দুপুরে পড়তে পড়তে টেবিলেই মাথা রেখে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না ।হঠাৎ মোবাইলের ভাইব্রেশনের প্রচন্ড শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল ।ঘুম জড়ানো চোখে ডায়াল স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি অদ্বিতীয়ার নাম ।এটা দেখে আবার মোবাইলটি আগের জায়গায় রেখে দিলাম । এই তিনদিনে অদ্বিতীয়া প্রায় শখানেক মেসেজ আর হাজার খানেক বার ফোন করেছে । প্রতিবারই ঝগড়া শেষে এই কাজটি অবশ্য আমারই করতে হয়।অনবরত ফোন আর মেসেজ দিতে দিতে হয়রান হয়ে যাই আমি আর ওপাশে নিশ্চুপ নিরবতা।তাই এবার আমি ইচ্ছে করেই কাজটি করেছি। মেসেজও দেখিনি আর কলও রিসিভ করি নি ।অন্তত এতে সে বুঝুক ইচ্ছে করে এভাবে কাউকে কষ্ট দেওয়াটা কেমন ?
*** পরদিন..
-দোস্ত যাবি ।
-কই ?
-আমাদের এলাকায় একটা কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে হচ্ছে।অনেকদিন বিনা দাওয়াতে বিয়ে খাওয়া হয় না।আয় না ।
-নাহ !দোস্ত আমার মন খারাপ খুব ।তুই যা ।
-কেন অদ্বিতীয়ার সাথে ঝগড়া করেছিস নাকি ?
-হুম ।
-আরে ব্যাটা গার্লফ্রেন্ডের সাথে তো ঝগড়া হবেই ।দেখবি এক দুদিন পর এমনি ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তুই এভাবে যদি একটা খাওয়া মিস করিস ,তবে সেটা কি আর ফিরে পাবি ।বিয়ে কি আর তোর জন্য প্রত্যেকদিন হবে ,পাগলা ?
আমরা এখন কমিউনিটি সেন্টারের ভেতরে বসে খাচ্ছি ।ভেতরের পুরো জায়গা মানুষ জনে ভর্তি। আমাদের জন্য এটাই সুবিধের । কেউ চিনতে পারবে না তাহলে । আর যদি চিনেও ফেলে,তাতেও কোন অসুবিধা নাই ।কারণ প্রতি মাসেই বিনা দাওয়াতে বিয়ে খেতে খেতে আমরা মাথার চুল পাকিয়ে ফেলেছি ।প্রয়োজনে আমরা বরপক্ষ ,কনেপক্ষ কিম্বা মালিকপক্ষ যে কোনটা বনে যেতে পারি।তাই সেসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে খাওয়াতে মনোযোগ দেওয়া দরকার ।
-দোস্ত এটা দিয়ে তোর কয় নম্বর রান হবে ?
-হারামি ,বকবক কম করে তাড়াতাড়ি খা ।ধরা পড়লে মাইর খাওয়ার পসিবিলিটি আছে ।
আমি নিজেও তাই কথা না বাড়িয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম। রান্নাটা বেশ ভালই হয়েছে।হঠাৎ পাশ থেকে শফিক হাত দিয়ে আমার পেছনে গুতা দিল ।
-আরে গুতা দিচ্ছিস কেন ? খাইতে থাক ।
চাপা স্বরে শফিক বলে আরে ব্যাটা ,সামনে তাকিয়ে দেখ ! অদ্বিতীয়া !!
ওকে দেখে পুরো খাবি খেয়ে গেলাম। এদিকেই এগিয়ে আসছে সে। মুখ পুরো থমথমে। চোখমুখ ফোলা ।বোধহয় কিছুক্ষণ আগেই কান্নাকাটি করে এসেছে ।হঠাৎ অজানা আশঙ্কায় কেঁপে উঠলো মন । তারপরও যথাসম্ভব নিজেকে ঠিক রেখে হাসি হাসি মুখ করে প্রশ্ন করলাম,
-আরে অদ্বিতীয়া ।কি ব্যাপার ? তুমি কখন এলে ?
সে চুপ ।ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাই আমি ।
-তোমার বান্ধবির বিয়ে নাকি ? আগে জানাও নিতো ।
-না ।আমারই বিয়ে ।তোমার মতো অপদার্থের সাথে প্রেম করা যায় ।বিয়ে নয় ।
হঠাৎ আমার কি হলো জানি না। তবে চোখ দিয়ে যে অবিরাম জল পড়ছে এটা বুঝতে পারছি।
-এ্যাই যখন তখন ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদবা না? ছিঁচকাঁদুনে জামাই আমার একদম পছন্দ না।
-তার মানে তুমি বিয়ে করছো না?
-না । -তাহলে চলো পালাই ।
-আরে কি মুশকিল ।বড়পুর বিয়ে ।আর এই মাথামোটা বলে কিনা চলো পালাই ।
-ওহ ।সেটা আগে বলবা তো ?
-বলার সুযোগ পেলে তো। তোমাকে আমি ফোন …
-ও আচ্ছা ফোনে সরি বলতে চেয়েছিলে,তাই না ?
-জ্বী না ।সরি বলবো কেন ? তুমি ঝগড়া করেছ তুমি সরি বলবা ।
-তাহলে ফোন করেছ কেন ?
– বড়পু কয়দিন ধরে বলছিলো , তোর গবেটকে বিয়েতে আসতে বলবি।আমি অবশ্য বলেছিলাম দরকার নাই ।কারণ তোমাকে তো আমি চিনিই।তাই না ?
-ঠিকই বলেছেন ভাবি ।যেমন কুলাঙ্গার চরিত্র।দাওয়াত ছাড়া বিয়ে খাওয়ার ওস্তাদ । এই দেখেন আমাকেও নিয়ে এসেছে। একগ্লাস বোরহানি সাবাড় করে মুখ মুছতে মুছতে শফিক বলে উঠলো কথাটা । ওর কথা শুনে আমরাও হাসি ।আসলেই লাইফ ইজ বিউটিফুল!
প্রিয় সরব সদস্য,
আপনার ফরম্যাটিং এর দিকে লক্ষ্য রাখলে ভাল হয়। ফন্ট সাইজ, ফন্ট ইত্যাদি।
ওয়ার্ডে লিখে সিয়াম রূপালি ফন্ট সিলেক্ট করে সুবিধামতো ফন্ট দিয়ে সেটা সরব এ কপি পেস্ট করতে পারেন।
আচ্ছা ঠিক আছে।রাখবো 🙂
ভালো লাগলো,
🙂
মজা পেলুম ! দাওয়াত ছাড়া বিয়ে খাওয়া নিয়ে আমরা ভাইবোন মিলে এককালে অনেক প্ল্যান করতাম, কিন্তু বাস্তবে আর কার্যকর করা হয় নাই 🙁
আমি নিজেও কখনও খাইনি আপু 🙁
মজা পেলুম 😀
🙂 🙂