[কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৭ সালে ‘দ্যা লাস্ট লেকচার’ নামক একটি লেকচার সিরিজের আয়োজন করে। লেকচারের মূল বিষয় ছিলো, একজন যদি তার জীবনের শেষ বক্তৃতা দেয়ার সুযোগ পায়, তবে কী বলবে।
লেকচার দেয়ার সুযোগ পাবেন বিখ্যাত অ্যাকাডেমিক লোকজন।
১৮ই সেপ্টেম্বর ২০০৭-এ সেই লেকচার সিরিজেই বক্তৃতা দেন র্যান্ডি পশ, একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানের প্রফেসর, যার কাজের ক্ষেত্র ছিলো Human-computer interaction। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে যার হাতে সময় ছিলো আর মাত্র ৩-৬ মাস। জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়ানো একজন মানুষের জীবনের স্বপ্ন, ইচ্ছাপূরণ ও এ নিয়ে ভাবনার প্রকাশ ঘটে ‘Really achieving your childhood dreams’ লেকচার এ।
এই লেকচারের সংক্ষেপিত অনুবাদ-ই ‘ইচ্ছাপূরণ’।]
প্রথম পর্ব
আজকে এখানে থাকতে পারা খুব চমৎকার একটা বিষয়।
অনেকেই হয়তো এখানে এসেছেন যারা আমার পেছনের ঘটনাগুলো কিছু জানেন না। তাদের জন্য-ই বলছি, এই মুহূর্তে আমার ক্যাট স্ক্যান করা হলে, আমার যকৃতে মোটামুটি ১০টার মতো টিউমার পাওয়া যাবে। আমার ডাক্তার সময় দিয়েছে ৩-৬ মাস, তাও আরও এক মাস আগের কথা। বুঝতেই পারছেন।
আমরা এখন এটার কোন পরিবর্তন করতে পারবো না। শুধু ভাবতে পারি বাকী সময়টার সবচেয়ে ভালো ব্যবহার কী হতে পারে।
আজকে আমি এখানে আমার ক্যান্সার নিয়ে কোন কথা বলবো না। এখানে আমার পরিবার বা ধর্ম নিয়েও কোন কথা হবে না। শুধুই বলার চেষ্টা করবো আমার ছেলেবেলার স্বপ্নগুলো নিয়ে। তাদের কিভাবে পূরণ করতে পেরেছি অথবা পূরণের চেষ্টায় কী শিখেছি। সে শিক্ষাগুলো কিভাবে আমার সাথে সাথে অন্যদেরও স্বপ্নপূরণে সাহায্যে এসেছে-সেটা নিয়েই কথা বলবো আজ। অনেকেই সময়ের সাথে বুঝতে শিখে যায়, অন্যদের স্বপ্ন দেখাতে পারা, নিজের স্বপ্নপূরনের চেয়েও অসাধারণ।
শুরু করি আমার ছেলেবেলার ইচ্ছাগুলো কী ছিলো, তা দিয়ে: মহাকর্ষহীনতায় থাকা, ন্যাশনাল ফুটবল লিগে খেলা, ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপিডিয়ার একজন লেখক হওয়া। নিশ্চয়ই আঁতেল বলতেই পারেন? কিন্তু, অ্যামিউজমেন্ট পার্কে বড় স্টাফড অ্যনিমেল জেতা অথবা ডিজনির পার্ক ডিজাইনার হবার স্বপ্নও আমার ছিলো।
প্রথমেই আসি ‘জিরো গ্রাভিটি’ দিয়ে। ছোটবেলায়-ই জানতে পেরেছিলাম, নভোচারী হওয়া সম্ভব হবে না-চোখে যে মোটা চশমা। আর আমার নভোচারী হবার ইচ্ছেও ছিলো না, শুধুই চাইতাম মহাকর্ষহীনতাকে অনুভব করতে। একটাই উপায় বাকী ছিলো। নাসা তার নভোচারীদের প্রশিক্ষণে একটা অংশে ‘Vomit comet’ নামে একটা জিনিস ব্যবহার করে। এটার ডিজাইন এমনভাবে করা যেন চলার একটা অংশে ওজনহীনতা অনুভব করা যায়।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একটা প্রতিযোগিতায় প্রথম হলে ‘Vomit comet’ এ চড়ার সুযোগ ঘোষণা করা হলো। আমি শিক্ষক হিসেবে একটা টিমকে নিয়ে খুব খেটে প্রতিযোগিতা জিতেও গেলাম। এর পরই- প্রথম ধাক্কা! কোন শিক্ষক এতে বিজয়ী দলের সাথে জেতে পারবেন না। এতো কাজ করে প্রতিযোগিতা জেতার পরে এটা ছিলো হৃদয় ভাঙার মতো ব্যপার।
এরপর হঠাৎ জানতে পারলাম, নাসা তার পাবলিসিটি প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে একজন স্থানীয় সাংবাদিককে সাথে যেতে দিবে। সাথে সাথেই ফোন দিলাম নাসা-য়। তাদের বললাম, শিক্ষক হিসেবে আমার রেজিগনেশন আর সাংবাদিকতার আবেদনপত্র একসাথে ফ্যাক্স করে দিচ্ছি। অনেক কথাবার্তার পরে আমি ঠিকই গিয়েছিলাম সেখানে। সবসময়-ই মনে রাখা প্রয়োজন, একটা উপায় বন্ধ হয়ে গেলেও ইচ্ছাপূরণের জন্য অন্য উপায় ঠিকই বের করে নেয়া যায়।
এবার আসি ফুটবল নিয়ে।
আমার প্রথম কোচ যখন শেখাতে এলেন, তখন তার সাথে কোন ফুটবল ছিলো না। আমাদের অবাক হওয়া দেখে উনি বলেছিলেন, একটা খেলার সময় ২২ জন খেলে। বল থাক একজনের কাছে, বাকী ২১ জন কী করে, সেটা শেখাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তোমার হাতে যতক্ষণ বল থাকবে তার অনেক বেশি সময় বল ছাড়াই তোমাকে থাকতে হবে।
জীবনে অসাধারণ মুহূর্তগুলো খুব কম আসে। সাধারণ মুহূর্তে টিকে থাকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একই সাথে, গঠনমূলক সমালোচনাকে গ্রহণ করা দরকার উদারভাবে, কারণ সমালোচনাকারী তোমার ভালো চায় দেখেই তোমাকে নিয়ে ভাবে।
আমার পরবর্তী কোচের একটি শেখানোর উপায় ছিলো একজনের জন্য সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত তৈরি করা। হয়তো যে সবচেয়ে খাটো তার পাশ ঘিরে দাঁড় করিয়ে দেয়া হলো সবচেয়ে লম্বা খেলোয়াড়দের। কিছু হারানোর নেই-এই স্বাধীনতার মতো অন্য কোন স্বাধীনতা হতে পারে না। সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তগুলোই পরবর্তী জীবনে ওই পরিস্থিতিগুলোকে সহজ করে তোলে।
আমি হয়তো ন্যাশনাল ফুটবল লিগে খেলতে পারি নি। তবে খেলার চেষ্টায় আমি খেলার চেয়েও আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস শিখেছি।
আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন খেলা শেখানোর চেষ্টা করি। তবে, আসলে আমরা যতটা চাই তারা খেলাটা শিখুক, তার চেয়ে অনেক বেশি চাই খেলার সাথের জিনিসগুলো তারা শিখুক পুরোদমে: টিমওয়ার্ক, জেতার উৎসাহ, হার থেকে শেখার চেষ্টা, বাধা সত্ত্বেও এগিয়ে যাওয়া। এগুলোই সাহায্য করে যাবে আজীবন।
এবার আসি ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপিডিয়ার লেখক হলাম কিভাবে সেটা নিয়ে। এটা খুব সহজ ছিলো। আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বছরে, ‘ভার্চুয়াল রিয়ালিটি’ নিয়ে বেশ ভালো রকম পড়ালেখা করে ফেললাম। আবার আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ কেউ ছিলাম না। আমার মতো মানুষকেই ওয়ার্ল্ড বুক লেখার জন্য খোঁজে। তারা আমার সাথে যোগাযোগ করায় , একটি কলাম লিখেই পূরণ হলো আরেকটা স্বপ্ন।
অ্যামিউজমেন্টে পার্কে স্টাফড অ্যানিমেল জেতা হয়তো আপনাদের কাছে তেমন কিছু মনে হচ্ছে না। কিন্তু, আমি যখন ছোট ছিলাম আর অ্যামিউজমেন্ট পার্কে বড় বড় সব লোকেরা সব বড় স্ট্যাফড অ্যানিমেলগুলো নিয়ে যেত। আমি জানতাম, আমাকেও ওরকম পেতে হবে। [প্রজেক্টরে বক্তার বিভিন্ন বড় বড় স্টাফড অ্যানিমেল নিয়ে ছবি দেখানো হয়।] আমি জানি, অনেকের মনেই সন্দেহ হচ্ছে, এগুলো আমি আসলেই পেয়েছি, নাকি কোথাও গিয়ে ছবি তুলে এখানে ভাব নিচ্ছি।
আপনারা জানতে চান কিভাবে সন্দেহপ্রবণদের সন্দেহ দূর করতে হয়?
সন্দেহের জিনিস সরাসরি দূর করে। [ছবিতে দেখানো স্টাফড অ্যানিমেলগুলো বক্তা স্টেজে দেখানো শুরু করেন]
যারা সন্দেহ করে তাদের সবসময় এমনভাবে জবাব দিন যেন সন্দেহ বিশ্বাসে বদলে যায়।
[চলবে…যদি পাঠকেরা চায়]
স্বাগতম!
র্যান্ডি পশ খুবই প্রিয় একজন।
চলুক চলুক
ট্যাগ বাংলায় দিস। এতে খুঁজে পেতে সুবিধা।
“চলবে…যদি পাঠকেরা চায়”
এই যে একজন পাঠক আমি। চাইলাম 😀
ভাইয়া, অনেকদিন পর লিখলা। অসাধারণ বললেও কম হবে তবে পুরো মন্তব্য পুরোটা পড়ার পর করবো। অপেক্ষায় রইলাম।
:love:
ভাইয়া অনেকদিন পর আপনার লিখা পড়লাম
:welcome: 😛
দারুণ
আরও চাই
পরের পর্বের আশায় রইলাম 😀
খুবই অনুপ্রেরণাময়! ভালো লাগলো! সুন্দর ঝরঝরে হয়েছে অনুবাদ :happy:
চালিয়ে যান!
ভালো লেগেছে ভাইয়া।
অ-নে-ক-দি-ন পর! খুব খুশি হলাম আপনাকে দেখে! 😀 😀
পরের পর্বের জন্য অপেক্ষয় রইলাম। খব ভাল লাগলো।
*খুব
ভালো লাগলো।
চলবে না মানে,চলতেই হবে।অসাধারণ লেখা।পরবর্তি লেখা তাড়াতাড়ি চাই। :dhisya: :dhisya: :dhisya: :dhisya:
valo legeche khub!
amio emon speech dite chai………….. 🙂
welcome back…bohudinn por shorobe dhuke prothom comment…. 🙂
How much aggressive just to fulfill a simple childish will.This is the difference between a great man and mediocre.
“শিক্ষক হিসেবে আমার রেজিগনেশন আর সাংবাদিকতার আবেদনপত্র একসাথে ফ্যাক্স করে দিচ্ছি।”
চলুক…
অনেক ভালো লেগেছে। পরের পর্ব কখন পাবো?