দ্যা পাইড পাইপার অফ হ্যামেলিন, জানি, তুমি আসবে…

খুব সুন্দর একটা গল্প ছিল, তাই না ? মজার, কিছুটা কষ্টের…আর সবচেয়ে আকর্ষনীয় বিষয় ? বাঁশির ম্যাজিক, মোহনীয়তা ।

জার্মানীর হ্যামেলিন বা হ্যামিলন (যে কোন একটা হবে) শহরের হঠাৎ ভয়াবহ এক সমস্যা দেখা দিল। অনেক ইঁদুর, বড় বড় ইঁদুর তাদের শহরে। অনেক জ্বালাতো ইঁদুর গুলো, দেখতেও ছিল ভয়াবহ। যখন কোন সমাধান পাওয়া যাচ্ছিলনা, হঠাৎ কোথা থেকে আগমন ঘটল এক অদ্ভুত আগন্তুকের। আগন্তুক বলল সে এই সমস্যার সমাধান করে দেবে। কিন্তু পারিশ্রমিক হিসেবে তাকে দিতে হবে ৫০০ স্বর্ণমুদ্রা।

শহরের মেয়র তাকে প্রতিশ্রুতি দিল। তারপর ঘটল এক অভুতপূর্ব ঘটনা।আগন্তুক তার ঝুলি থেকে একটা বাঁশি বের করে বাজাতে শুরু করল। সবাই অবাক হয়ে দেখল শহরের প্রতিটা ইঁদুর সুড়সুড় করে বের হয়ে আসছে, বাঁশিওয়ালা যাদিকে যেতে থাকল, ইঁদুরগুলোও তার পিছু নিতে থাকল।

এভাবে বাঁশিওয়ালা  ইঁদুরগুলোকে হটিয়ে দিল।

এরকমই ছিল না ঘটনাটা?

তারপর? তারপর বাঁশিওয়ালাকে তার প্রাপ্ত পারিশ্রমিক দেয়া হলনা। এর জন্যে চরম মূল্য দিতে হল হ্যামেলিন শহরটাকে। বাঁশিওয়ালা এবার আরেকটা বাঁশি বের করল। বাঁশির মোহনীয় সুর কেড়ে নিল হ্যামেলিনের সবগুলো কচি প্রাণকে………

হাহ্‌, কী অদ্ভুত!!

আচ্ছা, আমার মনে না একটা প্রশ্ন জেগেছে! বাঁশিওয়ালা যে প্রতিশোধ নিল, এতে কিন্তু সেই বিশ্বাসঘাতক মেয়রের কোন ক্ষতি হলনা, তাই না? আচ্ছা, বাঁশিওয়ালা তো একটা কাজ করতে পারত, সে তো ওই মেয়রটাকেই নিয়ে যেতে পারত, সবগুলো বাচ্চা কে না নিয়ে। তাহলে তার প্রতিশোধ টাও নেয়া হত, সাধারন মানুষ ও ক্ষতিগ্রস্ত হতনা। মানুষ খুশি হয়েই তার পারিশ্রমিক দিয়ে দিত।

আমি না এই বাঁশিওয়ালার অপেক্ষায় বসে আছি। আসলে আমরা সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। কীসের?


যদি বাঁশিওয়ালা এখানে আসত, আমি বলতাম,

-ও বাঁশির যাদুকর, আমাদের একটা উপকার করে দেবে ভাই?

-কী উপকার?

-আমাদের দেশে না খুব খারাপ কিছু প্রাণী আছে, খুব খারাপ!!তারা প্রতিনিয়ত নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির লক্ষ্যে যা খুশি তাই করছে। ওরা মানুষ মারছে, ওরা লুট করে খাচ্ছে এই সাধারন মানুষদের, ওরা একের পর এক মিথ্যা বুলি দিয়েই যাচ্ছে। চোখের সামনে দেখতে পারছি, কিন্তু কিছু করতে পারছিনা!

-কেন কেন?তা কেন?

কারণ এই প্রাণীগুলো আমাদের দেশ দখল করে আছে, আমাদের মতই কথা বলে, জানো? দেখতেও আমাদের মত, কিন্তু মনের দিক থেকে না একটুও মিল নেই!পারবে ভাই ওদের থেকে আমার প্রাণপ্রিয় দেশটাকে মুক্ত করে দিতে?সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে।

-হ্যা পারব। কিন্তু আমার পারিশ্রমিক?

-তোমার কী মনে হয় এই দেশের প্রায় ১৬ কোটি মানুষ তাদের দেশকে মুক্ত করার জন্যে তোমায় পারিশ্রমিক দেবেনা? দেবে, দেশের সবচেয়ে গরীব মানুষটা, যে কিনা এক বেলাও খেতে পারেনা,সেও দেবে। এই আমি কথা দিলাম।

ইশ্‌,সত্যি যদি এমনটা হত!!! বাঁশিওয়ালা এসে নিয়ে যেত এদেশের স্বার্থপরায়ন রাজনীতিকে!!!

আর ভালো লাগেনা!!!আর কতদিন দেখব,বলতে পারেন?? প্রতিদিন মানুষ মরছে, ভাংছে ঘড়বাড়ি।

আসলে ভেঙ্গে যাচ্ছে আমার প্রাণপ্রিয় দেশটা!!

আমি না খুব করে অপেক্ষায় আছি এমন এক বাঁশিওয়ালার!খুব… এদেশ একদিন শান্তি পাবে, রক্ষা পাবে, হয়ত একজন নয়, এরকম হাজার হাজার বাঁশিওয়ালা আসবে। দেশকে মুক্ত করবে……স্বাধীন করবে দেশকে কতগুলো স্বার্থলোভী স্বজাতির হাত থেকে……

আপনিও অপেক্ষায় আছেন, তাই না???

তালপাতার সেনাপতি সম্পর্কে

কেউ ভাবে মানুষ, কেউ হয়তো অমানুষ, কেউ ভেবে বুঝেছে আমি অহঙ্কারী, কেউ ভেবে বের করেছে নিজেকে অনেক বেশি হাসিল করার চেষ্টা করতে আমি পারদর্শী, কারো কাছে হয়তো আমি খুব স্বাভাবিক, কারো কাছে পাগল, অস্বাভাবিকত্বের কমতি নেই এমন ভাবতেও অনেকে দ্বিধা করেনা। এত কিছুর লব্ধি বের করে কখনো ভেবে দেখা হয়নি আমি আসলে কি, কেমন। শুধু এইটুকু জানি, আমি আমি। আমি আর কেউ নই। শুধুই আমি.........আর এই আমি হয়েই বিদায় নিতে চাই
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চিন্তাভাবনা-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

12 Responses to দ্যা পাইড পাইপার অফ হ্যামেলিন, জানি, তুমি আসবে…

  1. রুহশান আহমেদ বলেছেনঃ

    আসলেই তো, তার ঝামেলা মেয়রের সাথে। মেয়রকে নিলেই পারত।
    কিন্তু, মেয়র তো নির্বাচন করে সাধারন মানুষই। তাই কঠিন শিক্ষা দেওয়ার জন্য সে এই কাজ করেছিল।

    • তালপাতার সেনাপতি বলেছেনঃ

      গভীর উপলব্ধিটা সুন্দর 🙂
      তবুও এভাবে না করলেও পারত কিন্তু,মানুষ এরপরের মেয়র সতর্কতার সাথে নির্বাচন করত হয়তো, হা হা। আসলে ক্ষমতা জিনিসটাই হয়ত এমন,খুব কম মানুষই পারে এর অপব্যবহার না করতে

  2. সামিরা বলেছেনঃ

    হুম, এরকম হলে তো ভালোই হত।
    “মেয়র তো নির্বাচন করে সাধারন মানুষই। তাই কঠিন শিক্ষা দেওয়ার জন্য সে এই কাজ করেছিল।” – এটাও সত্যি। 🙂

  3. মাধবীলতা বলেছেনঃ

    বাঁশিওয়ালার অপেক্ষায় আর কতদিন জানি না…
    আমাদের দেশের নেতানেত্রীদের উঠায়া নিয়া গেলে ভালো হইত। 🙁

  4. হৃদয় বলেছেনঃ

    ছোটবেলা থেকে, মেয়রের প্রতি রুষ্ট হয়ে, হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালার শহরের সব শিশুকে নিয়ে যাওয়াকে, প্রতিশোধ হিসেবে খুব বেশীই মনে হত!

    ‘ইশ্‌,সত্যি যদি এমনটা হত!!! বাঁশিওয়ালা এসে নিয়ে যেত এদেশের স্বার্থপরায়ন রাজনীতিকে
    সত্যিই, হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালার মত অথবা ‘পাঞ্জেরীর’ নাবিকের মত কেউ একজন এসে, সব পুরাতন জীর্ণতা, সংকীর্ণতার দেয়াল ভেঙে নতুন করে শুরু করত!

    রূপকথা বাস্তবে ফিরে আসুক অতি শীঘ্রই, এমন প্রত্যাশাই আমাদের সকলের…ইনশাল্লাহ, বাজে সময় কাটবেই।
    সুন্দর, ঝরঝরে লেখা। চালিয়ে যান ভাইয়া 🙂

  5. Muhim Muktadir বলেছেনঃ

    আফসোস, আমরা সব ই বুঝি কিন্তু কিছুই করতে পারি না… 🙁

  6. স্রোতস্বিনী বলেছেনঃ

    গল্পের শেষটা অবশ্য আমি আবার একটু অন্যরকম পড়েছি, “সব বাচ্চাকে বাশিওয়ালা নিয়ে যেতে পারলেও একটা খোঁড়া ছেলে আর পিছু পিছু যেতে পারে নাই, সেই ছিল একমাত্র বেঁচে যাওয়া ভবিষ্যৎ, যে কিনা ভিখারির ছেলে ছিল তখন তাকেই শহরের সবাই মাথায় তুলে রাখত, কিন্তু হলে কি হবে তাতে ছেলেটার সুখ ছিল না, সে সারাদিন রাত বলত, আমি কেনও যেতে পারলাম না বাশিওয়ালার সাথে?? পাহাড়ের ওই পাড়ে না জানি কত কি আছে, কত সুখসমুদ্র লুকিয়ে আছে!!” আমাদের জীবনের চাওয়া-পাওয়ার যে সীমা নাই,তাই হয়তো লেখক বুঝিয়ে ছিলেন।

    আপনার দেখা স্বপ্ন, আর অপেক্ষায় আমরাও আছি, কিন্তু যদি এমন ঘটে-
    সেই দুর্নীতিবাজ মানুষগুলো চড়া সুদে বাঁশিটাই কিনে নেয়, আর বাশিওয়ালা হেলেদুলে চলে যায় তবে, রূপকথাটা তো তাদের ও পড়া?? 🙁

    এমন বাশিওয়ালার স্বপ্ন দেখি, যে কিনা ভালোবাসার টানে নিঃস্বার্থে বাঁশিতে সুর জাগিয়ে ঢেউ তুলবে জীবন কল্লোলে,সকল অশান্তি ভেঙ্গেচূড়ে। 🙂

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।