সাইকেলের চরকাবাজি—নেপথ্যের ফিজিক্স

 সার্কাস কখনও দেখেন নি, এমন মানুষ পাওয়া ভার! যারা দেখেছেন, তারা সাইকেলের চরকাবাজি খেলা/ ইভেন্টির সাথে কম-বেশী পরিচিত থাকার কথা।

খেলাটা, অনেকটা এরকমএকজন সাইকেল আরোহী বেশ উঁচু থেকে ঢালু মসৃণ পথ বেয়ে নেমে  এসে, সেই ঢালু পথেরই একটি বৃত্ত ধরে চক্কর খেয়ে ফিরে আসেএকই চক্করের সময়, বৃত্তপথের চূড়ার বিন্দুতে সেই আরোহীর মাথা থাকে মাটির দিকে আর পা থাকে আকাশের দিকে অর্থাৎ শুন্যে একবার ডিগবাজি খেয়ে সাইকেল চালিয়ে আসে! আজিব ব্যাপার! হুম, আসলেই আজিব ব্যাপার কেননা যে অসাধারণ নিপুণতায় সাইকেল আরোহী কাজটা করে থাকেন, তাতে বাহবা না দিয়ে পারা যায় না।

একে ‘আতঙ্ক ভ্রমণ’ও বলা যেতে পারে। নাহ, এ আতঙ্ক সাইকেল-আরোহীর নয় (আর যাই হোক, ভয় আতঙ্ক নিয়ে এ ধরণের রাইডিং সম্ভব নয়! ) বরং আতঙ্কিত থাকেন দর্শক সারিতে বসে থাকা  মানুষেদের— এই বুঝি উপর থেকে পড়ে বেচারা সাইকেল আরোহীর সব হাড় গুঁড়ো হয়ে গেল! 😳 এমনটা  যে হয় না, তা-নয়! সাইকেলের এ চরকাবাজির পেছনের ফিজিক্সটা জানলে খুব সহজেই তা ব্যাখ্যা করা যায়।

 

বৃত্তপথে ঘূর্ণায়মান কোন বস্তুর অবস্থান ঠিক রাখার জন্য এক প্রকার বলের প্রয়োজন পরে যাকে বলে সেন্ট্রিপেটাল ফোর্স বা কেন্দ্রভিমুখী বল। ক্রিয়ার দিক বৃত্তাকার পথের কেন্দ্রের দিকে বলেই, এমন নাম। বৃত্তের পরিধি বরাবর আরেক প্রকার বল ক্রিয়া করে যার নাম সেন্ট্রিফিউগাল ফোর্স  বা কেন্দ্রবিমুখী বল। সমান ও বিপরীতমুখী এ দুই বলের ক্রিয়াই বস্তুটিকে সবসময় ঐ একই ব্যাসার্ধের বৃত্তপথে ধরে  রাখে

                                                                                                              বৃত্তাকার পথে ঘূর্ণনরত বলের উপর ক্রিয়াশীল সেন্ট্রিপেটাল আর সেন্ট্রিফিউগাল ফোর্সের অভিমুখ

                                                                                                                         এখানে, চক্রাকার পথে নির্দিষ্ট বেগে চলার ফলে সৃষ্ট কেন্দ্রমুখী ত্বরণ এতোই প্রবল হয় যে, শূন্যে হামেশাই ডিগবাজী খেলও সাইকেল নিচে পরে/পড়ে যায় না। তবে, এক্ষেত্রে যে প্ল্যাটফর্ম বেয়ে সাইকেল আরোহী নেমে আসেন তার উচ্চতা আর ডিগবাজিতে সৃষ্ট লুপের ব্যাসার্ধ সঠিকভাবে স্থির  থাকা বাঞ্ছনীয়। কিভাবে, তাইতো? :thinking: চলুন, একটু গানিতিকভাবে চিন্তা করা যাক—

                                                                                                             ধরে নেই, AC উচ্চতা থেকে আরোহী নামা শুরু করেছেনএ উচ্চতা থেকে লুপের সর্বোচ্চ বিন্দুর দূরত্ব/প্ল্যাটফর্মের উচ্চতা, AB = x  আরোহীর লুপের সর্বোচ্চ বিন্দুতে বেগ, প্ল্যাটফর্ম অতিক্রমের সময় একই উচ্চতা অতিক্রমের সময়ের বেগের সমান হবে (এক্ষেত্রে, সৃষ্ট ঘর্ষণ বল উপেক্ষা করে)

                                                                                                                            এখন, পড়ন্ত বস্তুর সুত্রানুসারে, v2 = 2gx ( স্থির অবস্থা থেকে নেমে আসায়, আদিবেগ= )

বৃত্তপথে ঘূর্ণনের জন্য সৃষ্ট কেন্দ্রমুখী ত্বরণ, α=  v2 / rসাইকেলারোহী নিরাপদে চক্রাকার পথে ঘুরে আসতে হলে, g α অর্থাৎ, v2 / r g হতে হবে

যেহেতু  v2 = 2gx, তাই, 2gx/r g –> x r/2 অর্থাৎ, সাইকেলারোহীর প্ল্যাটফর্ম, লুপের উপর অথবা  লুপের উচ্চতায় থাকতে হবে, যেন প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য, লুপের ব্যাসার্ধের অর্ধেকের বেশি কিংবা সমান হয়

এ হিসেবের ব্যক্তয়, সাইকেল আরোহীর অপঘাতে মৃত্যুর কারণ হতে পারে যদিও  প্ল্যাটফর্মসহ পুরো ট্র্যাকটিই এমন চুলচেরা হিসেব  করে তৈরি করা হয়

তারপরও যে সুদক্ষ নিপুণতায় সাইকেলারোহী শূন্যে ডিগবাজি খেয়ে আসেন,  পেছেনে আছে সেই প্রবাদবাক্যটিPractice makes a man perfect’ বা ‘গাইতে গাইতে গায়েন 8)

সহায়কঃ

-ফিজিক্স ফর এন্টারটেইনমেন্ট, ইয়াকভ পেরেলম্যান

-বিজ্ঞানের রাজ্যে কী এবং কেন, আব্দুল কাইয়ুম

অনিমেষ ধ্রুব সম্পর্কে

"You've gotta dance like there's nobody watching, Love like you'll never be hurt, Sing like there's nobody listening, And live like it's heaven on.'' অসম্ভব পছন্দ উইলিয়াম পার্কারের এই কথাগুলো! নিজের মত করেই নিজের পৃথিবীটা কল্পনা করে নিতে ভাল লাগে। ঔদাসিন্য,অলসতা শব্দ দুটি আমার সাথে বনে যায়। গভীর মনোযোগ কিংবা অসম্ভব সিরিয়াস মুড আমার কখনোই আসে না। একা অচেনা রাস্তায় অকারণে হাঁটতে ভালো লাগে, মানুষ দেখতে ভালো লাগে, ভাল লাগে কবিতা লিখতে...তবে স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন দেখি আমার চারপাশে থাকা মানুষগুলোর জন্য কিছু একটা করার, দেশকে কিছু একটা দেয়ার। পারব কি-না জানি না, তবুও স্বপ্ন বুনে চলেছি নিরন্তর... http://www.facebook.com/kamrul.h.hridoy.3
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, হাবিজাবি-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

6 Responses to সাইকেলের চরকাবাজি—নেপথ্যের ফিজিক্স

  1. মাধবীলতা বলেছেনঃ

    বাহ অনেকদিন পরে মাধ্যমিকের অংকে ফিরে গেলাম ! এইরকম ডেয়ারিং কাজ করতে কেমনে যে পারে মানুষ ! আমার মাথা ঘুরায়…

    • হৃদয় বলেছেনঃ

      আসলেই আপু, এরকম ডেয়ারিং কাজগুলা যে রকম সাবলীলতায় তারা করে থাকা :huzur: …
      লেখাটায় সেন্ত্রিফিউগাল ফোর্স, ‘পেটাল ফোর্স নিয়ে আরেকটু লেখা দরকার ছিল; গায়েন আর হইতে পারলাম না! 🙁
      মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপু 🙂 :love:

  2. স্রোতস্বিনী বলেছেনঃ

    ইয়াকভ পেরেলম্যান!!! :love:
    জটিল একটা মানুষ…

    অনেকদিন পর সেই পুরনো সূত্রগুলোর কড়কড়ানি…!!! 😛

    • হৃদয় বলেছেনঃ

      সত্যি বলতে কী, একাডেমিক পড়াশুনার বাইরে এ’ধরণের করার প্র্যাকটিস, আমার খুব বেশি দিন আগে হয় নাই! 🙁 তবে তার পেছনে কিছু কারণও ছিল… বহুল জনপ্রিয় এই মানুষটাকে আমি চিনেছি মাত্র বছর দু’এক আগে একটা বইয়ে তার নাম পড়ে…ফিজিক্স ফর এন্টারটেইনমেন্ট কিংবা ফান আর্টস অব ফিজিক্স পড়লে ধারণা পাওয়া! অসাধারণ প্রতিভাদর একজন মানুষ ছিলেন!

      যাহোক মন্তব্যের জন্য, টিঙ্কু! … :love:

  3. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    হকিংকে কে জানি বলেছিলো তোমার লেখায় একটা সমীকরণ থাকলে তোমার পাঠক অর্ধেক হয়ে যাবে!
    সেটাই স্মরণ করিয়ে দেই হে বালক।

    লেখা ভাল্লাগছে

    • হৃদয় বলেছেনঃ

      কথা সইত্য! 😛
      কিন্তু, ভ্রাতা-
      মাঠে নামছি, সেন্ট্রিফিউগাল ফোর্সের মোটামুটি অজানা বলা যায়, এমন একটা ইমপ্লিকেশান নিয়ে লিখবো বলে, এখন যদি-না α আর g এর মাঝে ইকুএশান ছাড়া কোরিলেশান টানতে যাই, তাহলে এইখানা- ‘সাইকেলারোহীর প্ল্যাটফর্ম, লুপের উপর অথবা লুপের উচ্চতায় থাকতে হবে, যেন প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য, লুপের ব্যাসার্ধের অর্ধেকের বেশি কিংবা সমান হয়।’ অনুভব করাই কেমনে? 🙁

      থেঙ্কু, ইট’জ অলওয়েজ অ্যা ভেরী চার্মিং অ্যাজ ওয়েল অ্যাজ ইন্সপিরেশনাল, গেটিং অ্যা ফিডব্যাক ফ্রম আওয়ার বিলাভড বাপ্পি’দা :love: …অ্যান্ড গেটিং ‘ভাল্লাগছে’ অর সাচ টাইপ কমেন্টস, ইজ বিয়ণ্ড ডিজায়রেবল! :penguindance: :yahooo:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।