তবুও ভালোবাসি

“আম্মু,
পরীক্ষা পিছিয়ে গেলো হঠাৎ, বন্ধুরা হুট করে ঘুরতে বেরিয়ে পড়েছি। এখন আমি ট্রেনের ছাদে, ভোর যেখানে হবে, নেমে পড়ব! লক্ষ্মী মা, রাগ করো না- কালকেই বাড়ি ফিরবো, প্রমিজ!”

মুঠোফোনে মাকে এই বার্তাটা পাঠিয়ে আপন মনেই হেসে উঠলাম। ভাবছি- মেসেজটা পড়ার সময় মায়ের চেহারাটা কেমন হবে! আমি হাতের কাছে থাকলে আমার খবরই ছিল! আর ভাবতে চাইলাম না- ব্যাপার না, বাড়ি ফিরে মাকে ম্যানেজ করতে একটু কষ্ট হবে, এই আর কি!

‘কিরে, প্রহর! কার কথা চিন্তা করে হাসছিস! সামথিং সামথিং?’ পাশে বসে থাকা বন্ধু নিসর্গের ডাকে চোখ মেলে তাকালাম ওর দিকে। বললাম, ‘তোকে বলেছি না, এই একটা ব্যপার নিয়ে ফাজলেমি না করতে? আমার ভাল্লাগে না।’

এইবার ওকে একটু সিরিয়াস দেখালো। ‘আর কতদিন ওর কথা ভেবে কষ্ট পাবি, বল তো? দ্যাখ গিয়ে, তোর রাজকন্যা কী সুখে দিন কাটাচ্ছে!’

জবাব দিলাম না আমি- আসলে কী বলব? অনেক কথা মনে পড়ে যাচ্ছে, যা আমি ভুলতে চাই প্রতিনিয়ত।
২.

নিসর্গ আমার খুব ভালো বন্ধু। ভাবতেই অবাক লাগে, মাত্র অল্প কিছু দিন আমাদের পরিচয়, অথচ এর মধ্যেই দুজন কতটা কাছের হয়ে গেছি! নিসর্গের পরিচয় দিতে গেলে পুরো একটা বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষার খাতা শেষ হয়ে যাবে- আমার কথা শেষ হবে না! সত্যি বলতে কি, ছেলেটা এমনই- ওকে দেখলেই ভালো লেগে যাবে, কিন্তু প্রথম দেখায় কেউই ওর ভিতরের মানুষটার খোঁজ পাবে না। সারাক্ষণই প্রাণোচ্ছল- দুষ্টুমি আর চঞ্চলতায় ভরপুর; মাথায় মনে হয় একটু ছিটও আছে- অথচ প্রয়োজনের সময় ওর মত রেস্পন্সিবল ছেলে খুব কমই দেখা যাবে। অনেক কেয়ারিং; সবচেয়ে বড় কথা, বন্ধুর জন্য হাসতে হাসতে জান দিয়ে দেবে- শুকনো একটা ধন্যবাদের আশাও না করে। ওর সাথে পরিচয়ের পর থেকে আমি প্রতি মুহূর্তে ‘বন্ধুত্ব’র সংজ্ঞা নতুন করে শিখছি!

নিসর্গের চঞ্চলতা আর পাগলামির ভুরি ভুরি দৃষ্টান্ত দেওয়া যাবে- আজকের কথাই বলি। দুপুরে আমার বাসায় দাওয়াত ছিলো ওর। সেখান থেকে সন্ধ্যায় দুজন একসাথে হলে ফিরেছি। ঢাকায় বড় হয়েছি, আমি বাসাতেই থাকি। নিতান্ত প্রয়োজনে হলে থাকার দরকার হলে নিসর্গ তো আছেই! পরীক্ষার রুটিন দিয়ে দিয়েছে অনেক আগেই- কিন্তু একটা ফিসফাস শুরু হয়ে গেছে, বুয়েটের ৩০ বছরের ক্রেজ(!) অক্ষুণ্ন রাখতে এবারো যথারীতি পরীক্ষা পিছাবে! সেই সম্পর্কে নিশ্চিত হতেই ভার্সিটি আসা। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই নোটিশ পেলাম- বুয়েট তার ধারা অক্ষুণ্ন রেখেছে! পরীক্ষা আরও ৯ দিন পর!

নিসর্গের রুমে বসে আছি- হঠাৎই সে বলে বসলো, ‘দোস্ত, তোর কাজ আছে বাসায়?’

এক মুহূর্ত ভাবলাম, ‘না, তেমন নেই। কেন?’

‘চল, ঘুরে আসি কোথাও থেকে।’

‘এখন? হঠাৎ করে? কোন প্ল্যানিং ছাড়া!’

‘এভাবেই তো ঘুরোঘুরি করে মজা- রেলস্টেশনে যাই চল, কোন একটা ট্রেনের ছাদে উঠে রাত কাটিয়ে
দেওয়া যাবে! ঘুম যেখানে ভাঙবে, সেখানেই ঘুরে আসা যাবে!’

এই হল আমাদের নিসর্গ।

মুখে যতই অনাগ্রহ দেখাই, ছোট বেলা থেকেই আমিও ভীষণ ভ্রমণকাতুরে। সময় পেলেই বেরিয়ে পড়ি। তাই আমাকে রাজি করাতে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি নিসর্গর।

পাশ ফিরে আবার ওর দিকে তাকালাম।  এই আধপাগলা ছেলেটার লাগামছাড়া পাগলামির
জন্যই আমি এখন ট্রেনের ছাদে বসে আকাশের তারা গুনছি- কোথায় যাচ্ছি জানিনা, জানতেও চাই না!

৩.

নিসর্গকে দেখে মনে হচ্ছে, সে ভীষণ বিজি এখন! মুঠোফোনে সমানে বার্তা আদানপ্রদান করে যাচ্ছে বান্ধবীর সাথে- আর কোন দিকে খেয়াল নেই!

ওর বান্ধবী নিশীতা। নি-নি জুটি এখন ডিপার্টমেন্টে বেশ পপুলার। ওদের প্রেম কাহিনীও কিন্তু ভীষণ মজার! নিসর্গ তো বরাবরই ফাজিল- কোন এক দিন আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে ভালো মেয়েটাকে গিয়ে ফান করতে করতে প্রোপোজ করে বসে, যদিও এইটা সিরিয়াস ছিল না নিসর্গর কাছে, ফাজলেমিই ছিল। কিন্তু মেয়েটা এই ব্যপারটা বেশ সিরিয়াসলি নিয়ে বসে। আসলে নিসর্গর মত চমৎকার একটা আধপাগলা ছেলেকে না করার তো কিছু নেই!

ফলাফল যা হবার, তাই হল! সারাক্ষণ একদৃষ্টে মুগ্ধ চোখে চেয়ে থাকা- এই সব রোমান্টিক ব্যপারস্যাপার আর কি। টের পেয়ে বন্ধুরা দুইজনকে নিয়ে ফাজলেমি শুরু করে। নিসর্গ প্রথম প্রথম গোটা ব্যপারটায় খুব মজা পেলেও আস্তে আস্তে অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। এখন দুজনেই দুজনের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে!

নিসর্গের দিকে তাকিয়ে কেন যেন ঈর্ষান্বিত হলাম একটু! কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা ছিল না- অপ্সরীর মতন দেখতে একটা মেয়ে আমাকে শিখিয়েছিল ভালবাসতে, স্বপ্ন দেখতে। অথচ কোথায় এখন সে?

ধ্যাৎ! আবার ভাবছি ওর কথা! চুলোয় যাক ভালোবাসা!

৪.

হঠাৎ মুঠোফোন বেজে উঠলো। কল বাটন প্রেস করে কানে লাগালাম আমি, ‘হ্যালো?’

ওপাশ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাসের আওয়াজ পেলাম- অমনি আমার বুকটা ধড়াস করে উঠলো! এই আওয়াজ আমার অনেক চেনা!

‘কেন ফোন করেছ?’

‘কেমন আছ, প্রহর?’ যা ভেবেছিলাম, তাই! রাজকন্যা ফোন করেছে আমাকে! একি টেলিপ্যাথি?

‘এত রাতে এই জানতে ফোন করেছ?’ অনুভূতির লেশমাত্র নেই আমার কণ্ঠস্বরে।

কিছু একটা বলতে গিয়েও কেন যেন থেমে গেল সে। আমিও কিছু বললাম না- চুপ করে আছি তার কথা শোনার অপেক্ষায়।

দীর্ঘক্ষণ পর অবশেষে কথা বলল ও। ‘ আমি জানি, আমি বিরাট ভুল করেছি, প্রহর- কিন্তু সত্যিই আমি অনুতপ্ত। একটিবার কি আমাকে ক্ষমা করে ফিরিয়ে দিতে পারো না আমার প্রহরকে? যাকে আমি পাগলের মত ভালবাসতাম!’

‘হুহ! ভালোবাসা! এই শব্দটা কি তোমার মুখে শোভা পায়?’ আমার মেজাজ খারাপ হচ্ছে।

ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ পেলাম। ‘সত্যিই আমি স্যরি। দেখ, ভুল তো মানুষই করে- আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। একটিবার আমাকে সামনাসামনি কথা বলার সুযোগ দাও-’

ওকে কথা শেষ করতে দিলাম না আমি। ‘তুমি আমাকে হারিয়ে ফেলেছ। আমি এখন আমার ব্যাচের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি- আমার এখন আর ফিরে আসার কোন ইচ্ছে নেই।’

কান্না চলছে অবিরাম ফোনে ওপাশে। আমি বলতে লাগলাম, ‘মানুষ একবারই সত্যিকারের ভালোবাসায় পড়ে। আমার সেই ভালোবাসা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আর আমি ভালবাসতে পারি না। ভালবাসতে ভুলে গেছি।’

‘একবারও কি সুযোগ দেবে না আমাকে ভুল শোধরাবার?’ আরো অনেক কিছু বলেছিল সে, কিন্তু শুনতে পাইনি- ওর কান্নার আওয়াজে চাপা পড়ে যাচ্ছিল।

‘স্যরি- আমি দানবীর মহসীন নই, আমার হৃদয়টাও বিশাল না- আর কখনো ফোন করবে না।’ ওকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফোনটা কেটে দিলাম আমি।

নির্বাক হয়ে বসে আছি। এভাবে নির্জলা মিথ্যে বলার সময় আমার গলার কাঁপুনি, কান্নারুদ্ধ কণ্ঠস্বর কি ধরা পড়ে গেছে রাজকন্যার কাছে!

আর পারবো না নিজেকে সামলাতে- সব কথা মনে পড়ে যাচ্ছে! আমার ভালোবাসার কথা- আমার রাজকন্যা, অথৈ এর কথা!

৫.

আজকের রাতের মতই আলো-আঁধারী মাখা একটা রাত ছিল সেটা। সবে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি, নটর ডেম কলেজে। ‘খোমাবই’ এর নেশা মাত্র ঢুকতে শুরু করেছে রক্তে। এমনই এক সময়, আমার প্রোফাইলে একটা মেসেজ পেলাম, প্রেরিকার নাম লেখা অথৈ। অচেনা মুখ, তাই আমি মেসেজ চেক করার আগে প্রেরিকার খোঁজ নেয়ার মনস্থির করলাম- ওর প্রোফাইল পিক এত স্নিগ্ধ, সুন্দর যে দেখলেই প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করে! মনে আশঙ্কা হলো, ফেক আইডি না তো! বলাই বাহুল্য, ‘খোমাবই’য়ের অধিকাংশ ‘আগুনসুন্দরী’ মার্কা খোমাবিশিষ্ট রমণীদের আইডি আসলে রমণীরা চালায় না!

মেসেজটার রিপ্লাই দিলাম। আস্তে আস্তে মেসেজ আদানপ্রদান শুরু হল আমাদের মধ্যে। কথাবার্তা শুরু করে দেখলাম, এই মেয়ে আমার সম্পর্কে অনেক কিছু জানে। আমার মতন রসকষহীন, বইয়ে মুখ গুঁজে থাকা অপ্রতিভ একটা মানুষের প্রতি কারো আগ্রহ থাকতে পারে- ভেবে অবাক হলাম।

ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠ হতে লাগলাম আমরা। শেষ পর্যন্ত একদিন জানতে পারলাম, অথৈ আমার আম্মুর এক অফিস কলিগের মেয়ে। চিনতে পারলাম ওকে, ছোটবেলায় একসাথে পড়েছি। তারপর, আমি যখন ক্লাস থ্রিতে- ওরা সপরিবারে কানাডা চলে যায়। ওর থেকেই শুনলাম, গ্রাজুয়েশন দেশে করার ইচ্ছে- তাই ফিরে এসেছে।

সেদিন থেকেই কেন যেন আপন মনে হত ওকে- কথা চলতে থাকল আমাদের। ও অনেকটা আমার মতোই- ঠিক যেমন মেয়ে আমি পছন্দ করি; হয়ত এটাই কারণ। ফোনে কথা বলা শুরু করলাম। একসময় দেখা করলাম- একসাথে ঘুরলামও বেশ কয়েকবার। বুঝতে পারছিলাম, ধীরে ধীরে অথৈ আমার জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এতে শঙ্কার বদলে ভালোলাগাই কাজ করছিল।

এরপর, কোন এক শুভক্ষণে, নিজের বৃত্তের বাইরে বেরিয়ে ওকে প্রোপোজ করি আমি- আর আমাকে অবাক করে দিয়ে সে সায় দেয়!

এভাবেই শুরু হল আমাদের প্রেম।

কত যে স্মৃতি আছে দুজনের সারা জীবন লালন করার মত! দুজনে মিলে সারা শহর জুড়ে আমার প্রিয় রিকশাভ্রমণ, ছুটির দিনগুলোয় নিরুদ্দেশ যাত্রায় বেরিয়ে পড়া, মধুর ক্যান্টিন- টি,এস,সি-বসুন্ধরা সিটি-পুরান ঢাকা—একসাথে কোথায় ঘুরিনি আমরা! সুখেই কাটছিল দিন। হৃদয় উজাড় করে ভালবাসতে চেয়েছিলাম ওকে। কিন্তু একজন মানুষের জীবনে বোধহয় এত সুখ প্রাপ্য নয়।

সেজন্যই হয়ত জীবনের কাছে এত বড় একটা ধাক্কা খেলাম আমি!

গল্প সংক্ষিপ্ত করি- তা না হলে রাত পেরিয়ে যাবে। হঠাৎ একদিন টি,এস,সি তে ঘুরতে গেছি বন্ধুদের সাথে- দেখলাম, দূরে একটা মেয়ে একটা ছেলের সাথে বেশ অন্তরঙ্গভাবে বসে আছে। চেহারাটা চেনা চেনা লাগতেই বুকটা কেঁপে উঠলো! অথৈ না তো! আমার ধারণা নির্ভুল প্রমাণিত হল- কিন্তু একইসাথে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে গেল আমার অনুভূতিকে।

আর ভাবতে ইচ্ছে করছে না এর পরের মুহূর্তগুলো।

অথৈকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এক সময়, কেন সে আমার সাথে এমন করল। প্রথমে ওর ধোঁকার কথা স্বীকারই করতে চায়নি- শেষে আর কোন কথা বলতে পারলো না। কখনও জানা হয়নি- আমার দোষ কী
ছিল। অবশ্য জানি- ওর মুখে কোন উত্তর আসত না, এখনকার বেশির ভাগ মেয়েদের মতোই সময় কাটানোর উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করেছে ও আমাকে!

অনেক দিন- তারপর অনেক দিন ফোন বন্ধ রেখেছি আমি, ‘খোমাবই’ থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসন নিয়েছিলাম। ডুবে গেসলাম নিজের জগতে। অনেক দিন পর ফোন চালু করতেই অথৈ এর ফোন আসে- সে নাকি তার ভুল বুঝতে পেরেছে! হুহ!

এর পর থেকে সে প্রায়ই ফোন করে আমাকে বোঝাতে চায় তার অনুতপ্ত, অনুশোচনার দহনে পোড়া জীবনের কথা- কিন্তু আমি নির্বোধ কীভাবে বুঝবো তা? ওর মেকি ভালোবাসাই যখন বুঝিনি?

ধ্যাত! কার কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছি আমি! নিজেকেই ধমকালাম। কিন্তু পোড়া মন কি আর কথা শোনে!

হঠাৎ আকাশের দিকে তাকালাম- কালো মেঘ করেছে। বৃষ্টি আসার পূর্বলক্ষণ। কেন যেন আমার মন চাইলো, বান ডাকা বৃষ্টি নামুক আজ আকাশ ভেঙে!  ধুয়ে নিয়ে যাক আমার পোড়া মনের যত কষ্ট!
আকাশের কান্নায় চাপা পড়ুক আমার অঝোর অশ্রুধারা!

৬.

সৃষ্টিকর্তা যেন শুনলেন আমার প্রার্থনা- আকাশ ভেঙে নামলো বৃষ্টি। ট্রেন তখন থেমেছে ময়মনসিংহ জাংশনে- এক ঘন্টার আগে ছাড়বে না বোঝাই যাচ্ছে।

এমনিতেই বৃষ্টি আমার খুব প্রিয়- আর আজকের এই উদ্দাম বৃষ্টি তো অনেক প্রতীক্ষিত। চোখের পানি লুকোতে নেমে পড়লাম বৃষ্টিতে ভিজতে। বৃষ্টি এই জন্যই আমার এত প্রিয়- কাঁদলেও কেউ বুঝতে পারে না!

বৃষ্টিভেজা আমার কাছে অনেক স্মৃতিময়- কিন্তু এখন অথৈ ছাড়া আর কিছু মাথায় আসছে না। কত দিন চেয়েছি ওর হাত ধরে এমন মাতাল বৃষ্টিতে ভিজব- মেয়েটা কখনও রাজি হয়নি! তার নাকি বৃষ্টি ভাল্লাগে না! রাগ লাগছে আমার- এমন বৃষ্টি কেউ পছন্দ না করে পারে!

চোখে ভাসছে শুধুই অথৈ- ওর স্নিগ্ধ সুন্দর মুখটা। আচ্ছা, আমার কি উচিত ছিল একটিবার ওর কথা শোনার? ওকে কি একটা সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল নিজের ভুল শোধরানোর? তা না হলে কি ভালোবাসার অপমান হয়ে যায় না! মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে আমার খাপছাড়া চিন্তায়!

মুঠোফোনের মেসেজটোনের আওয়াজে হুঁশ ফিরল যেন আমার। নিজে কাকভেজা হয়ে গেছি- মোবাইলও নিশ্চয়ই ভিজে সারা। তবুও কি মনে করে বের করলাম মোবাইলটা, একটা বার্তা ভেসে উঠেছে ডিসপ্লেতে-

“প্রহর- কত দিন তুমি চেয়েছ আমার হাত ধরে এরকম মাতাল বৃষ্টিতে ভিজতে! আমি খারাপ মেয়ে কত কৌশলে এড়িয়ে গেছি, কখনোই বুঝতে চেষ্টা করিনি তোমাকে, তোমার ভালোবাসাকে- আজ বড়ই মনে পড়ছে সেসব দিনের কথা! আমার হাতটা বাড়িয়ে রেখেছি আজ- তোমার কি একটু সময় হবে আমার হাতে হাত রেখে আমাকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজবার?”

চোখের কোণ দিয়ে ঝরে পড়া অশ্রুধারা আটকাতে পারলাম না আমি- চাইলামও না। কী দরকার? আকাশের কান্নার মাঝে কেউ তো আর বুঝবে না আমার পোড়া হৃদয়টার কান্না!

শেষ কথা.

ছুটছি আমি- রেললাইন ধরে, ঢাকায় ফিরতি ট্রেনের খোঁজে! আর আমার পিছু পিছু ছুটছে নিসর্গ- ক্লান্ত মুখে এক চিলতে হাসি! ডাকছে- নিশ্চয়ই এভাবে ছুটোছুটি না করে তাকে সাথে নেওয়ার জন্য।

কিন্তু এত সময় কোথায় আমার? আমাকে যে ফিরতে হবে আমার রাজকন্যার কাছে- সে তো আমার হাতের অপেক্ষায় হাত বাড়িয়ে আছে!

আমাকে যতই কষ্ট দিক, তবুও তো সে আমার রাজকন্যা! নাহয় দুজনের ভালোবাসা একাই বেসে নেব আমি! তবুও তো ভালোবাসি তাকে!

নিলয় সম্পর্কে

"আমি জানি আমি আমার চারপাশের এই অসংখ্য মানুষ থেকে অনেক ভালো জীবন পেতে পারতাম, কিন্তু সে জীবনে আমার কোন আকর্ষণ নেই। আমি দেখেছি সেই জীবন প্রকৃতপক্ষে অর্থহীন- প্রতিটি মানুষের জীবন এতো সুনির্দিষ্ট, এতো গতানুগতিক যে সেটি একটি সাজানো নাটকের মতো। আমি সেই সাজানো রঙ্গমঞ্চের অভিনেতা হতে চাইনি।" [http://www.facebook.com/niloy.02]
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে গল্প-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

22 Responses to তবুও ভালোবাসি

  1. স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

    চমৎকার!!! :clappinghands:
    তোমার গল্প লেখার হাত তো খুবই ভালো! 🙂
    অনেক ভালো লাগলো গল্পটা পড়ে।

  2. চমৎকার লাগলো লিখাটা পড়ে, পরেরটার অপেক্ষায় থাকলাম, কবে আসছে?? :happy:

  3. রাইয়্যান বলেছেনঃ

    :dhisya:
    দারুণ লিখেছিস!! :dhisya: :huzur: ইউ রক!!!! :happy: :happy:

    দোস্ত একটু সমালোচনা করি, মাইন্ড করবি না তো?? :balancin:

    প্রথমেই বলে নিই, এটা যদি সত্য ঘটনা হয়ে থাকে (নটরডেম বুয়েটের কথা শুনে তাই মনে হল) তাহলে প্রহরের অনুভূতি কে হার্ট করা মোটেই আমার উদ্দেশ্য না!! :brokenheart:

    আমার কাছে মনে হয়, কিছু মানুষ থাকেই যারা পুরোপুরি সোশ্যাল মিডিয়া দ্বারা চালিত। মিডিয়ায় যখন পরিমল, পারসোনা, রোমানা মঞ্জুরের জামাই, তেল গ্যাস, ট্রানজিট প্রভৃতি নিয়ে মাতামাতি হয়, তখন তারা ওসবের গুষ্টি উদ্ধারে লেগে যায়। কিন্তু মনে কর পরিমলের ঘটনা পত্রিকায় আসলো, কিন্তু এটা নিয়ে কেউ ফেসবুক-ব্লগে লেখালেখি করলো না- তখন কিন্তু সেই ‘পাবলিক’ এর মনেও হবে না কিছু একটা করা উচিত!! অবশ্য আরও কিছু মানুষ আছেন যারা গড্ডালিকায় গা না ভাসিয়ে নিজের বিবেকে সবকিছু যাচাই করে নেন, তাদের নিয়ে আমার মাথাব্যাথা নেই, সমস্যা প্রথম ক্যাটাগরির পাবলিক নিয়ে। সেজন্যই সোশ্যাল মিডিয়ায় কী মেসেজ যাচ্ছে সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।

    তাহলে সেই দৃষ্টিকোণ থেকে প্রহরের দুঃসহ অভিজ্ঞতা সেই পাবলিকের কাছে কী মেসেজ দিবে?? “শালার মাইয়াদের কোন জাত ই নাই, সব ***” ইত্যাদি হবে তাদের রিঅ্যাকশান। এরকম ঘটনা পড়তে পড়তে তাদের মাথায় নেগেটিভ চিন্তাই আধিপত্য বিস্তার করবে, নিজের বাস্তব জীবনেও হয়ত এর প্রভাব তারা নিয়ে আসবে :thinking:

    আবার সেই পাবলিক ই যদি একটা গল্প পড়ে যেখানে ছেলে-মেয়ের সুস্থ-সৌহার্দ্যপূর্ণ-আন্তরিক বন্ধুত্বের ফাটাফাটি কাহিনী বলা হচ্ছে, তখন তার জেলাস লাগবে, “ইস আমারও যদি এমন বন্ধু থাকতো!” এবং সে ইতিবাচক চিন্তা করবে, কারন আসলে তার নিজস্ব মতামত বলতে কিছুই নাই, তাকে যা গেলানো হবে সে তাই গিলবে!! :guiter:

    সরব ব্লগ টা এই ইতিবাচক লেখালেখির জন্যই আমার এত ভালো লাগে!! :love: :love: :love: আবার এটাও ঠিক, সারাদিন জ্ঞান দিলে পাবলিক গিলবে না, বোরিং হয়ে যাবে। আসলে আমার মনে হয় বোরিং না করেও মানুষের মনে দাগ কাটাটাই সত্যিকারের জিনিয়াস টাচ!! :dhisya:

    আমাকে তো চিনিসই, আধাপাগলা কিসিমের 8) সো আমার ম্যারাথন সমালোচনাটাও হাল্কাভাবেই নিস!! :beerdrink: আরও অনেক অনেক দুর্দান্ত লেখার অপেক্ষায়!!!! :beerdrink: :beerdrink: :clappinghands:

    • নিলয় বলেছেনঃ

      থ্যাঙ্কু, দোস্ত :penguindance:
      না, না- আমি একটুও মাইন্ড করি নাই; তোর সমালোচনাও ‘হালকা ভাবে’ নেই নাই!! 😛
      লেখাটা হয়ত কিছুটা সত্য, হয়ত কিছুটা আমার অনুর্বর মস্তিষ্কের উল্টা-পাল্টা চিন্তার প্রতিফলন! :angel_not: এমন ঘটনাও কিন্তু আশেপাশের অনেকের সাথেই ঘটে.. কখনো ছেলে, কখনো মেয়ে- তাই বিভেদ করা উচিত হবে না। ভালো-খারাপ mentalityর মানুষ সব জায়গাতেই মিশে আছে… তাই এ সম্বন্ধে জানাও জরুরি।
      তুই যা বলেছিস, সবটুকুর সাথেই আমি একমত। তাই mind করার প্রশ্নই আসে না 🙂 বরং সব সময় এইভাবে আমার লেখার সমালোচনা করবি- আমি এইটায় অনেক খুশি হই 🙂 🙂

  4. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    গল্প বড় হলেও টানা পড়ে গেছি!

    তোমার হাত দারুণ! চলতে থাকুক গল্প লেখা 😀

  5. ভাবের পাগল বলেছেনঃ

    :clappinghands:

  6. কিনাদি বলেছেনঃ

    দারুণ 🙂

  7. শিশিরকণা বলেছেনঃ

    “আমাকে যতই কষ্ট দিক, তবুও তো সে আমার রাজকন্যা! নাহয় দুজনের ভালোবাসা একাই বেসে নেব আমি! তবুও তো ভালোবাসি তাকে!”
    দারুণ, অনেক ভালো লাগলো গল্পটা পড়ে…. :happy: :penguindance:

  8. অনাবিল বলেছেনঃ

    গল্প চলুক………. 🙂

  9. মুবিন বলেছেনঃ

    গল্প ভালো লাগলো 😀

  10. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    বেশ গুছানো গল্প।
    তবুও ভালবাসি। 🙂

  11. নিস্তব্ধ অমিত বলেছেনঃ

    খুব ভালো লাগলো……

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।