বইয়ের নামের মধ্যেই যেমন সরলতার একটা ভাব আছে, পুরো বইটা জুড়েও তেমনটাই পাওয়া যাবে। লেখক আর কেউ নন, আমাদের হুমায়ূন আহমেদ। বইয়ের কাহিনী আবর্তিত হয়েছে মোঘল সম্রাট নাসিরুদ্দিন মুহম্মদ হুমায়ূন মীর্জা- কে নিয়ে, যিনি পিতার দিক থেকে তৈমুরের পঞ্চম অধস্তন এবং মাতার দিক থেকে চেঙ্গিস খানের পঞ্চদশ পুরুষ।
স্বভাবতই ইতিহাসভিত্তিক বই, কিন্তু পাঠক হিসেবে বলতে পারি (সমালোচক নই, কেননা এখানো সেই পর্যায়ে পৌছাইনি) পড়তে পড়তে এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি, গৎবাঁধা চিরাচরিত কোন ইতিহাসের বই পড়ছি। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, সম্রাট হুমায়ূন চরিত্রটি লেখক হুমায়ূনের অন্যান্য চরিত্রের সাথে এতোই সামঞ্জস্যপূর্ণ যে, পাঠক হিসেবে ভুলেই যেতে হয়, এ কোন সম্রাটের জীবনী, যিনি কিনা খেয়ালের বশে রাজকোষের সব অর্থ নিয়ে পালিয়ে যান বাদাখশানে, যিনি কিনা সাম্রাজ্য হারিয়েও চৌদ্দ বছরের হামিদা বানুর প্রেমে পড়েন,এবং বিবাহে রাজি করাবার জন্য উপবাসও থাকেন!! এই হামিদা বানুর গর্ভেই জন্ম নেন আকবর দ্যা গ্রেট।
সম্রাট হুমায়ূন চরিত্র যে কত বিচিত্র, তার জীবনে যে কত রঙ চড়ানো, তা এতদিন শুনেই এসেছিলাম, আজ তা লেখক হুমায়ূনের গুণে পড়া হল। সম্রাট হুমায়ূন শুধু তার খেয়ালিপনার জন্যই বিখ্যাত ছিলেন না, মোঘল চিত্রকলার শুরু হয়েছিল তারই হাত ধরে, ছিলেন কবি, তার চিরশত্রু শের শাহ , যিনি-ই হুমায়ূনকে পরাজিত করে আগ্রা দখল করেছিলেন, তাঁরও নির্দেশ ছিল, “সম্রাট হুমায়ূনকে কোন অবস্থাতেই হত্যা করা যাবে না” কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, “ তিনি মহান মানুষদের একজন। এই মানুষটির অন্তর স্বর্ণখণ্ডের মতো উজ্জ্বল। সেখানে কলুষতার কণামাত্র নাই।”
সম্রাট হুমায়ূনের সবচেয়ে বড় ক্ষমতা ছিল মানুষকে ভালবাসবার ক্ষমতা। “জাদুকরী ক্ষমতার হুমায়ূনের মতো মানুষরা যা কিছু হারায় সবই ফিরে পায়। মানুষের ভালোবাসার কারণে ফিরে পায়। ” আসলেই সম্রাট ফিরে পেয়েছিলেন তার হারানো সাম্রাজ্য, বজায় রেখেছিলেন মোঘল ঐতিহ্যও।
হাজারো উত্থান- পতন, দেনা- পাওনা, হারানো- ফিরে পাওয়ার মাঝেও , হুমায়ূনের ছোট মেয়ে আকিকা বেগমের কথা ঘুরেফিরে এসেছে। তার প্রতি সম্রাটের প্রগাড় ভালোবাসার নিদর্শন এটি। সেনাপতি বৈরাম খাঁ বিশেষ চরিত্র, যার বীরত্ব আর সাহসিকতা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে, সম্রাট হুমায়ূনের প্রতি তার প্রগাড় নিষ্ঠা চোখে পড়বার মতো।
এছাড়া আমরা পাবো বিশ্বাসঘাতক হরিসঙ্করকে, সিংহাসনলোভী হুমায়ূনের ভাই কামরান মীর্জাকে, হুমায়ূনের আরেক অনুগত আবতাবচি ( যিনি পানি সরবরাহ করেন) জওহরকে। শেষ জীবনে হুমায়ূন সব কিছুই বৈরাম খাঁ এর উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন, যিনি পরবর্তীতে সম্রাটের মৃত্যুর পর আকবরের অভিভাবক হয়েছিলেন। তার করুণ মৃত্যুর কথা নাই বা বললাম, কিছুটা ট্র্যাজেডি পড়বার জন্যই না হয় রেখে দিলাম!!
সবশেষে একটা বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করবো, যা পাঠক হিসেবেই কৌতূহল, তা হল, বইটা পড়বার এক পর্যায়ে মনে হল, ঘটনাগুলো কি আসলেই এতো বেমানান?? নাকি লেখক হুমায়ূন তার কিংবা তার চরিত্রের জীবনের সাথে সম্রাট হুমায়ূনের মিল পেয়েছেন বিধায় এমন লেখায় আগ্রহী হলেন?? অথবা হাজারো ঘটনা থেকে সেগুলোই তুলে নিলেন যা তিনি চেয়েছেন?? আর সে জন্যই ভূমিকাতে এই লেখার পিছনের কোন কারণ শক্তভাবে উল্লেখ করেননি।
বইটি উৎসর্গও করেছেন তার ছোট ছেলে নিনিত হুমায়ূনকে, যেখানে বলেছেন- “ আমার কেবলই মনে হচ্ছে পুত্র নিনিত পিতার কোন স্মৃতি না নিয়েই বড় হবে।…… এই বইয়ের উৎসর্গপত্রও স্মৃতি মনে রাখা প্রকল্পের অংশ।” বইটি শেষও হয়েছে সম্রাটের ছোট পুত্র আকবরকে দিয়ে, যে ১৪ বছর বয়সেই দিল্লীর মসনদে বসেছিল!!
এটা হয়তো কাকতলীয় , কে বা জানে?? শেষ করছি হিন্দুস্থানের অধীশ্বর দিল্লীর সম্রাট শের শাহকে পাঠানো রাজ্যহারা হুমায়ূনের একটি শের দিয়ে-
“ যদিও দর্পণে আপন চেহারা দেখা যায়
কিন্তু তা পৃথক থাকে
নিজে নিজেকে অন্যরূপে দেখা
আশ্চর্যের ব্যাপার।
এ হলো আল্লাহর অলৌকিক কাজ। ”
পড়ব পড়ব করেও পড়া হলোনা বইটি, ইচ্ছা আছে পড়ার ।
সময় করে পড়ে নিয়েন ভাইয়া, আশা করি হতাশ হবেন না… 🙂
আমারও পড়া হয় নাই বইটা। এখন আসলে হুমায়ূনের বই পড়ার আগ্রহ পাই না, বেশ অনেক বছর ধরেই আমার একটা অভ্যাস হইছে, কোন বই পড়ার আগে সেটার প্রকাশকাল দেখে নেয়া। এই অভ্যাস তৈরিতে প্রধান ভূমিকা হুমায়ূন আহমেদের। 🙁
তারপরেও হাতের কাছে পেলে পড়ে ফেলতে পারি কোন এক সময়ে। রিভিউটা অন্তত আগ্রহ-জাগানিয়া হইছে। 😀
হুমায়ূনের বই না পড়ার আগ্রহ তৈরিতে উনি নিজেই সাহায্য করেছেন!! তবে সত্যি কথা এই বইটা পড়ে আফসোস হবে, আরো অনেক কিছু দিতে পারতেন এমন করে, যদি নিজেকে সময় দিতেন। 🙁
রিভিউটা “আগ্রহ-জাগানিয়া” করতে পেরেছি জেনে ভালো লাগলো। পড়ে ফেলবেন সময় করে… 😀
আরেকটা বুক রিভিউ ! :happy:
হুমায়ুন আহমেদ যে এরকম ইতিহাসভিত্তিক বই লিখেছেন জানা ছিল না ! নিজের মিতা আর অনেক কিছুতেই মিল পেয়েই বোধ হয় লিখেছিলেন। হুমায়ুন আহমেদের সব বই কেন যেন একরকম লাগত শেষের দিকে। সো এটা সেদিক থেকে ডিফারেন্ট হওয়ায় পড়ার আগ্রহ জাগল। 😀
সত্যি কথা বলতে হুমায়ূন আহমেদের বই কেউ সাজেস্ট না করলে পড়ি না!!এই বইটাও বড় আপু বলল, ভালো লিখেছে, তাই পড়েও ফেললাম আর সেটা নিয়ে লিখেও ফেললাম। 😀
যারা ইতিহাসকে আনন্দের সাথে জানতে চায় তাদের জন্য বেশ উপকার হবে। সময় পেলে আপি পড়ে নিবেন… 🙂
আর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ…. 🙂
ভেরি ইন্টারেস্টিং পয়েন্ট অব ভিউ।
চমৎকার লেখা।
http://www.nybooks.com/
এখানে গিয়ে রিভিউ দেখে পড়তে পারো!
মানে নিজের রিভিউ এর উন্নতির জন্য।
এই পয়েন্ট অব ভিউয়ের জন্য আমার ছোট বোনও কিছুটা দায়ী… 😛
আর ধইন্নাপাতা ভাইয়া লিঙ্কুর জন্য… 😀
রিভিউ ভালো লেগেছে :love:
আর বইটার কথা নাই বা বললাম 😛
ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো… 😛
ভাল হয়েছে। 🙂
:love:
“ভাল হয়েছে” জেনে ভালো লাগলো… 😀
:happy: