দিনটি অন্যরকমই হওয়ার কথা ছিল . . .

গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র সজীব। দেখতে ছোটখাটো পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি লম্বা, হ্যাংলা পাতলা গড়নের একজন সদ্য যৌবনে পা দেওয়া যুবক। বয়স সাতাশের কাছাকাছি। বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান না, ঘরে আরও দুইটা বড় ভাই আর একটা ছোট বোন আছে। মধ্যবিত্ত পরিবার। খুব স্বচ্ছলতা না থাকলেও অভাবটা প্রকট নয়। আমার গল্পের নায়ক সেই সজীব আর গল্পটি তার জীবনের একটি দিনের।

রাহাত আর অনিকের পর সজীবের জন্ম। এরপর আসে হুমাইরা, সজীবের ছোট বোন। খুব বেশি ছোট না, পিঠাপিঠি ভাই বোন বলা যায়। সজীব বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করে বের হল এবার আর হুমাইরা পড়ছে তৃত্বীয় বর্ষে। সজীবের বাবা রিটায়ার করার পর রাহাতই এখন এই পরিবারের কর্ণধার, ওর টাকায় সংসার চলে, অনিক বিদেশ যাবার পায়তারা করছে আর সজীব এখনও বেকার। সরকারি কোন আমলা মামা-চাচা না হওয়ায় চাকুরী ভাগ্য নিতান্তই মন্দ তাদের। তবে সজীবের এতে কিছু যায় আসে না। সে দিব্যি টো টো করে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন টুকটাক রাজনীতি করে বেড়াত এখন সেটাও কমতে কমতে শুন্যের কোটায়, বড় ভাইদের ডাক আর তেমন একটা পায় না, তাই বেকার হয়েই নিজ বড় ভাইয়ের অন্ন ধ্বংস করে চলে চলেছে। এতে অবশ্য রাহাতের আপত্তি নেই, বাবা মা যতই বকা ঝকা করেন রাহাত ততই এগিয়ে এসে বলে, “আহা! ওকে কেন প্রেশার দিচ্ছ। হয়ে যাবে সামনে। এখন একটু ওর মত থাকতে দাও না ওকে।” বাবা তখন কথা না বলে গটমট করে বেড়িয়ে যান আর বলেন, “একে তুইই নষ্ট করবি রাহাত, বলে দিচ্ছি।” রাহাত হাসে। তার ভাইকে সে চেনে, তার ভাই নষ্ট হওয়ার মত ছেলে না। ছোটবেলা থেকেই চুপচাপ ধরনের, বড় হয়ে আরও চুপচাপ হয়ে গেছে। দিনকাল সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখে কম, তবে সে শুনেছিল তার এই চুপচাপ স্বভাবের ভাইটাই নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে রাজনীতি করতে শিখে গেছে। এ নিয়ে একদিন রাহাত সজীবকে বলেও ছিল, “কি রে! তুই কবে থেকে এত সাহসী হলি যে রাজনীতি করছিস? বলি এখনও তো একটা কথা বলতে গেলে তিনবার আটকে যাস, ওখানে স্লোগান দিস কিভাবে?” সজীব লজ্জা পেয়ে যায়। কথা বলে না। রাহাত ভাবে হুমাইরাটাও বড় হয়ে যাচ্ছে, সামনের বছর অনার্সটাও পাশ করে ফেলবে। এখনই প্রায় কিছুদিন পর পর বিয়ের প্রস্তাব আসতে শুরু করেছে কিন্তু একমাত্র রাহাতই হুমাইরার পড়াশোনাটা চালিয়ে নিয়ে যেতে দিতে চায় বলে কোন প্রস্তাবই গ্রহণ করা হচ্ছে না, নাহলে বাবা তো সেদিন এক ইতালীতে থাকা ব্যবসায়ীর সাথে ছোট বোনটাকে ঝুলিয়েই দেয়। এই হুমাইরাটাকে সবগুলো ভাই অনেক বেশি আদর করে আর মেয়েটাও হয়েছে লক্ষ্মী। সবসময় যেন নিজের একটা জগতে পরে থাকে, বইয়ে মুখ গুঁজে আবার কখনও বা তার রঙ তুলি নিয়ে। আঁকার হাতটাও দারুন, রান্নাও করে অসাধারণ। এই মেয়েকে যে কেউই ঘরের বউ করে নিয়ে যেতে চাইবে তাই রাহাত জানেও আর বড়জোর এক বছর এরপর বাবা হয়তো রাহাতের কথাও মানবে না। তাই রাহাত চায় রাহাত নিজেই যেন হুমাইরার জন্য একজন ভালো ছেলে খুজে রাখে, হাজার হোক নিজের এত আদরের বোন, তাকে তো যার তার কাছে তুলে দেওয়া যাবে না। অবশ্য হুমাইরা কাউকে পছন্দ করে রেখেছে কি না সেটাও জানা দরকার। বোনটা বড়ও হয়েছে, তারও পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে। সজীবকে বলতে হবে হুমাইরার সাথে কথা বলতে। ঐ হুমাইরার সবচেয়ে কাছের।

২৭ নভেম্বরঃ
রাত ১২.০০টা

“সজীব ঘরে আছিস? আসব?”
“দাদা তুমি? আসো। কিছু বলবা?”
“তোর সাথে হুমাইরার ব্যাপারে একটু কথা ছিল।”
“বল দাদা”
“আচ্ছা হুমাইরা কাউকে পছন্দ করে কি?”
“ইয়ে মানে, দাদা। হঠাত এই প্রশ্ন?”
“আরেহ বল না, এখন না বললে কখন বলবি? হুমাইরাকে তো বিয়েও দিতে হবে নাকি? আর এখন বলে রাখলে আমিও নাহয় ছেলেটাকে দেখে নিতাম একটু।”, রাহাতের চোখে মুখে হাসি।
“দাদা, ও হুমাইরার সাথেই পড়ে। অরণ্য নাম। ভালো। আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি।”
“বাহবা! তা হুমাইরা তোকে বলে দিল আমাকে একবার বলে দিতে পারলো না? কয় দিন?”
“এইতো দাদা, বছর তিনেক হবে। তুমি আবার ছোটকিকে বলে দিও না আমি অরণ্য’র কথা তোমাকে বলে দিয়েছি।”, হুমাইরাকে ছোটকি বলে ডাকে সজীব। আদরের ডাক।
“নাহ তা নাহয় না বললাম। তা মশাই আপনারও কি কোন . . . ”
“দাদা, আমার একটু কাজ আছে, একটা ফোন করব, তুমি পরে আসো।”, রাহাতের কথা শেষ করতে দিল না সজীব। তার আএই মোটামুটি তাকে বের করেই দিল সে।

অনীতা, সজীবের “উনি”। আজ প্রায় ছয় বছর দু জনে প্রেম করছে চুটিয়ে। আজ অনীতার জন্মদিন। এখনই তাকে ফোন না দিলে সজীবের সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দেবে সে। সজীব ফোন দেয় তাকে। দুইবার, তিন বার, . . দশবার, নাহ অনীতা ফোন ধরে না। এগার বারের বার ফোন ধরল সে।
“সমস্যা কি? এরকম রাম ছাগলের মত ম্যা ম্যা করছ কেন এই রাতের বেলা?”, অনিতা প্রচন্ড ক্ষিপ্ত।
“ম্যা ম্যা কোথায় করলাম। ফোন দিচ্ছি ধরছ না কেন?”
“আমার ফোন, আমার ইচ্ছা।”
“আচ্ছা শোন, কালকে দেখা করো। বিকাল পাঁচটায় রবীন্দ্র সরোবরে থেক।”
“বাহ! আসবো না।”, বলেই ফোন কেটে দেয় অনীতা।
সজীব জানে ভালো রকমের ক্ষেপিয়েছে ওকে, একে তো কাটায় কাটায় ১২টায় ফোন দেয় নি, আবার জন্মদিনের উইশ না করে দেখা করতে বলেছে। খবর আছে তার, তবে অনীতা কাল বিকালে আসবে এটাও সে শিওর। তখনই সারপ্রাইজটা দিবে ওকে।

পরদিন, সকাল ৭টা

রাহাতঃ এই সজীব, আজকে কি তুই ব্যস্ত?
অনিকঃ ও আবার কিসের ব্যস্ত। সারাদিন তো খালি টই টই করে ঘুরে বেড়ায়।
রাহাতঃ তুই চুপ থাক তো, নিজে না জানি কি বিশাল লাট সাহেব? সজীব বিকাল দিকে ফ্রী আছিস?
সজীবঃ না দাদা, আজকে আমার একটু কাজ আছে।
অনিকঃ তোর কাজ আছে? জোক্স করিস না, দাদা কি কাজ দেয় কর, নাহলে কপালে মাইর আছে।
রাহাতঃ অনিক তুই থামবি। আচ্ছা সজীব থাক, তবে তুই থাকলে খুব ভালো হত, খুব ইন্টারেস্টিং একটা প্ল্যান আছে।
সজীবঃ না দাদা, আজ পারবো না। জরুরী।
হুমাইরাঃ  তোমরা সবাই টেবিলে আসবে? নাস্তা রেডি।

সকাল ১০টা, রাহাতের ঘর

হুমাইরাঃ দাদা আসবো?
রাহাতঃ হুম চলে আয়। বস এখানে।
হুমাইরাঃ দাদা কিছু লাগবে? চা বা কিছু?
রাহাতঃ না তুই বস, তোর সাথে একটু কথা আছে।
হুমাইরাঃ হুম দাদা, বলো।
রাহাতঃ আচ্ছা তোর বিয়ে ঠিক করেছি, পাত্র আমার পরিচিত। কাল-পরশু দেখবে আসবে, তুই কি বলিস?
হুমাইরাঃ (খুব ক্ষীণ স্বরে) ভাইয়া আমার পরীক্ষাটা . .
রাহাতঃ ঐ পরীক্ষা বিয়ের পর দিবি। সজীব, অনিক ওদেরও বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। সজীব তো বোধহয় প্রেমও করে। তাই এখন যদি তোর বিয়ে না দেই . .
হুমাইরাঃ দাদা. . . বলেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদতে শুরু করে।
রাহাতঃ আরেহ কি হলো, কাঁদছিস কেন? বিয়ে তো করতেই হবে , নাকি?
হুমাইরাঃ দাদা . .
রাহাতঃ কি? অরণ্যের কথা বলতে পারছিস না ?
হুমাইরাঃ ভাইয়া ! ! ! তুমি. .তুমি. . তুমি কিভাবে?
রাহাতঃ আমি ম্যাজিক জানি, যাই হোক আমি ওকে দেখতে চাই আজকেই। বিকাল বিকাল চলে আসতে বল। টি এস সি তে আসতে বল। বসি কিছুক্ষণ।

হুমাইরার মুখে একটা হাসি ফুটে ওঠে, লজ্জাও পেয়ে যায়। দৌড়ে বের হওয়ার আগে শুধু একটা কথাই বলে, “সজীবদা কে আমি যদি খুন না করেছি. . ”। রাহাত হো হো করে হেসে ওঠে।

সকাল ১০ টা ৩০

“হ্যালো, তুমি কি আজকে একটু টিএসসিতে আসতে পারবা অরণ্য?”
“ক্যান? কি হইছে?”
“দাদা তোমার সাথে কি যেন কথা বলতে চায়।”
“তোমার দাদা?? কেন? আমি কি করলাম?”
“ঘোড়ার ডিম করছ। তুমি আসবা কি না বলো?”
“কখন আসবো?”
“বিকাল পাঁচটায়, শার্প পাঁচটায়।”
“আচ্ছা”
“ঠিক আছে রাখলাম।”
“ভালোবাসি।”
“হুহ ! রাখলাম!”

হুমাইরার আজকে অনেক অনেক আনন্দ। মনে হচ্ছে তার মন থেকে কয়েক মণ ওজনের পাথর নেমে গেল। দাদাকে বলা দরকার ছিল অরণ্যের কথা, সে নিজেও জানত তার বিয়ে নিয়ে বাসায় প্রায়ই কথা হয়, এক দাদার কারণে বিয়েটা আটকানো যাচ্ছিল। কিন্তু সে ভয় পেত দাদা যদি না মানে, যাক এখন আর সেই ভয়টা নেই।

দুপুর ৩টা ৩০

সজীব খুব পরিপাটি করে সেজেছে আজকে। অনীতার দেওয়া একটা ব্ল্যাক কালারের শার্ট, সাথে লাইট ব্লু জিন্স। হাতে ঘড়ি আর অনীতার জন্য এক গুচ্ছ গোলাপ। আজকে অনীতাকে বিয়ের কথা বলবে সে, হুমাইরার বিয়ের পরই বিয়ে করে ফেলবে এতদিন তাই বলছিল। কিন্তু অনীতা খুব জোর করছিল ওর নাকি বাসায় একটার পর একটা বিয়ের প্রস্তাব আসছে আর ওর বাবা নাকি ওকে জোর কছে এবার, আজ তাই মোটামুটি বিয়ের প্রিপারেশন নিয়ে এসেছে সজীব। আজকেই বিয়ে করে ফেলবে। পাঞ্জাবি পরা উচিৎ ছিল, কিন্তু কেন জানি পরলনা ওটা। অনীতার পাঞ্জাবি খুব একটা পছন্দের না, আর এটা তো কাজী অফিসেই বিয়ে, ওরা বরং ভিন্নই থাকুক। অনীতা সালোয়ার কামিজ আর ও শার্ট-জিন্স। নাহ ভালোই লাগবে। ভাবতে ভাবতে বের হলো সে।

বিকাল ৪টা

সজীব তখন প্রায় রবীন্দ্র সরোবরে পৌছে গেছে এমন সময় একটা ফোন আসলো।
“না ভাই, আজকে আসতে পারবো না। একটু কাজ আছে।”, “ভাই আজকে না”, “আচ্ছা ভাই আমি আধা ঘন্টার ভেতর আসতেছি।”

বিকাল ৪টা ১০ মিনিট

“হুমাইরা চল”
“আচ্ছা, দাদা দাঁড়াও, আর এক মিনিট।”
“আর কত সাজবি? আজ তো তোর বিয়ে না”, আবার হো হো করে হেসে ওঠে রাহাত।
দাদার হাসিটা কত পবিত্র, নিজেকে রাহাতের বোন মনে করে গর্ব হলো হুমাইরার।
“দাদা, চল, হয়ে গেছে।”

বিকাল ৪টা ৩০  মিনিট

“হ্যালো, সজীব তুমি কই?”
“আমি একটু কাজে আটকা পরে গেছি, আজকে আসতে একটু দেরী হবে। টিএসসির দিকে যাচ্ছি, অপেক্ষা করো, আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো।”
“আসা লাগবে না।”, রাগে ফোন রেখে দেয় অনীতা।
গাধার বাচ্চা, রাম ছাগল, আজকেও তার কাজ। তার আবার কিসের কাজ? বেকার একটা। আজ পর্যন্ত বেকার বলে বিয়ে করতে রাজী হলো না তার আবার কাজ? আচ্ছা কি বলল ও? ও টিএসসিতে? আমি টিএসসিতে যাই না কেন? বরং ওখানে গিয়েই দেখি রাম ছাগলটার কি কাজ? আমার জন্মদিনে ওকে ছাড়া কিভাবে থাকবো আমি?

ঐতো একটা সিটি বাস চলে আসছে। উঠে পড়ি, শাহবাগ নেমে যাবো নে।

বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিট

কিরে দাদা, আজকে বাস দেখি একদমই নাই?”
“হুম তাইতো? কারণ কি? আচ্ছা ঐ যে একটা সিটি বাস চলে আসছে উঠে পড়ি চল।”
—————————————————————————-
“আরেহ অনীতা আপু, তুমি? কোথায় যাও?”
“হুমাইরা, এই তো একটু টিএসসিতে যাবো। তুমি কোথায় যাও?”
“আমিও টিএসসিতে। দাদা, এটা অনীতা আপু, সজীব ভাইয়ার বন্ধু।”
“আসসালামুওয়ালাইকুম ভাইয়া, আপনি রাহাত ভাইয়া। সজীব আপনার কথা অনেক বলে, আপনাকে দেখে খুব ভালো লাগছে”, অনীতা একটানে কথাগুলো বলে গেল। ও এই মূহুর্তে খুব নার্ভাস ফিল করছে। ওর সামনে সজীবের বড় ভাই বসা। সজীবের বন্ধু শুনে না জানি কি ভাবছে। “আল্লাহ বাঁচাও”, বিড়বিড় করতে থাকে অনীতা।

বিকাল ৫ টা

“শরীফ ভাই, আজকে আমার খুব দরকারি একটা কাজ ছিল, আপনি হঠাত করে টিএসসিতে ডাকলেন, কাহিনী কী? আমাকে একটু তাড়াতাড়ি যেতে হবে।”
“আরেহ বস সজীব, চা খা আগে, আমার কাজটা আরও জরুরী, তোর জন্যই আরও বেশি জরুরী।”
“ভাই কি কাজ?”
“তুই তো এই মূহুর্তে বেকার তাই না?”
“হুম ভাই।”
“চাকুরী লাগবে নাকি একটা?”
“ভাই কি যে বলেন? লাগবে না? আছে নাকি আপনার কাছে?”
“আমার কাছে আবার চাকুরী ক্যামনে না থাকে, নেতা কি আর সাধে হইছি? তা লাগবো নাকি একটা চাকরী?”
“হুম ভাই, ভালোই হইত।”
“তাইলে যে একটা ছোট্ট কাজ করে দিতে হয় পার্টির. . .”

বিকাল ৫ টা ৩০, শাহবাগ

একটা অন্ধকার গলিতে দাঁড়িয়ে আছে সজীব। কাজটা সে করতে চায় নি, চাকুরীর লোভেও না। কিন্তু শরীফ ভাই তাকে পুরো হুমকি দিয়েছে কাজটা না করলে নাকি ভালো হবে না। খুব বড় কোন কাজ না, সামান্যই কাজ। শরীফ ভাই ইশারা দিলেই তাকে শুধু আরও কয়েকটা ছেলের সাথে মাঝ রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে। তার বুক কাঁপছে , একটু একটু, জানে তার কাজটা কঠিন কিছু না কিন্তু শরীফ ভাইয়ের কাজটা . . সে আর ভাবতে চায় না। এমন সময় হঠাত শরীফ ভাই হাতের ইশারা করলো . . .

বিকাল ৫ টা ৩২ মিনিট

হুমাইরাদের বাসের সামনে হঠাত তিন চারটে ছেলে এসে দাঁড়িয়ে পড়েছে। অনীতা জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো, “সজীব না?”, কয়েক মূহুর্ত মাত্র সাথে সাথে কয়েকটি পেট্রোল বোমা বিকট শব্দে বাসের ভেতর ফুটে উঠলো। অনীতা তাকাতে পারছে না, “হুমাইরা! হুমাইরা! রাহাত ভাই!” আস্তে আস্তে অনীতা জ্ঞান হারাচ্ছে, “ঐটা কি সজীব ছিল?”

বিকাল ৫টা ৩২ মিনিট

সজীব রাস্তায় গিয়ে দাড়ালো, বাস থেকে একয়াট মাথা উকি দিল এদিকে, “মেয়েটা কি অনীতা?” ততক্ষণে শরীফ ভাই বোমা মেরে দিয়েছে, “ঐ সজীব দৌড়া, সজীব ভাগ।” নাহ সজীব যেতে পারছে না। তার পা আটকে আছে, ওটা কি অনীতা? সজীব দৌড়ে বাসের কাছে গেল তিন চারজন যাত্রী কোন মতে বাইরে বের হয়েছে বাকীরা সব পুড়ে গেছে। সজীব দুই চার জনকে টপকিয়ে ঐ সীটটার পাশে এসে দাঁড়ালো, হুমাইরা আর দাদা রক্তাক্ত পড়ে আছে, পাশেই অনীতা। সজীব দাদাকে ডাকলো “দাদা,দাদা,দাদা”, রাহাত সাড়া দেয় না, “ছোটকি”, হুমাইরার মুখে কথা নেই, “অনীতা, অনীতা”, অনীতা নির্জীব। সজীব চিৎকার করে ডাকছে “কেউ আছেন? কেউ কি আছেন?”
আশেপাশে কেউ ছিল না।

দিনটি অন্যরকমই হওয়ার কথা ছিল . . .

অক্ষর সম্পর্কে

স্বপ্নবাজ মানুষ একজন। আশাবাদ আর নিরাশার দোলাচালে আশাকেই শেষ পর্যন্ত সঙ্গী করতে চাই। আর স্বপ্ন দেখি একদিন দেশের জন্য কিছু করার, স্বপ্ন দেখি ছোট্ট করে হলেও কিছু একটা করার যা একটা প্রজন্মের গতিপথ পরিবর্তন করবে এবং অবশ্যই সেটা যেন হয় ইতিবাচক কোন পরিবর্তন। এখন পড়াশোনা করছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে। গণনা যন্ত্রের উপর পড়াশোনা করছি ঠিকই কিন্তু যন্ত্র শব্দটাই আমার কাছে বিরক্তিকর। ফেসবুক লিঙ্ক- www.facebook.com/akkhar21
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে গল্প-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

7 Responses to দিনটি অন্যরকমই হওয়ার কথা ছিল . . .

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    বহুদিন পর!

    welcome back man!

  2. জ্ঞানচোর বলেছেনঃ

    গল্পটা স্রোতে স্রোতে ওখানে গিয়ে মিশেছে। ওখানে আসলে ওরাই ছিল। কেবল একজন আরেকজনকে চিনতো না।

  3. তুসিন বলেছেনঃ

    বহুদিন পর অক্ষরের লেখা।পড়ে ভাল লাগল…..:)

  4. হৃদয় বলেছেনঃ

    🙁 🙁 🙁 🙁 🙁 🙁 🙁 🙁 🙁 🙁 🙁 🙁

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।