অফিস থেকে ফেরার পথে কিছু না ভেবেই সোয়েটারটা কিনে ফেললেন মনসুর সাহেব। বেশ দাম দিয়েই কিনলেন। আজকে এ মাসের বেতন তুলেছেন তিনি। বেতনের প্রায় অর্ধেক টাকা দিয়ে কেনা টকটকে লাল রঙের এই সোয়েটার তার স্ত্রী মনোয়ারা পছন্দ করে কিনা সেটা একটা চিন্তার বিষয়। মনোয়ারা আবার কিছুটা একরোখা প্রকৃতির। একবার যেটা না করবে সেটা তাকে শত চেষ্টা করেও রাজি করানো যাবে না। রিকশায় বসে বসে এসব ভাবছিলেন মনসুর সাহেব। অফিস ছুটির এই জ্যামে কম করে হলেও আরও একঘণ্টা লাগবে বাসায় পৌছতে। এদিকে আবার আকাশ কালো করে আছে। এমনিতেই যা ঠাণ্ডা তার উপর আবার বৃষ্টি নামবে কিনা কে জানে।
মনসুর সাহেব একটি বেসরকারি অফিসের কেরানী। বেতন যা পান তা দিয়ে দুজনের সংসার চালাতে তেমন কষ্ট হয় না। সারা জীবন একভাবে কাটিয়ে দিয়েছেন, এখন আর পঞ্চান্ন বছর বয়সে এসে এসব টাকা পয়সা নিয়ে খুব একটা ভাবেননা মনসুর সাহেব। বেশ কিছুদিন ধরেই লক্ষ্য করছিলেন একটা মাত্র অনেকদিনের পুরনো শাল ছাড়া আর তেমন কোন গরম কাপর নেই মনোয়ারার। যদিও এইটা নিয়ে কোনদিন মনোয়ারা তাকে কোন অভিযোগ করেনি তবুও তিনি ভেবে রেখেছিলেন এ মাসের বেতন পেয়েই তার জন্য একটা ভাল গরম কাপর কিনবেন। তাই আজ বেতন পেয়েই সোজা নিউ মার্কেট থেকে লাল সোয়েটারটা কিনে ফেললেন।
বাসায় ঢুকে তিনি প্রথমেই স্ত্রীকে সোয়েটার দেখালেন না। তার জন্য এককাপ গরম চা দেয়ার কথা বলে বারান্দায় চেয়ারে আয়েশ করে বসলেন। স্ত্রী চা নিয়ে আসার পর বেশ নাটকীয় কায়দায় প্যাকেট খুলে সোয়েটার বের করলেন। যেটা ভয় করেছিলেন ঠিক তাই। মনোয়ারার পছন্দ হয়নি। হাতে নিয়ে খুশি হবার বদলে বেশ বিরক্ত হলেন মনোয়ারা। তার বয়সী একজন মহিলার জন্য খটখটে লাল সোয়েটার কিনার নির্বুদ্ধিতার জন্য স্বামীকে বেশ কিছু কথা শুনালেন। আর যখন শুনলেন এই জিনিশ তার স্বামী এতগুলো টাকা খরচ করে কিনেছে, তখন তিনি রাগে নিজের চায়ের কাপ বারান্দায় রেখে ভিতরে চলে গেলেন। যদিও মনোয়ারা বরাবরই এমন তবুও মনসুর সাহেবের মনটা খারাপ হয়ে গেল। তিনি নিজেও চা না খেয়েই উঠে পরলেন। এখন সন্ধে ছয়টা। এখন বেরিয়ে পরলে হয়তো নিউ মার্কেট খোলা পাওয়া যাবে। তাহলে রাতেই সোয়েটারটা পাল্টে আনতে পারবেন।
বাইরে বেশ ঠাণ্ডা। তিনি নিউ মার্কেট পর্যন্ত রিকশা ঠিক করলেন। কিছুদূর যেতেই টিপ টিপ বৃষ্টি পরা শুরু হল। ঠাণ্ডা এখন আগের চেয়ে বেশি লাগছে। তার বয়স হয়েছে। ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারেন না। একটু ঠাণ্ডাই কাবু করে ফেলে। কিছুক্ষন পর বৃষ্টি আরও বাড়ল। সেই সাথে বাতাস। বরফের চেয়ে ঠাণ্ডা বৃষ্টির ছাঁট মনসুর সাহেবের গায়ে এসে লাগছে। তিনি বাসায় ফিরে যাওয়া ঠিক করলেন। এই বয়সে এত ধকল তার সহ্য হবে না।
অর্ধেক রাস্তা থেকে রিকশা ঘুরিয়ে বাসায় ফিরে এলেন।
বাসায় ফিরতে ফিরতে পুরোপুরি ভিজে গেলেন মনসুর সাহেব। দরজায় উদ্বিগ্ন মুখে দাড়িয়ে ছিলেন মনোয়ারা। মাথা মুছার জন্য টাওয়েল এনে স্বামীর হাতে দিলেন। স্ত্রীর হাত থেকে টাওয়েল নিয়ে ভিতরে চলে গেলেন মনসুর সাহেব। আর কোন কথা বললেন না। গরম চা হাতে বেডরুমে গিয়ে মনোয়ারা দেখলেন ঘরে নেই মনসুর সাহেব। ঠাণ্ডার মধ্যে বারান্দার চেয়ারে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছেন। টেবিলে চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে স্বামীর পাশে নিশব্দে বসলেন মনোয়ারা। স্বামীর একটা হাত টেনে এনে নিজের হাতের উপর রাখলেন। প্রচণ্ড গরম হাত, জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। মনোয়ারা কিছু বললেন না। চুপচাপ স্বামীর হাত ধরে বসে রইলেন। বাইরে থেকে মুখ ফিরিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকাতেই চমকে উঠলেন মনসুর সাহেব। মনোয়ারার পরনে লাল রঙের সোয়েটার। তিনি মনোয়ারার অশ্রু ভেজা চোখের দিকে তাকালেন। সেই চোখে অসীম মমতা, সীমাহীন ভালোবাসা। যে ভালোবাসার জন্ম এই পৃথিবীতে নয়, অন্য কোন জগতে।
– ব্ল্যাকবিয়ার্ড
:angel_not: বেশি সুন্দর !
অনেক বেশি ভালো লেগেছে
কি সুন্দর ভালোবাসা
এই রকম সুন্দর, মমতাময় অসীম ভালোবাসাগুলো বেঁচে থাক 😀
গল্পটা ভালো লাগলো… 🙂
চমৎকার লিখেছেন,
লেখালেখি চালিয়ে যান।