“রাজার ছেলে বিলু, বসেছিল প্রাসাদের দাওয়ায়। তাই দেখে রাজা রেগে মেগে দিলেন হুঙ্কার।
পাইক পেয়াদা, বরকন্দাজ কে আছিস? বাঁদরটাকে ধরে নিয়ে আয়!
তাই শুনে, পাইক পেয়াদার লাঠি সোঠা, তীর ধনুক,বর্শা আর হাতের কাছে যা ছিল তাই নিয়ে ছুটলো।
রাজপ্রাসাদে বাঁদর, দেখো দেখি!
কিন্তু কোথায় বাঁদরটাকে দেখতে না পেয়ে শেষমেষ একদল বনের দিকে রওনা দিল বাঁদর ধরতে, আর একদল গেল চিড়িয়াখানার কর্তাকে ধরে আনতে।”
এই দিয়ে শুরু হয়েছিল বিলু কালু আর গিলুর অভিযান। আর এই অভিযান এতই রোমাঞ্চকর ছিল যা জয় করে নিয়েছিল শিশু-কিশোরসহ অসংখ্য পাঠকের মন। আর তারই স্বীকৃতি মিলল এবার “এইচএসবিসি-কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক” এ যখন “বিলু, কালু আর গিলুর রোমাঞ্চকর অভিযান” জিতে নিল ২০১৩ সালের শিশু ও কিশোর সাহিত্যের পুরস্কার।
“হাত ভর্তি চান্দের আলো ধরতে গেলে নাই…” সরব মাশুদুল নিজের সম্পর্কে এভাবেই বলে রেখেছেন তার ব্লগে। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে এম.বি.বি.এস করছেন তিনি। আগ্রহ লেখালিখিতে। তার প্রথম বই “বিলু, কালি আর গিলুর রোমাঞ্চকর অভিযান” যা প্রথমে প্রকাশিত হয় ফেসবুকে নোট এবং সরবে চার খন্ডে ভাগ হয়ে। এরপর ২০১৩ সালে বই মেলায় প্রথম বই আকারে প্রকাশিত হয় আলেকজান্দ্রিয়া প্রকাশনী থেকে। ঐ একই বছর প্রকাশিত হয় তার দ্বিতীয় বই “ভেন্ট্রিলোকুইস্ট”।
মাশুদুল হকের কাছে প্রশ্ন ছিল তাঁর এই অর্জন নিয়ে সামান্য কিছু বলার আর পেছনের কাহিনী একটু তুলে ধরার। তাঁর চুম্বক অংশ এখানে-
“আমার জন্য পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত,কিছুটা পরিচিত কয়েকজন শুভাকাঙ্খীর চাপে পড়ে এইচএসবিসি ও কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার প্রতিযোগিতার জন্য পাঠাই। আমার মতে আমার ছোটদের উপন্যাস ‘বিলু, কালু আর গিলুর রোমাঞ্চকর অভিযান’ একদমই হালকা মেজাজে লেখা,আমাদের বাঙলাভাষার রূপকথার কিছু প্রতিষ্ঠিত ব্যাপার ও চরিত্রগুলো নিয়ে একদমই উল্টাপাল্টা গোছের চিন্তাভাবনা করেছি, ভিতরের অর্থ খোজার চেষ্টা করেছি যা হয়তো অনেকের ভ্রু কুচকে ফেলার ক্ষমতা রাখে, যেমন একটা উদাহরণ দেই- গল্পের চরিত্ররা তের নদী পার হয়ে কোন এক রাজ্যে পৌছে, কিন্তু হঠাৎ ওরা খেয়াল করে তেরটা নদী তো ওরা পার হয় নি,হয়েছে মাত্র একটা নদী! তখন জানতে পারে আসলে নদীটার নামই আসলে তের! পুরো উপন্যাসে আছে অনেকগুলো ছড়া,ছড়াগুলো লেখার সময় একটা ব্যাপারই মাথায় ছিল-আমার পরিচিত কিছু বাচ্চা ছেলেমেয়েরা যাতে এতবড় গল্পটা পড়ে হাপিয়ে না ওঠে,অন্তত ছড়াগুলোতে হাসতে পারে প্রাণখুলে।আর এ বইয়ের ইলাস্ট্রেশন করিয়েছি র্যাটস আসিফকে দিয়ে,ব্লগে ওর আকা দেখে আমি এতটাই মুগ্ধ হই যে আমি রীতিমত জোকের মত লেগে ছিলাম ওকে দিয়ে আমার বইয়ের কাজটা করাতে। গত বইমেলায় আমার প্রকাশিত দুটো বইয়ের মধ্যে এটি দ্বিতীয়।বইটা মেলায় আসে একদম শেষের দিকে, বইয়ের পুরো কাজ আমি আর প্রকাশক জামিল ভাই মিলে করেছি, প্রসঙ্গত প্রকাশক জামিল ভাইয়ের প্রকাশনী আলেকজান্দ্রিয়া আমার বইয়ের মতই নবীন, এ প্রকাশনীর এটাই প্রথম বই। তাই আমাদের দুজনার জন্যই এ বই প্রকাশই ছিল রীতিমত এক অ্যাডভেঞ্চার।( ইলাস্ট্রেটর আসিফের জন্যও এটাই প্রথম বইয়ের কাজ) বইমেলা ততদিনে শুরু হয়ে গেছে, আর আমরা তখনো ফকিরাপুলের কাগজের দোকানে গিয়ে দরদাম করছি, প্রেসের মালিকের সাথে কথা বলছি,সবচেয়ে ভাল বাইন্ডিং কে করে সে ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছি। আমি মাঝেমধ্যে হাল ছেড়ে বলতাম,ভাই, এবার থাক, আগামী বছর ট্রাই করি।জামিল ভাই হাল ছাড়ার পাত্র নয়, বলতেন, দেখি না শেষ পর্যন্ত। তারপর শেষপর্যন্ত কড়কড়ে পাতায়,মনমাতানো নতুন বইয়ের গন্ধে বইমেলা শেষ হওয়ার দিন দশেক আগে বই হাতে পাই।জামিল ভাই আমার দেখা এ পর্যন্ত সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ, তার জানার পরিধি এনসাইক্লোপিডিয়াকেও হার মানায়, বয়স তার চল্লিশোর্ধ, কিন্তু মন চির নবীন, পত্রিকা অফিসের রাশভারী পরিবেশে যখন তার সাথে দেখা করতে যাই, দেখি তিনি কম্পিউটারের স্ক্রিণে বাচ্চাদের কার্টুন পড়ছেন কিংবা এনিমেশন ফিল্ম দেখছেন ।এরকম মানুষ অর্থনৈতিক ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন না এটাই স্বাভাবিক,তাই তার দুদিন পরে যখন মেলায় বইগুলো পরিবেশক গদ্যপদ্যের স্টলে উঠে গেল, তখন হিসেব করে দেখলাম, আমাদের বইয়ের গায়ের মূল্যের চেয়ে বেশি খরচ হয়ে গেছে। কী আর করা! কিন্তু ভীষণ মর্মান্তিক ব্যাপার হলো, বই মেলায় দেয়ার পরদিনই, গদ্য-পদ্যের স্টল আগুনে পুড়ে যায়, পুড়ে যায় সেখানকার সব বইও।পরে তারা মেলার শেষ কদিন ছোট একটা স্টল দিলেও আমার বই আর দেয়া হয় না, তাই মেলার জন্য এত ঝামেলা করে করা বইটা মেলায় ছিল মাত্র দুইদিন, (অন্য আরেকদিন বাতিঘর প্রকাশনীর স্টলে ছিল)। আমার পরিচিত বন্ধু-বান্ধবরাও অনেকে বইটা নিতে পারেনি। তারপর রকমারী.কম এ হাতে থাকা কিছু বই দিয়ে আসি, শেষমেশ তাই বইটা খুব কম মানুষের হাতে পৌছে। তাই এ পুরস্কারপ্রাপ্তিটা আমার ও প্রকাশক দুজনার জন্যই অনেক বড় কিছু,বড় কোন স্বপ্ন পূরণের মত তো বটেই।বইমেলায় বইটাকে নিয়ে যে দু:খ আর আফসোস ছিল,সেটা ঢেকে দেয়ার জন্য এরচেয়ে ভাল আর কীই বা হতে পারে।”
লেখক মাশুদুল হক “এইচএসবিসি-কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক” শিশু-কিশোর সাহিত্যে পুরস্কার পাওয়ার পর ফেসবুকে পতিক্রিয়া জানিয়েছেন এভাবে-
“খবরটা সকালেই ফোন মারফত পেয়েছিলাম, তারপরও কেন যেন বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল, সন্ধার দিকে অফিসিয়াল লেটার পেলাম- এ বছরের #এইচএসবিসি_কালি_ও_কলম_তরুণ_কবি_ও_লেখক_পুরস্কার_২০১৩ পেয়েছে আমার বই বিলু, কালু আর গিলুর রোমাঞ্চকর অভিযান ।
গতবারের বইমেলায় যাওয়ার ঠিক পরদিনই এ বইয়ের স্টল পুড়ে যায়, পুড়ে যায় এ বইয়ের সবকটি কপিও। তাই অনেক পাঠকই বইটা হাতে পাননি। দারুণ হতাশ হয়েছিলাম কারণ প্রথম প্রকাশিত দুটি বইয়ের মধ্যে এ বইটির কাজ আমি নিজের হাতে করেছি, দরদাম করে কাগজ কিনেছি, প্রেস ঠিক করেছি, কোথায় বাঁধাই হবে সেটাও ঘুরে ঘুরে ঠিক করেছি, প্রকাশক জামিল ভাই জানতেন যে সবকিছু এত পছন্দসই বাছাই করতে গেলে এটা শেষমেষ খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে হবে, তিনি বলতেন, লস হোক, এটার ছাপানো আমার স্বপ্ন… আজকে যখন জামিল ভাইকে ফোনে পুরস্কারের কথা জানালাম তখন তিনি জানালেন যাক আমাদের স্বপ্নের কাজটা বৃথা যায়নি…”
তাঁর কাছে আসা কালি ও কলমের চিঠি-
এ নিয়ে সরবের ফেসবুক গ্রুপে তিনি বলেছেন, “বিলু, কালু আর গিলুর রোমাঞ্চকর অভিযান শুরু করেছিলাম ফেসবুকে আর সরব এ, প্রথম থেকেই সরবের অনেকের কাছ থেকে প্রচুর উৎসাহ পেয়েছি, শেষমেশ বই বের করে ভাল একটা অ্যাওয়ার্ডও জুটে গেল, সরবের সবার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা ”
মাশুদুল হকের বই দুটো পাবেন এখানে।
[লেখকের সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকার আসবে শীঘ্রই]
Congratulations!
Keep it up
অনেক অনেক অভিনন্দন :clappinghands:
ওনার আরেকটি সাক্ষাৎকার সম্ভবত সরবে পড়েছিলাম,
পরের বার ঢাকায় গেলে সংগ্রহ করে পড়ার ইচ্ছা রাখলাম।
ওনার অধ্যবসায় আর ধৈর্যের জয় দেখে অনেক ভালো লেগেছে। সত্যিই অনেক ইন্সপায়ারিং স্টোরী। লেখককে অনেক ধন্যবাদ।
রুচি চানাচুরের যেমন ‘ঝালেই জাদু’ তেমনই ভাইয়ার বইয়ের বেলায় বলা যেতে ‘নামেই জাদু’! 😀 😛
আইক্যাচিং নাম! রুপকথাতো এখন দেখাই যায় না বলা চলে। কিন্তু রুপকথার বিকল্প কেবল রূপকথাই হতে পারে। ‘Fi, fie, fo, fun. I smell the blood of a British man’ পল্লীসাহিত্যে পড়ছিলাম, মনে আছে? রূপকথার অনন্যতা, মস্তিষ্কের নিউরনগুলো রূপকথার স্মৃতি ধরে রাখার ব্যাপারে হাইপার অ্যাকটিভ; রূপকথার সারাজীবনই মনে থাকে- প্রশান্তি মেশানো লেখা যে! :love:
ভাইয়ার এই প্রচেষ্টার জন্য অসংখ্য অভিনন্দন সাথে তোকেও দিচ্ছি সেটা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করার জন্য 🙂
সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা এত এত উৎসাহ দেয়ার জন্য 🙂
আর অক্ষরকে কী আর বলবো, রীতিমত বিব্রত আমি আমাকে নিয়ে এত বড় পোস্ট দেখে 🙂