ঘটনার পূর্ব-সুত্রঃ
সম্প্রতি বুয়েটের ছাত্রী হলে চুরি অনেক বেড়ে গিয়েছে। এক রাতে ৪/৫ টা ল্যাপটপ চুরি হয়, ডুয়েল সিম এর মোবাইল থেকে দুইটা সিম খুলে রেখে মোবাইল চুরি হয়, মেক-আপ বক্সকে নেটবুক মনে করে চুরি করতে নেয়, পরে আবার মেকআপ বক্স দেখে সেটা রেখেও যায়…… এই হল হলের নিরাপত্তা! আরো কয়েক দিন চুরি হয়েছে এবং আমাদের সম্মানিত প্রভোস্ট আমাদের নিয়মিত আশ্বাস দিয়েই গিয়েছেন যে, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, নিরাপত্তা জোরদার করছি ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।
ঘটনা বিবৃতিঃ
তারিখঃ ২৭/১১/২০১৩, বুধবার। সময়ঃ বিকাল-সন্ধ্যা।
২৭ তারিখ মাগরিবের পর হঠাৎ রুমে একজন বহিরাগত মেয়ে প্রবেশ করে। মোটামোটি মেয়েটার হাতে একগাদা অক্সফোর্ড এর বই দেখেই বুঝতে পারি সে কি উদ্দেশ্যে এসেছে এবং কী বলবে। একটু অবাকও হই, বুয়েটের ছাত্রী হলে একজন সেলসগার্ল এসে বই বিক্রি করছে! আমাদের হলে আবার নিরাপত্তা, বহিরাগতদের প্রবেশ ইত্যাদি নিয়ে নিয়ম-কানুন অত্যাধিক কিনা! তাই ধরেই নেই সে নিশ্চয়ই প্রোভস্ট এর অনুমতি নিয়েই প্রবেশ করেছে।তাই আর সেটা নিয়ে মাথা ঘামাই নি।
আশা করি আমাদের সবারই জানা আছে যে, কিছু দিন পর পরই ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে অক্সফোর্ড এর দামি দামি ডিকশনারি, অন্যান্য বই বিশাল মুল্যছাড়ে বাসায় বাসায় বিক্রি করার জন্য সেলসম্যান/গার্লদের পাঠানো হয়। তারা ভালোই প্রফেশনাল হয়। ঝাড়া মুখস্থ পড়া দিয়ে আমাদেরকে প্রায় রাজি করিয়ে ফেলে বই কেনার জন্য। মেয়েটা মাত্রার উপর দিয়ে প্রফেশনাল ছিল, আমাকে তো প্রায় রাজি করিয়েই ফেলেছিল বই কিনতে। রুম-মেটদের বকা-বাদ্য খেয়ে কেনা স্তফা দিয়েছিলাম। পরে মেয়েটা পাশের রুমে চলে যায় আর আমরা চা-নাস্তা খেতে পলাশীর মোড়ে যাই। হলে ফিরে আসার বেশ কিছুক্ষণ পরে জানতে পারি হলে অনেক গণ্ডগোল হচ্ছে। নিচে যেয়ে দেখি গণ্ডগোলের কারণ হচ্ছে- একজন বহিরাগত মেয়ে হলে প্রবেশ করে বই বিক্রি করছে, তার মানে এই মেয়ের যোগসাযোগ আছে চুরির সাথে। সেদিন ছিল বুধবার। মেয়েটা ইনফরমেশন পাস করবে, তারপর চুরি হবে। কারণ সব চুরি বৃহস্পতি হয়েছে।
এরপর প্রভোস্টের রুমে অনেকক্ষণ আলোচনা চলে হলে নিরাপত্তা জোরদারের ব্যাপারে। আলোচনা শেষে আমরা চলে আসি এবং কিছুক্ষণ পর জানতে পারি মেয়েটাকে পুলিশে দেয়া হয়েছে। কিসের দায়ে???
এখানে বিষয় গুলো হচ্ছেঃ
১/ মেয়েটার যেটা দোষ সেটা হল-সে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করেছে।
জানি না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলে প্রবেশের নিয়ম কী, বহিরাগতরা প্রবেশ করতে পারে কি পারে না, প্রবেশ করতে হলে অনুমতি নিতে হয় বা গেটে খাতায় লিখতে হয় কিনা। যদি অন্য হলে এতো কড়াকড়ি না থাকে, তবে আমাদের হলে এতো নিয়ম আছে সেটা না জেনে ভুল করতেই পারে। আর যদি অন্য হলে নিয়ম থেকেও থাকে- তবুও মেয়েটার আসলেই এটা ভুল ছিল অনুমতি না নিয়ে প্রবেশ করা বিশেষ করে এভাবে রুমে রুমে বই বিক্রি করা আসলেই হলের ছাত্রীদের কাছে বিরক্তিকর।
এটা হল মেয়েটার দোষ।
২/ ক) যেহেতু আমাদের হলে কোনো বহিরাগতের প্রবেশ নিষিদ্ধ, তাই গেটের দারোয়ান মামা সব সময় সতর্ক দৃষ্টি রাখেন কে হলে প্রবেশ করছেন। হলের সংযুক্ত ছাত্রীদের হলে প্রবেশের সময় খাতায় লিখতে হয়। এমনকি আমার বোনেরা অনেক সময় হলে প্রবেশ করতে চাইলেও মামা দেয় নি। সেই মামা যে কিনা সব ছাত্রীদের চিনেন এবং সংযুক্ত ও বহিরাগত কেউ প্রবেশ করতে চাইলে বাধা দেয়, তার চোখকে ফাঁকি দিয়ে এই মেয়ে হলে প্রবেশ করে।
খ) গেটে মামা ছাড়াও কলাপসিবল গেটের কাছে আরো একজন খালা থাকেন, যে আরো ভালো করে হলের সব মেয়ে দের চিনেন।সম্ভবত সে ওই মুহূর্তে গেটে ছিল না।
গ) বিগত সব চুরির পরও দেখা যায়, এই মামাই তখন (চুরি যে সময়টাতে হয়)ডিউটিতে ছিল।
৩/বাসায় বাসায় যেয়ে ডিকশনারি বিক্রি করা আমাদের অজানা কিছু না। এমন তো না যে মেয়েটা একটা অমুলক গল্প বলছে। একটা কাহিনী বানিয়ে হলে প্রবেশ করে চুরির ব্যপারে ইনফরমেশন পাস করবে। আর যদি তার উদ্দেশ্য এমন হয়েও থাকে, মেয়েটার কাছে চুরির কোনো প্রমান পাওয়া যায় নি। কথাবার্তা বলে বোঝা যায়, মেয়েটা প্রায় ২/৩ ঘন্টা হলে অবস্থান করেছে, এর মাঝে তো কোনো মোবাইল, ল্যাপটপ চুরি করতেই পারত।
প্রভোস্ট আরো বলেন তার কাছে বিশাল একটা ব্যাগ আছে। (যেহেতু বই বিক্রি করছে, ব্যাগ তো বড় হবেই কারণ ব্যাগে অনেক বই ছিল।) প্রভোস্টের ভাষ্য মতে বড় ব্যাগে করে ল্যাপটপ চুরি করে সহজে নিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু ব্যাগে তো কোনো কিছু পাওয়া যায় নি।
তাহলে কোন আইনে আছে পুলিশে দেবার?
তিনি আরো বলেন, মেয়েটা খুবই উদ্ধত ভঙ্গিতে কথা বলেছে। কেউ একজন যদি কোনো অপরাধ না করে, আর সেই অপরাধ তার উপর চাপানো হয় তখন আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলাই কি স্বাভাবিক না? মিনমিন করে কথা বললে তো মনেই হবে-নিশ্চয়ই কোনো অপরাধ করেছে।
৪/ রাতের ১০টার সময় কোনো মহিলা পুলিশের হাতে না দিয়ে সেন্ট্রি টাইপ পুলিশ এসে মেয়েটাকে নিয়ে যায়।
৫/ ছাত্রীরা যখন প্রভোস্টের সাথে কথা বলে তখন শুধু মাত্র মামাদের গাফিলতি আর হলের নিরাপত্তা জোরদারকরণের ব্যপারে আলোচনা করে। আর ঘটনা থেকে স্পষ্টই বোঝা যায় দোষ মামাদের ছিল, এবং সেটা শুধু ওই দিনই না, আগের চুরি গুলার দিনও। মামাদের সম্পর্কে প্রভোস্টকে বললে উনি বলেন- আমি এভাবে একজনের চাকরি খেতে পারি না।
চাকরি খেতে পারেন না এভাবে একজন অপ্রমানিত মেয়েকে পুলিশে দিতে পারেন?
৬/ কয়েক মাস পূর্বে হলে একটা মেয়ে (বুয়েট ছাত্রী) হাতেনাতে ধরা পড়ে চুরির দায়ে। প্রভোস্ট শুধু মাত্র তার সীট বাতিল করে। আর এই মেয়েকে কোনো প্রমান ছাড়া পুলিশে দেয় কিভাবে?
শুধু মাত্র সে বুয়েটের শিক্ষার্থী না- এই তার অপরাধ?
৭/ মেয়েটা নিশ্চয়ই নিজের গরজে বই বিক্রি করতে আসে নি, তাকে কোথাও থেকে পাঠানো হয়েছে। তার নিজের কাছে মোবাইল ছিল বা ছিল না,( ঠিক জানি না)…কিন্তু সে অনেক বার বলেছে তার বসকে ফোন দিতে, প্রভোস্ট এই কাজটিও করেন নি। একটা ফোন করলেও তো জানা যায় মেয়েটা কি আসলে বই বিক্রি করতে আসছে নাকি কাহিনী বানিয়েছে।
৮/ প্রভোস্ট মেয়েটাকে পুলিশে দেয় ছাত্রীরা সবাই উনার রুম থেকে চলে আসার পর। ছাত্রীদের দাবি হলের নিরাপত্তা জোরদারকরণ ছিল, নির্দোষ মেয়েকে পুলিশে দেয়া ছিল না, আর এই কাজ করে উনি আমাদের দেখাতে চেয়েছেন-দেখো আমি তোমাদের জন্য কত কিছু করছি।
৯/ পরবর্তীতে হলের অনেক আপুর সাথে কথা বলে জেনেছি পূর্বেও এরকম বহুবার অনেকে হলে বই বিক্রি করতে এসেছে। একবার ঝামেলা হয়েছিল,তখন যে বই বিক্রি করতে এসেছিল তাকে লিখিত নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। আর এবার এতো কিছু কেন? কারন কিছুদিন পূর্বে হলে চুরি বেড়ে যাওয়া। তাহলে আগের চুরি গুলাও কি এই মেয়ে করেছে? কিসের দায়ে পুলিশে দিবে?
কথা শুধু এখানেই শেষ না। একজন মানুষ পুলিশের হাতে একবার যাওয়া মানে কি আমরা সবাই জানি।
রাতের ১০টায় সেন্ট্রি পুলিশের হাতে মেয়েটার মান-সম্মানের নিরাপতা কি? আমরা তো আর ঘাস খাই না, বাংলাদেশের পুলিশেরা এতো ভাল হইলে তো আর আমাদের চিন্তার কিছু থাকত না।
আর মেয়েটা যদি পুলিশের হাতে নিরাপদেও থাকে-এক রাত বাসার বাইরে থাকায় তার মান-সম্মানের নিরাপত্তা কে দিবে? ম্যাডাম, আপনি না একজন নারী, একজন পূর্ণ বয়স্ক নারী হয়ে আপনি এটা কীভাবে করতে পারেন?
জীবিকার জন্য একজন মেয়ে কাজ করতে আসলে তাকে এভাবে নাজেহাল করা কোন দেশের নিয়ম। মেয়েটা অসহায় ছিল, এজন্য নাজেহাল করবে? মেয়েটা যদি এখন মানহানির মামলা করে? করা তো উচিত।
হয়ত মেয়েটাকে ছেড়েও দেয়া হয়েছিল, হয়ত বুয়েটের সীমানা পেরিয়েই ছেড়ে দিয়েছে। আমরা জানি না কী হয়েছে। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিল নাকি দেরিতে ছাড়ল সেটা কথা না। প্রভোস্ট এটা করতে পারেন না-সেটা কথা।
আমরা পরীক্ষা পিছাতে গেলে আমাদের দোষ হয়। বিশ্বের দরবারে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মান কমে যায়। ম্যাডাম- আজকে আপনার মান কোথায় যেয়ে পৌঁছেছে? আপনি বুয়েটের শিক্ষক, আপনার সার্টিফিকেটের অনেক দাম। কিন্তু জীবনে কি সার্টিফিকেটের, বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানই সব? নিজের মান-সম্মান কি কিছুই না? ভালো প্রকৌশলী হওয়াই সব? ভালো মানুষের হয়ে উঠা কি কিছুই না?
আপনি শুধু নিজের মান-সম্মানই হারান নি। সেই মেয়েটি ও তার পরিবারের কাছে আমাদের সবার মান-সম্মানকে মাটিতে মিশিয়েছেন। আমারা নাকি দেশের সব চেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থী! মেয়েটি ও তার পরিবার বাকি সারাটা জীবন বলবে- বুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সব মূর্খ, মনুষ্যত্বহীন।
– বুয়েট শিক্ষার্থী
প্রভোস্ট দোষ করার সময় বাকি ছাত্রী রা কি ঘাস কাটছিলো???
“৮”- নম্বর পয়েন্টটা আরেকবার পড়লে আশা করি উত্তর পাবেন।
ছাত্রীরা প্রভস্টের উপর এন এস এ সারভেইলেন্স রাখে না, ৮ নং পড়েন ঠিকমত।
ধিক্কার।
ব্যাপারটা দুঃখজনক।
হলে এখন এই অবস্থা ?! ল্যাপটপ চুরি গেলে তো আমি মনে হয় মরেই যেতাম, ল্যাপটপে সমস্ত ডেটা রাখা থাকে। আর এত সিরিয়াস ব্যাপারে এইরকম উদ্ভট ব্যবস্থা নেয়া হল ? একটা মেয়েকে প্রমাণ ছাড়া ধরিয়ে দিলেই হল আসল চোরকে না বের করে ? ক্ষমতার অপব্যবহার শুধু প্রধানমন্ত্রী করেন না দেখছি এবার।
ধিক্কার !!
kisu kisu meye ase jara ajotha manusk harass kore.kono rokom proof sarai,mittha kahini banie or ajgubi ojuhat banie(exmple:তিনি আরো বলেন, মেয়েটা খুবই উদ্ধত ভঙ্গিতে কথা বলেছে। কেউ একজন যদি কোনো অপরাধ না করে, আর সেই অপরাধ তার উপর চাপানো হয় তখন আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলাই কি স্বাভাবিক না? মিনমিন করে কথা বললে তো মনেই হবে-নিশ্চয়ই কোনো অপরাধ করেছে।) niriho manusjn k blame kore hero sajar try kore..abar kichu kichu meyera esob kothai provabito hoe andhovabe support kore(valovabe khoj khbr na niei). e dhoroner achoron j akta manuser jibone koto boro khoti abong koster karon hte pare eituku common sense jdi bangladesher sreshtho medhabider majhe na thake,then eder purbosuri(amader kisu teacer,with due respect) theke amra ki ba asha korte pari??