ভার্চুয়াল জগতটাতে এসে একটা সময়ে নিজেকে অনেক একা এবং খালি মনে হতে থাকে। অনেকের একইরকম অভিযোগ আছে, যা সত্য। আমিও কতবার যে নিজেকে সবকিছুর ভিড়ে একদম একা দেখেছি, শূন্য দেখেছি!
মানুষে মানুষে এখন আর চোখাচোখি হয় না। চোখাচোখি হয় একটি মেশিনের সাথে, দীর্ঘক্ষণ, দীর্ঘবেলা। চোখের মণিতে ভেসে থাকে রোবটের প্রতিচ্ছবি। চোখের পাতায় এর কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না। সম্পর্ক গড়েও দ্রুত, ভাঙেও দ্রুত। সেখানে তো মান-অভিমানের বিনিময় নেই, সাক্ষাৎ নেই, উপস্থিতি নেই। এমন কতো কতো না থাকা আছে। ‘থাকা’কে আর কে জায়গা দেয়? কতোদিন আছে, যখন শোনা হয়না আপন কোনো বন্ধুর মুখে নিজের নামটা। এখন ট্যাগিংই তো ভরসা, প্রান্ত থেকে প্রান্তের বন্ধুকে ডাকাডাকি করার জন্য। যাকে সারাক্ষণ অনুভবেই রাখছি, তাকে নিয়ে শূন্যস্থানে চোখজুড়ানো-মনজুড়ানো কথা লিখে চলছি পেট খালি করে। অথচ, তাঁর কাছে বলতে গেলে বলার মতো সহজাত শব্দগুলোই মুখে জোটাতে পারছি না! মানুষ পড়ছে ভালোবাসার সংজ্ঞা। অথচ যাকে ভালোবেসে ভালোবাসার সংজ্ঞা লিখছি, কেবল সে-ই জানছে না হাত ধরে রাখার অনুভূতি কী, মায়া কী। অনেককিছুই আছে, যা নেই। বদৌলতে আছে, শর্টকাট। কমেন্টবক্স-চ্যাটবক্সে অপমান করার স্পর্ধা আছে। অবাধ স্বাধীনতা আছে। যেখানে কিনা কারো সামনে দাড়িয়েও ক্ষোভকে আমরা সহজ ব্যাকরণে ঝেড়ে দিতাম! অ্যালবামে আমরা কী বেঁধে রাখতাম, কীভাবে বেঁধে রাখতাম প্রিয়জনকে-প্রিয়স্মৃতিকে? এখন কোথায় রাখি আর? আমাদের মাঝে একটা শান্তবেলা ছিল। ছন্দ নিয়ে আমাদের মাঝে ঘুমেরা আসতো। এখন চোখ বুজলেও ঘুম আসে না। রাত নামলেও অন্ধকার হয়না পৃথিবী। রোবোটিক স্ক্রীন-প্যাড-পডের ক্ষুদ্র জ্যোতিকে সাঙ্গ করে চোখের জ্যোতিকে নমঃনমঃ করছি। সূর্যকে নিয়ে আমাদের আনন্দ করার দিনগুলো তারপর ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে থাকে। অ্যাডভারটাইজড ফ্রোজেনফুড-ফাস্টফুডের তড়িৎভোজন আমাদেরকে দিয়েছে অন্নপূর্ণার হাতের উষ্ণ ভালোবাসা থেকে মুক্তি। নাড়ির বন্ধন থেকে নিজেকে ত্যাগ দিয়েছি, আর আগলে ধরেছি ওয়্যারলেস কানেকশন। আমরা গতিবেগ পেয়েছি ঠিক, কিন্তু বিনিময়ে নিজেদেরকে ক্ষুদ্র করেছি। করে চলছি।
স্ট্যাটাস আমাদের মনন জগতকে উলঙ্গ করে দিয়েছে একপ্রকার। চাইলেই তো এখন সহজে সবকিছু উগলে দিতে পারি আমরা। কোন কথাটা নিজের জন্য আর কোন কথাটা সার্বজনীন- সেটা আমাদের বিবেচনায় এখন ছাঁকা হয় না তেমন। আপন মাঝে আপন জগত বলে স্বীকৃত কিছুকে বাঁচিয়ে রাখছি কি আমরা?
হ্যাঁ, সময়ের সাথে নতুনত্বের প্রয়োজন আছে। কিন্তু এখন অনেককিছুকেই প্রয়োজনের ঊর্ধ্বে বলে মনে হয়। প্রয়োজনকে ঘিরে মানুষের ধৃত আচরণকে নিয়ে আমার মাঝে প্রশ্ন তৈরি হয়। মানুষ আদৌ কি প্রয়োজনের মাঝেই সীমিত রেখেছে উন্নয়নকে, নাকি সেটা কৌতূহলের নাগালকেও ছাড়িয়ে গেছে?
তারপরও, নিজের মত করে স্রোতের বিপরীতে হাঁটার চেষ্টা করছি। স্বপ্ন দেখছি। নিজের শরীরও যেন নিজের বিরোধিতা করে। বলে, ‘আর কতক্ষণ?’
আমার খুব ফিরে যেতে ইচ্ছে হয়, একটা সুন্দর দিনে। ভালোবাসার কাছে। এই যতোসব আর ভালো লাগে না।
কিন্তু, কত না বলা কথা, যা হয়তো কোন দিন কোথাও বলা হতো না, এই নতুনত্বের কারণেই কেবল লেখা হলো হয়তো।
নতুনত্বকে অস্বীকার করছি কোথায়? 🙂
মানুষের মনের অবস্থার পরিবর্তনটা মাঝে মাঝে (কিংবা বলতে পারা যায় এখনই) খুব যান্ত্রিক।
ভালো থাকুন। সুন্দর থাকুন।
আপন মাঝে আপন জগত বলে স্বীকৃত কিছুকে বাঁচিয়ে রাখছি কি আমরা?
ভাবনাগুলো ভালো লাগল।
সরবে সুস্বাগতম।
ধন্যবাদ বোহেমিয়ান।
সুন্দর থাকুন। শুভকামনা।
আমি তো এদিকে ফেসবুক অ্যাডিক্ট হয়ে বসে আছি 🙁
একটু উঠে দাঁড়ান তাহলে 😀
প্রযুক্তির যান্ত্রিকতা নিয়ে হাহাকার তো স্বয়ং রবি ঠাকুরও করে গেছেন। কোন লাভ তো কি হয়েছে ?
আমার মনে হয়- প্রতিটা দিনই সুন্দর, অসুন্দর হবার নিয়ামক বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিজে, ক্ষেত্রবিশেষে নিয়তি।
যাই হোক, ভালো লিখছেন।
জী, আপনার কথাগুলোও সত্যি। ‘ক্ষেত্রবিশেষে’। আমাদের ধৈর্যধারণেও অনেক অবহেলা আছে। মানতে পারার যোগ্যতাও কম। পৃথিবীটা অনেক সুন্দর। শুধু অসুন্দর কিছু অজুহাত আর মানসিকতা ছাড়া, পৃথিবীটা অনেক সুন্দর। ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন। সুন্দর থাকুন।
” তারপরও, নিজের মত করে স্রোতের বিপরীতে হাঁটার চেষ্টা করছি। স্বপ্ন দেখছি। নিজের শরীরও যেন নিজের বিরোধিতা করে। বলে, ‘আর কতক্ষণ?’
আমার খুব ফিরে যেতে ইচ্ছে হয়, একটা সুন্দর দিনে। ভালোবাসার কাছে। এই যতোসব আর ভালো লাগে না।” 🙁
আসলেও লাগে না আপু।
আপনি ভালো থাকুন, সবসময়।