প্রতিস্থাপন

ভোর থেকেই খুকীর মন খারাপ-
উইপোকা কেটেছে পছন্দের রূপকথার বই,
সিন্ডারেলার মায়াবী পোশাকে উইপোকার অশৈল্পিক
প্রচেষ্টা খুব কষ্ট দিচ্ছে ছোট্ট মনটাকে,
অসম্ভব পছন্দের ছিল বইটি তার
জন্মদিনে বাবার দেয়া উপহার।
বাবা গত হয়েছেন গত বছর
সেই থেকে বইটা খোলা হয়নি;
আজ জন্মদিনে বইটা আবার খুলেছিল
অযত্নে পড়া ছিল বুকশেলফের পেছনে,
আধ-ইঞ্চি ধূলার আস্তরণ মুছে
হতবিহ্বল দৃষ্টি প্রক্ষিপ্ত উন্মুক্ত বইয়ের পাতায়,
পাতাগুলো জুড়ে ছিল বিক্ষিপ্ত নকশা
জন্মদিনের শুরুটা অশ্রুসিক্ত করে দেয়ার জন্য যা ছিল যথেষ্ট।
অনুযোগের সুরে তাই বার-বার ধ্বনিত হচ্ছিল একই অভিযোগ—
‘উইপোকাগুলো এত্ত খারাপ কেন?’
স্পষ্টত মেয়েটির গলা ছিল ভেজা, জুড়ে ছিল ঘৃণা-রাগ-অভিমান।
পর্যায়ভিত্তিক হারে একই প্রশ্নে চিন্তিত শিক্ষক।
কিভাবে এই ছোট্ট মেয়েটির মনের ঘৃণাগুলো মুছে দেয়া যায়?
খুকির কাঁধে হাত রেখে বললেন-
‘উইপোকা জন্মান্ধ! জন্ম থেকেই দেখতে পায় না সে,
তার ভুবন কালো পর্দায় ঢাকা।
উইপোকার কাছে তোমার রুপকথার বই আর অপছন্দের
টেক্সটবইয়ের মাঝে কোন তফাৎ নেই!’

হঠাৎ ছোট্ট হৃদয় দ্রবীভূত হলো প্রবল মায়ায়,
ঘৃণা-ক্ষোভ অনুযোগগুলো মুছে জন্ম নিল
উইপোকার প্রতি ভালোবাসা।
মুহূর্তেই নিষ্পাপ মুখে অপার্থিব হাসির প্রস্ফুটনে ধ্বনিত হয়—
‘আমি উইপোকা ভালবাসি।’

২৩শে মে, ২০১৪, মধ্যাহ্ন
উত্তরা, ঢাকা।

অনিমেষ ধ্রুব সম্পর্কে

"You've gotta dance like there's nobody watching, Love like you'll never be hurt, Sing like there's nobody listening, And live like it's heaven on.'' অসম্ভব পছন্দ উইলিয়াম পার্কারের এই কথাগুলো! নিজের মত করেই নিজের পৃথিবীটা কল্পনা করে নিতে ভাল লাগে। ঔদাসিন্য,অলসতা শব্দ দুটি আমার সাথে বনে যায়। গভীর মনোযোগ কিংবা অসম্ভব সিরিয়াস মুড আমার কখনোই আসে না। একা অচেনা রাস্তায় অকারণে হাঁটতে ভালো লাগে, মানুষ দেখতে ভালো লাগে, ভাল লাগে কবিতা লিখতে...তবে স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন দেখি আমার চারপাশে থাকা মানুষগুলোর জন্য কিছু একটা করার, দেশকে কিছু একটা দেয়ার। পারব কি-না জানি না, তবুও স্বপ্ন বুনে চলেছি নিরন্তর... http://www.facebook.com/kamrul.h.hridoy.3
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে কবিতা, সাহিত্য-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

7 Responses to প্রতিস্থাপন

  1. অক্ষর বলেছেনঃ

    কত সুন্দর কথা! কিছু শব্দ, বাক্য মাঝে মাঝে মানুষের চিন্তা ভাবনাই পাল্টে দেয়। আমি তো তোর কবিতার বিশাল “পাখা” কিন্তু এই কবিতার টানটাই অন্যরকম।

    নেহ তোর জন্য লাল গোলাপ। :love:

    • হৃদয় বলেছেনঃ

      বোঝা-যাচ্ছে আমার কবিতা তোর মেটামরফসিস হচ্ছে- ইকারাস হয়ে যাচ্ছিস! 😛

      এই বিষয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনা ফেবুতেই হইসিল…ভাল্লাগছে বইলাই ফেবুতে কমেন্ট করেও সরবে আইসা আবার কমেন্ট করলি।

      গুড! আমার জন্য লাল গুলাভ; তুই তো মেয়ে না- তাই তোর জন্য চু…… :love: :cuthair:

  2. ভাইয়া, ৮ নম্বর লাইনে শব্দটা “খোলা” হবে না?

    অনেক দারুণ হয়েছে কবিতাটা 😀

    • হৃদয় বলেছেনঃ

      হুম। অবশ্যই ”খোলা” হবে। আমার তো চোখেই পড়েনি! থ্যাঙ্কু 😀
      এডিট করে নিলাম 🙂

      আচ্ছা, ”হোলা” নামে আসলেই কোন শব্দ আছে? যাক, এই ভুলে অনেকদিন পর বাংলা একাডেমীর ডিকশনারিটা একটু নাড়া হবে! 😛

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।