ভীনদেশী তারা

রিহান বিরক্তি নিয়ে বাটা শোরুমে ঢুকছে। জুতা কিনতে হবে। কোনটাই পছন্দ হচ্ছে না। যেটা পছন্দ হয়, তা হয় দাম বেশি অথবা ছোট সাইজ। বড় সাইজ নেই ঐ জুতার। বিরক্ত বাবার উপর। এত কম টাকা দিয়ে এখন জুতো পাওয়া যায়?

স্নিগ্ধা জুতো দেখছে। যেটা দেখে ঐটাই ভালো লাগে। কোনটা কিনবে কনফিউজড। কোনটা কিনলে তার সাথে সুন্দর মানাবে তা নিয়ে চিন্তা করে। একবার একটা পরে দেখে, তারপর আবার খুলে পেলে। আরেকটা দেখে।

রিহান মেয়েদের জুতোর দিকে গিয়ে স্নিগ্ধার কার্যকলাপ দেখল। তার ছোট বোনের কথা মনে পড়ল। ন্যাকামির একটা সীমা থাকা দরকার, রিমির ন্যাকামির কোন সীমা নেই। তার বিরক্তি আরো বাড়লো। সে সিগ্ধা যে সব জুতো খুলে রাখে, সে গুলো দেখে। তারপর বিরক্তি নিয়ে রেখে দেয়। মেয়েরা কেমন এমন হয় তাই চিন্তা করে।

সিগ্ধা জিজ্ঞেস করল আপনি এমন করছেন কেনো?

-আমার বোনের জন্য জুতা দেখছি। একটি জুতা দেখিয়ে বল এটা কেমন বল তো।

-আপনার বোনকে নিয়ে আসলেই তো পারতেন। সে পছন্দ করে নিত।

আচ্ছা, ওকে নিয়ে আসব। তবে এটা তোমার পায়ে দারুণ মানাবে। সুন্দর পায়ে কালো জুতা দারুণ লাগে।

স্নিগ্ধা বলল এটা আমার পছন্দ হয় না। তার গাল একটু লাল হয়ে উঠল। হয়তো রিহানের কথা শুনে।  সে অন্য জুতা দেখতে লাগল। রিহান ও আগের মত স্নিগ্ধাকে অনুকরণ করতে লাগল। সে পরীক্ষা করে দেখতে চায় আরেক জনকে বিরক্ত করলে নিজের রাগ ভাবটা কমে নাকি। দেখল, তার আগের থেকে ভালো লাগছে।

শেষে দেখা গেলো স্নিগ্ধা রিহানের দেখানো জুতাটা নিয়েই বের হয়ে গেলো। রিহান ও পিছে পিছে। কিছুদূর যাওয়ার পর স্নিগ্ধা জিজ্ঞেস করল আপনি আমার পিছে পিছে কেন আসছেন??

-এমনিতেই।

-এমনিতে মানে??

-এমনিতে মানে এমনিতেই।

-দেখুন ভালো হবে না কিন্তু। আপনি দোকানেও আমাকে বিরক্ত করেছেন। এখন ও। ফাইজলামি করবেন না বলে দিচ্ছি।

-কেন তোমার পিছে পিছে আসছি শুনতে চাও??

-বলুন।

আসলে আজ আমি বাবার উপর বিরক্ত। উনি কম টাকা দিয়েছেন, যে জুতা পছন্দ হয় তা কিনতে পারছি না। তাই নিজের রাগ কমানোর জন্য তোমাকে বিরক্ত করছি।

-অনেক হয়েছে। প্লিজ এবার বন্ধ করুন।

-নাহ! এখনো রাগ কমে নি। তবে মনে হচ্ছে তোমার সাথে বসে কথা বললে একটু কমবে।

-মানে??

-মানে তোমার সাথে আমার কথা বলতে ভালো লাগছে। বাবার উপর রাগটা আস্তে আস্তে কমে আসছে, কারণ বাবা আজ টাকা কম না দিলে তোমার মত সুন্দরীর সাথে দেখা হতো না। চিন্তা করছি বাবাকে আজ একটা গিফট কিনে দিব নাকি। আচ্ছা, তোমার নাম কি?

-আমি স্নিগ্ধা।

-দারুণ নাম। কে রেখেছে??

-আমার দাদী।

-তোমার দাদীর জন্যও একটা গিফট বাজেট করলাম। তোমার সাথে নামটা একদম মিলে গেছে। স্নিগ্ধা!

স্নিগ্ধা বুঝল ছেলেটি ফ্লাটিং করার চেষ্টা করছে, তারপর ও তার কথা বলতে ভালো লাগছে।

রিহান বলল, এসো, এখানে বসি।

স্নিগ্ধা বলল, এখানে তো বসার কোন জায়গা নেই। কোথায় বসব? তা ছাড়া আপনার সাথে আমি বসব কেনো? আপনাকে আমি চিনি??

রিহান ঘাসের উপর বসে পড়ল। তারপর বলল ঘাসের উপর বসে দেখো। দারুণ লাগবে। তাছাড়া তুমি কি আমার নাম জিজ্ঞেস করছ যে আমাকে চিনবে? আমার নাম জিজ্ঞেস করো।

স্নিগ্ধা বলল, আপনার নাম কি??

-আমি রিহান। রিহান মানে কি জানো?

স্নিগ্ধা ঘাসের উপর বসতে বসতে বলল, জানি না কি?

রিহান বলল, আমিও জানি না। তারপর হেসে দিল।

স্নিগ্ধাও মুসকি হাসল।

এরপর স্নিগ্ধা বলল দেখুন, আমার সাথে কথা বললে আজকের পর থেকে আপনাকে কষ্ট পেতে হবে।

রিহান তার মাসলের দিকে তাকালো। সাহসী মনে বলল তোমার মত মেয়ের জন্য সব কষ্ট মেনে নিতে পারব মনে হচ্ছে।

স্নিগ্ধা বলল দেখা যাবে। তারপর তারা কথা বলতে লাগল। রাস্তার পাশে ঘাসের উপর বসে সারা বিকেল কথা বলে কাটিয়ে দিল তারা। পশ্চিম দিকের আকাশ লাল হয়ে উঠল, তারপর ও তাদের কথা বলা শেষ হয় নি। সূর্যটা যখন  হলুদ থেকে লাল এবং লাল আরো লাল হয়ে টুপ করে ডুবে গেলো, তখন স্নিগ্ধা বলে উঠল, বাসায় যেতে হবে।

রিহানের মোহ ভাঙ্গল। বলল এত তাড়াতাড়ি? আর বাসায় না গেলে হয় না?

স্নিগ্ধা হাতের স্মার্টওয়াচের দিকে তাকিয়ে বলল আমরা এখানে প্রায় ২ ঘন্টা বসে ছিলাম। আর হ্যা, বাসায় যেতেই হবে। আর তাছাড়া কাল সকালে আমার ফ্লাইট। আমরা কাল চলে যাচ্ছি।

-মানে??

-আমরা বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছিলাম। মা, বাবা আর আমি। আজই বাংলাদেশে আমার শেষ বিকেল। কালকের বিকেলটি নিউইয়র্কের একটি কাচে ঘেরা বিল্ডিয়ের ভেতর কাটাবো হয়তো।

-সত্যি সত্যি তুমি চলে যাবে? মানে তাহলে আজ কেনো তোমার সাথে আমার দেখা হলো? রিহানের মুখে কিছু হারিয়ে যাওয়ার ছায়া পড়ল।

স্নিগ্ধা বলল, আমি কিন্তু তোমাকে আগেই বলছি, আমার সাথে কথা বললে কষ্ট পেতে হবে। তুমি শুন নি।

রিহান বলল, তোমাকে আমার সত্যি সত্যি ভালো লেগেছে। আমার সত্যি সত্যি অনেক খারাপ লাগছে। কেমন জানি লাগছে। মনে হচ্ছে যেনো, মনে হচ্ছে যেন … আমি বুঝতে পারছি না।

রিহান, আমারও তোমাকে ভালো লেগেছে। আমার ভালো লাগতো যদি প্রতি বিকেল তোমার সাথে এমন ঘাসের উপর বসে কথা বলতে পারতাম। কিন্তু পারব না। বললে বলতে স্নিগ্ধা দাড়ালো। তারপর বলল রিহান ভালো থেকো। এটা আমার ই-মেইল। মেইলে কথা হবে। ভালো থেকো। অনেক ভালো।

রিহান কিছু বলতে পারে নি। শুধু তাকিয়ে থাকল স্নিগ্ধার দিকে। স্নিগ্ধা আস্তে আস্তে ছোট হতে লাগল। ছোট হতে হতে এক সময় অন্ধকারে হারিয়ে গেলো।

জাকির হোসাইন সম্পর্কে

একজন প্রোগ্রামার। লিখতে প্রচন্ড ভালোবাসি। দুটোই। কোড এবং গল্প বা ফিকশন। পেশা হিসেবে একজন ফ্রীল্যান্সার। প্রযুক্তি নিয়ে লেখা গুলো পাওয়া যাবে আমার টেক ডায়েরীতে
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে গল্প-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

4 Responses to ভীনদেশী তারা

  1. অক্ষর বলেছেনঃ

    এইটা কি একটা অদ্ভুত প্রেম কাহিনী ছিল। শুরুর আগেই শেষ। দেখাটাও কেমন যেন অদ্ভুত, চলে যাওয়াটাও। গল্প লেখা চলতে থাকুক। 🙂 ভালো হয়েছে।

  2. শারমিন বলেছেনঃ

    লিখাটা একটু অন্যরকম হয়েছে
    শুরুর আগেই শেষ মনে হয়েছে
    ভালো লেগেছে 🙂

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।