ন্যাংটো রাজার দুইটি গ্রাফ ও কুদ্দুস-সখিনার প্রেম কাহিনী; সাথে মোখলেসের বিশ্বাসঘাতকতা ফ্রী

“জানার কোন শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই”

কুদ্দুস জেনে গেছে জানার কোন শেষ নাই তাই এখন আর সে জানার চেষ্টা করে না। না জেনেই যদি জবরদস্ত মনের মতন একটা বিয়ে শাদী করে বউ-বাচ্চা নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করা যায় তাহলে মন্দ কী? যেই ভাবা সেই কাজ। কুদ্দুস তার বাক্স-পেটরা নিয়ে রওনা দিল এক ন্যাংটো রাজার(হীরক রাজা না কিন্তু!) দেশে। ন্যাংটো রাজার দেশে নাকি সহজ শর্তে “না জানিয়া থাকুন বাঁচিয়া” প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে চাল, ডাল, আটা, ময়দা কিংবা সুজি না, এইখানে বাঁচার জন্য দেওয়া হচ্ছে একটি “পাঁচ”। এই পাঁচের নানাবিধ গুণ আছে, তবে তার মাঝে সবচেয়ে আকর্ষণীয় গুণটি হচ্ছে এই “পাঁচ” দিয়ে চাল, ডাল তরকারি না পেলেও নাকি পাওয়া যায় বিশাল ভারী একটা সার্টিফিকেট! আর সেই সার্টিফিকেটের যা জোর বাবা! কি করা যায় না? এইটা না থাকলে জীবন পুরো ষোল আনাই বৃথা! কুদ্দুস যখন প্রথম শুনলো এই পাঁচের সার্টিফিকেটের কথা তার ছোট ছোট কুতকুতে চোখগুলো গোলআলুর মত বিস্ফোরিত হয়ে উঠল!

যেইভাবা সেই কাজ! কুদ্দুস দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হল, “এইবার ব্যাটা পাঁচ আমার চাই ই চাই!” “কিন্তু পাঁচ পাওয়ার জন্য কী করতে হবে??? কী???? কী???” কুদ্দুসের হবু কল্পনার বউয়ের (নাম তার সখিনা) জনপ্রিয় স্টার প্লাস সিরিয়ালের ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ডের মত তার মাথায় বাজতে থাকে সারাক্ষণ “কী?? কী???” উত্তর খুঁজতে থাকে কুদ্দুস! বেশি কষ্ট করতে হয় না, দুই দিন আগে শার্লক হোমসের তিন নম্বর সিজন শেষ হয়েছে, সে পুরো সিজন গোগ্রাসে গিলেছে তাই একটু বুদ্ধি করেই বের করে ফেলে, “এই পাঁচ পেতে কিচ্ছু করতে হবে না! ! ! শুধু লাগবে একটা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট! !”

যেইভাবা সেই কাজ। কুদ্দুস ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলে। সেইখানে দেখে “পাঁচ পাওয়ার একশ উপায় সাথে একটি উপায় ফ্রী” নামক পেজে সবাই হুমড়ি খেয়ে পরছে। এইখানে নাকি পাঁচ পাওয়ার “উপায়” বাতলে দেওয়া হয়। কুদ্দুস ঐ পেজে ঘুরে ঘুরে “উপায়” সংগ্রহ করে। সেই উপায় কাজে লাগিয়ে কুদ্দুস পেয়ে যায় তার কাঙ্ক্ষিত সেই “পাঁচ”।

কুদ্দুস পাঁচ ও পেয়ে যায়। সার্টিফিকেটও পেয়ে যায়। “কিন্তু এ কী???”  “নাহ!!!!! এ কী হচ্ছে!!” এই সার্টিফিকেটে নাকি সুন্দর জীবন পাওয়া যায় না! এরপরে নাকি আবার যেতে হবে নতুন পথে কিন্তু সেখানে যেতে হলে শুধু “পাঁচ” এ হবে না, থাকতে হবে “জ্ঞান”, একটু একটু করে অর্জিত “জ্ঞান”। কুদ্দুসের এত দিনের সাজানো স্বপ্ন চুরচুর করে ভাঙতে শুরু করেছে (ব্যাক গ্রাউন্ডে কাঁচ ভাঙার শব্দ হবে) শুধু কুদ্দুস না ! এই পাঁচ তো দেখি সবাই পেয়েছে!!!!! বিনা কষ্ট করে কুদ্দুসও পেয়েছে, আবার কষ্ট করে মোখলেসও পেয়েছে! ! কিন্তু কুদ্দুসের জ্ঞান ভান্ডার শূন্য কিন্তু মোখলেস!!!! এই সেই মোখলেস যে তাকে একদিন বলেছিল, “কুদ্দুস জানার আছে অনেক কিছু!” “এই মোখলেস কি তাহলে এখন আমার স্বপ্নের সখিনাকে বিয়ে করে আমার জীবনকে দেবদাসের দ্বিতীয় পর্বে পরিণত করবে? গাদ্দার !!!” কুদ্দুস বুঝে পায় না এটা কি ছিল? শুভঙ্করের ফাঁকি?? এখন কুদ্দুস কি করবে??? কে তাকে আশা দিবে কে তাকে ভরসা দিবে?”

সে দৌড়ে গেল ফেসবুকের সেই পেজে, “পাঁচ পাওয়ার একশ উপায় সাথে একটি উপায় ফ্রী” , কিন্তু কই? কই সেই পেজ?? এই পেজে এখন সস্তা সস্তা হাসির জোক বিক্রি করা হচ্ছে, প্রতিটা পাঁচ পয়সা করে। কুদ্দুস পেজের মালিককে বলে, “কেন অ্যাডমিন? কেন তুমি আমার গেবন নষ্ট করলে? আমার গেবনের কি এক পয়সা মর্যাদা নেই তোমার কাছে?” অ্যাডমিনের রিপ্লাই আসলো, “এ্যাড মি। আই এম বলকড।”

এই ছিল কুদ্দুসের ছ্যাঁক খাওয়ার গল্প। সখিনাকে নিয়ে সুন্দর জীবন যাপনের অতি সুন্দর স্বপ্নের করুণ সমাপ্তি। কিন্তু ন্যাংটো রাজার কি তাতে কোন ভ্রূক্ষেপ আছে? ন্যাংটো রাজার দেশ তো উদ্ভট উটের পিঠে চড়ে উন্নতির চরম শিখরে পৌছে যাচ্ছে, কুদ্দুসের সংখ্যা বাড়ছে। শেষ না, নিচের গ্রাফটা দেখে নেই, এরপর চরিত্র চিত্রণ করি।

জিপিএ পাঁচ ২০০২ থেকে ২০১৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জিপিএ পাঁচ ধারীদের ফেল করার হার

সবাইকে বৃষ্টিস্নাত সকালে গরম গরম জিলাপির “পাঁচ” (প্যাঁচ না কিন্তু) এর শুভেচ্ছা!

**সব কিছুর জন্য ধন্যবাদ সরব বাপ্পি ভাইয়া। গ্রাফগুলার জন্য অনেক অনেক থ্যাঙ্কস**

অক্ষর সম্পর্কে

স্বপ্নবাজ মানুষ একজন। আশাবাদ আর নিরাশার দোলাচালে আশাকেই শেষ পর্যন্ত সঙ্গী করতে চাই। আর স্বপ্ন দেখি একদিন দেশের জন্য কিছু করার, স্বপ্ন দেখি ছোট্ট করে হলেও কিছু একটা করার যা একটা প্রজন্মের গতিপথ পরিবর্তন করবে এবং অবশ্যই সেটা যেন হয় ইতিবাচক কোন পরিবর্তন। এখন পড়াশোনা করছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে। গণনা যন্ত্রের উপর পড়াশোনা করছি ঠিকই কিন্তু যন্ত্র শব্দটাই আমার কাছে বিরক্তিকর। ফেসবুক লিঙ্ক- www.facebook.com/akkhar21
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে ইতিবাচক, গল্প, চিন্তাভাবনা, সচেতনতা-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

7 Responses to ন্যাংটো রাজার দুইটি গ্রাফ ও কুদ্দুস-সখিনার প্রেম কাহিনী; সাথে মোখলেসের বিশ্বাসঘাতকতা ফ্রী

  1. অনিন্দ্য বলেছেনঃ

    পরিসংখ্যানটা সবার সামনে নিয়ে আসাটা খুব বেশিই জরুরী ছিল। এরপরও যদি ছেলেপেলে কিছু উপলব্ধি করে!

    অসাধারন হয়েছে লেখাটা! 😀

    • অক্ষর বলেছেনঃ

      ছেলে পেলে কুদ্দুসের মত আসলে, এখনও চিত্রটা ওদের কাছে পরিষ্কার না। ন্যাংটো রাজার কার্যসিদ্ধি হচ্ছে। উন্নতির গ্রাফটা উর্ধ্বমুখী এইটা সবাই দেখছে কিন্তু অবনতির গ্রাফটাও যে উর্ধ্বমুখী এইটা কেউ উপলব্ধি করতে পারছে না। যেইদিন কুদ্দুস বুঝতে পারবে ততদিনে সখিনা মোখলেসকে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে ঘর-সংসার করতে থাকবে। আর ফ্রী “পাঁচ” পাওয়া “বেকার” কুদ্দুসের সংখ্যাও দিনে দিনে বাড়তে থাকবে। ন্যাংটো রাজা খুশি। :happy:

  2. লিলিপুট বলেছেনঃ

    পরিসংখ্যানের উৎস কি? রেফারেন্স সংযুতি দিলে ভাল হত

  3. ক্ষণভাবনা বলেছেনঃ

    এরপর কুদ্দুস শুনলো টাকা থাকলে যা মনে চায় তাই(ডাক্তার ,ইঞ্জি,স্থপতি,সাংবাদিক ,…….) হওয়া যায়,মানে সার্টিফিকেট পাওয়া যায়।আরে সার্টিফিকেট ই তো দরকার।
    কি আর করা কুদ্দুস তার দেশের আলু পটল বিক্রি করে যা পেল ,তাই নিয়া একটা কিছুর জন্য ঝাপাইয়া পড়লো।
    ন্যাংটো রাজার পদাতিক বাহিনিতেও যোগ দিল।
    সার্টিফিকেট প্রাপ্তি শেষে এরপর কি করবে?আবারো গেল মুখবই এর নতুন পৃষ্ঠায় ।…ব্যাঙ্ক,…নিয়োগ… নিসিএস…সবকিছুর ১০০১ টা উপায় পাওয়া যায় সেখানে।
    কুদ্দুস ও একটা কিছু পেয়ে গেল।আর হয়ে গেল ন্যাংটো রাজার হোমরা টাইপ কিছু।

    আর মোখলেস ন্যাংটো রাজার দেশে ভিক্ষুক এর সম্মানটুকুও না পেয়ে চলে গেল অন্য দেশে।
    সখিনা কিন্তু এখন রাজ কর্মকর্তার বউ।

    • অক্ষর বলেছেনঃ

      ভাইয়া আপনার সাথে একমত হতে পারলাম না। হয়তো এখনও অনেক কিছুই ঠিক হচ্ছে না কিন্তু দৃশ্যপট কিন্তু পাল্টাচ্ছে।

  4. লেখাটা খুব মজার হয়েছে ভাইয়া 🙂

  5. রুহশান আহমেদ বলেছেনঃ

    যেই বিষয়টা নিয়ে লিখেছেন তার প্রেক্ষিতে যদি কিছু বলার না থাকে তবে শুধু লেখনীর প্রশংসা করে কমেন্ট করাটা মানায়না। দেশে হাজারো সমস্যা আছে, কিন্তু দেশের ভবিষ্যতকে নিয়ে এরকম না-মানুষি কাজ কারবার আসলেই মানা যায়না।

    তবে এটুকু আশা করব, প্রত্যেকে যেন নিজে এবং অন্তত নিজের কাছের মানুষদের নিয়ে সচতন হন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।