মজার ভূত: পরীক্ষা ভূত

দরজায় মৃদু টোকা পড়ছে, ওপাশ থেকে ভারী গলায় ভেসে আসছে-

-নিনিদ দরজা খোল?
–নাহ, খুলব না। ভয় লাগে!
-কেউ দরজায় কড়া নাড়লে, দরজা খুলতে হয়, জানো না?

–জানি। কিন্তু তুমি অন্য সবার মত নও, তোমাকে সবাই ভয় পায়!
-আমাকে সবাই ভয় পায় তা কিন্তু পুরোপুরি ঠিক না; ঐ যে নিহান- তোমাদের ক্লাসের ফার্স্ট বয়, সে তো আমাকে ভয় পায় না।

–সবাই-তো আর নিহান না। নিহান ছাড়া ক্লাসের বাকি সব্বাই তোমাকে ভয় পায়!

-আমি কিন্তু মোটেও ভয়ংকর কেউ না! আচ্ছা, আমি চলে গেলে যদি তোমার ভয় কমে যায় তবে চলে যাচ্ছি। কিন্তু ভয় পেয়ে এখন আমায় তাড়িয়ে দিলেও, আমায় ছেড়ে কী থাকতে পারবে? পড়াশুনা না করলেও, পরীক্ষা না দিয়ে কি পারবে? আমি চলে যাচ্ছি, তুমি স্কুবি-ডুবি দেখতে থাকো। আমি তোমায় কিছু বুদ্ধি শিখিয়ে দিতে এসেছিলাম- আমাকে ভয় না করেও জয় করা যায় কিন্তু কী আর করার তুমি তো এখন কার্টুন দেখছ, আমি বরং চলেই যাই, পরশু দেখা হবে।

নাহ, নিনিদের কার্টুন দেখায় একদম মন বসছে না। পড়তেও ভালো লাগে না তার কিন্তু পরশু যে তার ম্যাথ এক্সাম। পেনপ্রিজ মডেল একাডেমী স্কুলে ক্লাস থ্রিতে পড়ে। এমনিতে সে খারাপ স্টুডেন্ট না।  পড়াশুনা মোটামুটি করে কিন্তু পরীক্ষার আগে ভয়ে আর টেনশনে সে অস্থির হয়ে পড়ে। যদিও তার প্রিপারেশান খুব খারাপ থাকে না কিন্তু এক্সামকে যমের মত ভয় পায় সে। কিছুক্ষণ পর যখন কার্টুন দেখায় আর মন বসছিল না, তখন ফিসফিসয়ে উঠে, পরীক্ষা ভূত, তুমি কি আছো এখনও?

-হুম, আছি। কি দরজা খুলবে এখন?

–হুম, খুলব। কার্টুন দেখতেও ইচ্ছে করছে না।

-দরজা খুলতে হবে না, আমি এপাশ থেকেই বলছি। তাছাড়া, আমি তো সবার মনের দরজায় টোকা দেই, মনের দরজা কি পাঁচ-সাতটা সাধারণ দরজার মতন? এ দরজা খোলার জন্য কোন কষ্ট করতে হবে না! শুধু একটু ইচ্ছেশক্তি থাকলেই চলবে কিন্তু জানো, এই ইচ্ছেশক্তিটার-ই বড্ড অভাব।

–আচ্ছা, তোমাকে সবাই ভয় পায় কেন?

-কী জানি? আমি নিজেও জানি না। নিয়মিত পড়াশুনা করলে, আমাকে ভয় পাওয়ার মত কী কিছু আছে, তুমিই বল?
–কই আমি তো রেগুলার অল্প-অল্প পড়াশুনা করি কিন্তু তুমি যখন কড়া নাড়ো আমি ভয়ে জমে যাই।

-এটা তোমাদের মনের ভুল। এই যে দেখ- তুমি পরীক্ষার আগে ভয়ে পড়াশুনাই করতে পারো না কিন্তু পরীক্ষা দিচ্ছি আবার রেজাল্টও খারাপ করছ না! যারা পরিশ্রম করে তাদের পুরস্কার দিতে আল্লাহ কখনো কার্পণ্য করেন না। তাহলে ভয় পাবে কেন, বলত?

–তা তুমি ভুল বল নি। গতবছরতো তোমার ভয়ে মৃদুলের ডায়রিয়া হয়ে গিয়েছিল! তারপরও সে ফিফথ হয়েছে! কিন্তু তুমি না থাকলে কী সমস্যা? এই যে আমরা রোজ স্কুলে যাচ্ছি, প্রতিদিন মিসদের কাছ থেকে কত্তসব নতুন কিছু শিখছি- ঐদিন ‘ওরিগেমি’ শেখাল, আমি এখন কাগজ দিয়ে খুব সুন্দর নৌকো আর প্লেন বানাতে পারি! আবার বিকেলে বন্ধুরা মিলে স্কুল প্লেগ্রাউণ্ডে ফুটবল খেলছি, সন্ধ্যায় আম্মু আর আমি একসাথে মিলে হোমওয়ার্ক করছি, ‘বেন-টেন’ দেখছি, দিব্যি দিন কেটে যাচ্ছে। এসবের মাঝে তোমার থাকার দরকারটা কি? তুমি আসলেই, আমাদের সবার পেটের ভাত চাউল হতে শুরু করে!
-সুন্দর প্রশ্ন করেছ? আচ্ছা, তোমাদের ক্লাসের রতনকে চেন না?

–কি যে বল, চিনবো না আবার! একদম বদের হাড্ডি! পড়াশুনাতো কিছুই করে না। ঐদিন টিফিন পিরিয়ডে কি হল শোন- সবাই টিফিনের ঘণ্টা বাজার শব্দ শুনে বেরিয়ে গেলাম। আমি কি মনে করে আবার ক্লাসে এসে দেখি শয়তানটা কাজলের ব্যাগ থেকে ওর মামার বিদেশ থেকে পাঠানো সুন্দর নীল পেন্সিলটা চুরি করছে, পেন্সিলের ক্যাপে একটা বোতাম আছে যেটা টিপ দিলে আলো জ্বলে! আমাকে দেখতেই, বদটা ভয়ে পেয়ে যায়। কাঁচুমাচু করে বলে- ‘না, মানে কাজলের পেন্সিলটা দেখলাম নিচে পড়ে আছে তাই ওর ব্যাগে রেখে দিচ্ছিলাম আরকি’, বলেই মিষ্টি করে হাসে। রাগে ওর মাথা ভেঙে দিতে ইচ্ছে করছিল; চিন্তা কর কত্ত বড় বদ! বড় হয়ে ও নির্ঘাত ছিঁচকে চোর হবে, দেখো।

-আচ্ছা বাবা আর বলতে হবে না। আচ্ছা, আমি যদি বলি, রতনও নিহানের মত ফার্স্ট বয়!

–কক্ষনো না! রতন বেদম ফাঁকিবাজ। অ্যান্টি সেদিনও এসে স্কুলে কমপ্লেন দিয়ে গেছে, পড়াশুনা কিছুই করে না। আর নিহান, ক্লাস টু থেকে আমাদের ফার্স্ট বয়! ওর মত ভালো ছেলে আমাদের স্কুলে দ্বিতীয়টি নেই- যেমন ভালো স্টুডেন্ট, তেমন সুন্দর ব্যাবহার! কোথায় নিহান আর কথায় রতন! কি যে বল তুমি…

-পরীক্ষা যদি না থাকে, তবে নিহান আর রতনের মধ্যে পার্থক্য করবে কীভাবে?

— আরেহ, এটা তো আগে কখনও চিন্তা করি নি! ঠিকই তো, পরীক্ষা না থাকলে তো কে ভাল স্টুডেন্ট আর কে খারাপ তা কখনও জানা যেত না। এখন রতন নিহানের থেকে কিছুটা দূরে দূরে থাকে; পরীক্ষা না থাকলে তো বুক ফুলিয়ে সবার সামনে হাঁটত।

-এভাবে বলে না নিনিদ। এমনও-ত  হতে পারে, পরীক্ষা আছে বলেই একদিন হয়তো এখনের এই দুষ্ট রতন পড়াশুনায় খুব মনযোগী হয়ে উঠবে, ওরও হয়তো ফার্স্ট হতে ইচ্ছে করবে। কি হতে পারে না?

–ডিসকভারী চ্যানেলে দেখায়, একটা খাটাশ আছে না? ও যদি সাপ-বিচ্ছু কাঁচা চিবিয়ে খেতে পারে তাহলে, রতনতো ফার্স্ট হতেই পারে!এ আর এমন কি?

-এইতো বুঝতে পেরেছ। ভালো-আর মন্দের তফাৎ গড়ে দেয়ার জন্যই-তো আমি আছি তাছাড়া আমি আছি বলেই তোমাদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা ভাব থাকে যা তোমরা আরেকটু বড় হলে বুঝবে। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অনেক তরুণ ছেলেরাও আমাকে ভয় পায়! তোমাদের আর কি দোষ দেব। আচ্ছা, এখন তোমার কি মনে হয়- আমাকে ভয় পাওয়ার মত কিছু আছে?

–একদম না, হেসে উত্তর দেয় নিনিদ।

-আমি দরজা নাড়লে আর ভয় করবে?

-প্রশ্নই আসে না? আচ্ছা, আম্মু বোধয় আমাকে ডাকছে।

–হুম, আমি যাই এখন। তুমি খুব লক্ষ্মী একটা ছেলে। পরশু’র জন্য শুভকামনা রইল কেমন। ভালো থেকো নিনিদ।

…………………………..

……………………………

‘কিরে, তুই কখন থেকে ফিস-ফিস করে কার সাথে কথা বলছিলি? নিনিদের আম্মু চোখ বড়-বড় করে তাকায়’

-ভূতের সাথে আম্মু। মজার ভূতঃ পরীক্ষা ভূত!

‘বাহ! এতক্ষণ তাহলে ভূতের সাথে কথা বলছিল। তা পরীক্ষা ভূত কি তোর মত লিকলিকে শুকনা নাকি পরাগের মত কোলবালিশ?’ মুখ টিপে হাসতে থাকে নিনিদের মা।

-আম্মু, তুমি বিশ্বাস করছ না, তাইতো? ‘পরীক্ষা ভূত’ কিন্তু সত্যিই এসেছিল! খুব ভালো ভূত। আমাকে একদম ভয় দেখায় নি!

‘হুম, ভালো ভূত বলেই তো মনে হচ্ছে! তা কী গল্প করলি এতক্ষণ পরীক্ষা ভূতের  সাথে?’ আগ্রহী চোখে তাকায় নিনিদের দিকে।

-অনেক কিছুই বলেছে, কিন্তু সব তো বলা সম্ভব না। পরীক্ষা ভূত বলেছে, ওকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আসলে ও না থাকলে কে পড়াশুনা করছে আর কে করছে না তার মধ্যে পার্থক্যই তো থাকতো না। আমি এখন পরীক্ষাকে ভয় পাই না। আম্মু, তুমি আমাকে কয়টা অঙ্ক দেখিয়ে দেবে? বই আনবো?

‘বাব্বা, তুই নিজ থেকে অঙ্ক করতে চাইছিস! তোর ভূত আবার যখন আসবে, আমাকে ডাকবি- তাকে অনেকগুলো টফি দেব। কিরে টফি খায় তো ও?’ হেসে জিজ্ঞেস করে নিনিদের আম্মু।

-আম্মু, তুমি বেশি কথা বল, ‘ও কেন টফি খাবে? আমি দৌড়ে শেলফ থেকে বই নিয়ে আসি’, বলেই ছুটে যায় নিনিদ।

‘আস্তে যা’ চেহারায় ক্ষীণ হাসির রেখা টেনে নিনিদের জন্য অপেক্ষা করে- এ বয়সে ভূতের সাথে কথা না বললে বলবে কখন!

[এটা একটা শিশুতোষ গল্প। আট থেকে বারো বছরের শিশুদের জন্য লেখা]

অনিমেষ ধ্রুব সম্পর্কে

"You've gotta dance like there's nobody watching, Love like you'll never be hurt, Sing like there's nobody listening, And live like it's heaven on.'' অসম্ভব পছন্দ উইলিয়াম পার্কারের এই কথাগুলো! নিজের মত করেই নিজের পৃথিবীটা কল্পনা করে নিতে ভাল লাগে। ঔদাসিন্য,অলসতা শব্দ দুটি আমার সাথে বনে যায়। গভীর মনোযোগ কিংবা অসম্ভব সিরিয়াস মুড আমার কখনোই আসে না। একা অচেনা রাস্তায় অকারণে হাঁটতে ভালো লাগে, মানুষ দেখতে ভালো লাগে, ভাল লাগে কবিতা লিখতে...তবে স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন দেখি আমার চারপাশে থাকা মানুষগুলোর জন্য কিছু একটা করার, দেশকে কিছু একটা দেয়ার। পারব কি-না জানি না, তবুও স্বপ্ন বুনে চলেছি নিরন্তর... http://www.facebook.com/kamrul.h.hridoy.3
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে গল্প-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

17 Responses to মজার ভূত: পরীক্ষা ভূত

  1. রুহশান আহমেদ বলেছেনঃ

    আপাতত কোন পরীক্ষা নাই, তাই পড়ে মজা পেয়েছি।
    এইটার কোন সিনিয়র ভার্সন বের করা সম্ভব? যেখানে পরীক্ষা-ভূত নক করবেনা, ধপাস করে দরজা ভেঙ্গে ঢুকে ছেলেটার মাথা টেবিলের সাথে চেপে ধরে পিশে ফেলে……
    :crying:

    • হৃদয় বলেছেনঃ

      পরীক্ষা থাকলে মজা পেতেন না?! 🙁

      ‘যেখানে পরীক্ষা-ভূত নক করবেনা, ধপাস করে দরজা ভেঙ্গে ঢুকে ছেলেটার মাথা টেবিলের সাথে চেপে ধরে পিশে ফেলে’ :thinking:
      রক্তারক্তিতে আমি আর পরীক্ষা-ভূত কেউই নাই 😛 …যদিও আমি নিজে পরীক্ষা-ভূত এখনও ভীষণ ভয় নাই- টেনশনে পড়তেই পারি না 🙁

  2. শারমিন বলেছেনঃ

    মজা পেলুম 😀
    পরীক্ষা-ভূতে ভয় পাই না 😛

  3. জাকির হোসাইন বলেছেনঃ

    অনেক মজার 😀

  4. জ্ঞানচোর বলেছেনঃ

    খুবই মজা পেলাম। মনস্টার ইনকো. এর মতো ভুতবাদী চিন্তাভাবনা দেখছি।

    খুবই ভাল লেগেছে, একটা পিচ্চির কাছে কিভাবে কঠিন কঠিন সব পরীক্ষার যুক্তি তুলে ধরা হলো খুব সহজে। আবার সাথে সাথে ক্লাসের খারাপ ছেলেটির ভবিষ্যতে ভাল একজন হয়ে পড়ার সম্ভাবনার কথাও বলা হলো সংক্ষেপে।

    আমার মনে আছে, ছোটবেলায় পরীক্ষার আগের রাতে নানান প্রার্থনা করে ঘুমাতাম, যাতে ঘুমের মধ্যে কোন সাধুপুরুষ এসে বলে যায় কোন কোন অংকগুলো আসবে?
    আমার বাবাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এই ধরনের কোন কারসাজি আছে কি না? উনিও ঠিক এমন করেই বুঝিয়েছিলেন, যে পরীক্ষা তো আসলে পড়াশুনা না। এটা কেবল সারা বছরের পড়াশুনার মূল্যায়ন। তাই পরীক্ষার জন্য পড়াশুনা নয়, বরং পড়াশুনার যাচাইয়ের জন্যই পরীক্ষা।

    হৃদয়ের কাছে দুইএকটা জিজ্ঞাসা থাকবে, আজকালের পিচ্চিরা কি এখনো স্কুবিডু দেখে, বেন টেন দেখে? না কি নতুন কোন সুপারহিরো তাদের মনে ঘুরে?
    আর, টফি/ক্যাডবেরী খাওয়ার জায়গাটা কি কোন নতুন ফ্লেভার দখল করতে পেরেছে? :love: উত্তর না দিলে অভিযোগ নাই 😀

    ও আচ্ছা। ইদানিং প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে অল্পস্বল্প গুজব শুনছি। প্রাথমিক পর্যায়ের প্রশ্ন ফাঁস হওয়াটা নিয়ে একটু বিশ্লেষনী অনুসন্ধান চালিয়ে একটা নয়া গল্প জুড়ানো যায় না?

    :fire: :fire: :fire: লেখা খুবই ভাল লেগেছে। তাইতো আরো বেশী চাই। :cuthair:

    • হৃদয় বলেছেনঃ

      প্রিয় জ্ঞানচোর ভাইয়া, প্রথমেই বলে রাখছি, আপনার বিশ্লেষণধর্মী মন্তব্যগুলো বরাবরই আমাকে মুগ্ধ করে! ইনফ্যাক্ট, নিজের আপনার মন্তব্য পড়ে, আমি নিজেই লেখাটায় আবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। :guiter:

      কার্টুন দেখতে মন্দ না লাগলেও খুব একটা ভালো আমার কখনোই লাগতো না। হাতে গোনা কিছু কার্টুন আমি দেখেছি। তবে ছোটবোন যখন অবসর পেলেই ‘কার্টুন নেটওয়ার্ক’ খুলে বসত, তখন তার কাছ থেকে কার্টুনগুলোর নাম জেনে নিতাম। কেউ জিজ্ঞেস করলে, অন্তত কিছুতো বলতে পারবো! 😛

      চকলেটের নামকরণের ক্ষেত্রেও কারণ এটাই। পেলে খাই। খেতে ভালো লাগে কিন্তু ভিন্ন স্বাদের অন্বেষণ করাতে, তেমন আকর্ষণ বোধ করি না।
      কিন্তু এখন থেকে করতে হবে দেখছি, অ্যাটলিস্ট লেখার তাগিদে হলেও! 😛

      ছোটবেলায় এক্সামের আগের রাতে, আমি আমার টেক্সটবুক নিয়ে, রেনডমলি কিছু প্রশ্ন পড়ে নিতাম। ধারনাটা এমন ছিল, কোন অদৃশ্য শক্তি বলে, এখন যাই পর্ব সেটাই কালকের এক্সামে আসবে!
      মাঝে-মাঝে মিলে গেলে, আমাকে আর পেত কে! 8) 😛

      আপাতত ফাইনাল এক্সামের মধ্যে, কোন গল্প মাথায় খেলছে না। 🙁 তবে আপনার কথা মাথায় থাকবে, ইনশাল্লাহ। 😀

  5. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    জটিল জটিল! ফাটাফাটি!!
    এত্ত এত্ত মজা পেলুম লেখাটা পড়ে!! :happy:

    কাচ্চাবাচ্চা ভাইবোন বাসায় এলেল সব্বাইকে এই পরীক্ষা ভূতের গল্প শোনাতে হবে এখন থেকে!! :love:

    • হৃদয় বলেছেনঃ

      তোমার সাথে তো আমার ফরমালিন মুক্ত/যুক্ত ফর্মালিটিময় ‘থেঙ্কস-থেঙ্কু’ দেয়া-নেয়ার সম্পর্ক না 😐
      তারপরও দিচ্ছি, তিঙ্কু! 😛
      কাচ্চাবাচ্চা ভাইবোনদের জন্যই লিখেছিলাম, ওরা পড়লেই ‘এনজাইম’ এক্সামের ৪ দিন আগে আসা এই নাছোড়বান্দা ( নাছোড়বান্দা, এই অর্থে বলছি, পরীক্ষার সময়, গল্প মাথায় আসলেও লিখব না, ফিলিং: ডিটারমাইন্ড এমন ভেবে রেখেছিলাম 😛 , কিন্তু না লিখে পড়তেও পাড়ছিলাম না, তাই লিখে ফেলেছিলাম।) ছিল ভাবনাটা সার্থক হয় 😀 :love:

  6. মাধবীলতা বলেছেনঃ

    এত্তত্তত্তগুলা কিউট গল্পটা !! :penguindance:

    পরীক্ষা ভূতের মত এমন কেউ যদি সত্যিই থাকত কত ভালো হত। পরীক্ষার আগে ভয়ে নেতিয়ে পড়া আমার চিরকালের স্বভাব। বিশেষ করে অংক পরীক্ষার আগে তো প্রায় জ্বরই এসে যেত ! নিনিদের মাঝে যেন নিজেকেই খুঁজে পেলাম। পরীক্ষা ভূতের জন্য ভালোবাসা !!!

    এই গল্পটা প্রিয়স্বরে নিচ্ছি। :yahooo:

    • হৃদয় বলেছেনঃ

      পরীক্ষার আগে, ভয়-টেনশন দুটোই আমার খুব বেশি কাজ করে। নিজের ছায়াটাই নিনিদের মধ্যে দিতে চেয়েছি, এমনকি ভার্সিটির প্রথম বরসেও, আমি এক্সামের আগের রাতে সিলেবাস বাকি থাকার পরও গল্পের বই নিয়ে বসে থাকাতাম; টেনশনে টেক্সট-বুক ধরতে মন চাইতো না। তখন অবচেতন মন এক্সাম-ভূত সেজে, কিছুটা সাহস যোগানোর মিছে চেষ্টা করত আর-কি 😛 😀 এখনও এমনটা হয় মাঝে-মাঝে! 🙁

      ১০১ খানা কাঁটা-বিহীন গুলাবময় ধন্যবাদ জানুন আপু 😛 :love:

  7. শিবলী বলেছেনঃ

    আস্‌সালামু আলাইকুম্‌ – অনেকদিন অনলাইনেই ছিলাম না, বহুদিন পর সরবে আসলাম।

    বুঝতে পারছি শিশুতোষ এই লেখাটি পজেটিভ্‌ উদ্দেশ্যেই লেখা। এজন্য লেখককে অভিনন্দন মজা করে এমন একটা বিষয় তুলে ধরার জন্য। হয়তো কোনো কোনো শিশুর বেলায় পজেটিভ ইফেক্টও রাখবে।

    ভালো কথা, আমি কিন্তু মন্তব্য করতে একটু ভয় পাচ্ছি। এতোগুলি পজেটিভ্‌ মন্তব্যের পর আমার মন্তব্যটা ভিন্ন রকমের হতে যাচ্ছে। পড়তে পড়তেই বুঝতে পারছিলাম লেখাটি আমার জন্য নয় বরং শিশুদের জন্য (যা আপনি শেষ লাইনে জানিয়েও দিয়েছেন). লেখাটি আমার বয়সের জন্য হলে মজার মন্তব্য করতাম কিন্তু যেহেতু শিশুদের জন্য, তাই আমার মন্তব্য পজেটিভ নয়।

    আমি ধরে নিচ্ছি আমাদের বর্তমান পরীক্ষা পরিস্থিতিটাকে মেনে নিয়ে এই লেখাটার দ্বারা চেষ্টা করা হয়েছে মজা করে পরীক্ষা ভীতি দুর করতে। কিন্তু আমার কথা শিশুদের জন্য বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতিই সঠিক নয়। এতোগুলি ছোট ছোট শিশুদের মাঝ হতে মেধার বিচার করে একজনকে first girl/boy নির্ণয় করা সম্ভব নয়, উচিতও নয়। ক্লাসের এতোগুলি বাচ্চা হতে একজন সকলের থেকে শ্রেষ্ঠ এটা নির্ণয় করা সম্ভব হলেও উচিত নয়। ভালো মন্দের বিচার আরো বড় বয়সে করা যেতে পারে। কিন্তু শিশুকালে শিশুকে গড়তে হবে। ঠিক মতো না গড়েই যদি এতো দ্রুত একজন শিশুকে ১ম, ২য়, ৩য়…২০তম…৪০তম বানিয়ে দেই, সেটা বড় অন্যায়। (খুব সংক্ষেপে বললাম এখন। পূর্বে অন্য একটি আলোচনায় আরো বিস্তারিত কিছু আলোচনা হয়েছিলো এ বিষয়ে।)

    এই লেখাটায় first boy নিহানকে প্রচন্ড ভালো ছেলে হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে এই কথাগুলির দ্বারা “আর নিহান, ক্লাস টু থেকে আমাদের ফার্স্ট বয়! ওর মত ভালো ছেলে আমাদের স্কুলে দ্বিতীয়টি নেই- যেমন ভালো স্টুডেন্ট, তেমন সুন্দর ব্যাবহার!” আমার মনে হয় শিশুতোষ (শিশুরা পড়বে) লেখায় এমন কথা থাকা উচিত হবে না। যে শিশুটি এই লেখা পড়বে, যে যদি first boy না হয়ে থাকে, তবে সে ধরে নেবে সে নিহানের মতো অসম্ভব ভালো ছেলে নয়। আবার যদি ধরেও নেই এমন বাক্য পড়ার পর বাচ্চারা উৎসাহিত হবে first boy হবার জন্য, সেক্ষেত্রে practically সম্ভব নয়। কারণ finally exam শেষে মাত্র একজনকেই first boy করা হবে .৫ মার্কের পার্থক্য করে হলেও। সো, আবারো বলছি এমন পরীক্ষার দ্বারা শিশুদের মেধার বিচার পদ্ধতি বাতিল করা উচিত।

    যেহেতু শিশুতোষ লেখা এটি, আমি কি কিছু পরামর্শ দেবার সাহস করতে পারি কি (বিনয়ের সাথেই বলছি।)?
    #১. দু’তিনটি শব্দ change করার পরামর্শ দেবো এই বাক্যটায় “…ক্লাসে এসে দেখি শয়তানটা কাজলের ব্যাগ থেকে ওর মামার বিদেশ থেকে পাঠানো সুন্দর নীল পেন্সিলটা চুরি করছে…” – এখানে ‘শয়তানটা’ শব্দটা অন্তত ‘দুষ্টুটা’ দিয়ে replace করা যায় কিনা দেখুন। #২. আর ‘চুরি’ শব্দটা replace করে একটু অন্যভাবে কথাটা প্রকাশ করা যায় কিনা দেখুন। #৩. আর ‘বড় হয়ে ও নির্ঘাত ছিঁচকে চোর হবে, দেখো।’ এই বাক্যটাও বাতিল করা যায় কিনা।

    (শিশুরা পড়বে/পড়ে ফেলবে, এটা মাথায় রেখেই শব্দগুলি change করার পরামর্শ দিলাম।)

    আপনি বলেছেন “পরীক্ষা যদি না থাকে, তবে নিহান আর রতনের মধ্যে পার্থক্য করবে কীভাবে?” – যেহেতু আমি শিশুদের ভেতর এমন পার্থক্য করার বিপক্ষে, আমার মনে হয় পরীক্ষা ভীতি দুর করার চাইতে বরং রতন কেন পড়তে চায়না, রতন যেন লেখা পড়ায় উৎসাহিত হয়, তেমন কিছু দরকার। আর নিহানের মতো student-রা কিভাবে রতনের মতো student-কে help করতে পারে তেমন শিশুতোষ লেখা দরকার। আজকাল লেখাপড়ায় আমি বাচ্চা ও অভিভাবকদের মাঝে হিংসাত্মক প্রতিযোগিতা দেখতে পাই তো, তাই বলছিলাম।

    আপনার পূর্বের লেখাগুলিতে একটু চোখ বুলিয়েছি, অবসরে পড়ার আশা রাখি। সুন্দর লেখেন, ভালো থাকবেন। 🙂

    • হৃদয় বলেছেনঃ

      ওয়ালাইকুম-আসসালাম। হুম, আমার লেখায় এটাই আপনার করা প্রথম মন্তব্য, ব্যস্ততার মধ্যেও, অনলাইনে মাঝে-মাঝেই আসলে আমার জন্য ভালো হত- নিজের লেখায় এমন গঠনমূলক মন্তব্য আরও পেতাম আর-কি! 😛

      খুব মন দিয়ে লেখাটা পড়েছেন ভেবে ভালো লাগছে।
      অসুস্থ প্রতিযোগিতার বীজ ছোট শিশুদের মনে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। আগেও এমনটা ছিল, তবে এখন যেন তা চক্রক্রমিক হারে বেড়েই চলেছে। সর্বোপরি, উদার হওয়ার শিক্ষাটা কেবল বইয়ের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে 🙁
      এর থেকে বের হতে কিছুটা লাগলেও, একদিন ইনশা-আল্লাহ এমনটা থাকবে না, সে আশা, প্রার্থনা দুটোই করি।

      আপনি যে পয়েন্টগুলো তুলে ধরেছেন, আমি তার সাথে একমত। ভবিষ্যতে এমন লেখা মাথায় আসলে, তাতে সেগুলো তুলে ধরতে চেষ্টা করব।
      অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া 🙂

  8. শাহরিয়ার বলেছেনঃ

    হৃদয় এটা কী লিখলা রে ভাই!!! 😯

    আমার নিজেরই এই মুহূর্তে পরীক্ষা চলছে। কিন্তু ভার্সিটি লাইফে প্রবেশ করার পর কী যেন একটা হয়েছে আমার! এটাকে ঠিক ‘পরীক্ষাভীতি’ বলা চলে না। যেটা হয়, পরীক্ষা আসলেই কেমন যেন প্রোক্যাস্টিনেশনে ভুগি! বাদবাকি অন্যান্য জরুরী কাজগুলোতে ঠিকভাবে সময় ও মনোযোগ দিয়ে উঠতে পারি না! আর আমাদের পরীক্ষা যেহেতু ‘অনন্তকাল'(লিটারেলি) ধরে চলে, তাই এটা খুব পেইনফুল হয়ে দাঁড়ায়। 🙁

    অথচ, আগে ছিলাম ঠিক উল্টো! পরীক্ষা নিয়ে স্কুল/কলেজ লেভেলে কখনোই টেনশন হত না!! কারণ আছে অবশ্য। এর মধ্যে অন্যতম হল, আমার আব্বা-আম্মার কাছ থেকে আমার ‘পরীক্ষা’ কিংবা ‘রেজাল্ট’ নিয়ে কখনও কোন ‘চাপ’ আসে নি। বরং সামান্য ব্যবধানে রেজাল্টের পার্থক্য হওয়ার কারণে যখন নিজের আফসোস ব্যক্ত করেছি, তখন উল্টো তাঁদের কাছ থেকে সান্ত্বনাই পেয়েছি। “পরীক্ষায় ২-৪ নম্বর কম পাওয়ার অর্থ এই নয়, তোমার জ্ঞান অনেক কম। যে বেশি পেয়েছে, তুমি হয়ত তার চেয়ে কম জানো না, কিন্তু পরীক্ষায় লিখবার সময় একটু এদিক-ওদিক হয়ে গিয়েছে, তাই একটু কম পেয়েছ। এরপর থেকে আরেকটু সতর্ক হলে তোমারও রেজাল্ট এরচেয়ে ভাল হবে।” – এরকম মেসেজই তাঁদের কাছ থেকে চিরদিন পেয়ে এসেছি। তাঁদের এমন কথাগুলো কিন্তু দারুণ ‘মানসিক সাপোর্ট’ দিয়েছে আমাকে। :happy:

    আসলে, ছোটবেলায় একজন মানুষ পড়ালেখা এবং পরীক্ষা নিয়ে কীভাবে চিন্তা করতে শিখছে, সেটা খুউব ইম্পরট্যান্ট। এ ব্যাপারে শিবলী ভাইয়ার মন্তব্যটা চমৎকার লাগলো। আমিও মাঝে মাঝেই ভাবি, ইদানিং বাচ্চাদের মধ্যেও প্রতিযোগিতার যে ‘অসুস্থ রূপ’ চারিদিকে দেখা যায় (মোস্টলি, বড়দের থেকে ‘মানসিকভাবে’ চাপিয়ে দেয়া), সেটা আসলে বাচ্চাদের উপর কেমন ইম্প্যাক্ট ফেলছে? আমার মনে হয় না এটা খুব একটা ভাল প্রচলন!

    ওহহো, আসল কথাই তো বলা হয় নি! গল্পটা পড়তে কিন্তু দারুণ মজা পেয়েছি। :clappinghands: :love:

  9. হৃদয় বলেছেনঃ

    শাহরিয়ার, এক্সাম নিয়ে আমার নিজের অবস্থা মাধবী’পুকে লেখা কমেন্টে লিখছি।
    আমি নিজেই টেনশনে চুপসে যাই। 🙁
    “পরীক্ষায় ২-৪ নম্বর কম পাওয়ার অর্থ এই নয়, তোমার জ্ঞান অনেক কম। যে বেশি পেয়েছে, তুমি হয়ত তার চেয়ে কম জানো না, কিন্তু পরীক্ষায় লিখবার সময় একটু এদিক-ওদিক হয়ে গিয়েছে, তাই একটু কম পেয়েছ। এরপর থেকে আরেকটু সতর্ক হলে তোমারও রেজাল্ট এরচেয়ে ভাল হবে।”
    -অসাধারণ পজিটিভ আর মোটিভেটিভ এই কথাগুলো আমার আব্বু-আমুও বলতেন, পোস্ট এক্সাম খারাপ জনিত মন খারাপে।

    লম্বা+সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ না দিয়ে, এক্সামের জন্য শুভকামনা করছি 😛

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।