা জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধি কোনটাই বাহবা পাওয়ার যোগ্য নয়। সুষম বণ্টনও নিশ্চিত করা দরকার। আমাদের অর্থমন্ত্রী ওই বণ্টনের কিছু জানেন না অবশ্য। জানবেনই বা কি করে?? চার হাজার কোটি টাকা তাঁর কাছে মাত্র লাগে কিনা!!

এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিবিধ-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

2 Responses to জিডিপি নিয়ে কিছু ভাবনা

  1. মাধবীলতা বলেছেনঃ

    অর্থনীতি আর জিডিপি নিয়ে অনেক কিছু জানলুম !

  2. priyanka sultana বলেছেনঃ

    anek kichu janlam….banglai kichu khuje pawa ta akhon khub kothin hoye dariyeche…sob thke beshi somossa indian der.higher studies er khetre bangla booy pawa jaina.onno dike school level e banglai poranor somoy 2nd language english ta k adou sekhano hoyna.
    tai internet e amon banglai kono lekha khuje pele mone hoy morubhumi te joler khoj pawa gache..osonkho dhonnobad…dirghojibi houn…

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।