এক দেশে এক এক কৃষক বাস করত, নানান ধরনের শস্য চাষ করে সুখে শান্তিতে দিন কাটাতো। ধীরে ধীরে দিন বদলে গেল, জমিজমা কমে গেল। দেশী জাতে আর পোষায়না, দুম করে কোথা থেকে চলে আসল ‘হাইব্রীড’। তার ঝলকানিতে সম্মোহিত হয়ে অনেকেই হাইব্রীড চাষ শুরু করল। আমাদের কৃষকও তার ব্যাতিক্রম নয়। কিন্তু, হাইব্রীডের সমস্যা একটাই…প্রতিবারই নতুন করে বীজ কেনা লাগে। কারন, হাইব্রীড গাছের থেকে যে বীজ পাওয়া যায়, সেই বীজে আর আগের মত ক্ষমতা থাকেনা। ব্যাপারটা খুব একটা ঝামেলার না হলেও, কৃষক মনে মনে অন্যের কাছে জিম্মি ভাবে নিজেকে। সে স্বপ্ন দেখে, এমন যদি হতো… হাইব্রীডের বীজ থেকেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম হাইব্রীড তৈরি হবে, বীজের জন্য কোন কাটা-তারে ঘেড়া ইন্ডাস্ট্রির দিকে চেয়ে থাকতে হবেনা! সেই কৃষকের সাথে দেখা হলে বলে দেবেন, তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
অ্যাপোমিক্সিস কিঃ
স্কুল কলেজে ”আই হেট বায়োলজি” টাইপ ছাত্র-ছাত্রীর অভাব নাই। ইদানিং হলিউডের সিনেমার কল্যানে ডিএনএ, ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া এসবের প্রতি আবার কারো কারো আগ্রহ জাগছে। অনেকের মধ্যে আবার দেখা যায় বায়োলজির জুওলজি অংশ কোনরকম লাগলেও, বোটানি মোটেই ভালো লাগেনা। ভাইয়া, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। গাছপালার প্রতি একটা টান নিজের থেকেই তৈরি হওয়া উচিত।
যাই হোক, অ্যাপোমিক্সিসে যেহেতু বীজ নিয়ে কাহিনি, সেটা থেকেই শুরু করি। বীজ জিনিসটা কে আমরা আদর করে বিচি বলে থাকি। আমের আটি, সিমের বিচি এদেরকেই বইয়ের ভাষায় বীজ বলা হয়। বীজ কেন দরকার? বীজ থেকেই বেশির ভাগ গাছ প্রাকৃতিকভাবে চারা উৎপন্ন করে। এরকম বীজ উন্নত উদ্ভিদ নিষেকের মাধ্যমে তৈরি করে থাকে। এইটা মোটামুটি সূর্য পূর্বদিকে উঠার মত সত্য, সত্যিকারের বীজ তৈরির জন্য নিষেক অপরিহার্য। নিষেক ছাড়াও অনেক উদ্ভিদে বীজ হয়, তা থেকে চারা হয়না। তাহলে সেটা কি সত্যিকারের বীজ হল?
নিষেক এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে পুরুষ গ্যামেট অর্থাৎ পরাগরেণু এবং স্ত্রী গ্যামেট অর্থাৎ ডিম্বকের মিলন হয়। পরাগ রেনু, ডিম্বক এরা আসলে ফুলের মধ্যে তৈরি হয়। ছোটবেলায় জবা ফুলের ব্যাবচ্ছেদ করার সময় নিশ্চয়ই আপনারা দেখেছেন। এখন যে কথাটা বলব, তাতে যদি আপনার চমক না লাগে তাহলে ধরে নেব আপনি নিতান্তই নিরস একটা মানুষ, নয়তো অ্যাপোমিক্সিস সম্পর্কে আগেই জানেন। কিছু কিছু উদ্ভিদের ক্ষেত্রে, এই বীজ তৈরি ব্যাপারটা নিষেক ছাড়াই হয়। জী সূর্য মাঝে মাঝে পশ্চিম দিকেও উঠে। এক্ষেত্রে নতুন যে বীজ তৈরি হয়, তা হয়ে যায় মাতৃ উদ্ভিদের কার্বন কপি, ক্লোন! কারন, যেহেতু নিষেক হচ্ছেনা সেহেতু স্ত্রী গ্যামেটের নিউক্লিয়াস যে জিনোম ধারন করছে, তা অক্ষত রয়ে যাচ্ছে এবং সেটাই হয়ে যাচ্ছে বীজের জিনোম পরবর্তীতে সন্তান গাছের জিনোম।
আমরা জানি যে, গ্যামেটের মিলনের ফলেই জিনগত বৈচিত্র্যের সৃষ্ট হয়। তাই সন্তানে বাবা মা-র কিছু বৈশিষ্ট্য থাকলেও, পুরোপুরি বাবা কিংবা মায়ের মত সন্তান হয়না। কিন্তু, এক্ষেত্রে সন্তান পুরোপুরি মায়ের মত হতে সক্ষম। এই প্রকৃয়াকেই বলা হয় অ্যাপোমিক্সিস। তাহলে, ব্যাপারটা এমন যে অ্যাপোমিক্সিস হল বীজ উৎপাদনের একটি অযৌন প্রকৃয়া। এই বীজে স্বাভাবিক বীজের সব বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান থাকে। একে সংরক্ষন করা যায়, রোপন করা যায়, চাইলে খাওয়াও যায়।
প্রকৃতিতে অ্যাপোমিক্সিসঃ
আমাদের জানামতে উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা প্রায় চল্লিশ হাজার, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ১% এ অ্যাপোমিক্সিস হয়ে থাকে। তবে Gramineae, Compositae, Rosaceae এবং Asteraceae গোত্রে অ্যাপোমিক্সিস বেশি দেখা যায়। কিছু কিছু প্রজাতিতে আবার যৌন প্রকৃয়া এবং অ্যাপোমিক্সিস দুইটাই রয়েছে যেমন, ব্লু-গ্রাস যার বৈজ্ঞানিক নাম Poa pratensis। এখন অ্যাপোমিক্সিস সম্পর্কে আপনার বন্ধুকে বলার পর যদি সে দাবী করে তার বাগানে অ্যাপোমিক্টিক কলাগাছ আছে, তখন কিভাবে আপনি তা যাচাই করবেন? যখন দেখা যাবে কোন ক্রস-পোলিনেটেড প্রজাতিতে নতুন প্রজন্মের প্রতিটাই দেখতে শুনতে একই রকম এবং মাতৃগাছের হুবুহু বৈশিষ্ট্য ধারন করছে তখন বুঝা যাবে এর কারন অ্যাপোমিক্সিস। যখন দেখা যাবে নতুন প্রজন্মে বন্ধ্যাত্যের হার বেশি থাকার কথা থাকলেও তা থাকছেনা, ঠিকই অধিকাংশ উর্বর হিসেবে অংকুরিত হচ্ছে তখন বুঝা যাবে এর কারন অ্যাপোমিক্সিস। কিংবা যদি দেখা যায় একই ফুলে একাধিক গর্ভমুন্ড, একাধিক অথবা একীভুত একাধিক গর্ভাশয় থাকে, তখনও ধারনা করা যায় এইখানেও উপস্থিত মহামতি অ্যাপোমিক্সিস। তবে এর থেকে অ্যাপোমিক্সিসের কোন অকাট্য প্রমাণ দাড় করিয়ে শাইখ সিরাজের নজর কাড়তে পারবেননা। এর উপস্থিতি এবং কার্যকৌশল বুঝার জন্য মেগাস্পোরজেনেসিস কিংবা ভ্রূনথলি ক্রমবিকাশের বিভিন্ন ধাপে সাইটোলজিক্যাল পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
প্রকারভেদঃ
প্রকৃতিতে সাধারনত তিন ধরনের অ্যাপোমিক্সিসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়,
১) অ্যাপোস্পরিঃ এই প্রকৃয়ায় ডিম্বকের নিউসেলাস থেকে ভ্রূনথলি তৈরি হয় এবং স্বাভাবিক ভাবে যে মেগাস্পোর থেকে থেকে ভ্রূনথলি হবার কথা, তা আর হয়না।
২) ডিপ্লোস্পোরিঃ স্বাভাবিক প্রকৃয়ায় মেগাস্পোর মাতৃকোষ মিয়োসিসের মাধ্যমে মেগাস্পোর তৈরি করে। তার থেকে ভ্রূনথলি তৈরি হয়। কিন্তু ডিপ্লোস্পোরিতে মেগাস্পোর মাতৃকোষ মাইটোসিসের মাধ্যমে মেগাস্পোর বাদ দিয়েই ভ্রূনথলিতে পরিণত হয়।
এই দুই প্রকৃয়াতেই যে ভ্রূনথলি তৈরি হয় তা পরবর্তীতে পার্থেনোজেনেসিসের মাধ্যমে ভ্রূনে পরিনত হয়।
৩) আকস্মিক অ্যাপোমিক্সিসঃ এই প্রকৃয়ায় কোন ভ্রূনথলি তৈরি হয়না, বরং ডিম্বকের চারপাশের নিউসেলাস, ইন্টেগুমেন্ট কিংবা গর্ভশয়ের প্রাচীর থেকে সরাসরি ভ্রূনের উৎপত্তি হয়।
এতদূর পর্যন্ত যদি বুঝে থাকেন তাহলে পরের অংশটুকুতে আমার ভূলগুলো ধরিয়ে দেওয়ায় দায়িত্ব আপনার, না বুঝলে লেটস পার্টি…
এই চিত্রটি লক্ষ্য করুন, আগেই বলে নিচ্ছি এটাতে অ্যাপোমিক্সিসের কিছু নেই, এটা একটি স্বাভাবিক নিষেক ক্রিয়ার সরলীকৃত চিত্র। দেখতেই পাচ্ছেন প্রতিটা চিত্রেই বিভিন্ন সংখ্যা দিয়ে লেবেল করা। আমাদের বুঝার জন্য সব না জানলেও চলবে তবে এখানে ৩–ডিম্বক, ৪–গর্ভাশয়, ৬–মেগাস্পোর মাতৃকোষ, ৮– মেগাস্পোর, ১০– ভ্রূনথলি এই অংশগুলোই যথেষ্ট।
যাই হোক, মেগাস্পোর মাতৃ কোষ থেকে অনেকগুলো মেগাস্পোর তৈরি হয়, একটি বাদে অন্যগুলো নষ্ট হয়ে যায় এবং সেই মেগাস্পোরটি ভ্রূনথলিতে পরিনত হয়। গর্ভমুন্ডে যখন পরাগরেনু এসে পড়ে তখন তা থেকে একটি পাইপের মত অংশ বের হয়ে ভ্রূনথলির সাথে যুক্ত হয়। পরাগরেণুর নিউক্লিয়াস ভ্রূনথলিতে পৌছায়। ডিম্বকের নিউক্লিয়াসের সাথে মিলিত হয় এবং পর্যায়ক্রমে জাইগোট, ভ্রূন, বীজ, আস্ত উদ্ভিদ তৈরি করে। এই হচ্ছে সংক্ষিপ্ত নিষেক প্রকৃয়া। সবার ডানে উপরের দিকে যে চিত্রটি দেখা যাচ্ছে এই চিত্রে ভেতরের নীল অংশের চারপাশে যে হলুদ অংশ দেখা যাচ্ছে সেটাই হল নিউসেলাস।
অ্যাপোস্পরিতে এই নিউসেলাস থেকেই মাইটোসিসের মাধ্যমে ভ্রূনথলি তৈরি হয়ে থাকে, অর্থাৎ মেগাস্পোরের আর ভূমিকা থাকেনা। ধরেন আপনি মেগাস্পোর, আপনি যার থেকে পুষ্টি নিয়ে বড় হবেন, সেই আপনাকে বাইপাস করে সব সম্পত্তি দখল করে ফেলল!
অপরদিকে ডিপ্লোস্পোরিতে মেগাস্পোর মাতৃকোষের মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে ভ্রূনথলি তৈরি হয়, কিন্তু স্বাভাবিক প্রকৃয়ার ক্ষেত্রে এর থেকে মিয়োসিসের মাধ্যমে মেগাস্পোর, সেই মেগাস্পোর থেকে ভ্রূনথলি তৈরি হবার কথা। মানে মাঝখানের একটা ধাপ ফাঁকি দিয়ে গেল।
অ্যাডভেন্টিশিয়াস বা আকস্মিক অ্যাপোমিক্সিসের, এ তো আরো বড় ফাঁকিবাজ। এই ক্ষেত্রে এই নিউসেলাস অথবা গর্ভাশয়ের প্রাচীর এদের থেকেই আচমকা সরাসরি ভ্রূনের উৎপত্তি হয়ে থাকে।
অ্যাপোমিক্সিসের প্রয়োগঃ
এইবার তো বুঝলেন অ্যাপোমিক্সিসের মাহাত্ন। এখন এই জিনিসটা ধান কিংবা গম গাছে ঢুকাতে পারলেই না কৃষকের স্বপ্নদেখা স্বার্থক হবে। তো ব্যাপারটা কিভাবে করা যেতে পারে?
অনেক ধরনের পদ্ধতি আছে, এর মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপঃ
১) কোন একটি শস্যের যেকোন বন্য প্রকরণ[wild variety] এ যদি অ্যাপোমিক্সিস থাকে, তবে তাদের মধ্যে ক্রসের মাধ্যমে অ্যাপোমিক্টিক হাইব্রিড তৈরি করা। এখানে বন্য প্রকরণ বলতে বনে জঙ্গলে জন্মাতে হবে এমন কিছু না। এটা আসলে নিয়মিত যেটা চাষ হচ্ছে তার কাছাকাছি কোন আত্নীয়কে বুঝায়। যেমন, Oryza sativa হচ্ছে ধান, এর একটি বন্য প্রকরণ Oryza longistaminata যা মূলত এক ধরনের আগাছা।
২) অ্যাপোমিক্সিস নিয়ন্ত্রনকারী জিন সনাক্ত করা, এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে কাংক্ষিত শস্যের জিনোমে তা যুক্ত করা। গবেষনা করে দেখা গেছে অ্যাপোমিক্সিস নিয়ন্ত্রিত হয় এক ধরনের সুপারজিন দ্বারা। আর সুপারজিন হল কয়েকটা জিনের গুচ্ছ যারা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে একসাথে অবস্থান করে।
৩) ডিম্বক বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে শস্যের প্রকরণ সমূহে ক্রস ঘটিয়ে।
৪) বর্তমান হলিউডি সিনেমার জনপ্রিয় একটি আইডিয়া, মিউটেশন। হ্যা, মিউটেশনের মাধ্যমেও সাধারন উদ্ভিদকে অ্যাপোমিক্টিক উদ্ভিদ বানানো হয়তো সম্ভব।
অ্যাপোমিক্সিস এবং কৃষকঃ
কৃষকের লাভের কথা তো আগেই বলেছি, এটাই আসলে অ্যাপোমিক্সিসের সবচেয়ে পজিটিভ, সবচেয়ে সহজবোধ্য সবচেয়ে জনপ্রিয় দিক। যারা হাইব্রীড শস্য চাষ করে থাকেন, তাদের প্রতি বছর নতুন করে বীজ কেনা লাগে। সেটা আর লাগবেনা, কারন চাষ করা শস্য থেকেই যে বীজ পাওয়া যাবে তাতেই সব গুনাগুন বজায় থাকবে। যেসব কৃষক দূরবর্তী অঞ্চলে বসবাস করেন যেখানে নিয়মিত বীজ সর্বরাহের গ্যারান্টি বীজ ব্যাবসায়ী কিংবা সরকার কেউই দিতে পারেন না তাদের জন্য এটা বেশ লাভজনক হতে পারে।
তবে যে সূদুরপ্রসারি সুবিধা কৃষকরা পাবেন তা হল, তারা পছন্দের যেকোন শস্যের জিনগত গুনাগুন স্থির ধরে রাখতে পারবেন অ্যাপোমিক্টিক লাইনের সাথে ক্রসিং এর মাধ্যমে। হঠাৎ যদি ক্ষেতে মোটাসোটা একটা ধানগাছ পেয়ে যান তখন এর ক্লোন তৈরি করতে চাইলে অ্যাপোমিক্টিক লাইনের সাথে ক্রস করলেই হবে।এর ফলে স্থানীয় কৃষি–পরিবেশের উপর তারা আরো বেশি নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন যা তত্বীয় ভাবে অধিক ফলন এবং শস্যের সামঞ্জস্য নিশ্চিত করে।
অ্যাপোমিক্সিস এবং বীজ ব্যাবসায়ীঃ
অ্যাপোমিক্সিসের ফলে কৃষকের আর বীজ কেনা লাগবেনা, তাহলে বীজ ব্যাবসায়ীরা কোথায় যাবে? অ্যাপোমিক্সিসের ফলে হাইব্রিড উৎপাদনের খরচ নাটকীয় ভাবে কমে যাবে, কেননা কৃষকের মত বীজ ব্যাবসায়ীরাও হাইব্রীড শস্য থেকে হাইব্রীড বীজ উৎপাদন করতে পারেন না। তাদের হাইব্রীডের প্যারেন্টাল লাইন লালন পালন করার জন্য, প্রতি বছর ক্রসিং করে বীজ উৎপাদনের জন্য যে স্থান, সময় এবং পরিশ্রম হয় অ্যাপোমিক্সিসের ফলে সেগুলোও কমে যাবে।
অ্যাপোমিক্সিসের ফলে উদ্ভিদ প্রজননের লক্ষ্য ও উদ্দশ্য পরিবর্তন হয়ে যাবে। এখন যেমন, সামগ্রিক পরিবেশে সমান দক্ষ জাত উদ্ভাবনে জোড় দেয়া হয়, তখন ক্ষুদ্র পরিবেশে অধিক দক্ষ জাতের দিকে নজর যাবে।
অ্যাপোমিক্সিস এবং পরিবেশঃ
আপনি সূর্য পশ্চিম দিক দিয়ে উঠাবেন আর পৃথিবীর গ্র্যাভিটি একটুও নাড়া খাবেনা তা তো না। গাছপালা প্রকৃতি এবং পরিবেশের অংশ। তাই অ্যাপোমিক্সিসের ব্যাপারে পরিবেশের অনেক কিছু মাইন্ড করার আছে। অ্যাপোমিক্সিসের সূচনার ফলে শস্য এবং তাদের নন–অ্যাপোমিক্টিক আত্নীয়দের জেনেটিক বৈচিত্র্য পরিবর্তন আসবে, এর ফলাফল কি হবে তা স্পষ্টভাবে অনুমান করা কঠিন। কারন, অ্যাপোমিক্সিস ব্যাপারটাই এখনো আমরা খুব ভালো বুঝিনা। তবে এর থেকে বলা যায়, জীববৈচিত্র্যের ওপর অ্যাপোমিক্সিসের প্রভাব পরস্পরবিরোধী। অ্যাপোমিক্সিস ছড়িয়ে এলে প্রথমেই যেটা চোখে ভাসে, প্রতিটা মাঠে একই রকম শস্য, তাদের ফলও দেখতে একই। এই ধরনের অবস্থায় শস্য কীট–পতংগ এবং রোগ–বালাইয়ের অধিক আক্রান্ত হয়। যার ফলে, এসব থেকে শস্যকে সুরক্ষা দিতে বিজ্ঞানীদের সবসময় দৌড়ের উপর থাকতে হবে। কেউ কেউ বলে থাকেন, প্রকৃতিতে অ্যাপোমিক্সিস এত কম দেখা যায় কারন এই সব নানান সমস্যা তৈরির মাধ্যমে অ্যাপোমিক্সিস প্রজাতির বিপুপ্তির ঘটায়।
অ্যাপোমিক্সিস প্রাকৃতিক নির্বাচন এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য বেশ ক্ষতির কারন হয়ে দাড়াবে। কেননা, অ্যাপোমিক্সিস জিনগত বিন্যাস স্থির করে দেয়, অযৌন প্রজনন উৎসাহিত করে, কখনো এমন জিনগত বিন্যাস সৃষ্টি করে যার ফলে উদ্ভিদ যৌন প্রজননের উপযোগীতা হারায়। এরা উদ্ভিদের বিবর্তনে বাধার সৃষ্টি করে। আকস্মিক পরিবেশগত পরিবর্তন এবং রোগ বা কীটের আক্রমনে প্রাকৃতিক সুরক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে কেননা জীবিত প্রকরন এবং জিনগত সঞ্চয় হয়ে যাবে সীমিত। কারণ প্রকৃতিতে যেই প্রজাতির যত বৈচিত্র্য সেই প্রজাতির টিকে থাকার ক্ষমতা তত বেশি।
অল্প কথায় এই হল অ্যাপোমিক্সিস। এর ভালো মন্দ দুই দিকই আছে। শেষ পর্যন্ত এর ফলাফল কি দাড়ায় তা সময়ই বলতে পারে। বিভিন্ন এগ্রোবায়োটেক জায়ান্টগুলো অ্যাপোমিক্সিস নিয়ে জোড়েসোরে গবেষনা চালাচ্ছে। যদিও অনেকেই একে খাদ্য নিরাপত্তা কিংবা কৃষকের চাহিদার চাইতে কর্পোরেট এজেন্ডা হিসেবে দেখতেই পছন্দ করেন। তবে যাই হোক, পেছনের বিজ্ঞানটা কিন্তু ঠিকই যথেষ্ট মজার।
তথ্যসূত্রঃ
1.George Acquaah,2012, Principles of plant Genetics and Breeding, 2nd edition, Wiley-Blackwell Publication[chapter 8].
2.GRAIN, 2001, Apomixis: the plant breeder’s dream.
3.Gianni Barcaccia and Emidio Albertini, 2013, Apomixis in plant reproduction: a novel perspective on an old dilemma, Plant Reproduction.
4.Ross A. Bicknell and Anna M. Koltunow, 2004, Understanding Apomixis: Recent Advances and Remaining Conundrums, The Plant Cell
বিটি বেগুন নিয়ে কিছু কথাবার্তা ইন্টারনেটে পাই। এটা কি সেরকম কিছু?
না, দুইটার উদ্দেশ্য ভিন্ন। বিটি বেগুনে এক প্রকার ব্যাক্টেরিয়ার জিন বেগুনে ঢুকানো হচ্ছে যাতে কিছু কিছু পোকার বিরুদ্ধে এই বেগুনে প্রতিরোধ তৈরি হচ্ছে।
আর অ্যাপোমিক্সিসে যাতে হাইব্রীড ফসলের বীজ থেকেই প্রোডাক্টিভ চারা তৈরি হয় তা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ।
কত মার্কের জন্য ছিল উত্তরটা? 😛
বোঝাই যাচ্ছে, আবুল হাসান স্যারের বোটানি বোর্ড বই খুব বেশি হলে আর আট-দশ বছর :brokenheart: (আমার না হাসান স্যারের) যদি না রুহশান স্যার বই লেখায় মনোনিবেশ করেন :yahooo:
‘আপনি সূর্য পশ্চিম দিক দিয়ে উঠাবেন আর পৃথিবীর গ্র্যাভিটি একটুও নাড়া খাবেনা তা তো না।’ =))
আর ফান-টান না। লেখা খুবই ভালো হইসে। চালিয়ে যাও। দু’একটা টাইপো আছে, ঠিক করে নিও 🙂
‘কত মার্কের জন্য ছিল উত্তরটা? ‘- বুঝিনাই,
হ্যা, সেদিন বাপ্পি ভাইয়াও বই লেখার ব্যাপারে নসিহত করলেন…আজকে তুমিও বলছ, Great minds think alike :p অবশ্য তোমারটা ফান ছিল 😀
ধন্যবাদ কমেন্টের জন্য।
তথ্যবহুল ও শিক্ষামূলক পোস্টের জন্য প্রথমেই ধন্যবাদ। একটু রেফারেন্সিং করলে মনে হয় আরও ভালো হত, তাহলে যারা আগ্রহী তারা রিসার্চ পেপার বা বইয়ের খোঁজ করে সেলফ স্টাডি করতে পারে।
বায়োলজি হেইট করি না যদিও, অনেক কিছু একটু বুঝতে কষ্ট হয়েছে, টার্মগুলো কঠিন। হয়তো প্রকৌশল ধারার লোক দেখেই এমন হইল। কিন্তু আইডিয়াটা মজা লেগেছে, আশা করি ক্ষতিকর দিকগুলো কাটিয়ে উঠবেন বিজ্ঞানীরা। তবে এখন পর্যন্ত কোন সফল বা বিফল এপ্লিকেশন কি করা হয়েছে এই পদ্ধতির নাকি গবেষণা স্টেজেই আছে ? কর্পোরেট এজেন্ডার ব্যাপারটাও একটু বুঝিয়ে বলবেন কি ?
আসলে এটা নিয়ে গুগলে সার্চ দিলে এমনিতেই অনেক আর্টিকেল পাওয়া যায়, তাই রেফারেন্সিং এর প্রয়োজন মনে করিনি। তবুও, আমি যেসব আর্টিকেল হালকা স্টাডি করেছি সেগুলো দিয়ে দিচ্ছি।
টার্মিনোলজির সহজ ব্যাখ্যা দিতে সচেষ্ট হব এর পর থেকে।
এখনো অর্থনৈতিক লাভজনক কোন প্রজাতিতে অ্যাপোমিক্সিস প্রয়োগ করা যায়নি। তাই বলা যায় গবেষনাগারেই আছে।
অ্যাপোমিক্সিস নিয়ে গবেষনায় উৎসাহ ও প্রচারনা চালাচ্ছে মূলত সিনজেন্টা, পাইওনিয়ার হাইব্রীড, লিমাগ্রেইনের মত কোম্পানি। যদিও কৃষকের লাভের কথা ব্যাপক ভাবে প্রচার করা হচ্ছে, অ্যাপোমিক্সিস সফলভাবে ব্যাবহার করা গেলে শিল্পক্ষেত্রে বিভিন্ন অর্গানিক সাবস্টেন্সের উৎস হিসেবে ইন্ডাস্ট্রির সাথে সমান তালে পাল্লা দিতে পারবে কৃষিক্ষেত্র। এই লাভটা কোম্পানিগুলোরই থাকবে। আর যদি লাইসেন্সিং এর ব্যাপারটা চলে আসে, তাহলে তো কৃষকের মুক্তি স্বপ্নই রয়ে যাচ্ছে।
ধন্যবাদ আপনার আগ্রহের জন্য।
ভাল্লাগছে লেখাটা 😀
আরও চাই 😀
পিচ্চিকালে মানে কলেজে থাকতে আমারও এমন একটা এটিচ্যুড ছিলো – আই হেট বায়োলজি”
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া,
চেষ্টা করব আরো লেখার।
আর পিচ্চিকালে তো…[কোলাকুলির ইমো হপে]
চমৎকার বিশ্লেষণমূলক পোস্ট! ভালো লেগেছে পড়ে, একটা গল্পের ছলে বলা দেখেই ছোটবেলার বায়োলোজির মতো ভয়ানক(!) লাগে নি!!
শুধু কিছু টাইপো ঠিক করে ফেললেই দুর্দান্ত লিখা আসবে একের পর এক, বুঝতেই পারছি!! 😀
অনেক ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য এবং কমেন্টের জন্য,
চেষ্টা করেছি সহজ ভাবে লেখার,
টাইপোর ব্যাপারে আরো সচেতনতা বাড়াবো, আবারো ধন্যবাদ।