ঘটনা ১#
প্রতিবেশী এক ভাবীর হঠাৎ করে মিসকারেজ হলো। রাত প্রায় ১২টা। হুড়োহুড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে ডাক্তাররা ভাবীকে এক বছরের মধ্যে বাচ্চা নিতে নিষেধ করেছিলেন। নিষেধ সত্ত্বেও সন্তান ধারণ করার ফল ভালো হয় নি। সন্তান গর্ভেই নষ্ট হয়ে যাওয়া এক কথা কিন্তু ভাবীর শারীরিক অবস্থায় তার বেঁচে থাকা নিয়েই জটিলতা তৈরি হয়ে গিয়েছিলো। আল্লাহর রহমতে তাকে সেই অবস্থা থেকে সুস্থ করে তোলা গেলো। সুস্থ হবার পর ভাবীর সাথে কথা বলে জানা গেলো, তার অসুস্থতার ভেতরেও স্বামী-স্ত্রীর শারীরিক সম্পর্ক কখনো থেমে থাকে নি, ভাবীর কষ্ট হলেও তাকে সেটা চালিয়ে যেতে হয়েছে এবং তার সহধর্মী চেয়েছিলেন বলেই তিনি কনসিভ করতে বাধ্য হয়েছিলেন!
ফ্যাক্ট- ঘটনা ১ এর স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই শিক্ষিত। স্বামী বেসরকারী ব্যাংকে খুব ভালো অবস্থানে আছেন, ঘটনার সময় ভাবী গৃহিণী ছিলেন, সম্প্রতি তিনি একটি সরকারি ব্যাংকে জয়েন করেছেন। তারা নিঃসন্তান নন, সাড়ে তিন বছর বয়সের একটি ছেলে রয়েছে তাদের।
ঘটনা ২#
বিয়ের আগে এক ছোট বোনের ভালোবাসার মানুষ ‘অ্যানাল সেক্স’এর ব্যাপারে তার মতামত জানতে চাইলো। মেয়েটি স্পষ্ট জানিয়ে দিলো, ‘অ্যানাল সেক্স’ তার অপছন্দ এবং সে চায় না তার সাথে কখনো এটা করা হোক। ছেলেটিও জানালো, সঙ্গীর ইচ্ছাকে সে সম্মান করে, সাথে সাথে আশ্বস্ত করলো যে, তার অমতে এমন কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটবে না। কিন্তু বিয়ের প্রথম রাতেই ছেলেটি তার কথার খেলাপ করে। মেয়েটি লজ্জায়-অপমানে সারারাত কেঁদেছিলো!
ফ্যাক্ট- ঘটনা ২ এর স্বামী-স্ত্রীও শিক্ষিত। ছেলেটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত, মেয়েটি বেসরকারি ভার্সিটিতে তৃতীয় বর্ষে পড়ছে।
ঘটনা ৩#
এক ছোট আপুর সাথে বেশ কয়েক বছরের সম্পর্ক ছেলেটির। কিছুদিন আগে সে মেয়েটির সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের ইচ্ছা প্রকাশ করে। কিন্তু বিয়ের আগে কোনভাবেই মেয়েটি শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে রাজি হয় না। ছেলেটিও কখনো জোর করে মেয়েটির সাথে শারীরিক সম্পর্কে যেতে চাইবে না বলে কথা দেয়। কিন্তু যেহেতু তার নিজের শারীরিক চাহিদা আছে এবং যেহেতু মেয়েটি সেটা পূরণ করতে অসম্মত, তাই সে অন্য কারো মাধ্যমে তার চাহিদা পূরণ করবে বলে মেয়েটিকে জানায়। সে জানায়, মেয়েটিকে সে বিয়ে করবে, ভালোবাসবে, মেয়েটির ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করবেও না কিন্তু তার চাওয়াও সে শুধু মেয়েটির কারণে অপূর্ণ রাখবে না, সেটা যে কোনভাবে যে কারো মাধ্যমেই হোক না কেন সে পূরণ করবে!
ফ্যাক্ট- ঘটনা ৩ এর ছেলে এবং মেয়ে শিক্ষিত। ছেলেটির পুরো কোয়ালিফিকেশান আমার জানা নেই, মেয়েটি ভার্সিটিতে পড়া শুরু করবে।
মানুষের সাথে অনেক বেশি মেলামেশার কারণেই হয়তো দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাকে এইরকম অনেক ঘটনার কথা শুনতে হয়। দুর্ভাগ্য এই কারণে যে, নেতিবাচক এই ঘটনাগুলো প্রতিবার আমাকে নতুন করে আঘাত করে, আমাকে বারবার মনে করিয়ে দেয়, মেয়েদেরকে এই সমাজে এখনো কতখানি ছোট করা হয়, মানুষ না ভেবে ‘সেক্স অবজেক্ট ’ হিসেবে গণ্য করা হয়। এর আগেও আমি মেয়েদের ‘সেক্সুয়াল অবজেক্টিফিকেশন’এর বিষয়টা নিয়ে দু’বার (১ ও ২) লিখেছি। প্রতিবারই অবজেক্টিফিকেশনের কারণ হিসেবে বিভিন্ন মিডিয়ার (টিভি শো, গান, ম্যাগাজিন, কার্টুন, ইন্টারনেট, মুভি, বিজ্ঞাপন, পত্রিকা) কথা উঠে এসেছে কিন্তু এবারের মত এতো বেশি শকড আমি কখনো হই নি! মেয়েরা যে আজকাল ঘরের ভেতরেই সেক্সুয়াল অবজেক্টিফিকেশনের নির্মম শিকার, সেটা জানতে পারার পর থেকেই কেন যেন স্বাভাবিক হতে পারছি না। সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হলো, মেয়েরা তাদের জীবনের ভালোবাসার মানুষটির দ্বারাই এখন অহরহ এই অবজেক্টিফিকেশনের শিকার হচ্ছে!
সেক্সুয়াল অবজেক্টিফিকেশন একজন নারীর সাইকোলজিকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে সেই বিষয়ে বিস্তারিত আগেই লিখেছিলাম। ছোট্ট করে তবুও আরেকবার সারমর্মটা বলি,
সেক্সুয়াল অবজেক্টিফিকেশন মানেই মানুষকে শারীরিক বস্তুর পর্যায়ে ভাবা ও প্রকাশ করা এবং মানব সত্ত্বার অস্তিত্বকে হারিয়ে ফেলা। অবজেক্টিফিকেশন একটি মেয়ের স্বাভাবিক চিন্তা ও কর্মশক্তিতে বাধা দেয়। শুধু তাই নয়, এই অবজেক্টিফিকেশন একটি মেয়ের ভেতরে মানসিক হতাশা ও নিজের শরীর নিয়ে সবসময় লজ্জা পাওয়া, খুঁতখুঁতে বা ছোট হয়ে যাবার মত অনুভূতির জন্ম দেয় যে কারণে মেয়েটি কালচারাল স্ট্যান্ডার্ডে নিজের অস্তিত্ব নিয়ে সবসময় চিন্তিত থাকে। পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক জীবনযাপনে নিজের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলে।
সেক্সুয়াল অবজেক্টিফিকেশন নারীর সাইকোলজিতে যেমন প্রভাব ফেলে, ঠিক তেমনি পুরুষদের সাইকোলজিতেও নিশ্চয়ই এর প্রভাব বিদ্যমান। নতুবা শুরুতে উল্লেখিত তিনটি ঘটনা নিয়ে আজ আমায় লিখতে হতো না। সম্পর্ক ও নারীদের জীবন নিয়ে আমার শোনা এবং দেখা অনেক অনেক ঘটনার মাঝে এখানে যে তিনটা ঘটনা ছোট্ট করে উপস্থাপন করেছি সেগুলোর প্রতিটি শোনার পরে মনের ভেতর একটা প্রশ্ন সবসময়ই এসেছে। সেটা হলো,
পুরুষরা আজকাল নারীদেরকে কীভাবে মূল্যায়ন করছে এবং নারীদেরকে সেক্স অবজেক্ট হিসেবে দেখার ফলাফল কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে?
‘জার্নাল অব সেক্স রিসার্চ’এর ২০১১ সালের ইস্যুতে প্রকাশিত পিটারসেনের এক গবেষণায় (( Jennifer L. Petersen & Janet Shibley Hyde (2011). Gender Differences in Sexual Attitudes and Behaviors: A Review of Meta-Analytic Results and Large Datasets, 149-165 )) বলা হয়, শারীরিক সম্পর্কের ব্যাপারে পুরুষ এবং নারীদের চিন্তা ও ব্যবহারে ভিন্নতা দেখা যায়। দৈহিক অন্যান্য চাহিদার মতই শারীরিক চাহিদার কথা নারীদের চেয়ে পুরুষরা দিনে প্রায় দ্বিগুণ বেশি চিন্তা করে। আর এই চিন্তায় প্রভাব রাখে এখনকার সহজলভ্য-সস্তা পর্ণোগ্রাফি, নগ্ন ছবি, ফেইসবুকের ১৮+ পেইজ ইত্যাদি।
একটা ছেলে যখন নগ্ন কোন ছবি দেখে তখন তার ব্রেনের ভেতরে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কিছু রাসায়নিক পদার্থের (টেস্টোস্টেরন, ডোপামিন, নরএপিনেফ্রিন) ধারাবাহিক ছুটোছুটি শুরু হয়ে যায় (( Harold Mouras et al., “Brain Processing of Visual Sexual Stimuli in Healthy Men: A Functional Magnetic Resonance Imaging Study,” Neuroimage 20, 2 (October 2003): 855–869 )) । পর্ণোগ্রাফিক ছবির প্রতি ব্রেনের এই রেসপন্স যখন শুরু হয়, ব্রেন তখন একে ‘সেক্সুয়াল কিউ’ হিসেবে ধরে নেয় যা কিনা একটা স্মৃতি হিসেবে ব্রেনের ভেতরেই রয়ে যায় (( William M. Struthers, Wired for Intimacy: How Pornography Hijacks the Male Brain (Downers Grove, IL: InterVarsity Press, 2009) )) !
শুধু তাই না, দেখে দেখে শিখে নেয়ার জন্যে দায়ী মাথার সামনের দিকের (ফ্রন্টাল এবং প্যারাইটাল লোব) নিউরনগুলো, পর্ণে দেখানো কাজগুলোকে আয়নার প্রতিচ্ছবির মত ধরে রাখে (( Justin H. G. Williams et al., “Imitation, Mirror Neurons and Autism,” Neuroscience andBiobehavioral Reviews 25, 4 (June 2001): 287; Sarah Archibald, “Mirror Image,”NatureReviews Neuroscience 7, 4 (January 2006) )) , যার কারণে ছেলেরা তাদের সঙ্গীর সাথে পরবর্তীতে হুবুহু ঐ কাজগুলোই করতে চায়! অর্থাৎ সস্তা এসব পর্ণোগ্রাফি জীবনসঙ্গীর সাথে ভালোবাসার বন্ধনের শক্ত জায়গাগুলোকে রীতিমত ছিনতাই করে তাদেরকে সেক্স অবজেক্ট হিসেবে ধরে নিতে এবং সেক্স অবজেক্ট হিসেবেই ব্যবহার করতে অভ্যস্ত করে তোলে (( Harold Mouras et al., “Activation of Mirror-Neuron System by Erotic Video Clips Predicts Degree of Induced Erection: An fMRI Study,” Neuroimage 42, 3 (September 2008): 1142–1150 )) !
২০০৯ সালে পরিবার ও সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয়গুলো নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বিজ্ঞানীদের গবেষণা, আর্টিকেল, সংবাদ এবং সাক্ষাৎকার উঠে আসে ‘ফ্যামিলিজ অ্যাজ দে রিয়েলি আর’ (( W.W. Norton and Co. (2009). Families as They Really Are )) বইতে।
এই বইতে প্রকাশিত প্রায় তের হাজার মানুষের ওপর চালানো এক গবেষণা থেকে দেখা গেছে, যে কোন সঙ্গীর সাথে প্রথমবার শারীরিক সম্পর্কে গিয়ে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ পুরুষ দৈহিক চাহিদা পূরণের পূর্ণ তৃপ্তি লাভ করে, অন্যদিকে অপরিচিতের সাথে প্রথমবারেই সন্তুষ্টি লাভ করে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ নারী। কিন্তু দীর্ঘদিনের ভালোবাসার মানুষের সাথে শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সন্তুষ্টি লাভের এই হার নারী এবং পুরুষ উভয়ের জন্যে প্রায় কাছাকাছি! অর্থাৎ সঙ্গীকে কেবলমাত্র সেক্স অবজেক্ট হিসেবে নিয়ে দৈহিক চাহিদা মেটানো ছেলেদের জন্যে তুলনামূলকভাবে সহজ, অন্যদিকে নারীর দৈহিক চাহিদার পরিপূর্ণতা সঙ্গীর বিশ্বস্ততার উপর নির্ভরশীল।
মেয়েদেরকে সেক্সুয়াল অবজেক্ট ভাবার এই প্রবণতার ফলাফল কী?
বিভিন্ন মিডিয়ার কল্যাণে নারীদেহের নগ্নতা যেহেতু এখন অনেকটাই সহজলভ্য, তাই মোবাইলের স্ক্রিনে কিংবা কম্পিউটারে একজন পুরুষ চাইলেই ২ মিনিটের ভেতর শতেক সুন্দরীদের ছবি দেখে নিতে পারে। একশ ছবির ভেতর একটা ছবি দেখে যতক্ষণে তার মনে হয়, এটাই বেস্ট আর এটাই শেষ, ততক্ষণে দেখা যায়, আরো ৩০ সেকেন্ড চলে গেছে এবং ঐ বেস্ট ছবি ফেলে আরো কয়েকটা হট ছবি তার দেখা হয়ে গেছে! ভালো লাগার পরেও একটা ছবি ফেলে আরো কয়েকটায় ঘুরে আসার এই ব্যাপারটা মানুষের ভেতরে পরোক্ষভাবে যে ধারণার জন্ম দেয়, তা হলো, মানুষ আসলে ডিসপোজেবল (( Read Mercer Schuchardt, “Hugh Hefner’s Hollow Victory: How the Playboy Magnate Won the Culture War, Lost His Soul, and Left Us with a Mess to Clean Up,” Christianity Today, December 2003, 50–54 )) , অর্থাৎ, একবার ব্যবহার করার পর ফেলে দেয়ার বস্তু!
সেক্সুয়াল অবজেক্টিফিকেশনের ট্রিগার ছেলেদের মাঝে সঙ্গীর শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে এক ধরনের ছবি তৈরি করে দেয়। আইডল ধরে নেয়া এই ছবির সাথে তার সঙ্গীর ছবি না মিললে সে তখন তার ব্রেনে সেট হয়ে বসে থাকা আইডল ছবি থেকে ‘সেক্সুয়াল কিউ’ নিয়ে তারপর শারিরিক সম্পর্ক স্থাপন করে! অর্থাৎ যে ভালোবাসা নৈতিকভাবে তার সঙ্গীর প্রাপ্য, সেই ভালোবাসা সে বিকিয়ে দিচ্ছে মাথার ভেতরের নগ্ন কিছু প্রতিচ্ছবির কাছে!
এটা সত্যি যে প্রাকৃতিকভাবে ছেলেরা মেয়েদের প্রতি আকর্ষণ বোধ করবে। কিন্তু তার অর্থ এই না যে, প্রকৃতি থেকে ছেলেদের মাথায় মেয়েদেরকে কেবল ‘সেক্স অবজেক্ট’ হিসেবে ভাবতে শেখানোর প্রোগ্রাম সেট করে দেয়া আছে। একটা ছেলের চারপাশের মানুষ, পরিবেশ, সংস্কৃতি বড় একটা প্রভাব রাখে, সে তার সঙ্গীকে কীভাবে এবং কতটা মূল্যায়ন করছে তার উপর। ‘আত্ম’ সম্পর্কে হীনমণ্যতায় ভুগতে থাকা ছেলেদের মাঝে খুব সহজেই প্রকৃতি প্রদত্ত প্রবৃত্তিকে উশকে দেয়া যায়। মার্কেটিং এর এই যুগে কোম্পানিগুলো এখন ঠিক এই কাজটাই করে।
২০১২ সালে হাফিংটন পোস্টে (( http://www.huffingtonpost.com/2012/07/25/women-and-objectification_n_1701275.html )) আসা একটা রিপোর্টে বলা হয়, আজকাল ব্রেনের সামনে ছেলেদেরকে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে আর মেয়েদেরকে যন্ত্রের মত পার্ট বাই পার্ট হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এতে করে ব্রেন সাধারণ ঘরোয়া মেয়েদেরকেও ‘সেক্সুয়াল পার্ট’ হিসেবে দেখতে শুরু করে!
প্রশ্ন হলো, উল্লেখিত ঘটনার পুরুষ চরিত্রের প্রত্যেকেই যথেষ্ট শিক্ষিত, তাদের পারিবারিক, সামাজিক এবং আর্থিক অবস্থানও বেশ শক্ত, তাদের সঙ্গীরাও প্রত্যেকেই ভদ্র-মার্জিত সমাজের প্রতিনিধি, তাহলে কেন তারা সঙ্গীদের কাছে ‘ভালোবাসা’ দাবী না করে ‘শরীরটাকে’ দাবী করছে?
আমি বলছি না, উল্লেখিত তিনটি ঘটনার প্রতিটি পুরুষ চরিত্র পর্ণ অ্যাডিক্ট। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে, যেভাবেই হোক না কেন তারা তাদের সঙ্গীকে ‘সেক্স অবজেক্ট’ হিসেবে ধরে নিয়ে আচরণ করেছে। তা না হলে, শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে সঙ্গীদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাও তাদের কাছে প্রাধান্য পাবার কথা।
আমরা বারবার ভুলে যাই যে, ‘ভালোবাসা’ অনুভূতিটায় সবসময় উত্তেজনা পূরণ করাটাই মুখ্য ব্যাপার নয়। আর তাই *শুধুমাত্র* এই অংশটাকে পূরণ করার জন্যে সঙ্গীর মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে অসম্মান করার মত অসুস্থ মানসিকতার প্রকাশই আমাদের আশেপাশে এ ধরনের ঘটনাগুলোর জন্ম দিয়েছে, দিচ্ছে এবং এই অবস্থা চলতে থাকলে এমন অসুস্থ মানসিকতা ভবিষ্যতেও আরো অনেক দুঃখজনক ঘটনার জন্ম দেবে।
আমি জানি, বর্তমান শিক্ষিত সমাজের সব পুরুষ অবশ্যই এক নয়, কিন্তু এতো এতো ঘটনা শুনে আজকাল এটাও টের পাচ্ছি যে, ঘরের ভেতরে নিজের জীবনসঙ্গীকে ‘সেক্স অবজেক্ট’ হিসেবে গণ্য করা পুরুষের সংখ্যাও নেহায়েৎ কম কিছু নয়। আমার শুধু মনে হয়, তারা কি একবারও ভাবে যে, শরীর জিনিসটা শুধু ‘নেয়ার’ ব্যাপার নয়, ‘দেয়ার’ও ব্যাপার বটে? তারা কি জানে যে, কাকে নিজেদের শরীরটা তারা দিচ্ছে? কৃত্রিমভাবে তৈরি কোন রগরগে নারীদেহকে নাকি প্রাকৃতিভাবে শিল্পায়িত তার জীবনসঙ্গী ও ভালোবাসার মানুষটিকে, তার সন্তানের মাকে?
বিশেষ দ্রষ্টব্য
- এই লেখাটি কোন ব্যক্তি, মিডিয়া বা প্রতিষ্ঠানকে হেয় করার জন্য লেখা নয়। তারপরেও লেখার মাধ্যমে কেউ অনিচ্ছাকৃত আঘাত পেয়ে থাকলে লেখক হিসেবে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
- লেখার সাথে কোন ব্যক্তি নিজেকে মিলিয়ে কোন সাদৃশ্য খুঁজে পেলে তার দায়ভার সেই ব্যক্তির ওপর বর্তাবে, কোনভাবেই লেখকের ওপর নয়।
- লেখার সাথে যুক্ত সবগুলো ছবিকে ঝাপসা করে ছবির মান ইচ্ছাকৃতভাবে কমিয়ে দেয়া হয়েছে। লেখক হিসেবে আমি চাই নি যে ছবির ব্যক্তিদের কেউ আমার লেখনীর মাধ্যমে ছোট হোক বা সেক্সুয়ালি অবজেক্টিফায়েড হোক। ছবির প্রয়োজনে আমার এই লেখা নয়, বরং লেখার প্রয়োজনেই ছবিগুলো এসেছে।
- লেখায় উল্লেখিত গবেষণাগুলো সমকামী, বাইসেক্সুয়াল ও ট্রান্সজেন্ডারদের জন্যে প্রযোজ্য নয়।
- ছেলেরাও সেক্সুয়ালি অবজেক্টিফায়েড হতে পারে, কিন্তু মেয়েদের তুলনায় তার অনুপাত কম বলে এখানে সাধারণভাবে মেয়েদের জন্যেই কথাগুলো উঠে এসেছে।
- লেখাটি পাঠকপ্রিয়তা পেলে অর্থাৎ পাঠক চাইলে সেক্সুয়াল অবজেক্টিফিকেশনের নেতিবাচক দিক ও এর থেকে বেরিয়ে আসার জন্যে ইতিবাচক উপায়গুলোর বিস্তারিত নিয়ে পরবর্তী সিরিজ লেখার কথা চিন্তা করা হবে। সম্পূর্ণটাই নির্ভর করছে পাঠকের চাওয়া ও ইচ্ছের ওপরে।
সেক্সুয়াল অবজেক্টিফিকেশন নিয়ে আমার আগের দুটো পোস্ট:
তথ্যসূত্র:
চমৎকার একটি সিরিজ।প্রথম মন্তব্যকারী আমি 🙂
আমার পরিচিত সবাই ব্যক্তিগত ভাবে দিয়ে লেখাটি পড়তে বলব।সচেতনা মূলক লেখা।
অনেক কষ্ট করে এত সুন্দর একটা লেখা জন্য ধন্যবাদ এবং
শুভ কামনা। :love:
২০১৫ তে বই হিসেবে চাই!
কিছু সমালোচনা সহ মন্তব্য করব দাঁড়াও।
বরাবরের মতোই ভালো লিখেছিস বুবু 😀
ভালো লাগলো
🙂 অসম্ভব রকম ভাল্লাগলো। এটাকে সমর্থন করে কিছু লিখতে মন চাচ্ছে।
এটা সত্যি যে প্রাকৃতিকভাবে ছেলেরা মেয়েদের প্রতি আকর্ষণ বোধ করবে। কিন্তু তার অর্থ এই না যে, প্রকৃতি থেকে ছেলেদের মাথায় মেয়েদেরকে কেবল ‘সেক্স অবজেক্ট’ হিসেবে ভাবতে শেখানোর প্রোগ্রাম সেট করে দেয়া আছে। একটা ছেলের চারপাশের মানুষ, পরিবেশ, সংস্কৃতি বড় একটা প্রভাব রাখে, সে তার সঙ্গীকে কীভাবে এবং কতটা মূল্যায়ন করছে তার উপর। ‘আত্ম’ সম্পর্কে হীনমণ্যতায় ভুগতে থাকা ছেলেদের মাঝে খুব সহজেই প্রকৃতি প্রদত্ত প্রবৃত্তিকে উশকে দেয়া যায়। মার্কেটিং এর এই যুগে কোম্পানিগুলো এখন ঠিক এই কাজটাই করে।
চমৎকার লিখেছ আপুনি :clappinghands: :love:
অসাধারন লেখা ……………,
পড়ে মনে হল মানুষ হওয়া টা এখন ও অনেক বাকি , প্রতিটি ছেলেরই উচিত লেখাটি অন্তত এক বার পড়া ।
লেখা চালিয়ে যাবার অনুরধ রইল……………।।
এধরনের লেখার সত্যি-ই খুব খুব…… প্রয়োজন ।
শূভকামনা