ঘটনাবহুল একটি বছর পার করল প্রযুক্তি বিশ্ব। অনেক নতুন উদ্ভাবন ও চমকের বছর ছিল ২০১৩।নিত্য নতুন প্রণ্য ও প্রযুক্তির দেখা যেমন মিলেছে সদ্য বিদায়ী বছরে, তেমনি বেদনায় চোখও ভারি হয়েছে প্রযুক্তিপ্রেমীদের। প্রযুক্তি বিশ্বকে অনেক উপহার দিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন বরেণ্য সব ব্যক্তিরা। পাঠকদের কাছে তাদের অসামাণ্য কীর্তিগাথার যৎসামান্য তুলে ধরতে এ প্রতিবেদন।
আরন সোয়ার্জ (১৯৮৬-২০১৩):
ইন্টারনেটের সক্রিয় সদস্য এবং দক্ষ প্রোগামার এরন সোয়ার্জ মাত্র ১৪ বছর বয়সে আরএসএস ফিডের প্রচলনের মূলক নায়কদের একজন। বিশ্বজুড়ে বর্তমানে জনপ্রিয় এ ফিডের স্পেসিফিকেশনের সহ-লেখক ছিলেন তিনি। এর পর সোয়ার্জ উন্নয়ন ঘটান সামাজিক নিউজ সাইট রেডিটের। তিনি ডিমান্ড প্রোগ্রেস ক্যাম্পেইন গ্রুপের একজন প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। সংস্থাটি মুক্ত ইন্টারনেট নিয়ে লবি করে থাকে। ওপেন লাইব্রেরি, ইনফোগ্যামির মতো সব অনলাইন প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সোয়ার্জ ২০১০ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইথিকস-এর সদস্য হন। সদ্য বিগত বছরের ১১ জানুয়ারী ২৬ বছর বয়সে এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যান না ফেরার দেশে।
ইভন্নি ব্রিল (১৯২৪-২০১৩):
১৯৭০ সালে কক্ষপথের বাইরে উপগ্রহ রাখার পরিকল্পনা তৈরি করেন এ কানাডিয়ান বিজ্ঞানী। দীর্ঘদিন থেকে যুক্ত ছিলেন নাসার অনেকগুলো প্রকল্পে। মহাকশ গবেষণায় অবদান রাখায় ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় প্রযুক্তি এবং ইনোভেশন পদক পান। ২০১৩ সালের ২৭ মার্চ স্তন ক্যান্সার সংক্রান্ত জটিলতায় মারা যান।
জ্যাক হাকার (১৯২৬-২০১৩):
জ্যাক হাকারকে সবাই চেনে রিমুভেবল ডিস্ক স্টোরেজের জনক হিসাবে। তিনি ৩৫ বছর আইবিএমে চাকুরী করেন। ১৯৮৭ সালে চাকুরি থেকে অবসর নেন। তিনি আইবিএমের ১৩১১ ডিস্ক স্টোরেজ প্রজেক্টের নেতৃত্ব দেন ১৯৬২ সালে। তিনি ২০১৩ সালে ২৭ এপ্রিল নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন।
রে হ্যারিহাউসিন (১৯২০-২০১৩):
রয় হ্যারিহাউসিন মুভিতে স্পেশাল ইফেক্ট দেওয়ার ধারণার মূল উদ্ভাবক। তার ধারণার ওপর ভিত্তি করে বর্তমানে চলচ্চিত্রে স্পেশাল ইফেক্ট বাস্তব রূপ পায়। একাধারে লেখক, প্রযোজক ও স্টপ মোশন অ্যানিমেশনের অবিতর্কিত রাজা ছিলেন হ্যারিহাউসিন। তিনি ডাইনামেশন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন। ২০১৩ সালের ৭মে মারা যান তিনি।
অমর বোস (১৯২৯-২০১৩):
ভারতীয় বংশোদ্ভূত অমর বোস ইলেকট্রিক্যাল বিষয়ে ব্যাচেলর এবং ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন এমআইটি থেকে। অডিও ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোস প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৬৪ সালে। প্রতিষ্ঠানটি স্পিকার, হেডফোনসহ বিভিন্ন অডিও ডিভাইস নির্মাণে শীর্ষ অবস্থানে আছে। ২০১৩ সালে ১২ জুলাই নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করে।
রে ডলবি (১৯৩৩-২০১৩):
সাউন্ড সিস্টেমের জগতের পথপ্রদর্শক রে ডলবি উদ্ভাবিত ডলবি সাউন্ডের কথা চলচ্চিত্রে ব্যাপক পরিচিত শব্দ। শব্দ দুষণমুক্ত অডিও রেকর্ডিংয়ের অগ্রদূত ও ডলবি ল্যাবরেটরিসের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। শব্দ, ভিডিও, চলচ্চিত্রের কণ্ঠস্বর প্রযুক্তি, হোম থিয়েটার, পিসি, মোবাইল ফোন, গেম—সব ক্ষেত্রেই ডলবি প্রযুক্তির ছোঁয়া রয়েছে। ডলবি যুক্তরাষ্ট্রের পোর্টল্যান্ডের আরগনে জন্মগ্রহণ করেন এবং সানফ্রান্সিসকোতে বড় হন। ছাত্রাবস্থায়ে তিনি ভিডিও রেকর্ডিংয়ের উন্নয়নে কাজ শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে লন্ডনে ডলবি ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৯ সালে চলচ্চিত্রে তার অবদানের জন্য অস্কার পান। ১৯৯৫ সালে তিনি গ্র্যামি এবং ১৯৮৯ ও ২০০৫ সালে এমি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন। ১৩ সেপ্টেম্বর রে ডলবিকে হারায় বিশ্ব।
হিরোশি ইয়ামাউছি (১৯২৭-২০১৩):
ভিডিও গেইম রাজত্বের একাধিপতি ছিলেন জাপানের এ ব্যবসায়ি । তার নিরন্তর প্রচেষ্টায় ভিডিও গেইম নিত্য নতুন প্রযুক্তিগত উন্নয়ন লাভ করেছে। ভিন্নতা এসেছে গেইমে। জাপানের ইলেকট্রনিক কোম্পানি নিটেনডুর চেয়ারম্যান ছিলেন ১৯৪২ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত এটি ভিডিও গেইম সামাজ্যে রাজত্ব করছে। ২০১৩ সালের এপ্রিলের পরিসংখ্যানে ইয়ামাউছি ২.১ বিলিয়ন ডলারের মালিক ছিলেন। জাপানের ১৩তম ধনী ব্যক্তি এবং বিশ্বের ৪৯১তম ধনী ব্যক্তি ছিলেন তিনি। সদ্য বিদায়ী বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর তার মারা যাওয়ার সংবাদের পর ইন্টারনেট জগতে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান কোটি কোটি প্রযুক্তিপ্রেমী।
টম ক্ল্যান্সি (১৯৪৭-২০১৩):
বেস্ট সেলার থ্রিলার ঔপন্যাসিক এবং লেখক হলেও টম ক্ল্যান্সিকে প্রযুক্তি বিশ্ব মনে রাখবে ভিডিও গেইমে তার অবদানের জন্য। উপন্যাসকে ভিডিও গেইমে রূপান্তরে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন তিনি। গেইম জগতের একঘেয়েমি মুক্তি পায় তার কল্যাণে। তার রেইনবো সিক্স, ঘোস্ট রেকন ব্যাপক সাড়া জাগায়। ভিডিও গেইম কোম্পানি রেড স্টোম এন্টারটেইনমেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন ক্ল্যান্সি। ইউবিসফট ২০০০ সালে কোম্পানিটি কিনে নেয় এবং পরবর্তীতে এর নাম রাখা হয় ইউবিসফট রেড স্টোম। ক্ল্যান্সির প্রথম প্রকাশিত ‘দ্য হান্ট ফর রেড অক্টোবর’ উপন্যাস দিয়েই নিজের জাত চিনিয়েছিলেন। ৫০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত বইটি। পরে ১৯৯০ সালে সফল চলচ্চিত্র নির্মাণ হয় ওই উপন্যাসের। সদ্য বিদায়ী বছরের ১ অক্টোবর ৬৬ বছর বয়সে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। Douglas
ডগলাস অ্যাঙ্গেলবার্ট (১৯২৫-২০১৩):
কম্পিউটার মাউসের জনক ডগলাস ১৯২৫ সালের ৩০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ওরিগন রাজ্যের পোর্টল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। ওরিগন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে তড়িৎ প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে কাজ করার সময় কম্পিউটারের জন্য বিশ্বের প্রথম মাউস তৈরি করেন তিনি। মাউসটি তৈরি হয়েছিল একটি বক্সের মধ্যে। এর সঙ্গে যুক্ত ছিল বিশেষ চাকা, যার মাধ্যমে মাউসটি ব্যবহৃত হতো। আকারেও সেই মাউসটি ছিল বর্তমান মাউসগুলোর তুলনায় বড়। মাউস ছাড়াও ক্যালিফোর্নিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটে ডগলাস ওয়ার্ড প্রসেসিং, ভিডিও টেলিসম্মেলন নিয়েও কাজ করেছিলেন। এমআইটির ন্যাশনাল মেডেল অব টেকনোলজিসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতেছেন ডগলাস। ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার কম্পিউটার হিস্ট্রি জাদুঘরের ফেলো ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি একজন রাডার কারিগর হিসেবেও কাজ করেন। ডগলাস ৩ জুলাই ২০১৩ সালে মারা যান।
পূর্ব প্রকাশ টেক শহর.কম
সবগুলো পড়লাম। কিন্তু, সবচেয়ে বেশী দুঃখ পেলাম অ্যারন সোয়ার্জের কথা মনে পড়ে। সরকারী আইনের জটিলতায় একজন প্রতিভাবান মানুষকে হারালো বিশ্ব। যার মৃত্যুর পর, ইন্টারনেট জালিয়াতি বিষয়ক আইন শিথিল করার জন্য বেশ তোড়জোড় দেখেছি। কিন্তু, ততদিনে মানুষটা আর নেই।
হুম।ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।আর একটা তথ্য জানাই অ্যারন সোয়ার্জ কিন্তু আত্নহত্যা করে মারা যায় 🙁
অন্যদেরটা শুনেছিলাম, টম ক্ল্যান্সির মৃত্যুর খবরটা আপনার লেখা থেকে জানলাম।
ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।
মন্তব্য করা জন্য ধন্যবাদ 🙂 শুভ কামনা ।ভাল থাকুন
অনেকের কথাই জানতাম না তোমার লিখা পড়েই জানতে পারলাম
হুম।ধন্যবাদ মন্তব্য করা জন্য 🙂
জানতাম নাহ কিছুই ! ভালো লাগল জেনে।
কিছু টাইপো আর ফরম্যাটিং এ একটু সমস্যা আছে। আশা করি ঠিক করে নেবেন। শুভকামনা।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
টাইপো এবং ফরম্যাটিং এ কি সমস্যা যদি একটু ধরিয়ে দিতেন।তাহলে ভাল হত।ভুলগুলো ঠিক করে নিতাম।
“ইন্টারনেটের সক্রিয় সদস্য এবং দক্ষ প্রোগামার এরন সোয়ার্জ মাত্র ১৪ বছর বয়সে আরএসএস ফিডের প্রচলনের মূলক নায়কদের একজন। ”
মূল নায়ক। আর এমনিতে নামগুলো বোল্ড বা আন্ডারলাইন করে দিলে সুবিধা হয় পড়তে। 🙂
ধন্যবাদ আপু।পরবর্তীতে নামগুলো আন্ডারলাইন করে দিব।:)
আর ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য ডবল ধন্যবাদ 🙂
খুবি সুন্দর এবং তথ্য বহুল একটি লিখা। ভালো লাগলো । এত কষ্ট করে আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ । অনেক কিছু ই জানতাম না , জানা হল । ভালো থাকবেন 🙂
আপনাকেও ধন্যবাদ।কষ্ট করে পড়ে এবং মন্তব্য দেয়ার জন্য