একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন হেরে না যাওয়া মানুষ…

ঠিকানা মিলিয়ে দেখলাম, সাদেক খান রোড, রায়েরবাজার। একটা দোতলা বাসার মতো, আলাদা আলাদা করে ঘর করা, সারিবাঁধা দুপাশে। মাঝখান দিয়ে সরু প্যাসেজ। একজন মহিলা মাঝখানের প্যাসেজে কাপড় মেলছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “একজন চাচা আছেন এখানে? ধানমণ্ডি ৮ নাম্বারে চা বিক্রি করেন?  উনার একটা হাতে একটু অসুবিধা আছে।” উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, “এমন তো কেউ এখানে থাকে না, একজন আছে, যে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করে। তার দুইটা হাতই ভালো।” আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। উনার ঠিকানা যদি ভুল হয় তো আমি আবার কোথায় পাবো উনাকে। হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি এলো। মোবাইলে ছবিটা ছিলো। বের করে উনাকে দেখিয়ে বললাম, “এই যে উনি। চিনেন?”

উনি ছবি দেখেই বললেন, “ওহ, উনি! ঐ পাশের বাড়িতে থাকেন।” জানে পানি ফিরে এলো! ঐ পাশের বাড়ীটাও দেখলাম একই ছাঁচে বানানো প্রায়। এমনকি বাসার ঠিকানাটাও একই। একজনকে জিজ্ঞেস করে দোতলায় উঠে এলাম। প্রথম ঘরটা পার হয়ে দ্বিতীয় ঘরের বাইরে একজন মহিলাকে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, “চাচী, এইখানে একজন চাচা থাকেন? চা বিক্রি…”

উনি স্মিত হেসে বললেন, “এই যে, আপনার চাচা ঘরেই আছেন। আসেন।“

ঘরে ঢুকে দেখলাম উনি একটা লেপের নীচে শুয়ে আছেন। আমি ঢুকতেই উনি উঠে বসার চেষ্টা করতে করতে জড়ানো স্বরে বললেন, “আজকে সারাদিন খুব ঠাণ্ডা আঙ্কেল। সকালে নাস্তা করে আর বের হই নাই কম্বল থেকে! বসেন।”

৮ ফিট বাই ১০ ফিটের একটা ঘর। এক পাশে খাট, তার পাশে একটা টেবিল। একটা কাপবোর্ড। একপাশে রান্নাবান্নার হাড়ি-পাতিল।

প্রায় ঘন্টা দেড়েক ছিলাম উনার ঘরে। অনেক কিছু নিয়ে কথা হলো উনার সাথে। পুরোটা লিখে সবার ধৈর্যচ্যুতি ঘটাবো না। অনেক কিছু অজানা ছিলো চাচার সম্পর্কে, সেটাই সারসংক্ষেপ এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

নাম মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন তালুকদার। বাড়ি বরিশাল। মুক্তিযুদ্ধের সময় নয় নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছিলেন। ৮৮ এর বন্যার সময় অনেক কিছুর সাথে সেই মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেটটা হারিয়ে ফেলেছেন। খুব আক্ষেপ ভরা স্বরে বলছিলেন, “কারো সাহায্যর আশা করি না আঙ্কেল। পত্রিকায় চারবার আইসে আমার খবর। একজন বাদে আর কেউ তো আগায়ে আসে নাই এমন করে।”

আমাকে পত্রিকার কাটিংগুলো দেখালেন উনি। ৮৯ সালে উনার ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। তার দুইবছর আগের থেকেই উনার শরীর হঠাৎ করে শুকানো শুরু করে। ৮৯ সালে যখন উনার ডায়াবেটিস ধরা পরে, উনার উচ্চতা ছিলো ১৫৯ সেমি, ওজন ছিলো মাত্র ৩৮ কেজি। চাচার কথামতো, “আমার তো বাঁচার কথা ছিলো না আঙ্কেল। আল্লাহই বাঁচায়ে দিছেন আমাকে।”

সেখান থেকে এখন এই যে অবস্থায় এসেছেন সেটার জন্য চাচীর প্রতি উনার কৃতজ্ঞতা টের পাচ্ছিলাম উনার চোখেমুখে সর্বদাই।

এই ছোট্ট একটা ঘরের সাথে কমন বাথরুম, কমন রান্নাঘর। ভাড়া দিতে হয় ৪০০০ টাকা। চাচার জন্য ওষুধ লাগে ২৫০০ টাকার মতো, চাচীর বছর দুই আগে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। উনার ওষুধ লাগে ১৫০০ টাকার মতো। বাজারের খরচ। দোকানের জন্য মালামাল কেনা। চাচার আক্ষেপের স্বর শোনা যায়, “ঢাকা শহরে বাঁইচা থাকা অনেক কষ্টের আঙ্কেল। অনেক কষ্ট হয়।” আমি মাথা নীচু করে থাকি। জানতে পারি উনাদের সঞ্চয় বলে কিছু নেই। দিনে এনে দিনে খাবার মতো অবস্থাতেই বেঁচে আছেন উনারা। জিজ্ঞেস করবো না করবো না করেও জিজ্ঞেস করলাম, “চাচী, আপনার ছেলের খোঁজ নেন না? আপনাদের খোঁজ নেয় না সে?” চাচা চুপ করে রইলেন। চাচী উলটো দিকে মুখ ঘুরিয়ে জবাব দিলেন, “ছেলের কথা জানি না বাবা। খোঁজ রাখি না।” হয়তো চোখের জলটা দেখতে দিতে চান নি। হাজার হোক মা তো। ছেলে নাহয় উনাকে ফেলে দিয়েছে, উনি তো আর সেটা পারেন না। চাচাকে বললাম, আপনাদের একটা ছবি তুলি? চাচা কম্বল ছেড়ে দাঁড়ালেন, চাচী তাকে শার্ট পরিয়ে দিলেন। চাচা তারপর আরেকটা কী জানি চাইলেন। দেখলাম চাচী হেসে ফেললেন। তারপর মিটিমিটি হাসতে হাসতে একটা জ্যাকেট নামিয়ে চাচাকে পরিয়ে দিলেন, উপরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের একটা ব্যাজ। আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম। এতোগুলো বছর পাশাপাশি থাকার পরও, এতো কষ্টের মাঝেও চাচীর মাঝে কোন বিরাগ দেখি নি চাচার জন্য। যে টান দেখেছি তাদের দুজনের মাঝে, অনেক গল্প সিনেমাকেও তা হার মানায় সেটা।

গল্প উপন্যাসের চেয়েও অসাধারণ একটা দম্পতি...

প্রতিদিন বিকেলে সাড়ে চারটার দিকে দুজন মিলে মুক্তমঞ্চে যান। দুপুরবেলা গ্যাসের চাপ ঠিক থাকলে চা বানিয়ে রাখেন চাচী। দুইজন মিলে তিনটা চায়ের ফ্লাস্ক নিয়ে চলে যান সেখানে। চাচী বসেন মুক্তমঞ্চের মোটরসাইলেক স্ট্যান্ডের পাশের ছোট চা-সিগারেটের দোকানে। আর চাচা চায়ের কাপ আর ফ্লাস্ক নিয়ে ফেরি করে বেড়ান। এমন করেই চলছে দিন। বললাম, “যদি আপনারে সাহায্য করতে চাই তাহলে কী করাতে পারি?” চাচী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, “সাহায্য আর কী করবেন? কিছু টাকা দিলে দোকানটাতে একটু বেশি মালপত্র আনতাম। বেচা-বিক্রি একটু ভালো হতো।”

কথায় কথায় অনেকখানি সময় চলে গিয়েছিলো। বললাম, “চাচা, উঠি এবার?”

চাচা খুব আপন মানুষের মতো বললেন, “আপনি আমার সাথে খেয়ে যাবেন।” একদমই রাজি ছিলাম না। কিন্তু অনেকটা উনার অধিকারবোধ আর ছেলেমানুষীর কাছে হার মানলাম। চাচী সকালে নামাজ পড়েই রান্না করে রেখেছিলেন। ফুলকপি দিয়ে মাছ আর লাউয়ের একটা তরকারী। চাচার প্লেটে ভাত তুলে দিয়ে আমি অল্প একটু ভাত নিলাম। কারণ আজকের দিনের উনাদের দুপুরের খাবারের সময় আমি একান্তই অনাহুত। তারপরও চাচা আমাকে জোর করে আরেকটু ভাত তুলে দিলেন। আমি ভাতে হাত দিলেও উনি বসে ছিলেন চুপ করে। তারপর যখন কারণটা টের পেলাম, মাথা নীচু করে খাওয়াটা শেষ করে নিলাম। কোনভাবেই চাচ্ছিলাম না ভেজা চোখ নিয়ে চাচার চোখে ধরা পড়ি। আর এইরকম একটা ছবি তোলার সুযোগটা নষ্ট করি।

কিছু গল্প থাকে, নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয় না...

চাচার ডান হাতটা প্রায় অকেজো দেখে উনি ডান হাতে কিছুই করতে পারেন না। তাই চাচীই উনাকে খাইয়ে দেন প্রতি বেলায়। কোনরকমে নাকে-মুখে কিছু গুঁজে অনেকক্ষণ চুপ করে বসে উনার খাওয়া দেখলাম। কেন জানি না, হঠাৎ করেই মনে হলো, এই মানুষগুলো আমার কেউ না, আমাদের কেউ না। তারপরও এতো বেশি মায়া কেন আসে উনাদের দেখে? কেন এতো বেশি কষ্ট লাগে। আসলেই জানি না…

একজন মুক্তিযোদ্ধা, যিনি এখন জীবন রক্ষার তাগিদে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন, একজন অভিমানী বাবা, যিনি মাদক থেকে ছেলেকে ফেরাতে না পেরে বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন, একজন ৬৫ বছরের ডায়াবেটিক পেশেন্ট, যিনি আচমকাই বাচ্চাদের মতো খুশি হয়ে আমাকে বলেছিলেন, “আপনার চাচীরও ডায়াবেটিস হইছে, আমরা এখন একসাথে যাই বারডেমে।” আমরা কি পারি না উনার জন্য নিজের জমানো টাকা থেকে একটুকু তুলে দিতে? অল্প একটুই নাহয়, যা সাধ্যের মধ্যে হয়?

ইচ্ছে আছেঃ

১. উনার দোকানের মালামাল কেনা বাবদ উনাকে ২০,০০০ টাকা দেয়া।

২. বাকি টাকা দিয়ে একটা ফিক্সড ডিপোজিট করে দেয়া। যাতে কোন কারণে কেউ অসুস্থ হয়ে গেলে সেটা কাজে আসে। কারণ এই মুহুর্তে উনাদের সঞ্চয় বলতে কিছুই নেই।

৩. উনাদের বারডেমের চিকিৎসা খরচটা সম্পূর্ণ ফ্রি করে দেবার জন্য। যেটা উনাদের এখন পর্যন্ত ৭৫% ফ্রি আছে।

যদি একান্তই মনে হয় উনার জন্য কিছু করা আমাদের সম্ভব, যদি বিশ্বাস করেন আমরা সবাই মিলে হলেও কিছু করতে পারবো, তাহলে সাহায্য পাঠাতে পারেন নিম্নোক্ত বিকাশ নাম্বারে। শুধু একটা অনুরোধ থাকবে।

যদি মনের মধ্যে দ্বিধা থাকে আমাকে চেনেন না, কিংবা আসলেও আমি সেই টাকাটা ঠিক কাজে ব্যবহার করবো কী না, তাহলে আমি অনুরোধ করবো টাকা না পাঠাতে। আর যদি বিশ্বাস করেন তাহলে বলবো এই বিশ্বাসের অন্যথা হবে না।

টাকা পাঠানোর জন্য বিকাশ নম্বরঃ

মাহমুদ আল বসির

01717637466

টাকা পাঠিয়ে দয়া করে একটা SMS করে আপনার নাম, পাঠানো টাকার পরিমাণ এবং যে নাম্বার থেকে টাকা পাঠিয়েছেন সেটার শেষ দুইটা ডিজিট জানিয়ে দিবেন একই নাম্বারে। যদি কোন আপডেট জানতে কিংবা জানাতে চান, এই নাম্বারেই কল করতে পারেন।

আমি জানি হয়তো কাজটা সহজ না। কিন্তু এমন কঠিনও নয় যে আমরা পিছপা হয়ে যাবো। আমার খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে চাচার মুখের হাসিটুকু আমরা একটা নির্ভরতার হাসিতে পালটে দিতে পারবো। উনাদের দোকানটা আরেকটু বড়ো হবে। একটা ছেলে খোঁজ নেয় নি তো কী হয়েছে। আমরা আরো হাজারটা ছেলেমেয়ে আছি উনার…

একজন হেরে না যাওয়া মানুষ, জাহাঙ্গীর চাচা।

 

আজ ১৭ই জানুয়ারী পর্যন্ত সংগৃহীত টাকার পরিমাণ ২৪,০০০…

ভালো লাগছে জাহাঙ্গীর চাচার জন্য দোকানের মালামাল কেনার টাকাটা এরই মধ্যে উঠে এসেছে, কিন্তু প্রয়োজন আছে এখনও একটা সঞ্চয়পত্র/ফিক্সড ডিপোজিটের জন্য টাকার…

 

এগিয়ে আসুন, আমি জানি, এই আমি, আমরা, সবাই একলা হয়তো কেউ না…

কিন্তু সবাই মিলে, এই আমরাই পালটে দিতে পারি একজনের স্বপ্নের উচ্চতা…

 

আপডেটঃ ২২ জানুয়ারী, চাচার কাছে আজকে উনার দোকানের জন্য ২০,০০০ টাকা তুলে দিলাম। চাচী বললেন উনি আগামী ২ দিনের মধ্যে দোকানের জন্য নতুন মালামাল কিনবেন। এর মধ্যেই উনি বাকিতে কিছু কিনে ফেলেছেন আমাদের আশ্বাসে…আমি বলেছি বাকি টাকা আমি উনার হাতে আগামী মাসে শেষে তুলে দিবো। আজকের চাচীর সাথে যখন কথা বলছিলাম, চাচী হঠাৎ করেই বললেন, আমার ছেলেটা নাই, কিন্তু আপনাদের মতো দশজন ছেলে আমার না থাকলে এই ঢাকা শহরে থাকাটা আমার জন্য সম্ভব হতো না……

উনার গলা ধরে এসেছিলো কী না জানি না, কিন্তু আমার চোখে ভিজে এসেছিলো… সবাই যদি এমন করে পাশে এসে না দাঁড়াতেন, কখনো এমন কিছু করা সম্ভব হতো না আমি জানি। এটাও জানি, আমরা সবাই আবার প্রমাণ করছি, পারা যাবে না এমন কিছুই নেই…

যারা শেয়ার করছেন/করেছেন, টাকা দিয়েছেন/দিচ্ছেন, বন্ধু-বান্ধবদের টাকা দেবার কথা বলেছেন/বলছেন, আমি ঠিক জানি না ঠিক কীভাবে আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাবো…

উনার জন্য একটা সঞ্চয়পত্রের জন্য টাকা চাইছি এখনো আপনাদের কাছে…শেয়ার করুন, পরিচিতদের বলুন…এগিয়ে আসুন…

 

এইটুকু তো করতেই পারি আমরা…তাই না?

নিস্তব্ধ শৈশব সম্পর্কে

জন্মেছি যখন মানুষ হয়ে, লড়ে যাবো ভালোর হয়ে, এক নতুন ভোরের অপেক্ষায়...
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিবিধ-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

5 Responses to একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন হেরে না যাওয়া মানুষ…

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    সাথে আছি। অনেক ধন্যবাদ 😀
    দারুণ কাজ

  2. শারমিন বলেছেনঃ

    সত্যিই দারুণ কাজ ভাইয়া :huzur:
    সাথে আছি 🙂

  3. রাইয়্যান বলেছেনঃ

    সন্ধান পেয়েছিলেন কীভাবে??

    • সন্ধান বলতে উনাকে? প্রথম যেদিন মুক্তমঞ্চে গিয়েছিলাম, উনাকে দেখেছিলাম, উনার কাছ থেকে চা খেয়েছিলাম, উনার কথা বলার ধরণ, এতো প্রতিবন্ধকতার পরও হার না মেনে একটা কাজ করার উৎসাহ, সবকিছুই টেনেছিলো…

      পরে টিভিতে একটা অনুষ্ঠানে মনে হয় উনাকে দেখেছিলাম, তারপর থেকে যেদিনই গিয়েছি উনার সাথে একটু একটু করে কথা বলেছি…আস্তে আস্তে উনার গল্প জেনেছি, তারপর সাহস করে উনার কাছে আবদার করেছিলাম উনার বাসায় আমি যাবো…

      কয়েকজনের কাছ থেকে শুনেছি উনি কারো কাছ থেকে সাহায্য ধরণের কিছু নিতে চান না। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ আমার কপাল ভালো, উনি আমার সাথে খুব সহজেই মিশে গিয়েছেন…

  4. দীপিতা বলেছেনঃ

    ভাইয়া আমার বেশ লেট হয়ে গেছে পাঠাতে, নাম্বারটা সেইভ করা ছিল না। আমি আশা করি কাল টাকা পাঠিয়ে দিব, আর শুনে ভাল লাগল, যে অলরেডি উনাকে একটা এমাউন্ট দেয়া গেছে!!

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।