সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক আমাদের জীবনে এনে দিয়েছে নতুন এক মাত্রা। যে কোন বিষয়ে খুব সম্ভবত এখন পত্র-পত্রিকার আগেই ফেইসবুক/টুইটারে আমরা খবর পেয়ে যাই। তো কিছুদিন আগে ফেইসবুকের নিউজফীডে একটা নিউজ খুব বেশি শেয়ার হতে দেখলাম, দেখে মোটামুটি ভিমড়ি খেলাম। প্রথম আলোর একটি রসালো খবর করেছে, পবিত্র যৌন জিহাদে নাকি যাচ্ছে তিউনিসিয়ার মেয়েরা! (( http://www.prothom-alo.com/international/article/48975/)) ধর্মতত্ত্বে আমার ব্যক্তিগত আগ্রহ আছে, তাই ইসলাম নিয়ে যেটুকু পড়াশোনা আছে এইরকম কোন প্রথা প্রচলিত আছে বলে জানি না। তবে তিউনিসিয়ার স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন বলে কথা ! স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গোছের লোকেরা অনেক কথাই বলে থাকে, আমাদের দেশের বিল্ডিং ধসের তত্ত্বই তার প্রমাণ। উনি বললেন দেখেই একটা কথা সত্য হয়ে যেতে পারে এটা কেন সবাই ভেবে নিল তাই ভেবে পেলাম না !
আমার মনে খবরটা দেখেই বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উদয় হয়েছে, এই প্রশ্নগুলো কোন বুদ্ধি-বিবেকওয়ালা লোকের মাথায় আসা উচিত খবরটা শেয়ার করার আগে। যারা মজায় মজায় শেয়ার দিলাম তারা কি ভেবে দেখছি আসলে কোন মেয়েরা যাচ্ছে আর একাধিক পুরুষের সাথে সহবাস করে তারা গর্ভবতী হচ্ছে, সেই পুরুষগুলো কে, সেই মেয়েরা কোথায় এখন, তাদের বক্তব্য কী, ঘটনার বিস্তারিত কোন যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ আছে কিনা। প্রশ্ন করে যাচাই করে তথ্য বিস্তার করতে সমস্যাটা কোথায় আমাদের? নাকি বিরুদ্ধমতের কারও দোষ চোখ বুজে ছড়িয়ে দেয়াই আমাদের আসল উদ্দেশ্য? ঘটনার প্রেক্ষিতে ঘটনা মনে পড়ে গেল। শাহবাগের আন্দোলনের সময় একটি কীটতুল্য অন্ধ প্রজাতি শাহবাগে উপস্থিত সকলকে নাস্তিক বলে আখ্যা দিয়েছিল। হিজাবী-অহিজাবী সব মেয়ের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল এবং ফটোশপের অনেক কারসাজি করে নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করেছিল।
ঘটনাগুলোর একটা অনুসিদ্ধান্ত টানার চেষ্টা করলাম। সবার কাছে “মেয়েমানুষ” আসলেই রসালো বস্তু, সে তথাকথিত ধর্মসেবী হোন আর তথাকথিত সুশীল মুক্তমনা হোন, সকলের স্বার্থোদ্ধারের জনপ্রিয় হাতিয়ার এই বস্তু।
যা-ই হোক, সত্য এক সময় না এক সময় প্রকাশ পায়ই। ব্যতিক্রম হলেও কিছু মানুষ এখনও নিজের মতের কাছে মগজ বন্ধক দেয় নি, তাই তারা প্রশ্ন করেছেন এবং করছেন এই তথাকথিত যৌন জিহাদের বৈধতা ও যুক্তিযুক্ততা নিয়ে। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হল, এখন পর্যন্ত কেউ জানে না ঐ মেয়েরা আসলে কোথায়, কে বা কারা এই মেয়েগুলো নাকি আবার গর্ভবতীও ! তো ওরা কি কর্পূরের মত উবে গেল?
“উওমেন আন্ডার সিজ” এর পরিচালক লরেন উওলফে এই ব্যাপারটাকে শক্ত প্রমাণবিহীন এক ধরনের প্রোপাগান্ডা বলেই ধারণা করেন। এ ছাড়াও সিরিয়াতে কাজ করা ফ্রীল্যান্স সাংবাদিক রুথ মাইকেলসনও প্রশ্ন করেছেন সিরিয়াতে যথেষ্ট নারী যোদ্ধা আছে, হঠাৎ করে অন্য দেশ থেকে এই ধরনের কাজের জন্য মেয়ে আনার দরকার পড়ল কেন? আর এমনিতেও এত দেশ থাকতে তিউনিসিয়াই কেন? ((http://www.policymic.com/articles/65041/officials-claim-tunisian-women-are-waging-a-sexual-jihad-in-syria-but-what-s-the-real-story)) যে স্কলার সম্পর্কে বলা হচ্ছে যে উনি এই বিশেষ জিহাদের বৈধতা নিশ্চিত করেছেন, উনিও কিন্তু বারংবার বলে আসছেন তিনি কখনই এমন কিছু বলেন নি, বরং তাঁর বক্তব্যকে বদলানো হয়েছে। ((http://electronicintifada.net/blogs/ali-abunimah/how-progressive-alternet-and-salon-fell-gang-rape-fatwa-peddled-islamophobes)) সবকিছু মিলিয়ে একটা ঘটনা এত প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার যৌক্তিকতা থাকা সত্ত্বেও, কিংবা আদৌ তা ঘটেছে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট তথ্য না থাকার পরেও আন্তর্জাতিক ও দেশীয় মিডিয়ায় একটা খবর ছড়িয়ে গেল। এভাবেই আজকাল সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বানানো হচ্ছে। ((http://blog.foreignpolicy.com/posts/2013/09/26/sorry_the_tunisian_sex_jihad_is_a_fraud))
সচেতন মানুষ ও নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হওয়া উচিত অন্তত যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া। শেষ করব সানা সাঈদের একটি উক্তি দিয়ে। সানা সাঈদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্কম্যান সেন্টারে সংবাদ মাধ্যমে ইসলামিক আইনের উপস্থাপনা বিষয়ক একট প্রজেক্টের সিনিয়র এডিটর হিসেবে কাজ করছেন। ((http://www.policymic.com/articles/65041/officials-claim-tunisian-women-are-waging-a-sexual-jihad-in-syria-but-what-s-the-real-story))
“Predisposed ideas and conceptions of Muslims and of gender relations in the Muslim world and Muslim countries make it easy for sloppy and reactionary journalism to gain momentum. They love to publish it, and we love to read it. There’s something wrong with this equation, but we still continue to gobble it up every time it’s thrown in our collectively gawking face.”
আমার পরিচিতর মধ্যে যারা এই লিঙ্ক শেয়ার করেছেন সব হচ্ছে নিজেদের আলোকিত দাবি করেন! অথচ… যাচাই না করেই শেয়ার করেন।
অনেক অদ্ভুত জিনিসও সত্য হতে পারে। কিন্তু যাচাই না করে…?
ছবিগুলা কি একটু বড় করে দেয়া যায়?
উনিও কিন্তু বারংবার বলে আসছেন তিনি কখনই এমন কিছু বলেন নি, বরং তাঁর বক্তব্যকে বদলানো হয়েছে।
এই লাইন বোল্ড করা উচিৎ।
দারুণ লেখা।
আরো কিছু দরকারি পয়েন্ট কি যোগ করা যায় লেখাতে, আপনি শেষে যেই রেফারেন্সগুলি দিয়েছেন সেখান থেকে? আসলেই ঠিক কী কী কারণে এই টপিক গুজব, সেটা লেখা পড়ে পুরোপুরি বোঝা যায় নি আসলে, রেফারেন্স ঘেঁটে দেখতে হয়েছে। লেখা বড় হলেও আমার মনে হয় সর্বোচ্চ তথ্যসমৃদ্ধ হওয়া উচিত, নাহলে নানান ভুল ধারণা ছড়াতে পারে!
আসলে রেফারেন্সগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করার জন্য দিয়েছি ! সময় হাতে কম থাকায় বেশি ইচ্ছা থাকলেও ইলাবোরেট করে লিখতে পারি নি, স্যরি। 🙁 লেখার মূল উদ্দেশ্য আপাতত এটাই ছিল লোকে যেন বুঝতে পারে ভেবেচিন্তে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছা উচিত।
এই ধরনের বিস্তারিত একটা লেখার বেশ দরকার ছিল।আমি নিজেও খবরটা যখন প্রথম আলোতে পড়ি বেশ অবাক হই।একজন শায়খ কিভাবে এইধরনের ফতোয়া দেন।হ্যাঁ,কোন শিয়া ইমাম যদি এমনটা বলতেন আমি হয়ত বিশ্বাস করতাম।কারণ শিয়ারা এখনও মুতা বিয়েটাকে বৈধ মনে করে।একে নারী ইস্যু সাথে ইসলাম।এইসব মিলিয়েই গুব্লেট পাকানো সহজ হয়েছে।এই ধরনের প্রোপাগান্ডার আরেক নজির দেখা গেল চট্টগ্রামে মাদ্রাসায় বিস্ফোরণ ইস্যুতে।আহত কিংবা নিহত কারো শরীরে মেটাল চিপ্স পাওয়া না গেলেও সেটাকে দিব্যি বোমা বিস্ফোরণ বলে চালিয়ে দেওয়া হল।এমনকি আগুন নিভানো হল সকালে অথচ বোমা পাওয়া গেল সন্ধ্যায়।তাও আবার যে রুমে কিনা সকালে বিস্ফোরণ হয়েছে!মিডিয়ার গুন্ডামি দেখতে দেখতে এখন ক্লান্ত।খবর পড়ে ভাবি কতখানি সত্য!
ঘটনা সব জায়গায় একটাই, মানুষ নিজের মতের কাছে মগজ বন্ধক দিয়ে রাখে। তাই বিশ্বাস করে উইদাউট এনি কোয়েশ্চেন যা সে বিশ্বাস করতে চায়। সারা দুনিয়ার যুক্তি এনে দিলেও লাভ নাই। 🙁
1) মাই ডিয়ার লিটল মাধবীলতা, পৃথিবীতে সত্য বের করা সবচাইতে কঠিন তাপস্যা। তাই সত্য নিয়ে এত হালকাভাবে মত দেয়া কাম্য নয়। সিরিয়ায় যৌন জিহাদ একেবারেই মিথ্যা কিছু নয়। কথায় বলে আগুন ছাড়া ধোঁয়া উঠেনা। প্রমান চান?!! আরবি জানেন এমন কাউকে দিয়ে নিচের ভিডওটি তরজমা করে দেখুন।
http://youtu.be/MXOeUgCW-io
2) লিটল মাধবিলতা, সারা বিশ্বকে বাংলাদেশ দিয়ে বিচার করা খুবিই হাস্যকর। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের অনেক লম্বা ইতিহাস আছে, আর পৃথিবীর খুব কম দেশ আছে যেখানে পাড়ার গুন্ডারা দেশের ক্ষমতা দখল করে আছে।
আশা করি আমার বেদনা আপনি বুঝতে পারছেন।
একমত ভাইয়া, সত্য নিয়ে হালকাভাবে মত দেয়া কাম্য নয়।
“সবার কাছে “মেয়েমানুষ” আসলেই রসালো বস্তু, সে তথাকথিত ধর্মসেবী হোন আর তথাকথিত সুশীল মুক্তমনা হোন, সকলের স্বার্থোদ্ধারের জনপ্রিয় হাতিয়ার এই বস্তু।”
ঠিক 🙁