‘টীচ ফর বাংলাদেশ’এর সিইও ও প্রতিষ্ঠাতা মায়মুনা এন আহমেদের এই ((http://www.dhakatribune.com/op-ed/2013/dec/10/letter-bangladeshis-abroad)) লেখাটি ১১ ডিসেম্বর, ২০১৩তে ‘ঢাকা ট্রিবিউন’এ প্রকাশ পেয়েছে, আমার অনূদিত লেখাটি এখানে প্রকাশিত হলো।
আজ না হয় নিজের দেশে ফিরে আসুন। এমন এক দেশ, যেখানে প্রতি সপ্তাহেই গণ্ডায় গণ্ডায় লোক মারা পড়ছে, রাজনৈতিক প্রহসনের এক খেলায় গুটি সাজতে গিয়ে। প্রহসন বলছি কারণ – রাজনীতিতে শক্তি প্রদর্শনের জন্য তখনই সন্ত্রাসের আশ্রয় নেয়া হয়, যখন প্রতিপক্ষ এর ভয়াবহতার কাছে হার মেনে দাবি মেনে নেবে এমন সম্ভাবনা থাকে। আমাদের বেলায় ঘটনা পুরোপুরি ভিন্ন।
ফিরে আসুন এই দেশে, যেখানে স্টীল-কংক্রীটের ধ্বংসস্তূপে চাপা খেয়ে মরতে হয় নারীকে, পুরুষকে।কারণ তাদের নিংড়ে বের করে আনা শ্রমের চাইতে তাদের জীবনের দাম এক কানাকড়িও বেশি নয়।
ফিরে আসুন আজই, যেখানে ঠিকভাবে পড়তে কিংবা যোগ করতে শেখার আগেই প্রাইমারি পাস করে বের হতে পারে আমাদের ছেলেমেয়েরা। কেন নয়? কারখানার শ্রমিকদের চাইতে স্কুলের শিক্ষকদের পারিশ্রমিক বা প্রশিক্ষণ – কোনটাই কিছুমাত্র বেশি হবার দরকার আছে বলে আমরা মনে করি না যে! ফিরে আসুন নিজের জাতির কাছে, যারা অস্তিত্ব রক্ষার বেদনা আর আত্মিক অনুসন্ধানের গ্যাঁড়াকলে পথ হারিয়েছে সেই কবে। এই দেশ আপনার হৃদয় ভেঙে দেবে প্রতিদিন, নতুন করে।
আর বেশি কিছু বলার আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, আপনার পরিচয় আর আপনি কাকে/কোন্ দেশকে ‘নিজের দেশ’ বলে ভাবেন সে ব্যাপারে নিজে থেকেই ধারণা করে নিয়েছি বলে। বাংলাদেশিরা – দেশেই থাকুন কি বিদেশেই – নিজেদের পরিচয় নিয়ে জটিল ও বহুমুখী এক সংকটে ভোগেন অনেকেই।
তবে এই পর্যন্ত পড়ার সময় একবারের জন্য, এক মূহুর্তের জন্যও যদি আপনার মনে হয় যে কথাগুলো আপনার জন্য, তবে কথাগুলো সত্যিই আপনার জন্য। যারা শারীরিকভাবে দেশের বাইরে থাকেন তারা নন, বরং এ চিঠি মানসিকভাবে প্রবাসে থাকা প্রতিটি বাংলাদেশিকে উদ্দেশ্য করেও লেখা হয়েছে।
কারণ আমরা যারা দেশে থাকি, তারা নিজেদের চারপাশে এমন এক অদৃশ্য দেয়াল তুলে রেখেছি যে, দেশে আছি কি নেই তাতে তেমন কিছু আসে-যায় না। আমাদের সবার উদ্দেশ্যেই বলছি – আজই দেশে ফিরুন। এখনই।
আপনার দক্ষতা, আপনার অভিজ্ঞতা, আর সবার আগে আপনার কণ্ঠ – এসবের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আজ যার, নিজের সেই মাতৃভূমিতে ফিরে আসুন। বাংলাদেশের ইতিহাস ও চলমান সব ঘটনার মুখপাত্র আজ দুর্নীতিগ্রস্ত, দুর্বিনীত কিছু মানুষ – তাদের হাত থেকে এসব কিছুকে ফিরিয়ে নেবার দায়িত্ব আমাদেরই।
বার বার চরম বিপদের মুখে দাঁড়িয়েও অবিচল থাকে যে দেশ, যেখানকার মানুষ ভ্রাতৃত্বের আশ্চর্য সুতোয় বেঁধে রেখেছে এই জাতিকে – তার কাছে আজই ফিরে আসুন। ফিরে আসুন এমন এক দেশে যেখানে বুদ্ধিদীপ্ত তরুণেরা অবিশ্বাস্য সব সংগঠনের জন্ম দিচ্ছে, নিত্যনতুন মহতী সব উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছে। যে দেশে অবাক-করা সব জায়গায় আশা আর সম্ভাবনার আলোর দেখা পাবেন আপনি, প্রতিদিন নতুন সব স্বপ্ন দেখাবে আপনাকে যে দেশ।
দেশে ফিরে আসুন, কাজে নামুন। কিছু ময়লা আপনার হাতেও লাগান। ওয়াল স্ট্রীট রেখে দেশে এসে শিক্ষকতা করুন। ক্যাপিটল হিলের মায়া ছেড়ে আপনি হোন দেশি উদ্যোক্তা। দেশে ফিরুন, তবে তার আগে ভালো করে ভেবে দেখুন আপনি তা সত্যিই চান কিনা, আর এ জীবন বেছে নিতে আপনি প্রস্তুত কিনা। নিজের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে এমন সব বাধার মুখোমুখি যদি দাঁড়াতে চান আগে কখনো, অন্য কোথাও যার দেখা পান নি – তাহলে দেশে ফিরুন। দেশে ফিরুন যদি আমাদের সম্মিলিত সমাধানের একটি অংশ আপনি নিজেও হতে চান।
দেশে ফিরুন। তারপর কিছু শুরু করুন, কিছু গড়ে তুলুন, কিছু বদলে ফেলুন, কিংবা অন্তত কিছু বলুন।
আগে কেবল ফিরে আসুন। আজই, এখনই।
লিখার কনটেন্ট টা খুব ভালো লাগলো… ধন্যবাদ :guiter:
🙂
আমি কোন একটা অনুষ্ঠান যতটুকু মনে পড়ে ‘দ্যা অ্যাসাসিনেটেড লিডার’ ছিল সেটার নাম তার একটা পর্বে জন কেনেডি’র উপর একটা ডকুমেন্টারি দেখেছিলাম।
কথা দিয়ে সম্মোহিত করার আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল তাঁর।
কথাগুলোতে কতটা জোর ছিল খেয়াল করেছেন আপু?
”My fellow Americans, ask not what your country can do for you, ask what you can do for your country.”
আমার খুব বেশি প্রিয় এই কথাটা। আমি দেখি নি ঐ ডকুমেন্টারি। 🙁
দেশে নাই 🙁
বাবা-মা দেশে ফেরার নাম শুনলেই মনে হয় হার্টফেল করে…কোনভাবেই দেশে ফিরি এটা চায় না…
তবে আশা রাখি, একদিন ফিরব ইনশাআল্লাহ।
🙂