নিলান্ত জোছনায়

পর্বঃ ১

বৃষ্টির পরে আকাশ টা দেখতে বেশ ভালোই লাগছে।
একটা স্পেশাল ব্যাপার আছে আজ আকাশের মধ্যে, অনেক সুন্দর একটা রংধনু উঠেছে আজ। মাঝে মাঝে নিজেকে এই বিশাল আকাশের সামনে অনেক খুদ্র মনে হয়।
নতুন ফোন কিনেছি আজ সকালে, টিউশনির টাকা টা মনে হয় জলে পড়ল।
ফোন ইউজ করতাম না ভালোই ছিলাম।
আজ সকাল থেকে অতন্দ্রিলা কে ফোন দিতে ইচ্ছে করছে। যতবার অতন্দ্রিলা কে দেখতে ইচ্ছে করছিল ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখেছি। মাত্র সকালে ফোন কিনলেও এইসব ব্যাপারে আমি অনেক এক্সপার্ট, কিভাবে ব্যাকগ্রাউন্ড চ্যাঞ্জ করতে হয় , পিসি থকে কিভাবে ছবি মোবাইল এ নিতে হয় সবকিছু অতন্দ্রিলা শিখিয়ে দিয়েছিল ওর ফোন দিয়ে।
শেষমেষ থাকতে না পেরে অতন্দ্রিলা কে ফোন দিলাম_
কয়েকবার রিং হবার পর ইউজার বিজি দেখাচ্ছে। এর মানে আমি জানি, এর মানে হচ্ছে, অতন্দ্রিলা এখন ব্যাস্ত আর তাই সে রিং কেটে দিচ্ছে। তারপরেও আমি বার বার ফোন দিতে লাগলাম, ও বার বার ফোন কেটে দিচ্ছে। খেলা টা বেশ জমে উঠেছে, ভালোই লাগছে। এবার ফোন দিয়ে ফোন অফ পেলাম, কিছু টা মন খারাপ হয়ে গেলো, খেলা টা মাত্র জমে উঠেছিলো।

এটা মনে হয় একটা বদ অভ্যাস কাউকে ফোন দিয়ে না পেলে সাথে সাথে অন্য কাউকে কল দিতে ইচ্ছে করে। এত দেখি মহা মুসিবত একদিনের মধ্যেই আমি ফোন রোগে আক্রান্ত। আমার তো অতন্দ্রিলা এর নাম্বার ছাড়া আর কারো নাম্বার মনে থাকেনা।
অচেনা কোন নাম্বার এ ফোন দিব কিনা ভাবছি, হঠাৎ মনে পরে গেলো পকেটে তো বাবার ভিসিটিং কার্ড আছে। কার্ড বের করে বাবার নাম্বারে ফোন দিলাম_
-হ্যালো !
-হ্যালো শব্দের বাংলা কি অর্থ বলতে পারেন?
-কে বলছেন?
-জি আমি বলছিলাম।
-আমি কে? কণ্ঠস্বর কিছু টা রাগান্বিত মনে হচ্ছে। মন্ত্রিরা আবার সবসময় রাগি থাকেন, কোন কাজ খুজে পায়না মনে হয় তাই।
-জি ! আমি আপনার একমাত্র গুনধর পুত্র। ছিহ বাবা ! নিজের ছেলের গলা ও চিনতে পারছনা?
– তুমি ফোন দিয়েছ? বাবা মনে হয় আকাশ থেকে পড়লেন। কোন সমস্যা? লোক পাঠানো লাগবে? কি হয়েছে ? বল-
-জি একটা সমস্যা, তবে লোক পাঠানো লাগবে কিনা ঠিক বুঝতে পারছিনা। আমার একটা বিশেষ ধরনের রোগ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
-কি? তুমি এখনি নিকটস্থ হাসপাতালে চলে যাও আর সেখানের ইনচার্জ এর সাথে আমাকে কথা বলিয়ে দাও। তার আগে বল তোমার কি হয়েছে?
-জি… আমার মোবাইল রোগ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। সকালে ফোন কিনলাম, তখন থেকে শুধু ফনে কথা বলতে ইচ্ছে করছে।
-তুমি কি আমার সাথে মজা করছ? তুমি জানো আমি কত গুরুত্বপুর্ন কাজে ব্যাস্ত?
-না বাবা ! জানিনা_ আমার তো ধারনা ছিল মন্ত্রিরা কোন গুরুত্ব পুর্ন কাজ করেন না । গুরুত্বপুর্ন কাজ করলে কি আর দেশের আজ এই অবস্থা হয়,তুমি ই বল?
-তুমি আমার সাথে বেয়াদপি করার কিঞ্চিৎ চেষ্টা করছ। এসব ফালতু কথা শোনার সময় আমার কাছে নেই।
-হ্যাঁ ! আমার ফালতু কথা শোনার সময় যে তোমার কাছে কখনোই হয়না, সেটা আমি ছোট বেলা থেকে দেখে এসেছি।
অপর প্রান্তে কিছু নিরবতা_
-তুমি এখন কোথায়?
-জি আমি টি,এস,সি এর গেটের সামনে।
-তুমি ওখানেই থাকো, কোথাও যেওনা।

আমি আবার উদাস হয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আকাশ দেখছি। ঠিক কি যে হতে যাচ্ছে এখন, আমি আসলে বুঝে উঠতে পারছিনা। বাবাকে মনে হয় খেপিয়ে দিয়েছি আমি।
পনের মিনিট পর দেখলাম আমার মন্ত্রি বাবা রিকশা দিয়ে টি,এস,সি’র সামনে এসে দাঁড়ালেন।
-চল বাবা ! আজ তোর সাথে নীলক্ষেত এর তেহারি খাব। হেটে যাবি?
চল- অনেকদিন তোর সাথে হাটা হয়না।
একথা বলেই বাবা আমার হাত ধরে নীলক্ষেত এর দিকে হাটা দিলেন।
বাবার ব্যাস্ততার কারনে ছোট বেলায় কখনো বাবার হাত ধরে হাটা হয়নি।
কেন জানি বার বার চোখ ভিজে আসছে। অতন্দ্রিলার জোরাজুরি তে এই ফোন টা কেনা। মনে হচ্ছে অতন্দ্রিলার জন্য আমার অদেখা শৈশব আমার মাঝে ফিরে এসেছে। বৃষ্টির পর ভেজা রাস্তায় বাবার হাট ধরে হাটছি, একটা রিকশা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের গায়ে কাঁদা ছিটিয়ে দিলো। আমার দুজনেই নির্বিকার। আমার অদেখা শৈশবে দুজনেই মগ্ন হয়ে আছি। (চলবে)

ইকু সম্পর্কে

নিজের সম্পর্কে নিজের আসলে তেমন একটা কিছু বলার থাকেনা। মানুষ কে বিশ্বাস করতে ভালো লাগে। আদতে স্বপ্ন দেখা একজন মানুষ আমি, হাজার অযুত স্বপ্ন নিয়ে আমার পথ চলা। অনেক গুলো প্রিয় মানুষ নিয়ে আমি পথ চলি, খুব সহজে কাউকে আপন করে নিতে পারি। তারপরেও মাঝে মাঝে হেলাল হাফিজের মত বলতে ইচ্ছে হয়, "কেন আমার হাতের মাঝে হাত থাকেনা কেউ জানেনা।" আমার নিজস্ব একটা ভাবনার জগত আছে, যেই জগতে কি হচ্ছে সেটা আমি ছাড়া আর কেউ জানেনা। জীবন ও মৃত্যু সম্পর্কে প্রায় ই একা বসে বসে ভাবি। জীবন আমার কাছে অনেকটা রহস্যের মত, যে রহস্যের সমাধান আমি আজো করতে পারিনি। তবে মৃত্যু মনে হয় একটা অসুখ, যার ওষুধ আজ পর্যন্ত তৈরি হয়নি। আমি জ্যোৎস্না ভালোবাসি আর ভালোবাসি ভর দুপুরের সোনালী রোদ। ভালোবাসি রঙধনু আর ভালোবাসি তুমি-আমি নিয়ে লিখা সব কবিতা । ভালোবাসি কোন মেঠো পথের ধারে সবুজ মাঠে একা বসে থাকা, ভালোবাসি নীলাম্বরী শাড়ি পরা কোন এক কিশোরী আকাশ, ভালোবাসি নদীর পাড়ে বসে মাছরাঙ্গা দের উৎসব দেখা । ভালোবাসি সমুদ্র বালিয়াড়িতে উপলব্ধি করতে নিজের ক্ষুদ্রতা। ভালোবাসি অরণ্য, ভালোবাসি পাখি। ভালোবাসি রাত, ভালোবাসি রৌদ্র। ভালোবাসি দেশ, ভালোবাসি আমায়। https://www.facebook.com/iqusan
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে গল্প-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।