ফরহাদ মাজহার যেমনে খালেদার রাজনীতিরে দেখবার চান

ফরহাদ মাজহারের কলামটি পড়লাম। শিরোনাম দিয়েছেন ‘খালেদা জিয়ার রাজনীতি, এখন…’ link:http://www.chintaa.com/index.php/chinta/showAerticle/226/bangla
খালেদা জিয়াকে নিয়েই আবর্তিত আলোচনাটি উপভোগ করেছি। শিরোনামটি ‘খালেদা জিয়ার রাজনীতিকে যেভাবে দেখতে চাই’ কইলেও মন্দ হতো না। পুরো লেখাতেই খালেদা জিয়ার কাছে উনার প্রত্যাশা ও হতাশা ফুটে উঠেছে। যে বিষয়টি খালেদার ভাষণের পরপরই ফেইসবুকে শেয়ার করে ছিলাম সেটা উনারও নজরে এসেছে। পরাশক্তিদের সন্তুষ্ট করার মরিয়া চেষ্টা। লিখিত এই ভাষণের ১৮বার জঙ্গি জঙ্গি জপ করে খালেদা জিয়া আমাকে স্মরণ করিয়েছে প্রেসিডেন্ট বুশের টেররিজম বিষয়ক ২০০৫ এর ভাষণ। যেখানে ২৮বার টেরর-টেররিজম- টেররিস্ট বলে গেছেন  মৌলবাদীদের উদ্দেশ্য করে। ফরহাদ সাহেব এবিষয়টি এভাবে দেখছেন   ‘যে দিকটা বিশেষ ভাবে লক্ষ্যণীয় সেটা হচ্ছে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ সম্পর্কে যতোটুকু বলা দরকার অতি উৎসাহী হয়ে তিনি তার চেয়েও অনেক বেশী বলেছেন। তিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের স্থানীয় বরকন্দাজ হতে চান, যে যুদ্ধ মূলত পরিচালিত হচ্ছে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে, তিনি সেই যুদ্ধে পাশ্চাত্য শক্তির অংশীদার হতে চান, তাদের হাত মজবুত করতে চান। পাশ্চাত্যের হয়ে তিনি এদেশের জনগণের বিরুদ্ধে লড়তে চান।’ 
তিনি ফরিয়াদ করেন “তাছাড়া বেগম জিয়া ভুলে যাচ্ছেন তিনি যতোই চেষ্টা করেন না কেন, বাংলাদেশে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের সেনাপতি শেখ হাসিনা। তিনি শত চেষ্টা করেও শেখ হাসিনার চেয়ে বেশী ফ্যাসিস্ট হতে পারবেন না। এবং ফ্যাসিস্টরাই পরাশক্তির পছন্দ। শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র এটা নয়। বরং ফ্যসিবাদ ও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরদ্ধে লড়াইটাই তাঁর জায়গা। ” 
একই সাথে খালেদা জিয়ার প্রস্তাবের বিষয়েও উনি হতাশা ব্যক্ত করেছেন ‘তিনি নির্বাচনের সময় সরকারের ধরণ নিয়ে যেপ্রস্তাব করেছেন, সেটা অনেকের মতো আমার কাছেও ‘অবাস্তব’ মনে হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নাম না ধরে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠনের জন্য বাংলাদেশে তিনি পুরানা লোক ছাড়া নতুন কাউকে খুঁজে পেলেন না। কৌশল্গত হলেও সেটাও ঠিক মনে হয় নি। অদূরদর্শিতার রাজনৈতিক প্রভাব সমাজে পড়ে। ‘
ফরহাদ সাহেব অনেকের মত খালেদাকে আপোষহীন দেখবার ইচ্ছা কিছুটা হইলেও প্রকাশ করছেন। এরমধ্যে খারাপ কিছু নাই। আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে ৯০ এর আপোষহীন খালেদা জিয়াকেই বেশি পছন্দ করি। কিন্তু উনি সেই আগের বয়সেও নাই, উনার সেই আগের বিএনপির বিজ্ঞ রাজনৈতিক সহযাত্রীরাও নাই। ভাষণের পৃষ্ঠাগুলিও প্রায়ই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ফরহাদ সাহেব ভুলে যাচ্ছেন না যে বিএনপি লিবারেল দল, বিপ্লবী নয়, কিন্তু উনি ভুলে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া একই সঙ্গে একজন মা এবং রাজনৈতিক দলপ্রধান। দুই সন্তানকে দেশে ফেরত আনতে তিনি মরিয়া। পরাশক্তিদের সাথে যে সমঝোতার ভিত্তিতে তারেককে নির্বাসন ও সকল দুনীতি মামলা থেকে ৫বছরের জন্য কার্যত অব্যহতি দেয়া হয়েছিল- তাদের এড়িয়ে ক্ষমতায় আসা বোধ করি  সম্ভব নয়। তাছাড়া ওয়াশিংটন দিল্লীতে তিনি সফর করেছেন, আর্টিকেল চিঠিতেও গণতন্ত্রের সিন্নির জন্য আবেদন জানিয়েছেন লিখিতভাবে। এপ্রসঙ্গে জনগনের আরেকটি জিজ্ঞাসা আসতেই পারে। খালেদা জিয়াকে ভোট দিলে আবারও অসাংবিধানিকভাবে তারেককেই কি ক্ষমতার কেন্দ্রে আনা হবে? উনি কি ৫বছর সরকার পরিচালনা আর হেফাজত-জামাতকে সামলে একটি ব্যালেন্স গড়তে পারবেন?
ক্ষমা দেবার বিষয়েও ফরহাদ সাহেব বলছেন, ‘কিন্তু যারা গণহত্যা করেছে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে, মানুষ গুম করেছে, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, আলেম ওলামাদের আলো নিভিয়ে নির্বিচারে হত্যা করেছে, নিজেরা কোরান শরিফ পুড়িয়ে আলেম ওলেমাদের ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়েছে তাদের ক্ষমা করে দেবার অধিকার তো জনগণ তাঁকে দেয় নি। প্রতিহিংসা অবশ্যই নয়, কিন্তু ন্যায়সঙ্গত বিচার থেকে কাউকে রেহাই দেবার অধিকার তাঁর নাই। কারুরই নাই। এই প্রত্যাশাগুলোকেই তিনি লম্বা দাবিনামা বা অনর্থক বিশাল তালিকা না বানিয়ে সহজে বলতে পারেন যে একাত্তরে স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ইনসাফের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করা। তিনি ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের সেই ঘোষণাই বাস্তবায়িত করবেন। আসলেই আমরা মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় স্তরে প্রবেশ করতে চাইছি। জয় শাহবাগ!’
খালেদা কোন অধিকারে দুর্নীতির দায়মুক্তি দিয়ে গেলেন বোঝা গেল না। ‘যেকোনভাবেই হোক, ক্ষমতা চাই’ দাবিটি এতে নির্লজ্জ্বভাবে প্রকাশ পায়। জনগনের টাকা লুটপাট হয় আর উনারা মাফি মাগেন এবং করেন। বেশ একটা ব্যবস্থা গড়েছেন। খালেদা কোন অদ্ভুত কারণে মুক্তিযুদ্ধের কথাই আনতে চান না।  এমনকি সরাঅয়ার্দিতেও উনি ‘আমরাও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই, কিন্তু সেটি স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের’ এই বহুল চর্চিত ও প্রচারিত বাক্যটি কইতে পারেন নাই।  হয়তো মঞ্চের সামনেই শিবিরের ব্যানার ফেস্টুন দেখে উনি সাহস করে উঠতে পারেন নাই।  কিন্তু লোকে বাক্যটি ভুলবে না। দ্বিতীয় বা তৃতীয় মুক্তিযুদ্ধ যাই বলেন- ১০টাকা চালের মত এই বাক্যটিও ভুলবার নয়।
খালেদার ভুল স্বীকার ও সরকারকে ‘অবৈধ’বলবার বিষয়ে বেশ প্রশংসা ঝরিয়েছেন ফরহাদ সাহেব। কিন্তু পরাশক্তি ওয়াশিংটন ও দিল্লীকে খুশি করতে তার বয়ান খুশি করতে পারে নি। সবাইকে খুশি করা সহজ কাজ নয়। এই দুরহ কাজটির নাম রাজনীতি। এটি যখন পরিবার ও অস্তিত্বের  সংকটে পরে তখন ‘নীতি’ খুব নাজুক অবস্থানে পরে যায়। শুধু অবশিষ্ট থাকে রাজ 

বাঙ্গাল সম্পর্কে

আমি একজন ঘবেষক..চিন্তা করাই আমার কাজ...চিন্তিত ভাই ব্রাদারদের আমার পেজে স্বাগতম। [email protected] https://www.facebook.com/bangal
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিবিধ-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

5 Responses to ফরহাদ মাজহার যেমনে খালেদার রাজনীতিরে দেখবার চান

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    খালেদা কি শুধু মা হিসেবেই ছেলেকে ফেরত আনতে চাইছেন?
    নাকি আরও কারণ আছে?

    যেমন হয়ত তারেককে দেশে ফিরিয়ে আনা ছাড়া বিএনপির জন্য নির্বাচনে কাজ করাটা হার্ড হবে। মানে এইগুলা তো ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল। তারেক আসলে দেখা যাবে জামাত এর উপর নির্ভরতা কমে যাবে।

    • বাঙ্গাল বলেছেনঃ

      নিরাপত্তার খাতিরেই বলেন আর পরাশক্তির সাথে যে সমঝোতা হয়েছিল তার খাতিরেই বলেন- তারেক নির্বাচনের আগে দেশে ফিরছে না। তাকে ফিরিয়ে আনাটা তালুক রক্ষার জন্য, সন্তানের ভবিষ্যতরক্ষার জন্য, বিএনপিতে আধিপত্য বজায় রাখবার জন্য খালেদার কাছে জরুরী।

  2. জ্ঞানচোর বলেছেনঃ

    পর্দার সামনে আর পর্দার পেছনের রাজনীতি নিয়ে কে বেশী ওয়াকিবহাল তা যথেষ্ট সন্দেহের ব্যাপার। যেহেতু মঞ্চের উপর বিরোধী দলীয় নেত্রী, আর তার সমালোচক ফরহাদ মজহার সাহেব মঞ্চের দর্শক সারিতে, সেহেতু, ধরেই নিলাম, আসলে কি ঘটছে তা আসলে বিএনপি নেত্রীই জানেন।

    আমি মনে করি ফরহাদ মজহার সাহেব তার থিসিসের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে গিয়ে, অনেক অগ্রহণযোগ্য কথা বলেছেন। কোন এক টক-শোতে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল,

    “আপনি যেটা বলছেন, সেটা তো জনগণের কথা নয়?”

    জবাবে তাৎক্ষণিক জবাব ফরহাদ সাহেবের,
    “আমি জনগণের কথা বলতে আসি নি, আমি আমার কথা বলতে এসেছি”।
    তো তিনি যদি তার নিজের মনপ্রসূত কথা বলবেন, তাহলে, এত যে দার্শনিক ডিসকোর্স, তার আসল ফায়দা কোথা?

    তাই, এ বিষয়ে যদি কিছু বলতেই হয়, লোকটার থিসিসের এই অংশটার চেয়ে আমার মনে হয় নজর দেওয়া উচিৎ, ভারত-মার্কিনবাদী প্রভাবের ব্যাপারে।

    ভুল হবে না, যদি বলি যে, জাতিরাষ্ট্রের স্বাধিকার (নিজের) বলতে যদি কিছু থাকে, তা ঐ সরকার গঠনের ক্ষেত্রেই। কারণ, বিশ্বায়নের যুগে বাণিজ্য আর উন্নয়নে বাকি সব, বড় বড় কোম্পানিগুলোর জমিদারিতেই চলে যায় বৈ কি?
    কিন্তু, ছোট দেশ বলেই সব মোড়লেরা মিলে ঠিক করে দেবেন কে আসবেন কে যাবেন, সেটা কিছুতেই মেনে নেয়া উচিৎ নয়। তাও, যদি পর্দার আড়ালে হতো, তাও ষড়যন্ত্র তত্ত্বের উপর নিতে পারতাম ব্যাপারগুলো।
    কিন্তু, এ যে দিনের আলোয় আমেরিকার রাষ্ট্রদূত উড়াল দেন দিল্লীর পথে। খুবই সামান্য ঘটনা হলেও, জাতিত্ত্ববোধের শিকড় ধরে টান দেবার কথা এ বিষয়গুলো।

    মজহার সাহেবের বয়স হয়েছে। তেমনি হয়তো বয়স হয়েছে তার যুক্তি তত্ত্বের। কিন্তু, এই মোড়ল-তন্ত্রের বিরুদ্ধে মুখভরা বুলির পোস্টার সাঁটানোর বাইরে পত্রিকায় লিখতে আর কাউকে যে দেখি না!

    • জ্ঞানচোর বলেছেনঃ

      উদ্ধৃতি দিতে গিয়ে ভুল হয়ে গ্যাছে। 🙁

    • বাঙ্গাল বলেছেনঃ

      ফরহাদ দর্শকসারীর লোক নন। তিনি এখন নেপথ্য কুশীলব। বিএনপির সাথে ইসলামী রাজনীতিকে বাধতে তিনি এবং তার বন্ধু মাহমুদুর অগ্রনী ভূমিকা রেখেছেন, দলের ভেতর থেকে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন। দলের প্রয়োজনে ইসলাম কার্ড ব্যবহার করে হেফাজতকে ডেকে এনেছেন। মৌলবাদী রাজনীতিকে আগে বাড়াবার কৌশল আবার ত্যাগ করে এদের আরো খোলসে বন্দী করতে শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়নকে কচ্ছেন কেরানী তৈয়ারের মতলব। একটি নতুন ইসলামী রাজনীতির অগ্রসর ফোরাম গঠনেও কৌশলে পেছনে টেনে ধরছেন। ফলে জামাতের রাজনীতিকে ঝাপিয়ে এরা আগে বাড়তে পারছে না।

      নেত্রীদের সাথে পশ্চিমের যে দহরম-মহরম সেটি নিয়ে অনেকেই লেখেন। খাস বাম, ইসলামিক নন, নামাজ পড়েন না, ক্ষমতায় আসতে পারবেন না এসব বলে তাদের বাতিল করে দেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।