বইয়ের ভুবন ও লেখককুঞ্জ(৮): একুয়া রেজিয়া

বই পড়তে ভালোবাসেন এমন কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, একটি উৎসবের নাম বলুন, যেটা গোটা বাঙ্গালী জাতিকে এক সুতোয় গাঁথে? এক শব্দের যে উত্তরটি শোনা যাবে নিঃসন্দেহে সেটা অনুমান করা খুব কঠিন কিছু নয়। বাঙ্গালীর প্রাণের মেলা, নিজের ভেতরকার ‘আমি’ কে খুঁজে পাওয়ার মেলা,  বাঙ্গালিয়ানার মেলা- অমর একুশে বইমেলা।

বইমেলার চিন্তাটি প্রথম যার মাথায় আসে তিনি হলেন প্রয়াত কথাসাহিত্যিক ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক সরদার জয়েনউদদীন। ষাটের দশকে তিনি যখন বাংলা একাডেমিতে পরিচালক পদে ছিলেন, তখন বাংলা একাডেমি প্রচুর  বিদেশি বই সংগ্রহ করত। তিনি ‘Wonderful World of Books’ পড়তে গিয়ে ‘Book’ এবং ‘Fair’ শব্দ দুটি দেখে বেশ পুলকিত বোধ করেন। বইয়েরও যে মেলা হতে পারে, সেই চিন্তার শুরু সেখান থেকেই। ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর নিচতলায় শিশু গ্রন্থমেলার আয়োজন করেন। ধারণা করা হয়ে থাকে, এটিই ছিল বাংলাদেশের প্রথম বই মেলা। তারপর ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক গ্রন্থবর্ষ উপলক্ষে সরদার জয়েনউদদীন বাংলা একডেমি প্রাঙ্গণে একটি আন্তর্জাতিক বইমেলা আয়োজন করেন। তারপর থেকেই বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনে বই মেলার যাত্রা শুরু। (তথ্যসূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ৩১শে জানুয়ারি, ২০১৪)

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে চলা এ উৎসবে  লেখক- পাঠক- সমালোচক সবাই মিলে-মিশে একাকার হয়ে যান। পৃথিবীতে আর কোনো বইমেলাই এত দিন ধরে চলে না। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে এটি পৃথিবীর দীর্ঘদিনব্যাপী আয়োজিত একটি বইমেলা। তবে এবারই প্রথম বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গন ছাড়াও সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে হচ্ছে বই মেলা। প্রতিবছর বইমেলায় লেখক পরিচিতিতে পুরাতন লেখকদের পাশাপাশি দেখা যায় অনেক নতুন ও তরুণ মুখকে। লেখালেখি জীবনে ব্লগ থেকে বইতে পা রেখেছেন যারা, তাদের ভাবনার জগত পাঠকদের সামনে উপস্থাপনের প্রয়াসে গত বছরের মত এবছরও সরব ব্লগে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে, ‘বইয়ের ভুবন ও লেখককুঞ্জ’।

অপেক্ষায় থাকুন নতুন বইয়ের, অপেক্ষায় থাকুন নতুন সাহিত্যিকের…

বইমেলা হোক সরব, প্রাণের উৎসবে!


১) নিজের সম্পর্কে কিছু বলবেন?

কাগজে কলমে নাম মাহরীন ফেরদৌস। একুয়া রেজিয়া নিক নিয়ে ব্লগিং শুরু করি ২০১০ সালে। লেখালেখির সূচনা ছেলেবেলা থেকে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এরপর ব্লগিংয়ের মাধ্যমে। গত বছর অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে আমার প্রথম ছোটগল্প সঙ্কলন ‘নগরের বিস্মৃত আঁধার’। এ বছর প্রকাশিত হয়েছে প্রথম উপন্যাস “কিছু বিষাদ হোক পাখি”। বর্তমানে একটি প্রাইভেট ফার্মে কর্মরত আছি। লেখালেখি করতে ভালোবাসি। অবসরের সঙ্গী বই ও গান।

২) লেখালেখির সাথে সম্পর্কের শুরু হলো কী করে?

আমার মা লেখালেখি করেন। বড় ভাই-বোনেরা রেডিও, টেলিভিশনে এক সময় নিয়মিত রবিন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন। ছেলেবেলা থেকেই সংস্কৃতমনা পরিবারে বেড়ে ওঠা আমার। জীবনে প্রথম ছোটগল্প লিখেছিলাম ক্লাস ফাইভে পড়ার সময়। সকালে ঘুম ভেঙে প্রায় প্রতিদিনই দেখেছি মা তাঁর লেখার টেবিলে বসে লিখছেন। হয়ত ছেলেবেলা থেকেই লেখালেখির সাথে আমার সম্পর্কটা পারিবারিক এবং আত্মিক।

৩) কেন লিখেন? লেখালেখি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করলে আসলে লেখালেখি কতটুকু সফল হয় আমি তা জানি না। লেখালেখিকে আমি শ্রেষ্ঠ কাজ মনে করি। সাধনা মনে করি। একটা ভালো লেখা লিখতে হলে অনেক কিছু জানতে হয়, বুঝতে হয়, অনুভব করতে হয়। শেখার কোনোই শেষ নেই। তাই শিখে যেতে চাই ও সাধনা করে যেতে চাই। মাঝে মাঝে শুধু মন খারাপ হয়, এই পৃথিবীর সব বই পড়ে ফেলার জন্য, সব কিছু জানার জন্য একটা জীবন বড়ই ছোট।

৪) লেখালেখির ক্ষেত্রে কোন অনুপ্রেরণা আছে কি? কাউকে কি অনুসরণ করেন?

কাউকে অনুসরণ করি না তবে অনুপ্রেরণা তো আছেই, আমার সহব্লগার, আমার পাঠক এবং যাদের লেখা পড়ে নিত্যই কিছুনা কিছু শিখছি তাঁরা সকলেই আমার অনুপ্রেরণা।

৫) অনেকের ধারনা এখন অধিকাংশ লেখকের লেখা একই প্যাটার্নের হয়ে থাকে, নতুনত্ব খুব কম পাওয়া যায় – আপনি কি এর সাথে একমত?

“অনেকে” শব্দটা ভীষণ পুরানো একটি শব্দ আর যে প্রসঙ্গ বললেন সেটিও ভীষণ পুরানো। এই “অনেকে” শব্দে বন্দি মানুষরা যুগ যুগ ধরে ধারণা করে এসেছেন, বলে এসেছেন, এবং বলে যাবেন। একঘেয়েমি, নতুনত্ব ব্যাপারগুলো সব ক্ষেত্রেই কম বা বেশি থাকবেই। আমি একজন আশাবাদী ধরণের মানুষ তাই আমি মনে করি সব বিষয় নিয়েই নিয়ত নতুন কিছু করার চেষ্টা করে যাওয়াই মূখ্য কাজ।

৬) নতুন লেখকদের বিষয়ে পাঠকদের মনোভাব কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?

ইতিবাচক আর উৎসাহমূলক মনোভাব হওয়া উচিত। নতুন লেখকদেরকে পাঠকরা ইতিবাচকভাবে না দেখলে ভবিষ্যতে তাঁরা লেখালেখির জগতে ভালো সাহিত্যিক পাবে কীভাবে?

৭) আপনি তো ব্লগে লিখেছেন এখনও লিখছেন। বই লেখা তো বেশ বড় পরিসরের ব্যাপার। একটি বই লেখার ক্ষেত্রে ব্লগে লেখার অভিজ্ঞতা কতোটুকু সহায়ক বলে আপনি মনে করেন?

আমার লেখালেখির মূল হাতেখড়ি ব্লগিং করতে এসেই। তাই আমার লেখালেখির ব্যাপারে ব্লগে লেখার অভিজ্ঞতা অনেক সাহায্য করেছে। আমি আমার সকল সহব্লগারদের প্রতি অসম্ভব রকমের কৃতজ্ঞ।

৮) লেখার মাধ্যমে নিজের চিন্তাগুলোকে আপনি পাঠকদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এই ব্যাপারটাকে আপনি ঠিক কীভাবে দেখেন?

লেখালেখির ব্যাপারে আমার এখনও নিজেকে বেশ অপরিণত মনে হয়। তাই আরও জানতে চাই, পড়তে চাই, লিখে যেতে চাই। আমার চিন্তা কিংবা আমার লেখার মাধ্যমে যেন পাঠকেরা নতুন কিছু, ভালো কিছু জানতে পারে।

৯) এটি আপনার লেখা দ্বিতীয় বই। প্রথম বই- ‘নগরের বিস্মৃত আঁধারে’ প্রকাশের পর পাঠকদের কেমন সাড়া পেয়েছিলেন?

‘নগরের বিস্মৃত আঁধারে’ প্রকাশের পর থেকে এখন পর্যন্ত পাঠকের সাড়া পেয়েই যাচ্ছি। প্রথম বই হিসেবে সবার কাছ থেকেই যথেষ্ট ইতিবাচক ও আশাজাগানিয়া মন্তব্য পেয়েছি।

১০) আপনার নতুন প্রকাশিত বই সম্পর্কে পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন?

আমার এবারের বই “কিছু বিষাদ হোক পাখি” লিখতে শুরু করেছিলাম অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে। লেখার সময় কেবল একটি কথাই মনে হয়েছে, বইটা পড়ে যেন একজন পাঠকেরও মনে না হয় তাঁর কষ্টের টাকায় বইটা কেনা ভুল ছিলো, কিংবা বইটা পড়ে সে মূল্যবান সময় নষ্ট করেছে। গত একটি মাসে অজস্র মানুষের বই নিয়ে পাঠ প্রতিক্রিয়া, ভালোবাসা, মন্তব্য, শুভকামনা দেখে অনুভব হয়েছে আমি অনেকটুকুই সফল। এরচেয়ে বেশি আর কিছুই চাওয়ার নেই। আমার এই পথ চলাতেই আনন্দ। আমার বইয়ের ফ্ল্যাপের কিছু অংশ আমি নতুন পাঠকদের জন্যে তুলে দিলাম। ‘শত সহস্র বছর ধরে পৃথিবীর বুকে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য মানুষ। পৃথিবীতে মানুষের জন্ম যেমন আলোকিত ঘটনা তেমনি মৃত্যু হচ্ছে অন্ধকারময়। জন্ম ও মৃত্যুর এই প্রকৃতিগত খেলার মাঝেই বসবাস বিশ্বের লক্ষ কোটি মানুষের।। স্থলভাগের নানা সমাজে উপস্থিত এমন সহস্রাধিক চরিত্রের এক প্রতিনিধির নাম সঞ্জনা। গল্পে বরাবরই সঞ্জনাকে স্পর্শ করে পরিবার, সমাজ ও জীবন দেখায় প্রতিকূলতা। গল্পে সহপাঠী-বন্ধু, পরিবার-প্রতিবেশীকে নিয়ে কয়েক দশকের যাপিত জীবনের আলাপ সৃষ্টি করে সঞ্জনা নামের চরিত্রটি। ছোট্ট অথচ নশ্বর জীবনে সেখানে যোগাযোগ ঘটে প্রেমের, মেলবন্ধন ঘটে মানুষের ভাবাবেগ ও জন্ম-মৃত্যুর অনুভূতির। আবেগ, প্রকৃতির নৈসর্গিকতা, সর্ম্পকের বিশ্বাস- ছলকলা, উৎসব-পার্বণ সবকিছুই এক ক্যানভাসে কালি ও কলমের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে “কিছু বিষাদ হোক পাখি” তে।। “কিছু বিষাদ হোক পাখি”- মূলত এক চরিত্রের গল্প তবে কয়েক চরিত্রের পুরো জীবনের গল্পও। প্রতিদিনই ভোরের আলো ফোটার অনেকটা সময় পর যখন সন্ধ্যা প্রদীপ নামে তখন একটি কথা বরাবরই হৃদয়ে বাজে-জীবনে যত কিছুই ঘটুক না কেন, মানুষ মূলত একা।

বই- ‘কিছু বিষাদ হোক পাখি’
লেখিকা: মাহরীন ফেরদৌস
প্রকাশকাল- অমর একুশে বইমেলা ২০১৪
প্রকাশনী- অন্যপ্রকাশ
প্রচ্ছদ- নির্ঝর নৈঃশব্দ্য।
ধরণ- উপন্যাস
মূল্য- ১৭৫ টাকা ডিসকাউন্ট বাদে ১৩৫ টাকা। পাওয়া যাচ্ছে অন্যপ্রকাশ (স্টল নং- ১৯৭, ১৯৮, ১৯৯, ২০০)

সাহিত্যস্বর সম্পর্কে

সরব বাংলাদেশে বই জনপ্রিয়করণের লক্ষ্যে কাজ করতে চায়। এই লক্ষ্যে আমরা নানান ধরনের কাজ করতে চাচ্ছি। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে একুশে বইমেলা ২০১২তে বিভিন্ন ব্লগারদের বই আমরা প্রোমোট করতে চাইছি। প্রতিদিন একজন করে ব্লগার/লেখক এর ইন্টারভিউ আমরা ছাপানোর পরিকল্পনা নিয়েছি।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বইপড়ুয়া, সাহিত্য-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

2 Responses to বইয়ের ভুবন ও লেখককুঞ্জ(৮): একুয়া রেজিয়া

  1. শারমিন বলেছেনঃ

    প্রতিদিনই ভোরের আলো ফোটার অনেকটা সময় পর যখন সন্ধ্যা প্রদীপ নামে তখন একটি কথা বরাবরই হৃদয়ে বাজে-জীবনে যত কিছুই ঘটুক না কেন, মানুষ মূলত একা।
    অনেক সুন্দর লিখেছ তো আপুনি
    আর তুমি তো এমনিতেও অনেক ভালো লিখো
    বইটা পড়ব দেখি 😀
    বইয়ের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা আপুনি :love:

  2. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    অনেক অনেক শুভকামনা আপু। 😀

    নিজেকে অপরিণত ভাবার পরিণত মন যার আছে – সেই বড় হয়!

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।