রোবো

কি নাম তোমার?

আমার নাম মিমি।

মিমি, আমি তোমার সাথে খেলতে এসেছি। আজ থেকে প্রতিদিন তোমার সাথে খেলবো।

 

তাই নাকি? দারুণ হবে। আচ্ছা, তোমার নাম কি??

আমার নাম? আমার নাম বিশাল, অনেক বিশাল। একটা নাম্বার। S201092010105, আমার মনে হয় তুমি মনে রাখতে পারবে না।

 

সত্যিই বিশাল। আমি মনে রাখতে পারব না।  কি করা যায়??

তুমি আমাকে যে নামে ডাকবে তাতেই আমি সাড়া দেব।

 

আচ্ছা, তাই? তোমার নাম রোবো। পিচ্চি রোবট। মাঝে মাঝে আমি তোমাকে রোবো নামে ডাকব। মাঝে মাঝে পিচ্চি রোবট। আচ্ছা, পিচ্চি রোবট বললে তুমি রাগ করবে না তো??

আমি একটুও রাগ করব না মিমি। তোমার নামটা সুন্দর।

 

তাই নাকি?? আচ্ছা, তোমার রোবো নামটা পছন্দ হয়েছে?

আমার দারুণ পছন্দ হয়েছে। মিমি, আমি তোমাকে একটা খেলা দেখাতে পারি। তুমি দেখতে চাও?

অবশ্যই আমি দেখতে চাই। দেখাও প্লিজ।

 

এর পর পিচ্চি রোবটটি মিমি কে তার চোখ দিয়ে লেজার বের করে বিভিন্ন ধরণের ফায়ারওয়ার্কস দেখাতে লাগলো। মিমির দারুণ পছন্দ হলো।

মিমি তার হাতের বলটা পিচ্চি রোবটটির দিকে ছুড়ে মারল। রোবটি মারল মিমির দিকে। এ ভাবে প্রথম দিন থেকেই দ্বিতীয় প্রযন্মের মানুষের খেলার সাথী হিসেবে বানানো রোবটটি আর ৫ বচ্ছরের মিমি খেলতে লাগল।

প্রতিদিন পিচ্চি রোবটটি বিভিন্ন খেলা দেখাতো। এক সময় মিমি তার স্কুলের বন্ধুদের সাথে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন গল্প বলত। আর রোবো মনোযোগ দিয়ে শুনত। গালে হাত দিয়ে একদম বিজ্ঞের মত। যদিও তার কোন অনুভূতি নেই, তারপর ও সে শুনত। মনে হতো সে সব বুঝে। মাঝে মাঝে হাসত। আবার খারাপ কোন গল্প হলে কান্নার অভিনয় করত।

 

একদিন মিমি এসে বলল, জানো, পৃথিবী থেকে নাকি আমাদের চলে যেতে হবে। এবং আগামী কালই নাকি আমরা চলে যাবো। আমি আব্বুকে জিজ্ঞেস করেছি আমি কি রোবোকে নিতে পারব? আব্বু বলছে নাহ! স্পেসশীপে নাকি যত কম বস্তু বহন করা যায়, ততই ভালো। আমি বলছি ও তো বস্তু নয়। ও হচ্ছে রোবো। আমার প্রিয় রোবট। আমার খেলার সাথী। তারপর আব্বু কি বলছে জানো? আরে তুমি মন খারাপ করছ কেনো?

রোবো মন খারাপ করে বলল, তুমি সত্যি চলে যাবে?

 

আমাদের যেতে হবে। পৃথিবীর সবাইকে যেতে হবে। আমাদের জন্য ক্ষতিকর কি এক রশ্মি না কি যেন পৃথিবীতে আসছে। মানুষ এ জন্যই নাকি দ্রুত মারা যাচ্ছে। তাই তারা নাকি ঐ দূরে টিটিয়ানা গ্রহে চলে যাবে। সেখানে প্রাথমিক ভাবে মানুষ যারা গিয়েছে, তাদের উপর গবেশণা চালিয়ে দেখছে যে ঐখানের পরিবেশ অনেক ভালো।

আমি কি বুদ্ধি করেছি জানো? আমি বুদ্ধি করেছি তোমাকে আমার জামা কাপড়ের ভেতরে নিয়ে নিব।

রোবো শুনে  খুশি হয়েছে। বলল সত্যি??

হ্যা, আসো, আমি তোমাকে আজই জামা কাপড়ের ভেতর রেখে দি।

 

পরের দিন মিমিদের যাওয়ার সময় হয়েছে। মিমির আব্বু মিমির জামা কাপড় সব নিয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করল।  মিমি বলল নিয়েছে। তারপর তার ব্যাগ ধরে দেখে অনেক ওজন। জিজ্ঞেস করল এটার ভেতরে কি?

মিমি কোন কথা বলল না।

ব্যাগের চেইন খোলার পর দেখল রোবো পিট পিট করে তাকিয়ে আছে। মিমির আব্বু মিমির দিকে তাকিয়ে বলল, বললাম না আমরা ভারি কিছু নিতে পারব না? বলেই রোবোকে বের করে দূরে ফেলে দিল। সাথে সাথে রোবর একটি পা আলগা হয়ে গেলো। তার গুলো ঝুলতে লাগল।

 

মিমি কান্না শুরু করল। মিমির আম্মু তাকে কোলে নিয়ে বের হয়ে গেলো। আর পেছন থেকে রোবো ভাঙ্গা পা নিয়ে আসতে লাগল।

স্পেসশীপ চালুর পর মিমি এসে বিশাল জানালার পাশে দাঁড়ালো।  পৃথিবীটা অনেক দ্রুত দূরে সরে যাচ্ছে। এক সময় পৃথিবী থেকে একটি রশ্মি তার চোখে পড়ল। একটি লেজার রশ্মি। তার চিনতে ভুল হলো না। ঐটা রোবো। তার কান্না আরো বেশি করে আসতে লাগলো।

 

স্পেশশীপটির গতি এতই বেশি যে কিছুক্ষনের মধ্যেই ঐ লেজার রশ্মিটিও হারিয়ে গেলো।

জাকির হোসাইন সম্পর্কে

একজন প্রোগ্রামার। লিখতে প্রচন্ড ভালোবাসি। দুটোই। কোড এবং গল্প বা ফিকশন। পেশা হিসেবে একজন ফ্রীল্যান্সার। প্রযুক্তি নিয়ে লেখা গুলো পাওয়া যাবে আমার টেক ডায়েরীতে
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে সায়েন্স ফিকশান-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

6 Responses to রোবো

  1. তুসিন বলেছেনঃ

    সাই-ফাই ভালই লিখেন দেখছি 🙂 ভাল হয়েছে

  2. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    শিশুতোষ সাইফাই ভালো হইছে।
    এটাই কি প্রথম নাকি?
    পিচ্চি* হবে।

  3. অনুজ বলেছেনঃ

    পিচ্চিতোষ সাই-ফাই!
    ভালো ছিলো! 😀

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।