দ্বৈত প্রকৃতির স্মৃতিচারণ

মেঘটা আজ বড্ড তিমির হয়ে আকাশযবনিকার রূপে সেজেছে। মনে হচ্ছে, প্রচণ্ড কষ্ট বুকে চেপে রাখতে রাখতে তা ফুলে ফেঁপে ফেটে পড়তে চাইছে তার সমস্ত উজাড় করে! গাছপালার মাঝে গুনগুনিয়ে আলাপালোড়ন চলছে ; কে কিভাবে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করবে, এ নিয়ে। রক্ত শিমুলের ছেয়ে থাকা গাছটি ধীরে ধীরে টকটকে লাল হয়ে যাচ্ছে মেঘের ছায়াতলের নিমিত্তে। সবুজ পাতাগুলো হয়ে উঠছে কালো রঙা সন্ধ্যেবেলার কড়া লিকারের চায়ের মত! ভয় হচ্ছে খানিকটা, মেঘের এমন ক্ষুব্ধশান্ত রূপের ঝলকানিতে। কিন্তু প্রকৃতি বৃষ্টি ভালোবাসে। অনেক ভালোবাসে। খুব ভালোবাসে। কখন বৃষ্টিস্নাত হবে প্রকৃতির প্রকৃতি, প্রতীক্ষায় থাকে সে। প্রহর গুনতে থাকে ভাগে ভাগ করে। কিন্তু বৃষ্টি আর আসে না! আসবেই বা কি করে? বহুদিনের জমিয়ে রাখা মরীচিকা পড়া ক্ষোভই যে মেঘগুলোর গাঢ়তার কারণ! মরীচিকা যেতে সময় তো নিবেই। ধীরে ধীরে পাখির কিচিরমিচির রব বাড়ার সাথে মরীচিকা কেটে যেতে থাকে, আর মেঘগুলোর রঙও ফর্সা হতে শুরু করে একটু একটু করে। আকাশও তখন স্মৃতির জাবর কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে হালকা বাতাসের ঝাপটায় মিশে থাকা দু এক ফোঁটা জল সমেত জানান দিচ্ছে! রক্ত শিমুলও তার রঙ ফিরে পাচ্ছে, পাতারা কালচে সবুজ থেকে আদুরে সবুজ হয়ে উঠছে, গাছেদের মাঝে শঙ্কা কিছুটা কেটে গিয়ে সবেমাত্র ফুরফুরে হয়ে উঠতে শুরু করলো বলে! এদিকে বৃষ্টির গান গেয়ে প্রকৃতির কাছে প্রকৃতির মিনতি তো চলছেই। তার মনটাও আজ ঠিক আকাশটার মত হয়ে আছে। জমিয়ে জমিয়ে অনুভূতি আর অনুরাগের পাহাড় গড়ে তুলেছিল সে। প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে সেও কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি ঝরাবে মনাকাশে জমতে থাকা মেঘগুলো থেকে। বৃষ্টি ঝরিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে নিজেকে শুদ্ধ করবে আজ। শুদ্ধ হয়ে সিদ্ধি নিবে নিজেকে! কিন্তু প্রকৃতির মতই প্রকৃতির মনের একই অবস্থা। জং ধরে গেছে, ঝরি ঝরি করেও বৃষ্টি ঝরে না। ডুকরে কুঁকড়ে কুঁচকিয়ে নিতে চায় অনুভূতিগুলোকে। এইতো, বৃষ্টি এখনই আসলো বলে, প্রকৃতির আর প্রকৃতির, দ্বৈত প্রকৃতির! প্রকৃতির জল প্রকৃতি ঢেকে দিবে, তবুও জল ঝরুক!
এমন সময় ঝুমঝুমিয়ে ঝুপঝুপ করে বৃষ্টি ঝরিয়েই দিলো দুজনই। সকল কষ্টের স্নান করিয়ে ওগুলোকে ভাসিয়ে দেয়াই লক্ষ্য আপাতত। কালো মেঘটা শুভ্র সাদা তুলোর বলের মত হয়ে উঠছে, আর বাতাস ভাসিয়ে নিতে চাইছে প্রকৃতির বিনা কষ্টার্জিত দুঃখের সাথে তার বেদনাময়ী নীলাচলও। কিন্তু প্রকৃত প্রকৃতি সেটা পারবে না কেড়ে নিতে, কারণ বৃষ্টিধোয়া শুভ্রতা ধরে রাখবার ওই একটি বসনই মানবীটির আছে, স্মৃতিরা ওতেই খেলা করে। তা সে মন্দই হোক, আর মধুরই হোক! বৃষ্টি ঝরছে তো ঝরছে আপন ধারায়। প্রকৃতি আর প্রকৃতি শ্রান্ত হয়ে শান্ত হচ্ছে ধীরে ধীরে। ধীরে ধীরে। ধীরে ধীরে। তারপরই সকল কিছুর যবনিকাপাত ..

মিষ্টি ডানা সম্পর্কে

অসংজ্ঞায়িত!!
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে স্মৃতিচারণ, হাবিজাবি-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

1 Response to দ্বৈত প্রকৃতির স্মৃতিচারণ

  1. রাহনুমা বলেছেনঃ

    সুন্দর! সুন্দর! সুন্দর! :love:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।