প্রিয় অশ্রুদর্শনী,
আজ সকালের আবহাওয়াটা অনেক সুন্দর।যখন ঘুম ভাঙ্গল তখন সময় ভোর ৫.৩০ মিনিট।মনে হচ্ছিল বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে।বৃষ্টির শব্দ আমার কানে আসছে।সকালে বৃষ্টি দেখার মধ্যে একটা অন্যরকম মজা আছে।তবে খুব বেশি দেখা যায় না এই দৃশ্য।তুমি জানো একটা সময় আমি খুব বেশি বৃষ্টিতে ভিজতাম।বৃষ্টি আসলে কেউ আমাকে বেধেঁ রাখতে পারত না।কিন্তু বর্তমানের কিছু সমস্যার কারনে আর আগের মত বৃষ্টিতে ভিজতে পারি না।এখন বৃষ্টিতে ভিজলেই আমার জ্বর চলে আসে।জানো কিছুদিন আগে ঝুম বৃষ্টি হয়েছিল।টানা দুইদিন ধরে বৃষ্টি।আমার প্রচন্ড বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা করছিল।কিন্তু ভিজলেই জ্বর আসবে।আর সামনে আমার পরীক্ষা তাই ভিজা বাদ দিলাম মন থেকে ।কিন্তু মন নামক বস্তুটি বড়ই আজব।কেন যেন নিজের মন থেকে বৃষ্টিতে ভিজা কথা বের করতে পারলাম না।মন বার বার আমাকে বলছে বৃষ্টিতে ভিজার কথা।পরে একটি বুদ্ধি বের করলাম রেইন কোট পড়ে বৃষ্টিতে ভিজলাম বৃষ্টিতে ভিজার ইচ্ছা পূরন হল আর শরীলে ও পানি লাগল না।কিন্তু গায়ে বৃষ্টি পানি না লাগলে বৃষ্টিতে ভিজে আনন্দ পাওয়া যায় না।
আজ বৃষ্টির কথা এত বেশি কেন মনে পড়ছে।কেন বৃষ্টি নিয়ে এত ভাবছিল।একটা সময় আমি বৃষ্টি নামক বস্তুটাকে অনেক অপছন্দ করতাম।অপছন্দের অনেক কারন আছে।যেমন বৃ্ষ্টি আসলে রাস্তায় কাদা মাখামাখি হয়ে যায়।যা আমার আমার চরম বিরক্তি লাগে।তাই বৃষ্টি সময় খুব কম বাহিরের বের হওয়ার চেষ্টা করি।আচ্ছা তোমার বৃষ্টি কেমন লাগলে?
মনে আছে তোমার ? আমার সাথে রাগ করে তুমি বৃষ্টিতে ভিজতে এবং পরে তোমার জ্বর আসত।যদি বৃষ্টি না থাকত তুমি ওয়াশরুমের ঝরনা ছেড়ে ঘন্টার পর ঘন্টার বসে থাকতে।এরপর কয়েকদিন জ্বরে কষ্ট পেতে।এত রাগ ছিল কেন তোমার?কত বলতাম এই রাগ নিয়ন্ত্রন করো।কিন্তু তুমি খুব বেশিক্ষন তা পারতে না।তবে রাগটা তোমার ক্ষনস্থায়ী ছিল।কিন্তু এই রাগ জিনিসটা আমার কাছে ভাল লাগত না।তবে মাঝে মাঝে তুমি রাগলে অনেক মজা লাগত।কেমন বাচ্ছাদের মত রাগ ছিল তোমার !!!!
সেদিন যখন আমার জ্বর সারারাত তুমি কান্নাকাটি করলে।আমার জ্বর কেন হলো? আমার জ্বরটা যেন আল্লাহতোমাকে দিয়ে দেয় এই জন্য কত দোয় করছিলে।তোমাকে বুঝাতেই পারছিলাম না যে আমার জ্বর ভাল হয়ে যাবে।তোমার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল তুমি আমি মারা গেছি।শত বুঝিয়ে যখন তোমাকে বুঝতে পারলাম না।তোমার কান্নাকাটি যখন চলতেই থাকলো তখন মেজাজা খারাপ হয়ে গেল আমার।আমি তোমার উপর অনেক চিল্লাচিল্লি করি।তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছিল।পরে আবার আমি সরি বলি।তুমি সব কিছু ভুলে গেলে।আমাদের এই মানঅভিমান খেলাগুলোকে আজ কেন মনে পড়ছে।হয়ত এখন আর আগে মত রাগ ভাঙ্গাতে পারি না।এই রাগ নামক জিনিসটা এখনো তোমার মধ্যে আছে কি না জানতে ইচ্ছা হয়।কিন্তু জানতে ইচ্ছা করলে কি সব কিছু জানা যায়।পৃথীবির সব কিছু যে জানতে হবে তা কে বললো।না জানার মধ্যে ও একটা আনন্দ থাকে।জানার আগ্রহ থাকে।জেনে গেলাম তাহলে তো জেনে গেলাম।আগ্রহ হারিয়ে গেল।তাই আর জানতে চাই কিন্তু জানি না।কৌতহল দমন করার মাঝে যে সূক্ষ আনন্দ আছে তা নেয়ার চেষ্টা করি।
আমি খুব বাস্তাববাদী মানুষ হলেও বাস করি একটা কল্পনার জগতে।বাহিরের জগত ছাড়াও আমার নিজের ভিতরে একটা জগত আছে।সেই জগতটা আমি নিজের মত করে সাজাই।সেই জগতটার কথা আমি যতবার তোমাকে বললাম তুমি আমাকে পাগল বলতে।বলতে বই পড়ে পড়ে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।আমি যেন বই পড়া বন্ধ করি।আচ্ছা কেমন করে আমি তা করি?বই যে আমার রক্তে মিশে আছে।আমি তো আমার আমিকে এই বইয়ের মধ্যে খুজে পাই।আগে কবিতা পড়তাম না।মনে হত কবিতা মানুষ পড়ে?কিন্তু ইদানিং কবিতাই আমার বড্ড বেশি ভাল লাগে।যখন কোন কবিতা পড়ি তখন তোমাকে শুনাতে ইচ্ছা করত।কিন্তু কবিতা শুনলে তুমি রাগ করতে।এই কবিত না তোমার ভাল লাগে না।প্রায়ই কবিতা জোর করে শুনাতাম ।একপর্যায়ে এসে তুমি রাগ ফোন রেখি দিতে।তখন কি আমার কষ্ট হত না?তা দমন করে রাখতাম।তুমি একদিন বলে দিলে তোমাকে যেন আর কবিতা না শুনাই।বই নিয়ে যেন কোন কথা না বলি।একসময় আস্তে আস্তে তা কমিয়ে দিলাম।মনে মনে আমি যে অশ্রুদর্শনীকে দেখতাম তাকে প্রতিদিন কবিতা শুনাতাম ।প্রতিদিন কি বই পড়তাম সেই গল্প করতাম।
আমি জানি এক এক জন এক এক রকমের হয়।একজনের ইচ্ছার সাথে অন্য জনের ইচ্ছা মিলে না।আমি তা বুঝি।তাই তোমাকে কখন কোন কাজে জোর করতাম না।তোমাকে একদিন বলেছিলাম বই পড়তে তুমি বলেছো বই পড়তে তোমার ভাল লাগে না।এরপর বুঝিয়েছিলাম বই পড়লে কি হয়? কি উপকার হয়? তোমার কাছে তা যুক্তিযুক্ত মনে হয় নি।তুমি বলেছ তোমার ভাল লাগে না এই বই পড়তে।এরপর আমি বলি না যে বই পড়।যে কাজটা তোমার ভাল লাগে না তা জোর করে করার কি দরকার।তুমি থাক তোমার মত।আমি থাকি আমার মত।নিজেদের জীবনটা নিজেদের মত উপভোগ করার প্রয়োজন আছে।নিজের সত্বাগুলো তা না হলে মরে যায়।নিজের আনন্দ এবং নিজের ভিতরে সেই আমি সেই সত্বাটা আস্তে আস্তে হারিয়ে যায়। ঠিক এমনটি হয়ে যাচ্ছিলাম আমি।আস্তে আস্তে আমার সত্বা হারিয়ে যাচ্ছিল।নিজের সকল সত্বা থেকে দূরে চলে যাচ্ছিলাম দিন দিন।একটা সময় আমি ভুলেই গেছি আমি লিখতে পারি।আমি বই পড়তে পারি।আগে যেখানে আমার একটা বই পড়তে সময় লাগল তিন ঘন্টা এখন আর একটা বই পড়তে কয়েক সপ্তাহ লেগে যায়।এই চিরকুটটা পড়ার পর হয়ত তোমার অনেক খারাপ লাগবে।মনে মনে নিজেকে দোষরোপ করার চেষ্টা করবে।কিন্তু বলে রাখি এক্ষেত্রে তোমার একবিন্দু দোষ নেই।তোমার মতামতকে আমি শ্রদ্ধা করি।তুমি যেমন ঠিক তেমনভাবে আমাকে বলতে। সত্যি কথা বলতে তুমি দ্বিধা করতে না।আমি শত কষ্ট পেলেও সত্যি কথাটিই তুমি বলতে।ব্যাপার খুব ভাল লাগত।এখনো লাগে।তোমার যা পছন্দ না তা জোর করে করানো মাঝে কোন কৃতিত্ব নেই।মন যা চায় তাই করো।তবে সাথে বিবেকে একটু স্থান দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয়।জানি না তোমার কি মনে হয়?
স্বপ্ন আর বাস্তবতার পার্থক্য আমি খুব ভাল বুঝতে পারতাম।বুঝতে যে হবেই আমাকে।অভাব নামক বস্তুটাকে আমি খুব ভাল করে জানি।জানি যখন টাকার জন্য একটা কোচিং ক্লাস নিতাম,সাথে তিনটা টিউশনি করতাম।সারাদিন ক্লাস ,স্টুডেট পড়ানো রাতে বাসায় আসতে ১০টা বেজে যেত।এক মানবিক পরিশ্রম করে কান্ত হয়ে যেতাম।সারাদিন যতবার তুমি আমাকে ফোন করতে আমি হয়ত কোচিং এ হয়ত বা স্টুডেন্ট এর বাসায় কিংবা বাসের ভীড় ঠেলে দাড়িয়ে কোথায় যাচ্ছি।তুমি ফোন করলে ধরার উপায় থাকত না।বাসে এই গরম সাথে দাড়িয়ে থাকাতে যে কি পরিমান কষ্টের তা হয়ত সহজে অনুমেয়।আমার তোমার বাবার মত এসিওয়ালা গাড়ি ছিল না।শত ভীড়ের মধ্যে আমাকে পাবলিক বাস করে যেত হত। ভীড়ের মধ্যে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে একটু কথা বলার পর যখন বলতাম এখন বাসের মধ্যে আছি পরে কথা বলি ।পরক্ষনে তুমি রাগ করতে।শতপ্রশ্ন তোমার মাথায় উদয় হত।কেন আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাই না?কেন সারাদিন স্টুডেন্ট এবং কোচিং নিয়ে ব্যাস্ত থাকি? কেন?তোমাকে সময় দেই না?কেন ?তোমাকে কি আমার ভাল লাগে না??তুমি সারাদিন একা থাকো?আমি তোমাকে আরও একা করে দেই?কেন আমি এমন করি?কেন তোমার গুরুত্ব নাই আমার কাছে?
এই সব প্রশ্নের উওর আমার জানা ছিল।আমি জানি।কিন্তু কেন যেন বলতে পারতাম না।চুপচাপ শুনতাম।আর তুমি বলে যেতে।মাঝে মাঝে যখন আর সহ্য করতে পারতাম না তখন হয়ত রাগ করতাম তোমার সাথে তোমার সাথে চিল্লাচিল্লি করতাম।তুমি জানতে আমি কেমন?কেন স্টুডেন্ট , টিউশনি করি।মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানের এটাই নিয়তি।নিজের চাহিদা মিটানোর উপায় নেই।অভাব নামক বস্তু যে গ্রাস করে।তবে যতটা পারতাম তোমাকে সময় দেয়ার চেষ্টা করতাম।কিন্তু তা যথেষ্ট পরিমানের ছিল না।তোমার অন্য বান্ধবীদের প্রিয়জনেরা তাদের অনেক সময় দেয়।তাদের সাথে অনেক কথা বলে।সারা দিন এবং সারারাত জেগে কথা বলে।কিন্তু আমার পক্ষে তা সম্ভব হত না।তাই তোমার মনে হত আমি হয়ত তোমাকে ইগনোর করি।তোমার সাথে ভাব দেখাই।আমার ইগো বেশি।
বিশ্বাস করো আমার ভাব বলে কিছু নেই। মধ্যবিত্ত পারিবারের ছেলেদের কখনো ইগো থাকে না।আর ভাব তো দূরের কথা।তাদের মনে মধ্যে একটা আতঙ্ক কাজ করে।নিজেকে বেশি অবহেলিত মনে হয়।মনে হয় তাদের যোগ্যতা কম।জগতের সকল আনন্দগুলো যেন তাদের জন্য নয়।তাদের মনে ভয় হয় হারানো ভয়।নিজেকে বেশি প্রকাশ করতে পারে না।একটু বেশি চাপা স্বভাবের।নিজের কষ্টগুলো একান্ত নিজের করে রাখতে চায়।কেউ যদি তার কথায় কষ্ট পায়।কেউ যদি তার আচরনে কষ্ট পায়।তাই খুব সচেতন ভাবে চলতে চায়।নিজে স্বপ্ন দেখে একদিন অনেক বড় হবে।নিজের স্বপ্নগুলো নিজে পূরন করবে।কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হয়।কোন এক অদৃশ্য মরীচিকা তাদের আটকে ফেলে।
আজ সকালটা কেমন যেন।লেখতেই ইচছা করছে।লিখা থামাতে ইচ্ছা করতে না।চিরকুট লেখা এখন বন্ধ ।সকালের নাস্তা এখনো করিনি।লিখতে লিখতে যে কখন সকালে দশটা বেজে গেছে তা নিজেও খেয়াল করি নি।আম্মা নাস্তা খাওয়ার জন্য যখন ডাক দিল তখন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি দশটা বাজে।তাহলে লেখা শেষ করি।এই অসমাপ্ত চিরকুটগুলো হয়ত তোমার পড়া হবে না।
স্পেসিং এর দিকে লক্ষ্য করো
। পরে সেস্প হবে
ভালো লেগেছে 😀
হুম ওকে
এ্যাই পিচ্চি তুসিন না তোমার দুই বছরের সিনিয়র? 😛
*স্পেস
কিছু কিছু জায়গা বে-শ ভালো লাগলো। 🙂
বৃষ্টি ভালোবাসা।
বৃষ্টির জন্যে ভালোবাসা।
কল্পনা, ইচ্ছে, স্বপ্ন, বাস্তবতা- ভালো থাকুক মিলেমিশে সব। :beshikhushi: