ফোনটি বেজে উঠার শব্দ শুনতে পেলাম। প্রচন্ড ভীড়ের কারণে শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম না এতক্ষন। ফোনের নম্বরটি ভেসে উঠল কিন্তু আমি ভীড়ের মধ্যে তা দেখার গুরুত্ব মনে করলাম না। ফোন ধরলাম।
হ্যালো তুসিন তুমি কোথায়?
আপু আমি মেলার ভিতরে আছি অন্য প্রকাশনীর স্টলের বিপরীত দিকে।
ওকে তুমি অপেক্ষা করো আমি আসছি।
আমি “ওকে” বলে ফোন রেখে দিলাম।
মেলাময় ঘুরে বেড়াচ্ছি। ভেবেছিলাম আজ কোন বই কিনব না। পকেট টাকা-পয়সার অবস্থা খারাপ। এই দিকে মাসের শেষ। হাতে যা ছিল সব প্রায় শেষ। তবুও এক এক করে তিনটি বই কিনে ফেলাম। এখন চতুর্থ বই কিনার জন্য স্টলগুলোতে উঁকি মারছি। আর অপেক্ষা করছি কখন আপু আসবে।
মেলা সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটির অভাব দেখলাম তা হলো সাড়া মেলা জুড়ে বসার কোন স্থান নেই। যদি কয়েকটি বসার স্থান যুক্ত করা হতো তাহলে চমৎকার হতো। সাড়া মেলা ঘুরে কান্ত হলে বসে কিছুক্ষন রেস্ট নেয়া যেত।
আবার ফোনটি বেজে উঠল। আমি লাইনটি কেটে দিলাম। অন্য প্রকাশনীর বিপরীত দিকে দেখি আপু দাড়িয়ে আছে।পরবর্তীতে যেন আপু লেখিকা হয়ে গেল । আপুর লেখা বইটি ব্যাগ থেকে বের করে সামনে এগিয়ে দিলাম।
“প্রিয় তুসিন
অল্প সময়ের মাঝে তুমি আমার প্রিয় ছোট ভাই এবং লেখক”
একুয়া রেজিয়া
২৬.২.১৪”
অটোগ্রাফের লেখাগুলো মন ছুঁয়ে গেল। ছোট ভাই মানলাম কিন্তু লেখক কেন লিখল?আমি তো লেখক না। লেখা-লেখির অ ও জানি না। কখনো লিখতে বসলে বানান একশত একটা ভুল করি, বাক্যগঠনের ভুল । আমি আবার কাউও প্রিয় লেখক।আপু নিশ্চয় পাম পেরেছে
অটোগ্রাফের পর হলো ফটোগ্রাফ।
ছবি:কে তুলে দিয়েছিল মনে নেই। ছবিতে আমি এবং একুয়া আপু মধ্যে দুইজন ধরে রেখেছি কিছু বিষাদ হোক পাখি
এরপর বিদায় নিলাম।
এরপর সাড়া মেলা আবার একা একা ঘুরতে থাকলাম। একা একা বই মেলা ঘুরার একটা মজা আছে।যেটা হল নিজের পছন্দ মত স্টল অনেকক্ষন ধরে কাটানো যায়। সাথে যদি কেউ সাথে থাকে তাহলে সেই ব্যক্তির সাথে সাথে থাকতে হয়।ফলে নিজের পছন্দ মত স্টলে সময় বেশি দিয়ে বই দেখা যায় না।
“এডগার অ্যালান পো’র একটি কবিতা ও নয়টি গল্প” কবীর চৌধুরীর অনুবাদ এবং ‘প্রবন্ধ সমগ্র” ডা. লুৎফর রাহমান এই দুইটি বই পছন্দ হল। কিন্তু পকেট হাত দিয়ে দেখি যে টাকা আছে শুধু মাত্র এই দুইটি বই কিনতে পারব। তবে বই কিনলে আর বাসায় যাওয়া জন্য বাস ভাড়ার টাকা থাকবে না। কিন্তু বই দুইটি কিনার লোভ সামলাতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত দোকানদারকে টাকা দিয়ে বললাম, ‘ভাই মিরপুর যাওয়ার ভাড়া টা দিয়েন যা ছিল সব দিয়ে বই কিনে ফেলেছি’।
দোকনদার আমার দিকে তাঁকিয়ে মিষ্টি একটি হাসি দিয়ে বিশটাকা কম রাখল বই দুইটিতে।
অবশেষ বাসায় ফেলার পাল্লা। বাসে উঠে লেখিকা আপুর বই “কিছু বিষাদ হোক পাখি” পড়া শুরু করলাম। কয়েকপৃষ্ঠা পড়ে যেন পড়ার জন্য আকর্ষণ অনুভব করলাম। পাঠকে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা ছিল বইটিতে। তা না হলে এত কান্ত শরীর নিয়ে বাসার মধ্যে এত অল্প আলোতে বই পড়ার মত মানুষ আমি না।
এবার বইটি নিয়ে কিছু বলি।
“life is full of beauty. Notice the bumble bee, the small child, and the smiling face. Smell rain, and feel the wind. Live your life to the fullest potential, and fight for your dreams’’
by Ashley smith
চমৎকার লাইনগুলো পড়ে বইটি পড়া শুরু হল।
১৪ তম পৃষ্ঠায় শিউর ফুল ঝরে পড়ার গল্পটা বেশ লেগেছিল।একজন বোন তার ছোট বোনকে গল্প বলছে শিউলি ফুল সূর্যের আলোয় কেন ঝরে পরে? লাইনগুলো পড়ার সময় আমার নিজের বড় বোনের কথা মনে পড়ে গেল।ছোট বেলায় আপু সাথে যখন ঘুমাতাম আপু প্রতিদিন আমাকে সাদা ভাল্লুকের গল্প শুনাতো। রাতের আলো অন্ধকারের ছায়া সেই ছোটবেলার দৃশ্যগুলো ভেবে চললাম আনমনে। গাড়ির ঝাঁকুনিতের চিন্তা ভঙ্গ হলাম।
আবার বইটি পড়ার শুরু করলাম।রাস্তা জ্যাম।যখন জ্যাম হয় অন্য সময় বিরক্ত লাগত কিন্তু আজ কেন যেন ভাল লাগছে।জ্যামের মধ্যে ঝাঁকুনি হয় না ।ফলে বই ধরে রাখতে বেশি কষ্ট হচ্ছে না।তাই জ্যামটাকে উপভোগ করছি।বাসায় আসতে আসতে অর্ধেকের মত পড়া শেষ। বাসায় এতে এতই কান্ত ছিলাম বইটি আর সময় শক্তি ছিল না। বালিসের কাছে বইটি রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন ও পড়ার সময় পেলাম না ব্যস্থতার জন্য।শ্রুক্রবার সকালের যাব গাজীপুর আপুর বাসায়।সকালের উঠে চললাম গাজিপুরের উদ্দেশ্যে।বাসে উঠে “কিছু বিষাদ হউক পাখি” বইটি আবার হাতে নিলাম। পড়া শুরু করলাম এবং পড়া শেষ করলাম।
আদিবা মেয়েটার জন্য খারাপ লাগা শুরু করল। মুন্নী মেয়েটাকে গল্পে না মেরে ফেললে হতো না । ওদের বাঁচিয়ে রাখা যেত না ।আসলে আমাদের চারপাশের জগতটা যে এমন। গল্পগুলো মন খারাপ করা। বইটি শেষ করে সত্যি আমার মন বিষাদে ভরে গেল। এ যেন কিছু বিষাদ আমার হৃদয়ের মাঝে আক্রমণ করল।
উপন্যাসটির সার-সংক্ষেপ কিছু বললাম না। সবাইকে অনুরোধ করব বইটি কিনে পড়ার জন্য। এটি শিউর ১৩৫ টাকা উসুল হবে। পড়ার আগে হয়ত মনে না হতে পারে কিন্তু পড়ার শেষ মনে হবে যাক ১৩৫ টাকাই উসুল হয়েছে।মাহরীন ফেরদৌস(একুয়া রেজিয়া) আপুর জন্য শুভ কামনা। পরবর্তী বই পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম। একদিন আপু বাংলা একাডেমি পুরষ্কার পাবে এই আমি বলে দিলাম । যদিও পুরষ্কারের মাধ্যমে একজন লেখক কিংবা লেখিকার মর্যাদা নির্নয় করা যায় না।
পূর্ব প্রকাশ: তুসিনের জল-জোছনায়
বইটা পড়া হয় নাই এখনও। স্পয়লার দিলা কেন ? :crying:
আমি শুধু মাত্র আমার অনভূতি জায়গা থেকে ব্যাখা দেয়ার চেষ্টা করেছি। সর্ম্পূন কাহীনি বলিনি। উপন্যাস এক কথায় অসাধারণ ঘটনা জানলে সমস্যা নেই। আমি শিউর উপন্যাসের প্রতিটি অংশ পড়লে যেন মনে হয় একান্ত নিজের কথাই বলা হচ্ছে। হয়ত কোন একটি চরিত্র আমার নিজেই মত 🙂
তবে আমি কিন্তু সর্ম্পূন কাহিনী বলিনি 🙂
যদি তাও মনে হয় আমি স্পয়লার করে দিয়েছি তাহলে দু:খিত।যদি বলা হয় তাহলে আমি লাইনগুলো এডিটিং করে দিব :crying:
মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ
আচ্ছা বুঝেছি কোন সমস্যা নাই। 🙂
🙂 আপুর জন্য শুভ কামনা
আর এই ভাবে স্পয়লার দেওয়া ঠিক হয় নাই :nono:
আপু মন্তব্য দেয়ার জন্য প্রথমে অনেক ধণ্যবাদ 🙂
উপরে মন্তব্যটি দেখার অনুরোধ রইল।
“এই লেখাটা কোন বুক রিভিউ না বরং এটা হল আমার বই নিয়ে Tusin Ahmed নামের এক চমৎকার হৃদয়বান তরুণের একান্ত অনুভূতির গল্প।”
এই ক্যাপশনে তোমার লেখাটা মুখবইতে শেয়ার করলাম । তোমার সাথে পরিচিয় হওয়া থেকে শুরু করে বইমেলায় দেখা হওয়া, আমার বই নিয়ে তোমার অনুভূতি জানা সবকিছুই আমার জন্য খুবই স্পেশাল ভাইয়া।
তোমাকে ধন্যবাদ দেব না, তোমার জন্য বরং অনেক অনেক ভালোবাসা রইলো। ভীষণ ভালো থেকো প্রিয় তুসিন :happy: ।
একজন পাঠক বই পড়ে কতটা আপ্লুত হলে এমন একটি লেখা লিখতে পারে…আপু লেখিকা হিসেবে আসলেই লাকি।
তুসিন ভাইয়াকেও ধন্যবাদ চমৎকার লেখাটির জন্য।