“হ্যালো, মিঃ লিনস। কি অবস্থা আপনার? রেডি তো?”
“হ্যাঁ মিঃ পুরিন। কাল সারারাত খুব টেনশনে ছিলাম কিন্তু এখন অনেকটা ফ্রী লাগছে নিজেকে। আমি অনেকটাই প্রস্তুত সামনের অভিযানের জন্য।”
“আমাদের কিং কিন্তু এইবার ভীষণ রকমের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এইবার কিন্তু সে হাসকান শহর দখল করেই ছাড়বে।”
“আমারও তাই মনে হচ্ছে মিঃ পুরিন। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে অন্য জায়গায়, কেন যেন মনে হচ্ছে হসকানিয়ানসরা আমাদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী।”
“আপনার এমনটা মনে হওয়ার কারণ কী লিনস? আমাদের সৈন্য তো ওদের চেয়ে অনেক বেশি, তাছাড়া আমাদের যে টেকনোলজি আমদের যে ধরনের অস্ত্র তাতে হাসকান রাজ্য দখল করতে আমাদের খুব বেশি বেগ পাওয়ার কথা না।”
“কিন্তু আমার তা মনে হচ্ছে না পুরিন। আচ্ছা পুরিন যদি কিছু মনে না করেন একটা প্রশ্ন করব?”
“অবশ্যই লিনস….”
“আচ্ছা আমরা যুদ্ধটা কেন করব? হাসকান রাজ্য দখল করলে আমাদের এতে কি লাভ হবে? অনেক হাসকানিয়ানস মারা যাবে, অনেক কমসনিয়ানস মারা যাবে। অনেকে পঙ্গু হয়ে যাবে, অনেক স্ত্রী স্বামী হারাবে, সন্তান বাবা হারাবে। তাহলে কেন এই যুদ্ধ!”
“লিনস! তুমি তো দেখি মহা মূর্খ! এইটা একটা যুদ্ধ। কোন ছেলেখেলা নয়। এখানে মানুষ মরবে এটাই নিয়ম। আর আমাদের কিং চান আমরা যেন আরও ভালোভাবে বসবাস করতে পারি। আমাদের যেই হারে মানুষ বাড়ছে তাতে করে আমাদের আরও জায়গা, সম্পদ প্রয়োজন।”
“কিন্তু পুরিন জারগান যুদ্ধের সময়ও তো কিং এটা বলেছিল, কিন্তু আমাদের অবস্থার কি উন্নতি….”
“চুপ থাকো লিনস! তোমার এই চিন্তা ভাবনা তোমার কাছেই যেন থাকে। এইটা একটা ভাইরাস। এটা অন্য সৈন্যদের মাথায় পুশ করবে না। তোমার মাঝে কি কমসনিয়ানসদের জন্য প্রেম নেই? আমাদের জনগোষ্ঠীর বিশাল স্বার্থের জন্য এটা প্রয়োজন। তোমার মত মাথা মোটা সৈন্য এর চেয়ে বেশি বোঝার ক্ষমতা নেই, তাহলে তুমি কিং হতে। সৈন্য না। আর কোন কথা না। তুমি এখন ঘুমাতে যাও।”
“ওকে মিঃ পুরিন। আমি কিছুই বলব না।”
লিনস চুপ হয়ে যায় কিন্তু সে ভাবতে থাকে, “কেন এই যুদ্ধ? আচ্ছা এতে কি আমরা শান্তি পাচ্ছি? আচ্ছা কিং এর উদ্দেশ্য কি? আমি কেন কিং এর কথা শুনতে বাধ্য হচ্ছি? নাহ! আরেহ কমসন রাজ্যের ভালোর জন্য এটা করতে হবে। আমাদের আরও খাদ্য দরকার। জারগানরা কি কমসনদের মারে নি। অবশ্যই মেরেছে। এটা যুদ্ধ, এতে মানুষ মারা যায়। আর যারা টিকে থাকে তারাই বিজয়ী। আচ্ছা কিং কি মরবে? ধুর নিশ্চয়ই আমার মাথা হ্যাং করছে। ঘুমানো দরকার।”
“এই লিনসের মাথায় এত প্রশ্ন কেন আসে? আমাদের লিকুইডটা কি ওর মাঝে ঠিক মত কাজ করছে না? ওর তো চিন্তা করার ক্ষমতা থাকার কথা না। কিং শুনলে কি ভাববেন? আমার এই পজিশনটা কেড়ে নিবেন। যেভাবেই হোক লিনসকে আরও বেশি করে লিকুইড দিতে হবে যাতে করে ও এত প্রশ্ন করতে না পারে। কিন্তু আসলেই কেন এই যুদ্ধ? লিনস তো ভুল বলে নি। এতে আসলে কার লাভ হচ্ছে? কিং কেন আমাদের এতটুকু নিয়েই থাকতে পারেন না। প্রতি যুদ্ধের পর কিং আরও ক্ষমতাবান হন কিন্তু কই রাজ্যের মানুষ তো সুখী হয় না। ধুর কি ভাবছিস পুরিন! এইগুলো তো ভাইরাস। এইভাবে ভাবতে হয় না। এইটা মানুষের জন্য, আমাদের কমসনিয়ানসদের ভালোর জন্য। আমরা আরও রসদ পাবো। এতে করে আমাদেরও তো হাজার সৈন্য মারা যাবে। আমরা যদি বসে থাকি ঠিকই হাসকান কিংবা বসলিন আমাদের আক্রমণ করবে। নাহ লিনস একটা ভাইরাস!”
হাসকান এবং কমসন রাজ্যের মাঝে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। হাসকানরা খুব দ্রুত নিজেদের জায়গা বানিয়ে নিচ্ছে। খুব দ্রুত ঘর-বাড়ি, অস্ত্র সংগ্রহ করছে তারা। এরিয়া বিস্তৃত করছে খুব সহজেই। কমসন কিং খুব বিরক্ত, তার সৈন্যদের মাঝে কেমন যেন একটা বিদ্রোহ কাজ করছে। তাদের মস্তিষ্ক কেন যেন বিদ্রোহী হয়ে উঠছে। কিং এর রিডিং বলছে এই কারণে ওদের মাঝে ঐক্যবদ্ধতাও কমে গেছে। সেনাকুঞ্জ বানানো হয় নি এখনও। রসদ নিয়ে আসা হয় নি। এখন যদি হাসকান রাজা আক্রমণ করে সে পালিয়েও কুল পাবে না। এই সৈন্যদের আচ্ছা মত লিকুইড দিতে হবে।
হাসকান রাজা এবার কমসন আক্রমণ করবে। সে দেখতে পাচ্ছে কমসন অনেক দূর্বল। তার “আইপুশ” আইডিয়া কাজ করেছে। ওদের মাঝে একটা দূর্বলতা তৈরী করে দেওয়া গেছে। ওরা একটু পর নিজেরা নিজেদের অবিশ্বাস করবে। এটা খুব ভালো টেকনিক। মানুষ যখন নিজের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্ধিহান হয় তখন সে গ্রুপ হিসেবে কাজ করতে পারে না। এইটাই এখন ওদের মাঝে প্রধান দূর্বলতা। এই সুযোগে কমসনদের ধ্বংস করে দিবে সে। হাসকান কিং এর মুখে একটা হাসি ফুটে উঠল।
“রবিন, তোর সৈন্যগুলা এত স্লোলি কাজ করছে কেন? আজকে তো তুই কোনভাবেই জিততে পারবি না। আমার সব কিছু বানানো শেষ। এবার আক্রমণ। হা হা হা হা…”
“নিবিড়ের বাচ্চা ! আমি বুঝতেছিনা এমন কেন হইতেছে! কালকেও তো ঠিক ছিল। তু জারগানদের নিয়ে হারলি। কত তাড়াতাড়ি তোরে শেষ করে দিলাম। কিন্তু আজকে এমন হচ্ছে কেন? মনে হয় জয়স্টিক কাজ করতেছে না। ধুর ! ধুর ! শীট ! হেরে যাচ্ছি।”
হাসকানরা আক্রমণ করে ফেলেছে। লিনস জানে আজ সে মারা যাবে। সে কোনভাবেই বুঝতে পারছে না সে আসলে এইখানে কি করছে? কি করছে সে??? সে তো এখানে আসতে চায় নি। সে তো এই যুদ্ধ চায় না। সে তো তার ছোট্ট সন্তানকে কোলে নিয়ে বারান্দায় বসে বিকেল বেলার রোদ দেখতে চায়। নদীর ঢেউ দেখতে চায়। কিন্তু সে তো নড়তেও পারছে না, তার সেই ক্ষমতা নেই। কে যেন তাকে বেঁধে রেখেছে। একজন হাসকান সৈন্য এগিয়ে আসছে ওর দিকে, এবারই ওর বুকে ছুড়ি চলবে। ওর বাসার ছোট্ট ছেলেটির কথা মনে পরছে। ওর সেই স্ত্রী’র কথা মনে পরছে।
“কি রবিন আবার খেলবি?? জিতে গেলাম তো! আমার সাথে পারবি না।”
“হুহ কি আমার খেলোয়ারটা! আজকে কি যেন হইছিল, আচ্ছা একটা সৈন্য মারা যাওয়ার সময় কেমন একটা খারাপ ফিলিং হচ্ছিল আমার। মনে হচ্ছি আমি কাউকে খুন করছি। মনে হচ্ছিল কেউ বোধহয় সত্যিই মারা যাচ্ছে….”
“ধুর ব্যাটা! ! তুই অবসেসড হয়ে গেছিস। সব কিছুর মাঝে কি যেন খুঁজিস। চল আরেকটা গেম খেলি, এইবার খেলব ইবাইন আর জিলিমানদের নিয়ে।”
“হুম, চল শুরু করি।”
স্ট্যান্ডার্ড সাইজ, টুইস্ট ছিল, সবচেয়ে বড় কথা একটা ম্যাসেজ ছিল! ম্যাসেজ টা নতুন না কিন্তু ভিন্ন আঙ্গিকে, একটু অন্যভাবে সাইফাইয়ের মধ্যে তুলে আনার প্রচেষ্টাটা অভিনব লেগেছে।
শুনেছি, তোর লেখা প্রথম সাই-ফাই এটা, মাঝে-মাঝে সাই-ফাই নিয়ে বসিস- পাঠকরা ভাবানার খোঁড়াক যোগালে সওয়াব না হলেও গুনাহ হবে না; সওয়াব-ই হবার কথা! 😛
তুই-আমি -লিনস- আমরা যে রাজার কথা ভাবি, কল্পনা করি সেই রাজা কেবল নিহিত রবীন্দ্রনাথের ঐ গানের মধ্যে- আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে, নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কি সত্যে।’
বাস্তবেও আমাদের মাঝে এমন রাজা নিশ্চয়ই আসবে, শীঘ্রই আসবে- সেই স্বপ্ন আমরা সবাই দেখি। স্বপ্ন দেখতে কোন প্রবলেম নাই 😀
তুই আরও ডিপলি চিন্তা করছিস, গুড গুড। বাই দ্য ওয়ে একটা সিক্রেট শেয়ার করি সেটা হচ্ছে এই সাই ফাইটা আমি আবার লিখব আরও বড় করে। এইটা হচ্ছে জাস্ট র আইডিয়া। ইনশাল্লাহ। :happy:
প্রথম সাইফাই হলে চমৎকার হয়েছে অক্ষর। পরবর্তী সাইফাইের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
😛
গেমের ক্যারেক্টার নিয়ে আমিও মাঝে মাঝে এরকম ভাবতাম।
প্রথম সাই-ফাই তো কি হয়েছে?
যার লেখার হাত ভালো, সে চাইলে সবখানেই সোনা ফলবে।
শুভকামনা।
ধন্যবাদ। অনেক বড় কমপ্লিমেন্ট, খুশি খুশি লাগে। :love:
ভালো লিখেছিস রে 😀
আর ম্যাসেজটা সুন্দর ছিল
চালিয়ে যা 😀
কি ম্যাসেজ ছিল? 😯 😛
গল্পের থিমটা সুন্দর, গল্পটাও 😀
ধন্যবাদ ফারাহ :happy:
:happy: :happy: