১.
লরেন…লরেন? কোথায় যাচ্ছ? আজ বিকেলে ব্যাডমিন্টন খেলবে না?
—খেলব ইউশা। আমি আম্মুর সাথে একটু শপিং মলে যাচ্ছি। বিকেলের আগেই ফিরে আসবো।
–কিন্তু আমারা অনেক খেটে–খুঁটে ব্যাডমিন্টন কোর্ট বানালেও আমাদের তো এখনও অনেক কিছু কেনা বাকি। পুরনো চারটি ব্যাট দিয়ে কয়েকদিন খেলা হয়তো যাবে কিন্তু আমাদের তো এখনো নেট কেনা হয়নি; পুরনোটা যেভাবে ছিঁড়েছে তাতে করে নতুন একটা এবার কিনতেই হবে। ভালো ফেদার ছাড়াও তো খেলা জমবে না। ভেবেছিলাম রুহান, তুমি, আমি, জিমি আজ দুপুরে খেয়ে বের হব এগুলো কিনতে। চাঁদাতো তোলা আছে। এখন তো দেখছি, তুমি আমাদের সাথে থাকবে না, কিছুটা মন খারাপ গলায় ইউশা শেষ বাক্যটি বলে।
—মন খারাপ করো না ইউশা। জিমি আছে সাথে। ও কেনাকাটা ভালো করতে পারে। গতবছর দেখলে না? ঐ তো ব্যাট, ফেদার– সব তো ওই কিনে দিল। আমি দুঃখিত, আমি না গেলে আম্মুর সব কিছু নিয়ে আসতে কষ্ট হবে।
–না না, ঠিক আছে। তুমি যাও। আমরা কিনে আনতে পারব। তুমি আমাদের সাথে থাকলে আমাদের ভালো লাগতো, এই যা। তবে সেটা অ্যান্টিকে সাহায্য করার চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ না। তবে বিকেলে মাঠে আসতে দেরী করো না কিন্তু…
–আমি ঠিক সময়মত মাঠে আসবো। মলে যাওয়ার সময় হয়ে এল। গুড বাই।
-সাবধানে যেও, গুড বাই।
২.
–এটা তুমি কি করলে জিমি? তুমি কি মনে করে সবগুলো টাকা খরচ করে ফেললে? ওগুলো কি সব তোমার টাকা ছিল? মাথা নিচু করে থাকবে না, কথা বল? রাগান্বিত গলায় ইউশা জিমিকে ধমক দেয়।
—আমি কি সেটা ইচ্ছে করে করেছি নাকি। আর শুধু আমাকে একাই দোষ দিচ্ছ কেন? আমার সাথে রুহান আর উইলিও ছিল। তিনজন মিলেই পুরো টাকাটা খরচ করেছে। রুহান, উইলি তোমরা কিছু বলছ না কেন? বিরক্ত চোখে রুহানের দিকে তাকায় জিমি।
রুহানের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকায় ইউশা।
—আসলে…আসলে…সত্যি বলতে…আমি…কাঁচুমাচু করতে থাকে রুহান।
–তুমি না খুব শান্ত ছেলে রুহান। কিভাবে এটা করলে? আমরা এখন খেলব কি করে? কত কষ্ট করে আমরা টাকাগুলো জমিয়েছি, সব ভুলে কিভাবে পারলে তোমরা? এখন আমি বাকি সবাইকে কি বলব, প্রায় কেঁদেই ফেলছিল ইউশা।
–দুঃখিত ইউশা। আসলে আমিও লটারি ধরতে নিষেধ করেছিলাম। উইলিই আমাদের জোর করল, উইলির দিকে তাকায় রুহান।
উইলি নির্বিকার ধরণের ছেলে। এত কিছু হয়ে যাচ্ছে তবুও কেমন নির্বিকার ভঙ্গিতে এতক্ষণ বসে ছিল।শান্ত গলায় বলল, এখন সব দোষ আমার ঘাড়ে চাপাচ্ছ। আমি যখন লটারির কথা বলেছিলাম, তোমাদের যদি এত আপত্তিই থাকতো, তাহলে তখন আমাকে নিষেধ করলে না কেন? তখন তো ঠিক সায় দিয়েছিলে।যত সব হিপক্রিটের দল… রাগে কটমট করতে থাকে উইলি।
-আচ্ছা, আমি একটা কথা বলি। যা হওয়ার হয়েছে। সত্যি বলতে, আমরা চেয়েছিলাম লটারিতে জিতে টাকা তিন-চারগুণ করতে, যাতে করে ভালো কয়েকটা ব্যাটও কিনতে পারি। কিন্তু সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল। আমরা তিনজনই খুব দুঃখিত। এমনটা করা উচিৎ হয় নি। মাটির দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলে জিমি। সত্যিই সে তার ভুল বুঝতে পারে।
এতক্ষণ সবার কথা চুপ করে শুনে যাচ্ছিল ইউশা। এবার বলে, ‘ঠিক আছে। ভুল তো করেই ফেলেছ। এখন আর কিছু বলার নেই। বলেই বা কি হবে? মাঝখান দিয়ে এবারের শীতে আমাদের ব্যাডমিন্টন খেলাটা মাটি হল আর কি।’ হতাশ চোখে অন্যদের দিকে তাকায় ইউশা।
-চিন্তা করো না ইউশা। কিছু একটা হবে। কিছু না হলে, আমি আমার সাইকেলটা বেঁচে দেব, সান্ত্বনার স্বরে জিমি বলে কথাগুল।
–আমি না’হয় নতুন কোন সুয়েটার এবারের শীতে নেব না। পুরনো দুইটা আছে। ওতেই চলবে, উৎসাহী কণ্ঠে বলে উঠে রুহান।
-যদিও আমাকে জিমি আর রুহান সাপোর্ট দিয়েছে তারপরও ভুলটা মূলত হয়েছে আমার জন্যই। এত কিছু করার দরকার নেই। আমি গত বছর ইন্টারস্কুল দৌড় প্রতিযোগিতায় ফার্স্ট হয়ে যে মেডেলটা পেয়েছি, সেটা বেঁচে দিলেই চলবে। স্পোর্টস টিচার বলেছিল, ওটা অনেক দামি মেডেল। উইলি সবাইকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল কথাগুলো বলে।
-আরেহ! আমাদের উইলি এত ভালো হল কবে থেকে? ইউশা, জিমি, রুহান তিনজনই একত্রে বলে উঠে। সবাই একসাথে হেসে ওঠে।
–আমি জন্ম থেকেই ভালো ছেলে। তোমাদের সেভাবে খেয়াল কর নি, তাই বুঝে উঠতে পারো নি। যাহোক, আজ তো জানলে। মুখে বাতাস জমিয়ে, বুক ফুলানোর চেষ্টা করতে থাকে উইলি।
ঠিক আছে। সময় এলে বোঝা যাবে, তুমি কতটা সাধু ছেলে। উইলির দিকে তাকিয়ে চোখ মারে ইউশা।
এখন কাজের কথায় আসি। যদিও আজ খেলা হবে না তারপরও আমরা বিকেলে ঠিক সময়মতই মাঠে থাকবো। সবাইকে নিয়েই আলোচনা করতে হবে। সময় পেলে কোর্টটা আরেকটু পরিষ্কার করে নেব। মাঝখানের ঘাসগুলোও উঠিয়ে ফেলা যেতে পারে।
৩.
–দেখেছ ইউশা? ব্ল্যাকিগুলি আমাদের কোর্টে দাড়িয়ে খেলছে। এদের লজ্জাও নেই। গত শীতে এরা এসেছিল না একবার? তখন এমন অপমান করে দিলাম তারপরও এবার খেলতে এল কোন মুখে? রাগে ফুঁসতে থাকে জিমি।
–ব্ল্যাকিরা এমনিতেই কিছুটা নির্লজ্জ ধরণের হয়ে থাকে। এরা দেখছি আরো বেশি, রুহান বলছিল কথাগুলো।
–চল, আজকে এদের এমন সাইজ করব না, কোর্টের ১ কিলোমিটারের মধ্যে আসার আর সাহস পাবে না, রাগে কটমট করতে থাকে উইলি।
এতক্ষণ চুপ থেকে এবার প্রথম কথা বলে ইউশা। সে এমনিতে খুব নরম মনের মানুষ। শান্ত গলায় বলে, তোমরা এত রাগছ কেন? আগে গিয়ে দেখি–ই না। আর আমরা যেহেতু খেলছি না ওরা খেললে সমস্যা কি? তোমরা অল্পতেই রেগে যাও…
আজকেই ওদের মেরেই ফেলব…
………………………………………
………………………………………
–বাবা, কেমন আছো?
–ভালো আছি আম্মু। তুমি কেমন আছো? টাই খুলতে খুলতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসে ইউশা।
–আমি একটা ভুল করে ফেলেছি আব্বু। তোমাকে না জানিয়ে আমি তোমার ডায়েরীটা পড়েছি।
–ঠিক আছে আম্মু। কোন ব্যাপার না। আমার ছোটবেলার ডায়েরী। ছোটবেলায় একবার আব্বু কিনে দিয়েছিলেন। ডায়েরী হাতে পেয়ে ভেবেছিলাম, দু’দিনেই সবটা লিখে ফেলব। ক্লাস টিচার তো আর আমার ডায়েরী পড়ে মার্কিং করবে না, যা ইচ্ছে হয় লিখবো। কিন্তু আমি কতোটুকু লিখনেওয়ালা তা তুমি নিজ চোখেই দেখেছ। অনেকগুলো পৃষ্ঠাই ব্ল্যাংক রয়ে গেছে। কিছুই তেমন লেখা হয় নি।
–হুম। তোমার লেখালেখির হাত ভালো না। তোমার চেয়ে টেরি ভালো লিখে। দারুণ কবিতাও আবৃত্তি করে। তোমার ডায়েরী লেখার ধরণটাও কেমন যেন। গল্প–গল্প লাগে আবার লাগে না, মনে হয় শুধুই কিছু কথোপকথন।
–হুম। তুমি বড় হয়ে ভালো টিচার হতে পারবে, বলে মিষ্টি করে হাসে ইউশা।
–তাই বুঝি। আচ্ছা, আব্বু একটা লেখা অসম্পূর্ণ দেখলাম। ঐ যে তোমরা ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য চাঁদা উঠালেও শেষ পর্যন্ত খেলতে পারলে না, উইলি আঙ্কেলরা লটারীতে টাকা খরচ করে ফেলেছিলে বলে। মনে পড়েছে?
–হুম পড়েছে। বাকিটা লিখব–লিখব করে আর লেখা হয়ে উঠেনি।
–আব্বু, আমাকে শোনাবে বাকিটা?
–কেন শোনাবো না? সত্যি বলতে, আমি অনেক আগেই চিন্তা করে রেখেছিলাম, একদিন তোমাকে গল্প টা শোনাবো।যাক ভালো, তুমি অনেকটা পড়েই ফেলেছ।আমি কিছুটা টায়ার্ড। ফ্রেশ হয়ে, রাতের ডিনার শেষ করেই গল্পটা শুনি, কি বল?
–ঠিক আছে আব্বু, বাধ্য মেয়ের মত মাথা নেড়ে মিষ্টি করে হাসে অ্যানা।
আমি–জিমি–উইলি–রুহান–লরেন সহ আর কয়েকজন তখন মাঠে আমাদের কোর্টের পাশে গিয়ে দাঁড়াই। তোমার উইলি আঙ্কেলকে এখন যতটা শান্ত দেখছ, সে ছেলেবেলায় কিন্তু ছিল ঠিক তার উল্টো। খুব ডানপিটে আর একরোখা স্বভাবের ছিল।রাগও ছিল আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। রাগে কটমট করছিল ও। জিমিও কম বদরাগী ছিল। আমাদের দেখে কালো ছেলেগুলি কিছুটা ভয় পেয়ে গিয়েছিল। মোটামুটি উইলি–জিমি সহ আরো কয়েকজন যখন ওদের মারবে বলে প্রায় ঠিক করে ফেলেছিল। আমরা ভেবেছিলাম ওরাও নিশ্চয়ই ডিফেন্ড করার চেষ্টা করবে, কারণ ওরাও সংখ্যায় আমাদের সমানই ছিল প্রায়। তখন খুব একটা অদ্ভুত জিনিস ঘটে, যার জন্য আমরা মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। ওরা দু’জন ওদের ব্যাটগুলো আর ফেদারটা নিয়ে আমাদের দিকে আসে। আমাদের সামনে এসে বলে, ‘এগুলো রাখো’ বলে ওরা ওদের ব্যাটগুলো আর ফেদারটা আমাদের দিকে এগিয়ে দেয়।এখন তোমরা তোমাদের কোর্টে খেলো আমরা যাই।’ বলে ওরা চলা যায়।
জানো অ্যানি, সেদিন আমরা ওদের ফিরিয়ে আনতে পারি নি। গত বছর আমরা যা করেছিলাম সেই লজ্জায়, অনুশুচোনায় আমাদের মুখ দিয়ে আর শব্দ বের হচ্ছিল না। আমরা ওদের দেয়া ব্যাট হাতে ওদের চলে যাওয়া দেখছিলাম বলতে বলতে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে ইউশার।
ওদের সাথে কি তোমরা বড় কোন অন্যায় করেছিলে বাবা? জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে অ্যানা তাকিয়ে থাকে তার বাবার দিকে।
বলছি… তখনকার সময় ব্ল্যাকিদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী ভালো ছিল না মোটেও। সবাই ঘৃণা করত। ওরা অন্য স্কুলে পড়ত। বাবা- মা’রা তাদের সন্তান্দের ব্ল্যাকিদের সাথে খেলতে নিষেধ করত। গরীব ব্ল্যাকিরা একসাথে একটা এলাকায় থাকত। যাদের অবস্থা ভালো ছিল তারা সিটিতে থাকত। যাহোক, আমাদের টাউনের পাশেই গিঞ্জিমত একটা এলাকায় দরিদ্র কিছু ব্ল্যাকিরা একসাথে থাকতো। এক বিকেলে আমরা ব্যাডমিন্টন খেলছিলাম। তখন আমাদের বয়েসী কয়েকজন ব্ল্যাকি আমাদের কোর্টের সামনে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিল। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ওরা খুব গরিব এবং কিছুটা শঙ্কা আর ভয় ছিল ওদের মুখে। আমরা খেলা থামিয়ে দেই। উইলি বলে, ‘তোমরা খেলতে চাও?’ মুহূর্তেই যেন সব ভয় কেটে যায়। ওরা হেসে মাথা নাড়ে।
তবে এমনি এমনি যে খেলায় নেয়া যাবে না। একটা শর্ত মানলে তোমাদের খেলতে নেব।
‘কি শর্ত?’ আবার যেন লুকিয়ে থাকা ভয়টা চেহারায় ফুঁটে ওঠে।
আমার হাতে ব্যাটটা দিয়ে হেসে সামনে এগিয়ে যায় উইলি। নেটটা খুলে ফেলে। তারপর ওদের দিকে তাকিয়ে বলে, আমি নেটটা খুলে নিয়েছি। তোমরা কিছুক্ষণের জন্য আমাদের নেট হয়ে যাও।বুঝনি? বেশ, আবার বলছি। তোমরা এই মাঝের লাইনে দাঁড়িয়ে যাও যেখানে নেট টাঙানো থাকে। যতক্ষণ না পর্যন্ত একটা গেইম ফুল কমপ্লিট হয় তোমরা দাঁড়িয়ে থাকবে, নেট যেমন থাকে। যদি ফেদারের আঘতে রক্তও চলে আসে তারপরও নড়তে পারবে না। রাজি থাকলে দাঁড়িয়ে যাও? হাসতে থাকে উইলি
উইলির প্রস্তাবে যেন আমাদের মধ্যের অনেক বন্ধুই খুব উৎসাহ বোধ করতে থাকে। আমি ব্ল্যাকিদের পছন্দ করতাম না কিন্তু যে অমানবিক খেলার প্রস্তাব উইলি ওদের দিয়েছিল তাকে মেনে নিতে পারছিলাম না। আমি উইলিকে চাপা স্বরে বলি, তুমি কি পাগল হয়ে গেছ উইলি? ওদের চলে যেতে বললে ওরা এমনিই চলে যেত।
-আহা, দেখই না, কি হয়?
-না। এটা করা ঠিক হবে না। তুমি ওদের চলে যেতে বল।
-ওরা এমনিতেও রাজি হবে না। রাজি হলে, এতক্ষণে হয়ে যেত। ভীতুর ডিম। খেলতে চায় কিন্তু একটু কষ্ট করতে চায় না।
আমি আর উইলি যখন কথা খেলা নিয়ে কথা কাটাকাটি করছি তখন ওদের একজন এসে বলে ওরা রাজি। তারপর ওরা ছয়জন এসে কোর্টের মাঝে দাঁড়িয়ে এক্তা একটা প্রাচীরের মত করে; একটা ব্যাডমিন্টন নেট। ওদের দেখে সবাই একসাথে হাততালি দিয়ে ওঠে।
আমাকে অনেক ডেকেছিল উইলি। আমি মাঠে নামতে পারি নি। খেলেছিল উইলি, জিমি, রুহান আর লরেন। ব্যাটের একেকটা আঘাতে যখন ফেদারটা ওদের একেকজনকে যখন আঘাত করছিল মাঠের সবাই বিকট চিৎকার দিয়ে উঠছিল। একজন মানুষকে আঘাত করার দৃশ্য দেখে এত আনন্দ থাকতে পারে? সেদিন ছোট্ট আমি তার উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলাম না। জিমির সজোরে আঘাত করা ফেদারটা যখন একটা কালো ছেলের ঠোঁটে লেগে রক্ত ঝরায় তখন হাত-তালি সবচেয়ে লম্বা সময় জুড়ে ছিল। অতি উৎসাহী কয়েকজন মাঠে নেমে জিমিকে ক্যান্ডি উপহার দিয়েছিল। কয়েকজন মাঠ থেকে বলছিল, ‘দারুণ জিমি! ঐ টেকোটার টাকে লাগাতে পারলে একটা আস্ত পিজ্জা পাবে। চমৎকার উইলি! ঐ নাক মোটাটার নাক দিয়ে রক্ত বের করতে চাইলে, এক সপ্তাহের জন্য আমার সাইকেলটা তোমার। সাবাশ…সাবাশ…
আমি আর শুনতে পারছিলাম না। আমি দৌড়ে বাসায় চলে আসি।
অঝোরে কাঁদছিল ইউশা।
-কেঁদো না বাবা। বাবার পিঠে হাত রাখে অ্যানা।
-আমি সেদিন ঐ পৈশাচিক বর্বরতাকে নিজ চোখে দখেছি কিন্তু কিছু করতে পারি নি। আজও আমাকে তা পোড়ায়। চোখ মুছতে-মুছতে ধরা গলায় বলে ইউশা।
-বাবা, ক্যারল আঙ্কেল কি সেই ছ-জনের একজন?
-হ্যাঁ মা। ওরা আর খেলে নি। গেইম শেষ হওয়ার পর ওরা নিঃশব্দে চলে গিয়েছিল। তার পরের বছরও আমাদের ব্যাট আর কক দিয়ে ওরা নিঃশব্দে চলে গিয়েছিল আমাদের নিদারুণ অনুশুচনায় ডুবিয়ে। উইলি খুব কেঁদেছিল সেদিন। যেই ছেলেটাকে ও খুব আঘাত করেছিল সেই ব্যাটগুলো উইলির হাতে তুলে দেয়।
আমরা তারপর থেকে সবাই একসাথে খেলেছি। ওদের সাহায্য করেছি।আমারা সবাই খুব ভালো বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম। ক্যারল-জিম ওদের সবাইকে নিয়ে একসাথে ক্রিস্টমাসে একসাথে মজা করতাম। কিন্তু ঐ দিনটার কথা ভাবলে আজও খুব খারাপ লাগে। নিজেকে অপরাধী মনে হয়।
মন খারাপ করো না বাবা। তোমরা ভুল করে ভুল বুঝতে পেরেছিলে। ওদেরকে বন্ধু করে নিয়েছিলে। এই বোধটাই অনেক বড় বাবা। ভুল করে, ভুল বুঝতে পারার বোধটুকুই সবাই যদি লালন করত তাহলে অনেক কিছুই বদলে যেত।
অনেক রাত হয়ে গেছে। চল ঘুমুতে যাই।
অ্যানার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসে ইউশা। মেয়েটাকে হুট করে আজ অনেক বড় লাগছে। অ্যানার মা বেঁচে থাকলে তারও নিশ্চয়ই এমন মনে হত।
[যদিও উপরের লেখার মূলভাব, ঘটনা পরিক্রমার সাথে নিচের ছবিটা যায় না। পছন্দের ছবি, নতুন করে, একটু ভিন্নভাবে ভাববার ছবি, তাই দিলাম]
লেখা ভাল ছিলো! 😀
😀
নামটা কেমন ছিল?
ভুল করে, ভুল বুঝতে পারার বোধটুকুই সবাই যদি লালন করত তাহলে অনেক কিছুই বদলে যেত
সেটাই ভুল করে অনুতপ্ত হয়ে সেই ভুল শোধরানোটা অনেক বড় একটা বিষয় সবাই পারে না বলেই ভুলগুলো ভুলোতেই রয়ে যায়।
ভালো লিখা 🙂
‘ভুলোতেই’ না বলে ‘ভুল-ই’ বেশি একটু সহজ শোনায় না? 😛
নোটিফিকেশান দিছিলাম, পড়ছ। 😛
গুড! :love:
শোনায় নাকি ?? 😛
😛
কিচ্ছু কমুনা
কিছু একটা কইলে তো দিলে শান্তি লাগে, কিছু একটা কও? 😛
আবেগে কাইন্দালছি :p
এই গল্পটা কমিক আকারে সাজালে কেমন হত ভাবছি!
ভাল্লাগছে
এইটা আমিও ভেবেছিলাম। 😀
সাজানো সম্ভব মনে হয়। মাঝখানে একটুখানি শাফল করে নিলেই হবে। 🙂
ভাবতে হবে দেখছি, :thinking: :thinking:
চমৎকার হৃদয়!!
গল্পের থিম খুবই ভালো ছিলো! ছোটদের নিয়ে লেখালেখির চেষ্টাটাও প্রশংসার দাবীদার! :love:
বাচ্চাদের ব্যাডমিন্টন কোর্টে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিলাম। তখন ঐ বোল্ড লাইনগুলার চিন্তা মাথায় আসে, তাই লেখার চেষ্টা করলাম 🙂
ইদানিং শিশুদের নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে, ভাবছিও। আবার এটা ভাবলে কেমন যেন লাগে- একদা প্রেমের গল্প আর কবিতা আমার সাইনোভিয়াল অস্থি সন্ধিতেও মিশে ছিল…এরা এখন কই থাকে? 🙁
……………………………………………………………
:love: :love: :love:
অনেক ভালো লেগেছে। এইবার বইমেলায় হৃদয় ফিচারিং শিশুতোষ বই পাচ্ছি নাকি ? 😀
বইমেলায় কিছু পাচ্ছেন না 🙂
একটা লেখা লম্বা করতে পারি না তো; অল্পতেই শেষ হয়ে যায়, শেষ টানতে হয়…
দু’আ রাইখেন আপু 🙂 :love:
এই অন্য জাতের মানুষগুলোকে সহ্য করার ব্যাপারটায় আমি আজকাল আর কেন যেন আশাবাদী না । মানুষ মাত্রই ”অন্যরকম”কে সহ্য করে না, যখন তার দল ভারী থাকে, যেই দেশেই হোক । সাদা চামড়ার মানুষদের মধ্যে আজকালও এই ব্যাপারগুলো আছে । ব্ল্যাক হওয়াতো দূরের কথা, এশিয়ানদের সাথেও এদের আচরণ খুবই ভয়ানক । 🙁