ছোট্ট বাবুর হাসি কে না ভালোবাসে? এই ভেজালের দুনিয়াতে এই একটা জিনিসই বোধহয় নির্ভেজাল আছে। আমার প্রায়ই মন খারাপ থাকে। মাঝে মাঝে যতই হাসির লেখা পড়ি মন ভালো হয়না। কিন্তু পিচ্চি বাবুদের হাসি দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। ইদানীং মন খারাপ থাকলেই হাসিখুশী বাবুর ছবি দেখি। মন ভালো হতে বাধ্য।
আমার দুই ভাগ্নী, ভাগ্নে আর ভাতিজির দুরন্তপনার গল্প সুযোগ পেলেই করে থাকি। ভাতিজিটার এক বছর হয়ে যাচ্ছে। ঘরে ঝুলানো উইন্ড চার্মটা দেখলেই তার কান্না বন্ধ হয়ে যায়, একটা কিউট হাসি দেখা যায় তার কিউট মুখে।
আজকে থাক এদের কথা। আজ নাহয় অন্য বাবুর গল্প করি।
কাব্যের কথা মনে আছে? একটা পোস্ট দিয়েছিলাম ওকে নিয়ে। না, ওর দুরন্তপনার গল্প নিয়ে নয়, ক্রমেই চুপসে যাওয়া একটি ফুলের গল্প ছিল ওটা। ফেসবুকে মায়ের কোলে কাব্যকে দেখতে দারুণ লাগতো। দুষ্ট দুষ্ট হাসি, বড় ভালোবাসি…। একদিন একটা নোট পড়ে দেখি কাব্য বাবুটা ভয়ানক একটা রোগে আক্রান্ত। দেশে কোন চিকিৎসা নেই। ইন্ডিয়া যেতে হবে, পাঁচ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। হ্যাঁ, মাত্র পাঁচ লক্ষ টাকা যোগাড় হয়নি বলে কাব্যের চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছিলো না। এটা যেদিন ফেসবুকে দেখেছি সেদিন সারারাত ঘুমোতে পারিনি।
কি আর করার ছিল আমার! তবুও চেষ্টা করেছিলাম। ব্লগের সবাইকে জানিয়েছি। সবাই ভালোবাসা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলো। নিষ্ঠুর এই পৃথিবীতে সম্পূর্ণ অচেনা অজানা বাবুর জন্য সবার ভালোবাসা একটা অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
কিন্তু কাব্যের ডাক চলে এসেছিলো আগেই। তাই সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলো অজানার দেশে।
কাব্যকে আমি জীবনে মাত্র একবার দেখেছি, মৃত অবস্থায়। মিনিটখানেকের বেশী দাঁড়াতে পারিনি। আজও কোথাও কাব্য নামটা দেখলে চমকে উঠি। অদ্ভুত কষ্ট হয়।
থাক কাব্যের কথা, আরেক বাবুর গল্প বলি।
আট বছরের ফুটফুটে মেয়ে নুসাইবা। আর দশটা মেয়ের মতোই প্রাণবন্ত, হাসিখুশি। ঈদের আগে বাবার হাত ধরে জামা কিনতে গিয়েছে। সাথে ম্যাচিং করে জুতা, ক্লিপ, চুড়ি আরো কত কি! ঈদের ক’দিন আগে নানুবাড়ি গেল সবার সাথে ঈদ করতে। এমনিতে সাজুগুজু করতোনা তেমন, কিন্তু এবার ঈদে হাতে পায়ে মেহেদী দিয়ে সারাবাড়ি বেড়াতে লাগলো। বাবার কাছে ভাংতি টাকা নেই দেখে সকালে সালামী দিতে পারেনি, বিকেলে মনে করিয়ে দিল টাকা ভাংতি করে আনতে হবে।
বিকেল শেষ হয়ে সন্ধ্য ছুঁইছুঁই। মা সারাবাড়ি খুঁজছেন নুসাইবা কে, হাতে সালামীর টাকা। মেয়েটা কোথায় গেল! বাড়ির পাশে পুকুর, মেয়েটা পুকুরে যায়নি তো! মা দৌড়ে গেলেন বারান্দায়, না মেয়েটা গোসল করতে গেলে মগ নিয়ে যেতো, তাহলে সে পুকুরে যায়নি।
কিন্তু রাত হয়ে গেল, মেয়েটাকে পাওয়া যাচ্ছেনা কেন? এদিকে খবর এল পাশের বাড়ির পিচ্চি ঐশী কেও পাওয়া যাচ্ছেনা। সবার সন্দেহ এখন পুকুরের দিকেই।
রাত সাড়ে আট টা। পুকুর থেকে পাওয়া গেলো দুই বাবুকে, নিথর নিস্তব্ধ দুটি দেহ। ঈদের দিন জান্নাতুল ফিরদাউসে গিয়ে ওরা নিশ্চয়ই খুব আনন্দ করছিলো।
লিখতে গিয়ে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। আর চাচা-চাচীর চোখ সারাক্ষণ ঝাপসা হয়েই থাকে। চোখভর্তি যে বাঁধ ভাঙ্গা পানি। আদরের ছোট্ট মেয়েটা আজ সবাইকে ছেড়ে একা একা শুয়ে আছে।
না না…! একা বলছি কেন? ওর নিশ্চয়ই অনেক খেলার সাথী হয়েছে। সে তো সকল কষ্টের উর্ধে চলে গেছে।
শুধু শুধু কাঁদছি কেন! আমাদের সবাইকে তো একদিন যেতেই হবে। দীর্ঘ ভ্রমণের রসদ যে যোগাড় করতে পারিনি এখনো। ওর খাতায় তো কোন পাপ লেখা নেই ওতো সুখেই আছে।
কাব্য, ঐশী আর নুসাইবা নিশ্চয়ই একসাথে খায়-দায়,খেলা করে। পৃথিবীর কোন কষ্টের সাধ্যি নেই আজ ওদেরকে ছোঁয়ার।
ভালো থেকো ছোট বাবুরা, ক্ষমা করে দিও আমাদের।
valo laglo……
ধন্যবাদ
খারাপ লাগছে অনেক
আমার অনেকদিন থেকেই মন খারাপ।
🙁
মন খারাপ হয়ে গেলো।
আমারো ছোট বাবুদের নিয়ে এই রকম একটা অভিজ্ঞতা আছে হয়ত বলব।
মন খারাপ করিয়ে দেয়ার জন্য দুঃখিত।
সান্ত্বনা একটাই, সৃষ্টিকর্তা তাদের ভালো জায়গাতেই রাখবেন ইনশাল্লাহ
সেটাই।
খুব মন খারাপ হয়ে গেল। মৃত্যু সবারই হবে কিন্তু ওরাতো অনেক অনেক ছোট। এখনো ভালো করে পৃথিবী দেখেইনি!
এজন্যই তো বেশী কষ্ট লাগে।
কান্না পেয়ে গেলো পড়তে পড়তে।
স্যরি আপু।
অনেক কিছুরই ব্যাখ্যা খুঁজে পাই না কেন জানি, কেন কাঁদছি, কেন ভাবছি এমন, ভালো লাগে আমার থেকে হাজার গুণ ভালো আছে ছোট্ট কাব্য, একমনে খেলছে কোন এক অসম্ভব সুন্দর কোথাও……
নুসাইবা, ঐশীর জন্য ভালোবাসা আর দোয়া, এর বেশী আর কি বা করতে পারি আমি…
আমার থেকে হাজার গুণ ভালো আছে ছোট্ট কাব্য, একমনে খেলছে কোন এক অসম্ভব সুন্দর কোথাও……
মন খারাপ হয়ে গেলো………..
দুঃখিত মন খারাপ করিয়ে দেয়ার জন্য…
চোখটা ঘোলা হয়ে আসলো। মাঝে মাঝে পৃথিবীটা বড় নিষ্ঠুর মনে হয়।
নুসাইবা, ঐশী, কাব্য আর ওদের মতো নাম না জানা সবার জন্য অনেক ভালোবাসা আর দোয়া………
ভালো থাকুক ছোট্ট বাবুরা।
তখন আমি এসএসসি পরিক্ষার্থী, ২০০৩ এর কথা, আমার এক পরিচিত ভাইয়ার প্রথম বাবুটার মাথা অস্বাভাবিক বড় হয়েছিল জন্মের সময়ে। দারুণ অসুস্থ ছিল বাবুটা। আমার পরীক্ষার মাত্র ১/দেড় মাস বাকি। আমার মাথায় বাবুর কথা ঘুরতে থাকত। আমি দোয়া করতাম আল্লাহ প্লিজ বাবুটাকে বাঁচাও। প্লিজ আল্লাহ!
আমি কখনো বাবুটাকে দেখি নি।
বাবুটা বাঁচে নি।
কিন্তু সেই বাবুকে রাখতে পারলাম না এমন একটা দুঃখ, অক্ষমতা কাজ করত…কাব্যর সময়েও সেই বাবুর কথা বার বার মনে পড়ত।
কাব্যকে হারানোর পর আবারও মনে পড়ল।
কতটা অসহায়!
কতটা অক্ষম!
আসলে আমাদের কিইবা করার আছে দোয়া করা ছাড়া…
লেখার শুরুতে বুঝতেই পারিনি এত শকড হবো। আমি নাকি সহজে কাঁদিনা। কথাটা আরেকবার ভুল প্রমাণিত করলাম।
পৃথিবীর এত বিশ্রী বিশ্রী অমানুষগুলোর মাঝে এই শিশুগুলোর দিকে চেয়েই হয়তো মানুষেরা টিকে আছে।
লেখাটা পড়ে বহেমিয়ানের মত আমার নিজের স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে।
লিখলাম.. লিখতে মন চাইছিল তাই। কিনাদির সাথে রাগ করতে ইচ্ছে করছে।
[দোয়া করি, যাতে তাদের পিতামাতা যথেষ্ট ধৈর্য ধরতে পারেন]
মন খারাপ করিয়ে দেয়ার জন্য স্যরি…
হ্যা ভাইয়া, দোয়া করবেন তাঁদের জন্য।
ভালো থেকো ছোট বাবুরা। ক্ষমা করে দিও আমাদের। আমরা তোমাদের জন্য কিছুই করতে পারিনি।
কিংবা আমাদের করার কিছু ছিল না…
‘জাবেরের ফুপি’ হবার বয়স আমার মাত্র ২ মাস ১৫ কী ২০ দিন স্থায়ী হয়েছিল।
এত সুন্দর ছেলেবাবু আমি আমার জীবনে দেখি নি। ওর আকীকায় গেলাম কয়েক মাস আগে। এক শুক্রবার ছিল সেটা। প্রাণ ভরে গিয়েছিল ওকে দেখে।
ঠিক তার এক সপ্তাহ পরেই, পরের শুক্রবার আবার ওকে দেখতে গেলাম, একই বাড়িতে।
গতবারের সেই ভোজবাড়ি, এবারে ছিল শোকে স্তব্ধ!
আমি মুগ্ধ হয়ে আমার সোনামনিটাকে দেখছিলাম। কী শান্ত মুখ! কী পরম আবেশে ঘুমিয়ে আছে!
ওকে গোসল করিয়ে যখন আবার আমার সামনে নিয়ে এসেছিল, তখন দেখলাম। বিশ্বাস হচ্ছিল না একেবারেই। সত্যি যেন ওর শরীর থেকে নূরের মত উজ্জ্বল আলো ঠিকরে বেরুচ্ছে!
আমি কারো সামনে কাঁদি নি সেদিন। শুধু একা একা চোখ ভরে ব্যথা বেজেছিল আমার।
আজও প্রার্থনা করি আমি আব্বু সোনাটার জন্য। প্রতিবার নামাজের পরে নিয়ম করে। অভ্যাস হয়ে গেছে।
এখন প্রার্থনা করছি ওদের সবার জন্য।
নুসাইবা, ঐশী আর কাব্যর জন্য আমার অনেক ভালবাসা।
কাব্যর জন্য সাহায্য দেবার দিনটাতেই শুনেছিলাম ওর চলে যাবার খবরটা।
মাত্র হাতবদল করছি যখন, ঠিক তখনই!
এই বিশ্বের সবটুকু কল্যাণ ওদের ঘিরে থাকুক ওপারের অচেনা জগতে।