আমার সুপারভাইজার একটা পুস্তক লিখসে। পুস্তকের বিষয় বাংলা তরজমা করলে দাঁড়ায় ‘কার্বন সভ্যতার উথান ও পতনঃ বিশ্ব পরিবেশ ও সম্পদ সমস্যার সমাধানকল্প’। শিক্ষকের কিতাবের বিজ্ঞাপন দিচ্ছি না। বলতেছিলাম যে এই পুস্তকে সমস্যা হিসাবে অনেক কিছু আসছে, পরিবেশ রক্ষা যেমন সমস্যা, সম্পদের বন্টন একটা সমস্যা, উন্নয়নের ধারা রক্ষা আরেক সমস্যা। সমাধানগুলাও বিবেচনা করা হইসে। আসলে এইটা পরিবেশ বনাম উন্নয়নের যে ক্লাসিক বিতর্ক তার প্রকৌশল দৃষ্টিকোন থিকা বয়ান। দেশের সকল সমস্যার সমাধান আজকাল এনজিও দার্শনিক আর রাজনীতিবিদরা দিলেও বিদেশে এইসব আলোচনা মূলত একাডেমিশিয়ানরাই করেন। একমাত্র ব্যতিক্রম নোবেলজয়ী আল গোর। রাষ্ট্রের এনার্জি পলিসি কিরম হবে, চাহিদা মোতাবেক জোগান কোনভাবে করলে প্রান-পরিবেশের হেফাজত হবে তা নির্দেশ করার কাজটায় আমাদের এনার্জি রেগুলেটরি বোর্ড বরাবরের মতোই করতে ব্যর্থ। এই ব্যর্থতা আছে বইলাই ভোটের আগে মাত্র দুই বছরে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান দেওয়ার কথা বইলা বেশ ভোট বাগায়ে নেন জননেত্রী। কোন পলিসি না থাকায় সাধারনত বিদাশি ভাড়া খাটা আমলা ও একাডেমিশিয়ানদের তদবিরে নির্ধারিত হয় কয়লানীতি, কিন্তু সামগ্রিক এনার্জী পলিসি হয় না। ৯০সালে যারা বলতেন গ্যাস রফতানি করা দরকার, তারাই ২০০০সালে আইসা বলতেছেন কয়লা রফতানি করা দরকার। কারণ তদ্দিনে গ্যাসে টান পরসে। কখন কুইক রেন্টাল হবে আর কখন খাম্বা পোতা হবে তা রাজনীতিবিদ-ব্যবসায়ী চক্র নির্ধারন কইরা দেন। তো এইখানে হরিলুট ঠেকাইবো কে? জনতা। জনতারে সংগঠিত করবে কে? রাজনৈতিক দল। জনমত গঠন কইরা দিবে কে? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের চুনোপুটি, রুই-কাতলা, বিদেশি ইলিশ, মাঠের রাজনীতিবিদ সবাই।
রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়া এমনি একটা বিতর্ক আসছে। বেশ জনসমর্থন নিয়া তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ব্যানারে মূলত বাম দলগুলা একত্রিত হইসে। এখন তারা ধীরে ধীরেএকটা ন্যাশনাল কন্সেন্সাস তৈয়ার করার এন্তেজাম করতেসে। দেশের প্রধান বিরোধীদল ‘সাথে আছি’ জানাইসে। সরকার যথারীতি উল্টা মেরুতে আছে। আন্দোলনকারীরা বিরোধীদলের এই সাথে আছিরে স্বাগত জানায় নাই। কারণ অতীতে সরকারে থাকা অবস্থায় এমন পরিবেশরক্ষা, প্রাণ রক্ষা, খনিজ সম্পদরক্ষার আন্দোলনে এই দল খুব একটা ভালো ব্যবহার করে নাই। নাইকো দূর্নীতিতে গাড়ি সহ ধরা পরা মন্ত্রীটি এখনও বিএনপির একজন সক্রিয় সদস্য। ফুলবাড়ির আন্দোলনে পুলিশি হামলা নির্যাতন কেউ ভুলে নাই।
তো, এমন একটা অবস্থায় শাহবাগউত্তর বাংলার অন্যতম চিন্তাবিদ ও সমালোচক ফরহাদ মাজহার একটা নিবন্ধ প্রকাশ করছেন। শিরোনাম “বাঘ, সুন্দরবন আর রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প” (http://www.chintaa.com/index.php/chinta/showAerticle/222/bangla) লেখায় ফরহাদ সাহেব তার ইগো থেকে কিছুটা বাইরে আইসা আন্দোলনকে সমর্থন জানায়ে(জানাতেই হবে, কারণ উনিও প্রান-পরিবেশের অন্যতম হেফাজতকারী আন্দোলনের মধ্যমনি। তাছাড়া খালেদা জিয়াও এমন জনপ্রিয় দাবির পক্ষে গেছেন, প্রবল বামদের কাছে টেনেছেন। সেখানে ফরহাদ সাহেব শাহবাগ ইস্যুতে তার অন্যতম প্রতিপক্ষরে কিছুটা সমর্থন না দিলে খুব মন্দ দেখাবে)। এরপর বললেন “তবু বলব, আমি আন্দোলনের পর্যালোচনা করতে চাই, কিন্তু সমালোচনা বা বিরোধিতা নয়। ”এরপরেই তিনি সমালোচনায় মন দিলেন। ওটা তিনি ভাল পারেন বলেই বিখ্যাত হয়েছেন। তিনি যেদিন থেকে সমালোচনা করা ছেড়ে দিবেন সেদিন থেকে আমার মত অনেক পাঠক এবং গুনগ্রাহী হারাবেন।
সমালোচনা ১ ‘সমাজের বিভাজন আন্দোলনের মধ্যে ছাপ ফেলছে’
ছাপ ফেলতেই হবে। মত থাকলে, দ্বিমত থাকবে। তাছাড়া পরিবেশ বনাম উন্নয়ন বিতর্কে নানান মতের প্রকাশ না ঘটলেই বরং বেক্ষাপ্পা দেখাবে। রাজনৈতিক বিভাজন ছিলই। বেগম খালেদা জিয়া তা কিছুটা দূর করার করসত করেছেন। এর ফলে ধীরে ধীরে খুলনা সহ সারা দেশের মানুষের মাঝে ব্যাপারটা সঞ্চারিত হবে।
সমালোচনা ২ “যে কারণে বিএনপি ও তাদের সমর্থকরাজনৈতিক ধারাকে এই আন্দোলনের বাইরে রাখা হয়েছে, ঠিক একই কারণেআওয়ামি-সিপিবি ধারাকে আন্দোলনের স্বার্থে বাইরে রাখা দরকার। মূল ইস্যুহচ্ছে বিদ্যমান গণবিরোধী ক্ষমতার বিপরীতে জনগণের পালটা ক্ষমতা তৈরী।”
মাইনাস করার মাধ্যমে সমাজের বিভাজন কিভাবে দূর হবে? আওয়ামী-সিপিবির ধারা বলে ফরহাদ সাহেব তার ক্ষোভটা ঝেড়ে নিলেন সিপিবির উপর, যাদের জনসমর্থন খুবই সীমিত। ‘বিএনপি ও তার সমর্থক ধারা’ বলে জামাত হেফাজতের মতো বড় শক্তিগুলিকে এড়িয়ে গেলেন। যাহোক, এরপরেও উনি জনগণের পালটা ক্ষমতা তৈয়ার করতে চান। মানে আন্দোলন হাইজাকের ভয় দেখিয়ে সবাইকে মাইনাস করতে চান। আওয়ামী লীগ তার ৩০% (বা তার কম) জনসমর্থন নিয়ে আগেই আলাদা হয়ে গেছে। আন্দোলনের সূচনাকারীরা বিএনপির ‘সাথে আছি’ কে স্বাগত না জানানোতে আরো ৩০-৪০% পক্ষে থাকলে নিষ্ক্রীয় ভূমিকায় চলে গেল। বাকি রইলো ৩০-৪০%। এদের সবাই পরিবেশ বা অসম চুক্তির বিপক্ষে লড়বেন আশা করা যায় না। তাহলে আর গনশক্তি কোথায় হইবো? মারামারি কাটাকাটি কইরাইতো শেষ।
সমালোচনা ৩
‘জীবাশ্ম জ্বালানি রক্ষার আন্দোলন -শিল্পসভ্যতার পক্ষের আন্দোলন- জাতীয় মালিকানা কথাটা অস্পষ্ট’
কোন আন্দোলন সবাই একই উদ্দেশ্য একই ধারণা নিয়া করে না। মুক্তিযুদ্ধ সবাই ড়েডিও শুইনা ঝাপায়া পড়ে না, ৭মার্চের ভাষণ শুইনাও ঝাপায়া পড়ে নাই, দেশ মাতৃকার টানেও ঝাপায়া পড়ে নাই। কেউ হয়তো ভাই হত্যার প্রতিশোধ নিতে গেসে, কেউ বোন হত্যার প্রতিশোধ নিতে গেছে, কারো বাড়ি পুড়ায়া দিসে তার প্রতিশোধ নিতে গেছে। হিন্দুদের অনেকের জন্য পাকসেনাদের রেসিয়াল আক্রমনের জবাব হইতে পারে। তাই ফুলবাড়িয়ারটা ‘জীবাশ্ম জ্বালানি রক্ষার আন্দোলন’ আর ফুলবাড়িয়ার জনতার জন্য উনার ভাষায় ‘জমি জিরাত ভিটাবাড়ি রক্ষার আন্দোলন’। তাতে সমস্যাটা কিসে? পরিবেশ আন্দোলন না বললে আন্দোলন সহি হবে না? ‘শিল্প সভ্যতার পক্ষের আন্দোলন’ বলতে আসলে কার্বন সিভিলাইজেশনরেই বুঝাইসেন। যেন শিল্প সভ্যতা মানে পুঁজি, আর পুঁজির চলাচল হইলে তাতে জাতীয় মালিকানা কায়েম হবে না- এমন একটা ধারণা রাখলেও কার্বন সিভিলাইজেশনের বাইরে উনি কোন ধারণা দিতে পারেন নাই। মানুষ আগে থিকাই রিনিউয়েবল এনার্জি ব্যবহার করতেসে। পেশি শক্তির প্রবল ব্যবহারের সাথে মেধা কাজে লাগায়া আগাইসে, গতি লাভ করসে। যেমন ধরেন পালতোলা নৌকা, গোবর পুড়ানো, ডাল-পালা, পাতা দিয়া ঘর বানানো, জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার। কিন্তু এই এনার্জির ঘনত্ব ছিল কম। ১৮০০শতাব্দীর শেষ ভাগে এই অবস্থার পরিবর্তন হইতে থাকলো। ব্যাপক মাত্রায় জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহার করাতে এনার্জি ডেন্সিটি বাড়লো, দ্রুতগতি যানবাহন আইসা সম্পদ আহরন আর বন্টনে ব্যাপক সুবিধা গড়লো। এর পরে দেখা গেল যেই দেশের খনিজ সম্পদ, জ্বালানী যত বেশি তার উন্নতি তত দ্রুত হইসে (যদি উন্নতি বলতে জীবনযাত্রার মান, জ্ঞান-বিজ্ঞানে উতকর্ষ, প্রাকৃতিক দূর্যোগে, পুষ্টি, রোগে শোকে মৃত্যুর হার কমারে ধরি)। বিশ্ব অর্থনীতিই এখন এই সীমিত জীবাশ্ম জ্বালানীর উপরে ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এই ব্যাপকমাত্রার কম্বাশন ইঞ্জিন ব্যবহারের ফলে আমাদের দুনিয়ার কার্বন-ডাই-অস্কাইড দিসি বাড়ায়ে। মিলিয়ন বছরে যে ক্ষতি করতে পারি নাই, মাত্র দেড় শো বছরে তারচেয়ে বেশি ক্ষতি কইরা ফেলসি। এখন যেই সংকটের কথা আসতে পারে সেইটা হইলো, এম্নে কতো দিন? কবে শেষ হইয়া যাবে? এরপরে কি? লোকে এইখান থেকে যে পরিবেশ বনাম উন্নয়নের তর্ক করে সেইটায় মন দিলে ফরহাদ সাহেবের লেখা আরো বড় হইতে পারতো। কিন্তু উনি সেদিকে মন দিলেন না। উনি বললেন, “তবু রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম আমি নিঃশর্ত সমর্থনকরি,কারণ এটা খালি বাঘ বাঁচাবার সংগ্রাম না, এটা দিল্লি-ঢাকা অশুভ আঞ্চলিকআগ্রাসী আঁতাতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম।” আন্দোলনরে ‘বাঘ বাচার সংগ্রাম ’ বইলা উনি ভুলাইতে চাইতেছেন যে অসম চুক্তির ব্যাপারটায় যেন আন্দোলনের কোন আপত্তিই নাই। ১৫% বিনিয়োগ করে বাংলাদেশের মাটি পানি বায়ু দূষন করে ৫০% মুনাফা তোলার চুক্তির ঘোর বিরোধী আন্দোলনরে বাঘরক্ষার ‘রোমান্টিক’ আন্দোলন’ বইলা আন্ডারমাইন করার চাতূর্য তারেই মানায়। দিল্লির বিপক্ষে গিয়া দেশের আপামত তৌহিদি জনতার সাপোর্ট নেয়া সহজ। দিল্লি যদি তাগো এলাকাতেই, মানে ভারতের দিকের সুন্দরবনের পাশেও বিদ্যুৎকেন্দ্র করে তাইলেও আমাদের ক্ষতি আছে। পরিবেশ বনাম উন্নয়নের একটা ক্লাসিক দ্বৈরথ দেখবেন ইন্দোনেশিয়াতে। পাম ওয়েল পাইতে তারা পাম প্লান্টেশন এলাকা বিক্রি কইরা দিসে বিদেশি ব্যবসায়ীদের কাছে। এরা বন পরিস্কার করে আগুন লাগাইয়া। এখন বলেন এতে মালয়েশিয়ার কোন ক্ষতি আছে? আছে। কারণ ইন্দোনেশিয়ার সেই আগুন, ধোয়া যে ব্যাপক পরিবেশ দূষন করতেসে তার ভুক্তভোগী পুরা সাউথ-ইস্ট এশিয়ার সব দেশ। সিঙ্গাপুর, মালেশিয়াতে আকাশ ভর্তি হইয়া থাক্কে ধোয়াশা। বৃষ্টি নাই। মাত্র কয়েক বছরে তাপমাত্রা বাইড়া গেসে। এখন বলেন পাশের দেশের পরিবেশ আপনি ক্যামনে রক্ষা করবেন? উন্নত দেশ যে ব্যাপক পরিবেশ দূষন করতেসে তার ধাক্কায় বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাইড়া ভূমিহীন হইয়া ক্লাইমেট মাইগ্রেন্ট হবে বাংলাদেশের মতো নিচু এলাকার লক্ষ লক্ষ জনগণ। সেই কারনেই প্রকৃত দোষী শিল্পোন্নত দেশের কাছে জাতিসংঘের মত আসরে ঘন ঘন বলতে হবে যে পরিবেশ রক্ষা ফান্ড থেকে আমাদের হিস্যা চাই। দূর্বল দেশ হিসাবে কাজটা কঠিন হইলেও জনসমর্থন গড়লে বিশ্বের মানুষ এই ধ্বংসমূখী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন আনবে ধীরে ধীরে।
তাইলে বলেন কার্বন সিভিলাইজেশনের বিপক্ষে গিয়া আপনি কি হাসিল করবেন? দিল্লীরে ঠেকাইতে গিয়া এন্টি-ইন্ডিয়া সেন্টিমেন্ট জাগাইলেন। তারা কি আর আপনের কথা শুনবে? একা বিপ্লব করলেই হইবো না, ভারতের পরিবেশবাদী আন্দোলনরেও সাহারা দিতে হবে। তাগো জনগণ যেন বুঝে এই খেলায় জনতাই একদল। সব দেশরে একটা সমঝোতায় পৌছাইয়া কইতে হবে, এই এই প্লান মোতাবেক কার্বন পুড়ানো কমানো হবে। সব দেশের জন্য প্লানটা একরকম না। যারা বেশি পুড়ায় তাদের বেশি কার্বন ট্যাক্স, যারা কম পুড়ায় তাগো কম। আবার আমাদের মতো নিচু এলাকার দেশ সেই অর্থের বেশি পাবো। সেই অর্থে গবেষণা হবে কার্বন নিঃসরন কমাইতে। ব্যাপারটা জটিল। মুখে মুখে যেই রিনিউয়েবলে সমাধানের কথা বলেন সেইটা এখনও ম্যাচিউড়ড লাভজনক প্রযুক্তি না।
‘বিদ্যুৎ দরকার’ কথাটারে হেলা করার কিছু নাই। বরং এই জরুরত মিটাইতেই আমাদের রাজনৈতিক দল, নীতিনির্ধারকদের ভাবা লাগবে কিভাবে প্রান-পরিবেশের কম ক্ষতি কইরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো যায়। কম ক্ষতি বলতে বুঝাইলাম ক্ষতি না কইরা করার কোন তরিকা নাই। ফরহাদ সাহেব যেই দীর্ঘ লেখাটা পড়াইলেন সেইটা যত সার্ভার আর পিসি অন কইরা রাখসে, সেগুলা ঠান্ডা রাখা, চালানোর জন্য দরকার যে বিদ্যুত–সেই চাহিদা কে মিটাইবে? সবার মাথায় এত ঘর্ষবিদ্যুত নাই যে চুল থিকা কারেন্ট উৎপাদন কইরা পিসি চলবে। তেমন উন্নততর এনার্জি সেভিং যন্ত্রপাতি বানাইতেই ‘সাচ্চা মুসলিম’ বানানোর শিক্ষার সাথে সাথে উনার বয়ানে ‘কেরানি বানানোর শিক্ষা’, সেই বিজ্ঞান-প্রজুক্তি শিক্ষার দরকার। শিল্প কারখানা ছাড়া উন্নয়নের মডেল দাঁড়া করান। দেখান যে সেই মডেল সবাইরে খাওয়াইতে পারবে, পড়াইতে পারবে, নিরাপদ আশ্রয় দিতে পারবে। বিদ্যুতের চাহিদা মিটাইতে তাই যথাসম্ভব অপচয় বন্ধ করতে হবে। সরকারী গবেষণা মতে শুধু পুরানা বয়লার ব্যবহার করায় আমাদের ৩৫% ফুয়েল বেশি খরচ হয়। কম এফিশিয়েন্ট পুরান বয়লান, ফার্নেস আনা বন্ধ করা লাগবে। আরো আছে এনার্জি বাল্ব, এনার্জি সেভিং টেনোলজির ব্যবহার বৃদ্ধি। পুরাতন পাওয়ার প্লান্ট গুলার রক্ষনাবেক্ষনে ব্যয় বাড়ায়ে নবায়ন করা লাগবে। তাতে বাড়তি বিদ্যুতের সাথে জ্বালানী সাশ্রয় হবে। এছাড়াও তেল গ্যাসের জন্য খোজ জারি রাখতে হবে। বাঘরক্ষার আন্দোলনের সাথে সকল অসম চুক্তি বিরোধী অবস্থানে জনগণকে কাছে টানতে হবে। মাইনাস করে না, প্লাস করে করে আগাইতে হবে। পরিবেশ বনাম উন্নয়নের এই ট্রেড অফে আমাদের মধ্যপন্থা নির্নয় কইরা এই কার্বন এইজে আগাইতে হবে। সেইটাই বড় চ্যালেঞ্জ।
কাইল কমেন্ট দিতাছি খাড়ান!
দেশের সকল সমস্যার সমাধান আজকাল এনজিও দার্শনিক আর রাজনীতিবিদরা দিলেও বিদেশে এইসব আলোচনা মূলত একাডেমিশিয়ানরাই করেন।
নাসিম তালেব এর মতে একাডেমিশিয়ানরা মোটামুটি লুজার! প্র্যাকটিশনাররাই আসল। [এন্টিফ্রেজাইল দেখতে পারেন]
নানান ব্যাকগ্রাউন্ডের লোক থাকলে প্রবলেম তো দেখি না। যদি নানান পয়েন্ট অব ভিউ মিলে একটা সিদ্ধান্তে আসা যায়। একাডেমিকরা নানান বায়াসে আক্রান্ত থাকেন। [একই ভাবে এনজিওবাজ/ রাজনীতিকরাও!]
ভারতের পরিবেশবাদী আন্দোলনরেও সাহারা দিতে হবে। তাগো জনগণ যেন বুঝে এই খেলায় জনতাই একদল।
এইটা একটা ভালো কথা বলছেন। আমি নিজের স্ট্যাটাসে পুতিন এর নিউ ইয়র্ক টাইমসে চিঠি লেখার কথাটা তাই উল্লেখ করে জনমতের কথা বলছিলাম।
মজহার লিখেছেন
এই দিক থেকে জাতীয় স্বার্থ কথাটাও অস্বচ্ছ ও বিভ্রান্তিমূলক। বিদ্যমান রাষ্ট্রের অধীনে বাংলাদেশের জ্বালানি সম্পদের সুবিধা ধনি ও উচ্চবিত্ত শ্রেণিই ভোগ করবে।
এই খানে ভুল কোথায়?
ফুলবাড়িতে আসলেই যা ঘটছে সেইটা তো আপনার জমি সংক্রান্ত বলেই জানি।
বিহেভিয়ারাল সাইকোলজি নিয়া আসলে সব কিছুতে মানুষ মুভড হবে এমনটা আশা করা যায় না।
ফরহাদ মজহারের কাছে এই আন্দোলন একটা মিন টু এন এন্ড।
শিল্প কারখানা ছাড়া উন্নয়নের মডেল দাঁড়া করান। দেখান যে সেই মডেল সবাইরে খাওয়াইতে পারবে, পড়াইতে পারবে, নিরাপদ আশ্রয় দিতে পারবে।
এইটা একটা ভালো কথা
জ্বালানীর সুবিধা কে ব্যবহার করবে? যে জ্বালাইতে পারবে পণ্য উতপাদনে, উপযোগিতা বৃদ্ধিতে। এই ‘পণ্য’ কথাটাই ফরহাদ সাব শুনতে চান না। তার বয়ান আছে লেখায়। কিন্তু পণ্য উৎপাদন না করলে টিকবেন কোথায়? পুজিপতিরা শিল্পকারখানা গড়বেন, তার শেয়ার সরকার ধরে রাখতে পারে কিছু। সরকার নিজে কারখানা চালাইতে অক্ষম বলেই বেসরকারী খাতে দিতে হবে। তাতে জাতীয় স্বার্থ কতখানি রক্ষা পাইলো? আমি বলবো সর্বোচ্চ। সরকারের শিল্প স্থাপন ও চালনার রেকর্ড অত্যান্ত খারাপ। এরচেয়ে বেসরকারী শিল্প বেশি মুনাফা ও উৎপাদন করতে পারবে। দেশে যদি শ্রমিকের চাকরীটাও না দেন, শিল্পপতিও হইতে না দেন- তাইলে ফেলানীরা ভারতে যাবেই।
টোটাল ইকোনমির পরিবর্তন না আসলে, এই ক্যাপিটালিস্ট সিস্টেমের ভিতরে থাইকা সর্বোচ্চ জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করাটাই কাজ। সেখানে চুক্তি অসমতার বিরোধিতারে একই সাথে এড়ায়ে গেলেন ফরহাদ। আবার বাকিটুকুরে বাঘরক্ষার রোমান্টিসিজম বইলা উপহাস করলেন। এতে স্পষ্ট হয়, উনি খুব রিলাক্টেন্টভাবেই আন্দোলনের পক্ষে আছেন জানাচ্ছেন। তার ইগোর উপরে উঠতে পারেন নাই।
ফরহাদের বিপক্ষে বাঙ্গাল বুদ্ধিজীবীরা তেমন দাঁড়াইতে পারেন নাই। সলিমুল্লাহ খান নিজে না পেরে অবশেষে ছফাকে নিয়ে আসছেন। সর্বজনের লেখাটা পড়েছেন নিশ্চয়?
সমালোচনার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক।
পুরো লেখাটাই পড়লাম, মন্তব্য দেখলাম। আলোচনা-সমালোচনা চলছে-চলবে, কিন্তু পালের গোদাদের একগুঁয়েমি থেকে দেশটা কবে রক্ষা পাবে…সুন্দরবন গেল, গ্যাস গেল…বাসায় এখন গ্যাস থাকে না বলে ভোররাতে উঠে আমার মাকে সারাদিনের রান্নাবান্না করে রাখতে হয়…
আমজনতা আম তো দূরের কথা, আমের ছোকলাটারও হদিস পায় না। হতাশ হয়ে যাই। 🙁