[জ্যোতির্বিদ কার্ল সাগানের ‘পেইল ব্লু ডট: আ ভিশন অফ দ্য হিউম্যান ফিউচার ইন স্পেইস’ বইয়ের অংশবিশেষের অনুবাদ এটি। ‘পেইল ব্লু ডট’ মূলত পৃথিবীর একটি ছবির নাম, যা ১৯৯০ সালে ভয়েজার-১ থেকে তোলা হয় পৃথিবীর ৬ বিলিয়ন কিলোমিটার দূর থেকে। স্পেইসক্র্যাফ্টটি যখন সোলার সিস্টেম ছেড়ে বেরিয়ে আসবে, সে সময়ে কার্ল সাগানের অনুরোধে ক্যামেরা পেছনে ঘুরিয়ে পৃথিবীর এই ছবিটি তোলা হয়।]

সাদা রেখা দিয়ে অদৃশ্যমান পৃথিবীকে দেখানো হয়েছে
আবার তাকাও তো বিন্দুটার দিকে! ওখানেই তো আছি আমরা। আমাদের বাড়ি ওটা। এই বিন্দু মানেই আমরা। তুমি যাদের ভালোবাসো, যাদের তুমি চেনো, জীবনে তুমি যাদের কথা শুনেছো, এই পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত যত মানুষ বাস করে গেছে – তাদের প্রত্যেকেই নিজের জীবন যাপন করে গেছে এর ওপর। মানুষ জাতির ইতিহাসে যত জমাটবাঁধা সুখ-দুঃখ, হাজারো আত্মবিশ্বাসী ধর্ম, মতবাদ আর অর্থনৈতিক ধারণা, প্রত্যেক শিকারী ও ভবঘুরে, প্রত্যেক নায়ক আর কাপুরুষ, সভ্যতার প্রত্যেক স্রষ্টা ও ধ্বংসকারী, প্রত্যেক রাজা ও প্রজা, প্রতি জোড়া তরুণ প্রেমাস্পদ, প্রতি জোড়া বাবা-মা, প্রত্যেক আশান্বিত শিশু, আবিষ্কারক ও অভিযাত্রিক, নৈতিকতার যত শিক্ষক আর যত দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, প্রত্যেক তারকা, মহৎ যত নেতা, প্রত্যেক সাধুসন্ত আর পাপী-তাপী – সবই, সবাই সূর্যরশ্মি ছুঁয়ে ঝুলে থাকা এই ধুলিকণার গায়েই জীবন কাটিয়ে গেছে।
সুবিশাল মহাবিশ্বের ছোট্ট, অতিক্ষুদ্র একটা অংশ আমাদের এই পৃথিবী। একটা বিন্দুর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশের ক্ষণস্থায়ী অধিপতির গর্বিত, বিজয়ীর আসন পাওয়ার জন্য কত সেনাপতি আর সম্রাট রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়েছে আজতক, ভাবা যায়? এই বিন্দুবৎ পৃথিবীর এক কোনে থাকা বাসিন্দারা অন্য এক কোনের অদৃশ্যমান বাসিন্দাদের থেকে কেমন অবিরাম নিষ্ঠুরতার শিকার হয়, কেমন দৈনন্দিন তাদের ভুল বোঝাবুঝি, একে অন্যকে খুন করার কী অবাক আগ্রহ, কেমন তীব্র তীক্ষ্ণ ঘৃণা তাদের – ভাবতে পারো?
আবছা আলোর এই ফোঁটা হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে আমাদের যত আত্মম্ভরিতা, যত কল্পিত আত্মমর্যাদা, মহাবিশ্বে আমরা খুব সুবিধাজনক কোন অবস্থানে আছি এমন যে বিশ্বাস – সবকিছুকেই। চারপাশ থেকে ঘিরে থাকা বিশাল অন্ধকার শূন্যতার মাঝে আমাদের এই গ্রহ, একটা একলা কণার মতন। এই অন্ধকার, এই শূন্যতার মাঝ থেকে কেউ যে আসবে আমাদের নিজেদের হাত থেকেই আমাদেরকে উদ্ধার করতে – এমন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
প্রাণকে ধারণ করার মত আমাদের একমাত্র পরিচিত জায়গা হলো এই পৃথিবী। অন্তত নিকট ভবিষ্যতে পালিয়ে যাওয়ার মত অন্য কোন গ্রহের কথা মানুষ জাতির জানা নেই এখনো। বেড়াতে যাওয়ার মত জায়গা আছে, কিন্তু বাস করার মত নয় সেগুলো। মেনে নেয়াটা সহজ হোক বা না হোক, এই মূহুর্তে আমাদের একমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁই এই পৃথিবীই।
জ্যোতির্বিদ্যার জ্ঞান নাকি মানুষকে বিনয়ী করে তোলে, তার চরিত্রকে গড়তে সাহায্য করে। আসলেও, মানুষের আত্মতুষ্টি যে কতটা ঠুনকো তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ বোধহয়, দূরে মিলিয়ে যাওয়া আমাদের ছোট্ট গ্রহের এই ছবিটি।
গতকাল একটা ভিডিও ক্লিপ দেখছিলাম, মহাবিশ্বের ব্যাপ্তি আর শত গ্যালাক্সি নিয়ে, যা আমাদের জানার অনেক অনেক বাইরে। ঠিক এইরকম কিছু চিন্তাই মাথায় এল। আমরা কত তুচ্ছ, কত ক্ষুদ্র…তবু এই একটা গ্রহে এত হানাহানি, রক্তারক্তি… 🙁
ও আচ্ছা, বলতে ভুলে গেলাম, এটা কি কোন উপন্যাসের অনুবাদ ?
উঁহু, একটা বইয়ের অংশবিশেষের অনুবাদ। লিখে দিয়েছি পরে। 🙂
সামিরা … আপনার লিখা বরাবর ই ভালো লাগে… নতুন করে আর কিছু বলার নাই… ভালো লাগা রইলো লিখার প্রতি :beerdrink:
অনেক ধন্যবাদ! 🙂
জ্যোতির্বিদ্যা আমার খুব পছন্দের বিষয় আগেই সুযোগ পেলেই পড়তাম তবে বিনয়ী হয়েছি কি না জানি না
অনেক ভালো লেগেছে 🙂
🙂 আমারও খুব প্রিয় এই কথাগুলি।