[ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, আর আমার অসম্ভব প্রিয় লেখক ড. কেলি এম ফ্লানাগানের ‘দ্য ম্যারেজ ম্যানিফেস্টো’ বইটির অনুবাদের প্রথম পর্ব এটি। আন্ডারগ্র্যাজুয়েট লেভেল থেকেই বিয়ে ছিল তাঁর পড়াশোনার বিষয়বস্তু। ৫০% বিয়েই বিচ্ছেদে সমাপ্ত হয়, এমন দেশের মানুষ কেলির বিয়ে নিয়ে চিন্তাগুলো যে কাউকে বিয়েকে পুরোপুরি অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে বাধ্য করবে। লেখকের ভাষ্যমতে, ‘দ্য ম্যারেজ ম্যানিফেস্টো’ কোন সেল্ফ-হেল্প নয় বরং অ্যান্টি-সেল্ফ-হেল্প বই।]
মুখবন্ধ
তাকের ওপর থেকে স্টিফেন কিং-এর ‘অন রাইটিং’ বইটা টেনে নামালাম সেদিন। খুলেই দেখি, পৃষ্ঠাগুলো কেমন দুমড়ে-মুচড়ে আছে, এখানে-সেখানে শুকিয়ে যাওয়া পানির দাগ। মলাটের ভেতর ফাঙ্গাসও জমে গেছে। ভেজার পর শুকিয়ে গিয়ে কেমন ফুলে আছে বইটা। কবে আবার অফিসের ভেতর বৃষ্টি হলো – মাথা চুলকে ভাবতে বসে গেলাম আমি।
হুট করেই কারণটা মনে পড়লো তখন।
২০০৪-এর বসন্তে আমার স্ত্রী আর আমি শিকাগোর পশ্চিমে এক শহরতলিতে চলে আসি, পেনসিলভানিয়া স্টেইট কলেজে। সাথে ছোট্ট এক ট্রলিতে আমাদের যত বাক্সপেট্রা, আর নয় মাসের বাচ্চা ছেলেটা। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে কোর্সওয়ার্ক শেষ করে শিকাগোর দুটো হাসপাতালে সবেমাত্র ইন্টার্নশীপ শুরু করতে যাচ্ছি তখন আমরা।
শিকাগোতে তখন বর্ষাকাল। এদিকে আমাদের ট্রলির ছাদে ছিল একটা ফুটো।
আমার বইগুলোর বেহাল দশা হয়েছিল সে সময়েই।
জীবনের কঠিনতম অধ্যায় আর আমাদের বিয়ের সবচেয়ে কষ্টকর বছরের প্রথম দিন – অমন দিনের কথা মনে না থেকে উপায় নেই। সে সময়ে প্রতিদিন ভোর ছ’টায় শহরে চলে যেতো আমার স্ত্রী, ফিরতে ফিরতে আঁধার ঘনিয়ে আসতো প্রায় রাতেই। এদিকে আমি ছেলেকে ডে-কেয়ারে আনা-নেয়া, কোন এক ফাঁকে নিজের ইন্টার্নশীপটাকে সেঁধিয়ে নেয়া আর সব সামলিয়ে মাথা ঠাণ্ডা রাখতেই ব্যস্ত।
দেয়ালে যখন ওভাবে পিঠ ঠেকে যায়, অন্যদিকে পকেটে না থাকে টাকা (তবু তো ভালো, আমাদের ছেলেকে Chipotle রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারের পছন্দ হয়ে যাওয়ায় ফ্রী-তে অনেক খাবার পেতাম), না থাকে সময়, না থাকে শক্তি আর না থাকে পালিয়ে বাঁচার কোন উপায় – তখন দুটো পথই কেবল খোলা থাকে আপনার সামনে: ভয় পেয়ে পালিয়ে যাওয়া, নয় তো রেগে উঠে লড়াই করা।
আমরা লড়াই করেছিলাম।
সে লড়াইয়ের গভীরতম চড়াইগুলোর কোন একটাতে, কেউ একজন আমাদের ভাড়া করা ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টের একটা দরজা এত জোরে লাগিয়েছিলাম যে, চৌকাঠটা ছিটকে বেরিয়ে এসেছিল প্লাস্টার থেকে।
আমার স্ত্রী আর আমি – দুজনেই বেশ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মানুষ, আর গুরুত্বের খাতায় দুজনের কাছেই বিয়ে সবসময় এক নম্বরে ছিল। তারপরও, আমাদের মতো মানুষও সে বছর বহুবার ভাবতে বসেছিল, এ বিয়ে কি আদৌ টিকবে? টেকাতে হয়তো পারতামও না, যদি এখনো সে সময়ের মতো ভেবে চলতাম যে বিয়ের লক্ষ্য হলো আমাদের মনের সব আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা।
‘অন রাইটিং’ বইটার হলদেটে পুরনো পৃষ্ঠাগুলো তাই আমার জন্য স্মৃতিচিহ্ন।
কিসের স্মৃতি ভাবছেন? আমাদের জীবনে তখন কী ঘটে যেতে পারে তার স্মৃতি, যখন আমরা কষ্টকে মুছে ফেলতে আর কষ্টের জায়গাগুলোতে রূপান্তরের জন্ম দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকি। যখন এই প্রতিযোগী আমি-কে ত্যাগী একটা জীবন উপহার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিই আমরা; চিড় ধরানো দোষারোপের ইচ্ছাকে যখন মন-ভালো-করা সহানুভূতিতে বদলে ফেলি। আমরা আরামের বিনিময়ে বন্ধুত্বের দীর্ঘ-দুর্গম পথে হাঁটতে চাই যখন; যখন কিনা, নিজের প্রয়োজনের কথা ভুলে গিয়ে অন্যজনের সেবায় এগিয়ে যাই। যখন আমরা শক্তি আর ত্রুটিহীনতার গর্বকে সঁপে দেই নিজের দুর্বলতা আর অসহায়ত্বের কাছে। আর যখন, নিশ্চয়তাকে ঝেঁটিয়ে ফেলে পা বাড়াই বিস্ময় আর রহস্যঘেরা পথে।
আমাদের একলার, কষ্টে-ভরা গল্পের পৃষ্ঠাগুলোয় হয়তো ইতিহাস দাগ ফেলে দেবে, দুমড়ে-মুচড়ে ফেলবে – কিন্তু অতীতকে তো আর আমরা বদলাতে পারি না। যা পারি তা হলো জীবনের গল্পে নতুন সব পুনরুত্থানের অধ্যায় যোগ করতে। আপনার বিয়েও অমন চমৎকার, আনকোরা নতুন কোন অধ্যায় হতে পারে কিন্তু!
আপনি নিজের গল্প লিখতে প্রস্তুত তো?
[চলবে]
[মনস্তত্ত্ব সিরিজের অন্যান্য লেখা পাবেন এখানে]
হবে না ! এইরকম মুখবন্ধ দিয়েই শেষ ? হেডলাইনে টিজার দেয়া উচিত ছিল !
পরের পর্ব তাড়াতাড়ি চাই কিন্তু। 🙁
বাই দ্যা ওয়ে, অনুবাদ কেমন হইছে আশা করি আর বলতে হবে না। :love:
হাহা। অন দ্য ওয়ে আপু!
টিজারের আইডিয়াটা ভালো লাগলো। 😀
গুরুত্বের খাতায় দুজনের কাছেই বিয়ে সবসময় এক নম্বরে ছিল। তারপরও, আমাদের মতো মানুষও সে বছর বহুবার ভাবতে বসেছিল, এ বিয়ে কি আদৌ টিকবে?
কী অবস্থা!
আশা করি মারাত্মক কাজে আসবে আমাদের তরুণতরদের ।
আশা করি!
এই জন্য কোন টিভি সিরিজ শেষ হওয়ার পর আমি দেখতে বসি। ফাটাফাটি অনুবাদ।পরের পর্ব কবে পাবো??? :dhisya: :dhisya: :dhisya:
কেন?
শিগ্গিরই আশা রাখি!
পরের পর্ব কবে পাবো?? 😀
আর কিছু কি বলা লাগবে?? 😛
শিগ্গিরই আশা করি!
শুরুর আগেই দেখি শেষ হয়ে গেলো!! 🙁
🙁
পরের পর্বের অপেক্ষায় রয়েছি 😀
আমিও! 😛
পরের া পর্ব এর অপেক্ষায় রইলাম।
আমিও!