প্রথম ভালোবাসার গল্প একেকটা মানুষের জীবনে একেকরকম। বেশিরভাগ সময় গল্পগুলো অসম্পূর্ণ, অপরিণত। ব্যতিক্রম থাকবেই। এমনো হতে পারে প্রথম যে মানুষটিকে ভালো লেগেছিলো তাকে কখনোই বলা হয়ে উঠে নি ভালোবাসার কথা। প্রথম ভালোবাসার গল্পটি এভাবেই থেকে গেছে গোপনে। ভালোবাসার অনুভূতি প্রথম খেলা করতে থাকা একটি অপরিণত মনে যে মানুষটিকে প্রথম ভালো লেগে যায়, তাকে কখনোই পুরোপুরি ভোলা যায় না। খুব একলা কোনো রাতে কিংবা কোনো এক উদাসী সময়ে তাকে হঠাৎ মনে পড়ে যায়। এরকম খুব একলা কোনো রাতে কিংবা কোনো এক উদাসী সময়ে আমারও একজনকে মনে পড়ে। যখনই আমি মনে করতে থাকি সেই মেয়েটি আমার স্মৃতি থেকে একেবারেই মুছে গেছে, তখনই আমাকে অবাক করে দিয়ে সে আবারো আমার স্মৃতিতে এসে ধরা দেয়। মেয়েটি আমার প্রথম ভালোবাসা নাকি মোহ সেটা আমি নিজেও ঠিক বুঝতে পারি না! এই পরিণত বয়সেও সেই অপরিণত সময়ের অনুভূতিগুলো ব্যাখ্যা করতে পারি না। হয়তো ব্যাখ্যা করার খুব চেষ্টাও করি নি।
তার সাথে আমার দেখা হয়েছিলো এক শীতের সকালে। সেই শীতের সকালটির শুরুটা অন্যান্য সকালের মতোই হয়েছিলো, বিশেষ কিছু মনে পড়ে না। সম্ভবত সেই মেয়েটির কারণেই সেই সাধারণ শীতের সকালটি অসাধারণ হয়ে আছে। মেয়েটির সাথে আমার দেখা হয়েছিলো কোনো এক ম্যাথ অলিম্পিয়াডের আসরে। আমি আমার স্কুলের বন্ধুদের সাথে অডিটোরিয়ামের এক কোণে বসেছিলাম, মেয়েটি চুপচাপ একাকী আরেক কোণে বসেছিলো, দেখে মনে হচ্ছিলো তার মন খারাপ। আমি সবসময় হাসিখুশি থাকতে পছন্দ করি। কেউ মন খারাপ করে রাখলেই আমার প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হয়। এই প্রথম মন খারাপ করে রাখা একটি মানুষকে দেখে আমার মেজাজ খারাপ হলো না, বরং মেয়েটিকে আমার ভীষণ ভালো লেগে গেলো। সেই ভালোলাগার কোনো কারণ আমার জানা নেই। আমি আজও জানি না হঠাৎ একটি বিষণ্ণ মুখ কিভাবে আমার মনোযোগ কেড়ে নিতে সমর্থ হলো, আমি শুধু জানি আমার তাকে ভালো লেগেছিলো। সবচেয়ে আশ্চর্য হয়েছি তার পরনে আমাদেরই স্কুলের ড্রেস দেখে। তার মানে মেয়েটা আমাদের স্কুলেই পড়ে, অথচ আমি তাকে আগে কখনো দেখি নি। অবশ্য আমাদের স্কুলে অনেকগুলো সেকশন, তারুপর দুইটা শিফট। তাই একই স্কুলে পড়া সত্ত্বেও তাকে না চেনা বড় কোনো অপরাধ ছিলো না! কিন্তু মেয়েটাকে আমার এতোই ভালো লেগে গেলো যে তাকে আগে থেকে না চেনার জন্য নিজেকে অপরাধী মনে হতে লাগলো। ম্যাথ পরীক্ষার সময়টুকু বাদ দিয়ে পুরোটা সময় বন্ধুদের সাথে আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে আমি মেয়েটিকে খেয়াল করেছি। মাঝে মাঝে যখনই সে হাসছিলো এখনো স্পষ্ট মনে আছে প্রতিটি হাসির সাথে আমার হার্টবীট দ্রুত হচ্ছিলো। তখন আমি দশম শ্রেণীতে পড়ি। আমার ছোট্ট জীবনে এর আগে কোনো মেয়েকে দেখে এরকম অনুভূতি হয় নি। তখনো তার নাম জানি না, শুধু একটি নিষ্পাপ মুখের প্রতিবিম্ব আমার হৃদয়ে গেঁথে গেলো যেটা আমি আজও মুছতে পারি নি।
সেই শীতের সকাল নিজস্ব নিয়মেই চলে গেলো যখন যাওয়ার। আমিও সব ভুলে আমার কাজে মনযোগী হওয়ার চেষ্টা করেছি। এরকমই একদিন ব্যস্ত দিনে স্কুল ক্যান্টিনের সামনে আড্ডার ফাঁকে হঠাৎ সেই নিষ্পাপ মুখটি আবারো দেখতে পেলাম। আমি তাকে অনেকটা ভুলেই ছিলাম। তাকে প্রথম দেখার সমস্ত অনুভূতি জীবন্ত হয়ে উঠলো এই দ্বিতীয় দেখায়। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছিলাম মেয়েটির নাম মৈত্রী, দশম শ্রেণীতেই পড়ে সেকশন ই তে। আমি সেকশন বি তে ছিলাম। একাডেমিক ভবন আলাদা ছিলো দেখেই মৈত্রীর সাথে আমার দেখা হলো বড্ড দেরীতে, আমার সেদিন এমনটাই মনে হয়েছিলো। মৈত্রীকে একটু কাছ থেকে দেখার জন্য, তার একটুখানি কাছাকাছি হবার জন্য নিজের অজান্তেই অজানা এক পথে পা বাড়ালাম। মৈত্রী যে স্যারের কাছে ম্যাথ প্রাইভেট পড়তো, অনেক চেষ্টা করে সেই স্যারের কাছে একই ব্যাচে আমিও যোগ দিলাম। আমি জানতাম না আমি কী করছি কিন্তু আমি তাই করছিলাম আমার মন যেটা চাইছিলো। সপ্তাহে চার দিন স্যার পড়াতেন। এই চার দিনের অপেক্ষাতেই আমি বাকি তিনটি দিন বেঁচে থাকতাম। বরাবরই মনযোগী স্টুডেন্ট ছিলাম, লেখাপড়ার প্রতি আমি কখনোই অবহেলা দেখাই নি। মৈত্রীর আগমনে আমার জীবনে কোনোরকম ছন্দপতন হয় নি। শুধু ম্যাথ প্রাইভেটের পুরোটা সময় আমার মনোযোগের কেন্দ্রে থাকতো মৈত্রী। আমি তার সবকিছুই খেয়াল করতাম খুব ভালো করে। উজ্জ্বল বাদামী তার গায়ের রং, বড় বড় কালো দুটি চোখ, বাদামী রঙের দুটো ঠোঁট আর কোমর পর্যন্ত লম্বা কালো চুল। ব্যক্তিগত ভাবে আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগতো মৈত্রীর চোখ। তার চোখের ভাষা অসাধারণ। বড় বড় চোখদুটি মেলে ভীষণ কৌতূহলী চোখে মৈত্রী তাকিয়ে থাকতো সবসময় আর ভাবতো। সে যে কী অতো ভাবতো সেটা আমি কখনোই জানতে পারি নি। মৈত্রী কথা বলতো খুব কম, তবে সে সব কথা বলতে চাইতো তার চোখ দিয়ে, অন্তত আমার তাই মনে হতো। মৈত্রী হাসতো খুব কম। কখনোই আমি তাকে শব্দ করে হাসতে শুনি নি। সে হাসতো ঠোঁট চেপে, ঠিক তখন তার বাম গালে একটা টোল পড়তো, অসাধারণ সেই হাসি এখনো আমি স্পষ্ট দেখতে পাই চোখ বুজলেই। আমার দিনগুলো এভাবেই কেটে যাচ্ছিলো মৈত্রীকে দেখতে দেখতে আর দৈনন্দিন ব্যস্ততায়। এরই মধ্যে এলো বসন্তের সেই বিকেল, যেদিন মৈত্রী প্রথম আমার সাথে কোনো কথা বললো। আমি মৈত্রীর পাশের ডেস্কে বসেছিলাম। সেটা ছিলো মৈত্রীর খুব কাছাকাছি বসতে শুরু করার তৃতীয় দিন। মৈত্রী তার বড় বড় কৌতূহলী চোখ মেলে আমার দিকে চেয়ে জানতে চাইলো, পাঁচটা কি বেজে গেছে? আড়চোখে মৈত্রীকে দেখা বাদ দিয়ে মাত্র বোর্ডের দিকে মনোনিবেশ করেছি, মৈত্রীর নরম কণ্ঠ শুনে তার দিকে তাকাতে বাধ্য হলাম। অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলাম ‘হুম’! মৈত্রীর সাথে আমার প্রথম কথোপকথন কেমন হতে পারে তা নিয়ে আমার দারুণ কিছু ভাবনা ছিলো। তার কোনোটাই সত্য হয় নি। মৈত্রী আমাকে ডেকেছে কিন্তু আমি বুঝতেও পারি নি সে কি বলতে অথবা জানতে চেয়েছে। সে আমার ‘হুম’ শব্দটাকে অবহেলা মনে করেছিলো কিনা আজও জানি না। দ্বিতীয় কোনো কথা আর সেদিন সে আমাকে বলে নি। আমিও আমার আড়ষ্টতা কাটিয়ে উঠে জানতে চাইতে পারি নি। সেই রাতে আমার ঘুম হয় নি, সারারাত আমি এটাই ভেবেছি কী বললে আমাদের প্রথম কথোপকথনটা অনেক সুন্দর হতে পারতো!
আরেক বসন্তের বিকেলে আমি মৈত্রীর রিকাশার পিছু নিলাম। আমি সাইকেলে ছিলাম, তার সাথে অনেকটুকু দূরত্ব বজায় রেখে। দূর থেকে দেখে এলাম মৈত্রী কোথায় থাকে। গাঢ়ো বেগুনী রঙের বিদঘুটে চার তলা একটা বিল্ডিঙয়ে সে থাকতো, সেই রঙও আমার ভালো লেগে গেলো শুধুমাত্র মৈত্রীর সাথে সম্পর্কিত বলে। মৈত্রীর সবকিছুই আমার ভালো লাগতো, এমনি মোহ আর ঘোরে কেটে যাচ্ছিলো আমার সময়। তারপর গ্রীষ্মের এক বিকেলে আমাদের মধ্যে আবারো কথা হলো। আমি মৈত্রীর পাশের ডেস্কে বসেছিলাম, এতোদিনে সে আমাকে ভালো করেই চিনে গেছে কিন্তু তার দিক থেকে আমার কাছাকাছি আসার কোনো চেষ্টা ছিলো না। মৈত্রী সেদিন আমার কাছে ম্যাথের একটি প্রবলেম দেখিয়ে জানতে চাইলো আমি সেটা সল্ভ করতে পারবো কিনা। আমি মৈত্রীকে ম্যাথটি বুঝিয়ে দিতে পেরেছিলাম এবং তার খাতায় সেটা নিজে করেও দিলাম। সেই একটি ম্যাথ সল্ভ করতে পারার আনন্দ বহুবার ম্যাথে সর্বোচ্চ মার্কস পাবার আনন্দকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলো। তারপর থেকে আমার আর মৈত্রীর বন্ধুত্বের ভাষা হয়ে উঠলো ম্যাথ। মৈত্রী ম্যাথে দুর্বল ছিলো, একটু বেশিই দুর্বল ছিলো। তাকে বিভিন্ন প্রবলেম বুঝিয়ে দিতে আর সল্ভ করে দিতে দিতেই আমি তার ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছিলাম। মৈত্রী বলতো আমি নাকি খুব সহজ করে ম্যাথের যেকোনো প্রবলেম সল্ভ করে দিতে পারি। অবশ্য এ ব্যাপারে আমি নিজেও নিশ্চিত ছিলাম না, মৈত্রী আমার উপর নির্ভর করতে পারছে দেখেই আমি নিজেও ম্যাথে আরো মনযোগী হয়ে উঠেছিলাম। আর এ সবই হয়েছিলো আমার নিজেরও অজান্তে।
বিকেলে প্রাইভেট পড়া শেষ হলে আমি আর মৈত্রী হেঁটে হেঁটে বাসার দিকে ফিরতাম। তখন আর আমি সাইকেল নিয়ে আসতাম না। মৈত্রীর সাথে গল্প করতে করতে হেঁটে যেতে আমার ভালো লাগতো। মৈত্রী অবশ্য কথা বলতো খুব কম, সে তার বড় বড় চোখ মেলে আমার কথা শুনতো, মাঝে মাঝে আমার কথার সমর্থনে মাথা নাড়তো, মৈত্রী ছিলো খুব মনযোগী শ্রোতা। এখন বুঝতে পারি নিজের সুখ-দুঃখ কোনোকিছুই মৈত্রী আমার সাথে শেয়ার করতো না, সম্ভবত কারো সাথেই সে তার নিজের কথা বলতো না। আমাদের গল্প কখনোই শেষ হতো না। অর্ধ সমাপ্ত গল্প নিয়ে আমরা বিপরীত দিকে চলে যেতাম। কোনো এক বর্ষার বিকেলে এরকমই গল্প করছিলাম আমরা, মানে বরাবরের মতোই আমি বলছিলাম আর মৈত্রী শুনছিলো। হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি নামতেই মৈত্রী আমার ডান হাতটা খপ করে ধরে ফেললো। আমরা হাঁটছিলাম, মৈত্রী আমার ডান দিকে ছিলো। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়েছিলো বলেই কিনা জানি না সে তার বাম হাতটা দিয়ে আমার ডান হাতটা আচমকা ধরে আবার ছেড়েও দিলো। এতো অল্প সময়ে মৈত্রীর হাতের ছোঁয়া আমি সেভাবে অনুভব করতে পারি নি, এতোদিন পর সেই স্মৃতিটাও অনেক ঝাপসা। শুধু মনে পড়ে আমি আর মৈত্রী সেদিন আর কোনো গল্প করি নি। ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে বাসার দিকে হেঁটে গেছি। মৈত্রীর সাথে সেই প্রথম বৃষ্টিতে ভিজেছি আমি। কখনো কি বলেছিলাম মৈত্রী বৃষ্টি অনেক পছন্দ করতো? স্বল্পভাষী মেয়েটি এক বিকেলে হাঁটতে হাঁটতেই আমাকে জানালো মানুষ হয়ে না জন্মালে সে বৃষ্টি হতে চাইতো, তার বৃষ্টি অনেক পছন্দ!
সেটা ছিলো বর্ষার শেষ, আমাদের প্রিটেস্ট পরীক্ষা শুরু হলো। যথাসময়ে পরীক্ষা শেষও হলো। আমার রেজাল্ট বরাবরই ভালো ছিলো। মৈত্রী ছিলো মাঝারি মানের স্টুডেন্ট। তবে সেটা নিয়ে তার কোনো অভিযোগ ছিলো না, তার ফ্যামিলির কোনো অভিযোগ ছিলো কিনা এমনটাও শুনতে পাই নি। মৈত্রী তার নিজের ব্যাপারে তেমন কিছুই বলতো না কখনো। আমিও জানতে চাইতাম না। মৈত্রী বড় বড় চোখ মেলে আমার কথা শুনলেই আমার বেশি ভালো লাগতো, আমার প্রতিটি গল্প মৈত্রীর কাছে প্রাণ খুঁজে পেতো। মৈত্রী আমার এতো গল্প কিংবা কথায় কখনো বিরক্ত হতো না, বরং মনে হতো আমার কথাগুলো শুনতে সে খুব আগ্রহী। এরই মধ্যে আমাদের প্রাইভেট বন্ধ হয়ে গেলো টেস্ট পরীক্ষার আগে। টেস্ট শেষ হলে টের পেলাম মৈত্রীর সাথে অনেক দিন সেভাবে গল্প করা হয় না আর, একসাথে হেঁটে হেঁটে বাড়িও ফিরি নি অনেক দিন। হতে পারে পরীক্ষার ঝামেলায় মৈত্রীকে আমি কিছুটা ভুলেই ছিলাম। টেস্ট শেষে আবারো প্রাইভেট শুরু হলো, তখন মডেল টেস্ট হতো। প্রাইভেটে গিয়ে মৈত্রীকে দেখতে না পেয়ে মনে পড়ে গেলো অনেক দিন তাকে আমি দেখি নি। তার খোঁজ না নিয়ে তাকে এভাবে ভুলে থাকার জন্য আমার অপরাধ বোধ হচ্ছিলো। মৈত্রীর সাথে যোগাযোগ কিভাবে করবো বুঝতে পারছিলাম না, এমন সময় মৈত্রীর এক ক্লাসমেটের কাছে জানতে পারলাম মৈত্রী টেস্ট পরীক্ষায় ম্যাথ আর ফিজিক্সে ফেল করেছে, সে এবছর আমাদের সাথে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারবে না। মৈত্রী ম্যাথে দুর্বল ছিলো জানতাম কিন্তু তার দুর্বলতা এতোটাও বেশি ছিলো সেটা বুঝতে পারি নি কখনোই কিংবা সে নিজেও আমাকে বলে নি। জানি না কেনো নিজেকে আমার ভীষণ অপরাধী মনে হচ্ছিলো যদিও আমার কিছুই করার ছিলো না আর সত্যিকার অর্থে আমার নিজের কোনো দোষও ছিলো না। সেই সাথে আমার প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছিলো মৈত্রী ফেল করেছে বলে এবং সে আমার সাথে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারবে না বলে। মৈত্রীকে একবার দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো। প্রতিটি বিকেলে মৈত্রীদের বাড়ির সামনের রাস্তায় ঘণ্টা খানেক দাঁড়িয়ে থেকেছি মৈত্রীকে এক নজর দেখার জন্য। অবশেষে একদিন দেখতে পেলাম, তাকে চেনা যাচ্ছিলো না। তার বড় বড় কৌতূহলী চোখ দুটো বড়ো বেশি বিষণ্ণ লাগছিলো, কেমন যেন উদাসী মন খারাপ করা দৃষ্টি। এতোদিন মৈত্রীকে না দেখতে পেয়ে কষ্টে ছিলাম, মৈত্রীকে দেখতে পেয়েও আমি কষ্টই পেয়েছিলাম, কারণ এই মৈত্রীকে আমি দেখতে চাই নি। আমি কোনো কথাই বলতে পারি নি সেদিন। অস্ফুট স্বরে মৈত্রী বলছিলো পরীক্ষায় ফেল করার কারণে তার সাথে তার আব্বু আম্মু আর বড়ো ভাইয়া কেমন খারাপ ব্যবহার করেছে, এমনকি তার গায়েও হাত তুলেছে। সেই বর্ণনা দিতে গিয়ে তার বড় বড় চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। সে খুব একা হয়ে গেছিলো। আগে থেকেই তার তেমন কোনো বন্ধু ছিলো না। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার মৈত্রীর ভেতরের মৈত্রী মরে যাচ্ছিলো। আমি তাকে একবার ‘সরি’ বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেটা আর বলতে পারি নি। মৈত্রী তার কথা শেষ করলো এই বলে যে আমি ছিলাম তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। কথাটি বলেই মৈত্রী ঠোঁট চেপে হেসে দিলো, কিন্তু সেই হাসিতে আমার এতোদিনের দেখা মৈত্রীর হাসির কোনো মিল ছিলো না। চলে যাবার আগে মৈত্রী আমার ডান হাতটা তার ডান হাতটা দিয়ে ধরে একবার আলতো করে চাপ দিয়ে ছেড়ে দিলো। তারপর সেই যে সে চলে গেলো, আর কখনো আমাদের দেখা হয় নি।
সেই শীতেই এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে এক সকালে শুনতে পেয়েছিলাম অভিমানী স্বল্পভাষী মৈত্রী সে বছর পরীক্ষা না দিতে পারার অপমান-অপবাদ সইতে না পেরে পৃথিবীটাকেই বিদায় জানিয়ে দিয়েছিলো। মৈত্রীবিহীন আমার প্রতিটি শীত এখন মৈত্রীময়!
ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ 🙂
“সেই শীতেই এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে এক সকালে শুনতে পেয়েছিলাম অভিমানী স্বল্পভাষী মৈত্রী সে বছর পরীক্ষা না দিতে পারার অপমান-অপবাদ সইতে না পেরে পৃথিবীটাকেই বিদায় জানিয়ে দিয়েছিলো। মৈত্রীবিহীন আমার প্রতিটি শীত এখন মৈত্রীময়!”
প্রায়ই দেখা যায় আমাদের দেশে, হয়তো খুব গুরুত্ব দেই না আমরা ব্যাপারটায়। আপনার গল্পের মাঝে দারুণভাবে দেখিয়েছেন। লিখতে থাকুন। শুভ কামনা। লেখা পছন্দ হয়েছে।
একটু দেরীতে হলেও . .
:welcome:
অনেক ধন্যবাদ 😀
অনেকদিন পর ছোট গল্প পড়লাম।ভাল লাগল……:)
‘সে হাসতো ঠোঁট চেপে, ঠিক তখন তার বাম গালে একটা টোল পড়তো।’ এই লাইনগুলো পড়তে গিয়ে কিছুটা নস্টালজি হয়ে গেলাম ।
শুভ কামনা
ভাল থাকুন……
ধন্যবাদ, ভাইয়া 😀